আল্লাহ ছাড়া কোন আশ্রয়স্থল নাই
০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০২ এএম

“তাঁর হাত থেকে নিস্কৃতি পেয়ে পালাবার জন্য কোন আশ্রয়স্থল পাবে না।”(সুরা কাহাফ:২৭) আকাশ ও পৃথিবীতে এমন কোন স্থান আছে যেখানটা আল্লাহর নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যেখানে গেলে আল্লাহর হুকুম মানা নামানার ব্যপারে বলার কেউ নেই। প্রকৃতপক্ষে আসমান-যমীনে এমন কোন স্থান নেই যা আল্লাহর নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সর্বত্র তাঁর রাজত্ব বিস্তৃত। তাঁর রাজত্বের বাইরে যাওয়ার কোন স্থান নেই। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“তাঁর কর্তত্ব আকাশ ও পৃথিবী ব্যাপী। এগুলোর রক্ষণাবেক্ষন তাঁকে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত করে না। মূলত; তিনিই এক মহান ও শ্রেষ্ট সত্তা।”(সুরা বাকারা:২৫৫) “হে জিন ও মানবগোষ্ঠী, তোমরা যদি পৃথিবী ও আকাশ ম-লের সীমা পেরিয়ে কোথাও পালিয়ে যেতে পার তাহলে গিয়ে দেখ। পালাতে পারবে না, এ জন্য বড় শক্তি প্রয়োজন।” (সুরা আর রহমান:৩৩) যেহেতু তাঁর চেয়ে বড় শক্তিশালী কেউ নেই, “নিসন্দেহে তুমিই সবকিছুর ওপর শক্তিশালী।”(সুরা আলে ইমরান:২৬) এবং কেউ আপনাকে আশ্রয় দেয়ার ক্ষমতা রাখে না। সেহেতু আল্লাহর আশ্রয়ই আপনাকে খুঁজতে হবে।
যমীন ও আসমান অর্থ গোটা সৃষ্টিজগত অথবা অন্য কথায় আল্ল্হার প্রভুত্ব বা সার্বভৌত্ব। আয়াতের অর্থ হচ্ছে, আল্ল্হার পাকড়াও থেকে রক্ষা পাওয়ার সাধ্য কারোর নেই। যে জবাবদিহি সম্পর্কে তোমাদের অবহিত করা হচ্ছে তার সময় যখন আসবে তখন তোমরা যেখানেই থাক না কেন পাকড়াও করে আনা হবে। কেউ সেখান থেকে কেহ অনুপস্থিত থাকার সুযোগ থাকবে না। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“কর্মফলের দিন তারা তার মধ্যে প্রবেশ করবে এবং সেখান থেকে কোনক্রমেই সরে পড়তে পারবে না।”(সুরা ইনফিতার:১৫-১৬) এ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কেহ আল্লাহর প্রভুত্বাধীন থেকে এলাকা থেকে চলে যেতে হবে। কিন্তু সে ক্ষমতা কারো নেই। কেহ যদি মনে এ ধরনের অহমিকা পোসণ করে থাকে তাহলে সর্বশক্তি নিয়োগ করে দেখুক।
“বলো, আল্লাহর পাকড়াও থেকে কেউ আমাকে বাঁচাতে সক্ষম নয় এবং তাঁর কাছে কোন আশ্রয় পাব না।”(সুরা জিন:২২) “তোমরা তোমাদের রবের কথায় সাড়া দাও, আল্লাহর নির্ধারিত সেই দিন আসার আগেই আল্লাহর পক্ষ থেকে যাকে ফিরিয়ে দেয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। সেদিন তোমাদের জন্য কোন আশ্রয়স্থল থাকবে না এবং তোমাদের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য চেষ্টাকারীও কেউ থাকবে না।”(সুরা শুরা:৪৭) অর্থাৎ তোমাদের জন্য কোন এমন স্থান হবে না, যেখানে তোমরা লুকিয়ে নিখোঁজ ও পরিচয়হীন হয়ে যাবে অথবা দৃষ্টিগোচর হবে না। কেউ তার পোশাক বদল করে কোথাও লুকাতে পারবে না। যেমন অন্যত্র আল্লাহ তা’আলা বলেন,“সেদিন এ মানুষই বলবে, পালাবার স্থান কোথায়? কখনো না, সেখানে কোন আশ্রয়স্থল থাকবে না। সেদিন তোমার রবের সামনেই গিয়ে দাঁড়াতে হবে।”(সুরা ক্বিয়ামাহ:১০-১২) নিজেদের কৃতকর্ম অস্বীকার করতে পারবে না। কারণ, প্রথমত: সবকিছুই লিখিত থাকবে। দ্বিতীয়ত: স্বয়ং মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও সাক্ষ্য দেবে। কিংবা যে আযাব তাদেরকে তাদের পাপের কারণে দেয়া হবে. তারা সে আযাবকে অস্বীকার করতে পারবে না। কেননা, পাপ স্বীকার করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। অন্য একটি প্রসিদ্ধ তাফসীরে আয়াতটির কয়েকটি অর্থ করা হয়েছে, এক, সেদিন মানুষ নিজেদের কৃতকর্মের কোনটিকেই অস্বীকার করতে পারবে না। দুই, মানুষ পোশাক বদল করে কোথাও লুকাতে পারবে না। তিন, মানুষের সাথে যেই আচরণই করা হোক না কেন তারা তার প্রতিবাদ এবং কার বিরুদ্ধে কোন প্রকার অসন্তোষ প্রকাশ করতে পারবে না। চার, মানুষকে যে পরিস্থিতির মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছে তারা তা পাল্টে ফেলতে পারবে না।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আর যে তিনজনের ব্যাপার মুলতবী করে দেয়া হয়েছিল তাদেরকেও তিনি মাফ করে দিয়েছেন। পৃথিবী তার সমগ্র ব্যাপকতা সত্ত্বেও যখন তাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গেলে, তাদের নিজেদের প্রাণও তাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ালো এবং তারা জেনে নিল যে, আল্লাহর হাত থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর নিজের রহমতের আশ্রয় ছাড়া আর কোন আশ্রয়স্থল নেই তখন আল্লাহ নিজে অনুগ্রহে তাদের দিকে ফিরলেন যাতে তারা তার দিকে ফিরে আসে। অবশ্যি আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়।”(সুরা আত তাওবা:১১৮)
তাবুক যুদ্ধে বাধ্যতামূলক অংশগ্রহণ থেকে যারা পিছনে রয়ে গিয়েছিল তাদের অধিকাংশই ছিল মুনাফিক। কিন্তু তাদের মধ্যে তিনজন মুখলিস মু’মিনও ছিলেন। মুনাফিকরা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে রাসুলুল্লাহ সা: এর দরবার থেকে বিদায় নিয়েছিল। কিন্তু সাহাবী তিনজন সত্য বললেন এবং নিজেদের দূর্বলতাকেই দায়ী করলেন। অর্থাৎ তারা কোন মিথ্যা অজুহাত দাঁড় করাননি। সেই তিনজন সাহাবী হলেন, হযরত কাব ইবনে মালেক, হিলাল ইবনে উমাইয়াহ এবং মুরারাহ ইবনে রুবাই রাজি’আল্লাহু তা’আলা আনহুম। তাবুক যুদ্ধের আগে তাঁরা বহুবার নিজেদের আন্তরিকতার প্রশাণ দিয়েছিলেন। অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন। শেষের দু’জন তো বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। কাজেই তাদের ঈমানী সত্যতা সব রকমের সংশয়-সন্দেহের উর্ধে ছিল। আর প্রথমজন যদিও বদরী সাহাবী ছিলেন না কিন্তু বদও ছাড়া প্রতিটি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। ইসলামের জন্য তার এমন ত্যাগ প্রচষ্টা ও সংগ্রাম-সাধনা সত্বেও এমন এক নাজুক সময়ে যখন যুদ্ধ করার শক্তি ও সামর্থে অধিকারী প্রত্যক মুমিনকে যুদ্ধ করার জন্য এগিয়ে আসার হুকুম দেয়া হয়েছিল তখন তারা যে অলসতা ও গাফলতির পরিচয় দিয়েছিলেন সে জন্য তাদেরকে কঠোরভাবে পাকড়াও করা হয়েছিল। নবী সা: তাবুক থেকে ফিওে এসে মুসলমানদের প্রতি কড়া নির্দেশ জারি করেন কেই এদের সাথে সালাম কালাম করতে পারবে না। ৪০ দিন পরে তাদের স্ত্রীদেরকেও তাদের থেকে আলাদা বসবাস করার কঠোর আদেশ দেয়া হলো। আসলে তাদেও অবস্থার যে ছবি আঁকা হয়েছে মদীনার জনবসতিতে তাদের অবস্থা ঠিক তাই হয়ে গিয়েছিল। উল্লেখিত আয়াত অনুযায়ী পৃথিবীটা তাদের জন্য ছোট হয়ে এসেছিল। আল্লাহ ছাড়া তাদের কোন আশ্রয়স্থলই ছিল না। শেষে তাদেও সাথে সম্পর্কচ্ছেদের ব্যাপারটি পঞ্চাশ দিনে এসে ঠেকলো তখন ক্ষমার এ ঘোষনা এ ঘোষণা নাযিল হলো। মহান আল্লাহ তাদেরকে আশ্রয় দিলেন।
সমগ্র বিশ্ব-জাহানের বাদশা ও শাসক এবং সাম্রাজ্যের সিংহাসনের অধিপতি। আরবী ভাষায় ‘মালিকুন’ শব্দটি বাদশাহী, রাজত্ব, কর্তৃত্ব ও সার্বভৌত্বের অর্থে বলা হয়ে থাকে। এর অর্থ হচ্ছে, মহান আল্লাহই এ বিশ্ব-জাহানের সর্বময় কর্তৃত্বের মালিক এবং তাঁর শাসন ক্ষমতায় কারো সামান্যতমও অংশ নেই। তিনি জুল আরশ বা আরশের অধিপতি। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“এ আল্লাহই তোমাদের রব, তিনি সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, তা সত্তেও তোমাদেরকে কোনদিকে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে।”(যুমারঃ৬) আল্লাহই যখন আমাদের প্রভু এবং সমস্ত রাজত্ব তাঁরই তখন নিশ্চিতভাবে তিনি আমাদের আশ্রয়দাতা ইলাহ্ও। অন্য কেউ কি করে ইলাহ হতে পারে যখন প্রতিপালনের ক্ষেত্রে তার কোন অংশ নেই এবং রাজত্বের ক্ষেত্রেও তার কোন দখল নেই। তোমাদের বিবেক-বুদ্ধির কাছে এ কথা কি করে গ্রহণযোগ্য হতে পারে যে, যমীন-আসমানের সৃষ্টিকর্তা হবেন আল্লাহ এবং আশ্রয়দাতা হবেন আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ। (চলবে)
লেখক: ইসলামী চিন্তাবীদ, গবেষক।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ইসরায়েলের হামলা বন্ধে জাতিসংঘকে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে-কাজী শিপন

সিরিয়া ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও তুরস্ক চুক্তি করবে, আশাবাদ ট্রাম্পের

বনফুল শোরুমে ইসরায়েলি পণ্য বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত

৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা পেছাতে পিএসসিতে পরীক্ষার্থীদের অবস্থান

নাসার সঙ্গে আর্টেমিস চুক্তি সাক্ষর করল বাংলাদেশ

রাজশাহীর চারঘাটে মদপানে দু’জনের মৃত্যু

১১ জেলেকে ট্রলারসহ অপহরণ আরাকান আর্মির

ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে ভাঙচুর-লুটপাটে চার মামলা, গ্রেপ্তার ৫৬

আনফিল্ডেই থাকছেন ফন ডাইক

সব সরকারি হাসপাতালে চালু হবে ফার্মেসি, স্বল্পমূল্যে মিলবে ওষুধ

স্যাট ফুটসাল চ্যাম্পিয়নশিপে উজবেকিস্তানকে হারাল ইরান

ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে নোবিপ্রবিতে সংহতি সমাবেশ ও মানববন্ধন

বান্দরবানে গভীর রাতে বিএনপির অফিস ভাংচুর করেছে সন্ত্রাসারী

শিশু গুলিবিদ্ধের ঘটনা আইয়্যামে জাহেলিয়াতের বর্বরতাকে হার মানিয়েছে: রেজাউল করিম

‘গাজার মুসলিমরা আজ অভিভাবক শূন্য, মুসলিম নেতারা ইসরায়েলের হাতে জিম্মি’

বৈষম্য বিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কার্য-নিবাহী কমিটি ঘোষণা

দাউদকান্দিতে বসতঘর ও রান্নাঘর দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়ে ছাই

নগরকান্দায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্র সহ গ্রেফতার-৪

১১ দিন পর কড়ইতলী-গোবরাকুড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু

পাঁচবিবিতে ফিলিস্থিনে ইসরাইলী হামলার প্রতিবাদে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ