ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের সংস্কারে নামাজ ও রোজা রমজানের ভূমিকা
০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০২ এএম

সংস্কারের ইসলামী সংজ্ঞা:-
বাংলা সংস্কার শব্দটির ইসলামী প্রতিশবদ্ধ ইছলাহ বা তাজকিয়া। অর্থাৎ বিশুদ্ধ হওয়া। পরিশুদ্ধ করা, আত্মার বিশুদ্ধি বা দিল ও দেমাগকে সকল ধরনের পাপাচার, অনাচার হতে মুক্ত রাখা ও মুক্ত করা। আত্মাত্বিক পরিভাষায় ইহাকে তাজকিয়াযে কলবও বলা হয়। মনের কলবের আত্মর বিশুদ্ধি ও সংস্কার ছাড়া কোন সংস্কার সফল হবে না। আল্লাহ বলেন যে পরিশুদ্ধ হয়েছে সেই সফল হয়েছে। যে ব্যক্তি, যে সমাজ ও রাষ্ট, তাজকিয়া, বিশুদ্ধি ও ইহলাহ অর্জন করতে পারবে, সেই সফলতা ও কল্যান লাভ করতে পারবে। ইসলামী পরিভাষায় ইহাকে তাকওয়াও বলা হয়। যে, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সমাজ ও রাষ্ট্র তাকওয়ার ভিত্তিতে পরিচালিত হবে তার ব্যপারে আল্লাহর কোরানিক ঘোষনা হল, আল্লাহ তাদেরকে সত্য, মিথ্যা, কল্যাণ, অকল্যাণ, ভালো মন্দ নির্ধারণ করার, সমস্যা কাঠিয়ে উঠার এবং সহজে কর্মসম্পাদনের যোগ্যতা দান করবেন। আল্লাহ বলেন, “তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং নিজেদের বিষয় গুলোকে পরিশুদ্ধ করে নাও”। তিনি আর বলেন, “যারা ইমান এনে নিজেদের বিষয় গুলোকে পরিশুদ্ধ ও সংস্কার করে নেয় এবং সত্য ও ধর্য্যরে উপদেশ দেয়, তারা ছাড়া অন্য সবাই ক্ষতির মাঝে আছে”। এতে বুঝা যায় সংস্কার শুধু উপকার ও কল্যাণ বয়ে আনে না। সংস্কার না করলে ক্ষতিও হয়। এ কারণেই ইসলামে সংস্কার, ইহলাহ, তাজকিয়া বা তাকওয়ার এত গুরুত্ব। তাই আল্লাহ এক মাস সেয়াম সাধনার মাস রমজান দিয়ে মানুষের কুপ্রবৃত্তিকে জ্বালিয়ে ছাই করে দিয়ে বান্দাকে তাকওয়াবান করতে ছেয়েছেন। রমজান শব্দের অর্থ জ্বালিয়ে দেয়া পুড়িয়ে দেয়া।
কার সংস্কার কে করেঃ
বাংলাদেশের প্রায় মানুষের চরিত্র লোভ, মোহ, ভোগ বিলাসিতায় ভরপুর। দূর্নীতি ও স্বার্থ পরতা চারিত্রিক বৈশিষ্টে পরিনত। হালাল-হারাম, ন্যায়-অন্যায় জ্ঞান প্রায় বিলুপ্ত। নিস্বার্থ, ন্যায় পরায়ন, পরপোকারী, নৈতিকগুণ সম্পন্ন মানবতবাদী নেতা ও কর্মকর্তা খুঁজে পাওয়া দুশকর। কিশোর, তরুন পর্যন্ত আজ বখাটে ও চরিত্র হীনতা। ধর্ম নেতারা কোন্দল আর গ্রুপিং এ লিপ্ত। হাছিনার অত্যাচার ও ইসলাম বিরোধী কাজের ঐক্যবদ্ধ মোকাবেলায়ও তারা ব্যর্থ। রাজনৈতিক নেতা ও কর্মকর্তারা দূর্নীতি ও লুটপাটে ব্যস্ত। খুন, গুম, নারী নির্যাতন, অবৈধ প্রেমের সর্ম্পক, হিজড়াদের উৎপাত, কিশোর গ্যাং এর অপতৎপরতা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। আজ থেকে ৩৫ বছর আগে আওয়ামীলীগের জেলা সভাপতির উপস্থিতিতে জেলা প্রশাসক নাজমুল আলম সিদ্দিকীকে বলে ছিলাম, স্যার “আমাদের মওলবীদের কারণে দ্বীন বরবাদ, নেতাদের কারনে দেশ বরবাদ”, তাহা যেন আজ বাস্তব। কর্মকর্তারাও পাল্লা দিয়ে দূর্নীতি করছে। আধুনিক বর্বরতার এই যুগে ইসলামের পথে আসা ছাড়া বাঁচার উপায় কি?। আল্লাহ বলেন, “যারা ইসলাম বাদ দিয়ে অন্য বিধানে মুক্তি চাইবে অনুমোদন মুক্তি পাবে না”।
সংস্কারে নামাজ ও রোজা রমজানের ভূমিকা:-
মুসলমান জাতিগোষ্টির জন্য দিনে ৫ বার নামাজ পড়া এবং বছরে ১ বার মাস ব্যাপী রোজা রাখা আল্লাহ ফরজ করেছেন। যেন তাঁরা সংস্কার, তাজকিয়া, তাকওয়া ও পরিশুদ্ধি অর্জন করে সৎ, চরিত্রবান ও দূর্নীতি মুক্ত হতে পারেন। সমাজ, রাষ্ট্র, প্রশাসন ও প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় ব্যক্তিই মূল কারিগর। ব্যক্তির আত্মার সংস্কার বা পরিশুদ্ধির উপরই নির্ভর করে প্রতিষ্ঠান, সমাজ ও রাষ্ট্রের সংস্কার ও পরিশুদ্ধি। তাই ইসলাম ব্যক্তির পরিশুদ্ধির জন্য আনুষ্ঠানিক ভাবে নামাজ ও রোজার কর্মসূচী দিয়ে ব্যক্তির মনে তাকওয়া তথা খোদা ভীতি সৃষ্টি ও আত্মর পরিশুদ্ধির ব্যবস্থা করেছে। কারণ সংস্কার বিষয়টির সাথে মনের সর্ম্পকই বেশি। আল্লাহর নবী বলেন, “জেনে রাখ তোমার শরীরে একটি মাংস পিন্ড আছে, ঐ মাংস পিন্ড ভাল থাকলে তুুমি পুরাটাই ভাল, ঐ মাংস পিন্ড নষ্ট হলে তুুমি পুরাটাই নষ্ট, জেন রাখ ঐ মাংস পিন্ড হল তোমার মন”। নামাজ পড়ার জন্য মানুষ পাক পবিত্রতা অর্জর করে। পোষাক পবিত্র করে। ওজু করে পবিত্র হয়। সময়ের খেয়াল রাখে। নামাজে দোয়া ও সূরা কেরাত্ব পড়ে। সবই করে নিজের মন থেকে। রোজা রেখে সারা দিন ক্ষুদা, তৃঞ্চনার কষ্ট সহ্য করে। কিছু খেয়ে নিলে গোপনে কেউ দেখবে না। জানবে না। তবু খায়না। এসবই মনের ব্যপার। এ ভাবে নামাজ রোজার মাধ্যমে আল্লাহ মানুষের মনকে বিশুদ্ধ ও সংস্কার করেন। যাদের মনে আল্লাহর ভয় আছে এ রকম বিশুদ্ধ মনের মানুষেরা প্রতিষ্ঠান, সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্ণধার হলে তারা সফল সংস্কারে ভূমিকা রাখতে পারবে। এই জন্য আল্লাহ বলেন, “নামাজ অন্যায়, অশ্লিল কাজ থেকে বিরত রাখে”। আল্লাহর নবী (সঃ) বলেন, “নামাজ যাকে অন্যায় থেকে বিরত রাখে না, সে যেন নামাজই পড়েনি”। আল্লাহ রোজা দিয়েছেন খোদা ভীতি অর্জন করে মনের সংস্কার ও আত্মশুদ্ধির জন্য। ঈমান, আমলে ছালেহ এবং নামাজ রোজার মাধ্যমে সংস্কারের যে ব্যবস্থা পত্র আল্লাহ দিয়েছেন, সমাজ ও রাষ্ট্রের সংস্কারের জন্য ইহাকেই মূল কর্মসূচী হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও ইসলাম যাকাত ভিত্তিক, সুদমুক্ত অর্থনীতি, ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা, অন্যায়ের প্রতিরোধকে সুনাগরিক এবং উন্নত রাষ্ট্র গঠনের মূখ্য কর্মসূচী ঘোষনা করেছেন। প্রিয় রাসূল (সাঃ) এবং খোলাফায়ে রাশেদীন রাশদীন এই সব কর্মসূচীর সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমেই র্ববর আরব জাতীকে সফল ও সমৃদ্ধ জাতিতে পরিনত করেছিলেন। তাই প্রিয় নবী (সাঃ) বলেছেন, “আমার ছুন্নাত এবং আমার চার খলিফার (রাষ্ট্র পচিালনার) সুন্নাতকে মাড়ির দাঁত দিয়ে শক্ত করে কামড়িয়ে ধরা তোমাদের দায়িত্ব। তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নত বাদ দিলে পথহারা হবে”। সফল হবে না। ব্যর্থ হবে। সমাজ ও রাষ্ট প্রিয় রাসূলের বিধান মত না চলানোর কারণেই আজ দেশের এই অবস্থা। আসল ব্যাপ হল যারা রাষ্ট্র ও প্রশাসন চালায় তারা নিজেরাই আল্লাহর দেয়া নীতি অমান্য করে যারা আল্লাহর দেয়া নীতি ভঙ্গ করে, তারা কি ভাবে দূর্নীতিমুক্ত করবে রাষ্ট্রকে?। তারা মুসলমান ও ইমান্দার হয়ে থাকলে এ ব্যাপারে তাদের চিন্তা করা উচিত।
সংস্কারের মৌলিক দিকঃ
নীতি ও নেতার সংস্কারই সকল সংস্কারের মৌলিক বিষয়। নেতা ভাল হলেও ভাল ফল আসবে না নীতি ভাল না হলে। নীতি ও নেতার সংস্কার ছাড়া কোন দেশ ও জাতি শান্তি, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি লাভ করতে পারে না। তাই আল্লাহ বর্বর জাতিকে হেদায়েত দিয়ে সুখ সমৃদ্ধির পথে আনার জন্য যুগে যুগে, দেশে দেশে নেতা ও নবী প্রেরণের সাথে সাথে নীতি ও কিতাব প্রেরণ করেছেন। ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্র সংস্কারের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্ব হচ্ছেন বিশ্ব মানবতার মুক্তিদুত হযরত মুহাম্মদ (সঃ)। সর্বাধুনিক নীতি ও সংবিধান হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত কিতাব, কোরআনুল করিম। তাই আল্লাহ কোরআর শরীফকে সকল বিষয়ের বিষদ বর্ণনার কিতাব ঘোষনা করে বলেছেন, “তোমাদের দ্বীন ও বিধানকে আজ তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দিলাম”।
আল্লাহ প্রদত্ত প্রিয় রাসুল প্রদর্শিত সংস্কারের পথে আসা এবং তাদের দেয়া সংস্কার কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়ন ছাড়া পশ্চিমা হারাম রাজনীতি, ইহুদিতে সুদ ভিত্তিক অর্থনীতি, মুশরেকদের অশ্লিল নাচ গান মার্কা সংস্কৃতি, কোরআনের নৈতিক শিক্ষা বর্জিত শিক্ষা এবং আল্লাহর দেয়া সংবিধান বাদ দিয়ে মানুষের তৈরী সংবিধান দিয়ে প্রকৃত সংস্কার সাধন এবং তার সুফল লাভ অসম্ভব। ১৫ বছর আগে আওয়ামীলীগের নির্বাচনি সভায় বান্দরবানের গন্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে মন্ত্রীকে সামনে রেখে বলেছিলাম মন্ত্রি সাহেব বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি, আমি মদীনার সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বলছি। আপনারা যে রাজনীতি করছেন, রাসূলের রাজনীতি ছাড়া তাতে শান্তি হবে না” শান্তিতো হয় নাই বরং অশান্তি আরো বেড়েছে। ইহা হারাম রাজনীতিরই কুফল। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সমাজের প্রভাবশালী ও ধনী ব্যক্তিবর্গ সর্বোপরি দেশের সকল জনগণকে আবারো বলছি (যদি তারা মুসলমান হয়ে থাকে) পবিত্র এই রমজান মাসে তওবা করে ঐ সব হারাম পথ ছেড়ে দিয়ে ইসলামের পথে আসতে হবে। ইহাই শান্তি ও মুক্তির পথ। আল্লাহ বলেন, “যে বা যারা আমার হেদায়াত মত চলবে তাদের কোন ভয় নেই, কোন চিন্তাও নেই”। এই জন্য বলা হয় ইসলাম শান্তির ধর্ম। যদিও মুসলমান নেতা, কর্মকর্তা এবং আলেম ওলামা ও পীর মাশায়েখদের কারণে মানুষ ইসলামের পথে আসতে পারছে না। নাউজুবিল্লাহ।
লেখক: খতীব কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, বান্দরবান পার্বত্য জেলা।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ইসরায়েলের হামলা বন্ধে জাতিসংঘকে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে-কাজী শিপন

সিরিয়া ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও তুরস্ক চুক্তি করবে, আশাবাদ ট্রাম্পের

বনফুল শোরুমে ইসরায়েলি পণ্য বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত

৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা পেছাতে পিএসসিতে পরীক্ষার্থীদের অবস্থান

নাসার সঙ্গে আর্টেমিস চুক্তি সাক্ষর করল বাংলাদেশ

রাজশাহীর চারঘাটে মদপানে দু’জনের মৃত্যু

১১ জেলেকে ট্রলারসহ অপহরণ আরাকান আর্মির

ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে ভাঙচুর-লুটপাটে চার মামলা, গ্রেপ্তার ৫৬

আনফিল্ডেই থাকছেন ফন ডাইক

সব সরকারি হাসপাতালে চালু হবে ফার্মেসি, স্বল্পমূল্যে মিলবে ওষুধ

স্যাট ফুটসাল চ্যাম্পিয়নশিপে উজবেকিস্তানকে হারাল ইরান

ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে নোবিপ্রবিতে সংহতি সমাবেশ ও মানববন্ধন

বান্দরবানে গভীর রাতে বিএনপির অফিস ভাংচুর করেছে সন্ত্রাসারী

শিশু গুলিবিদ্ধের ঘটনা আইয়্যামে জাহেলিয়াতের বর্বরতাকে হার মানিয়েছে: রেজাউল করিম

‘গাজার মুসলিমরা আজ অভিভাবক শূন্য, মুসলিম নেতারা ইসরায়েলের হাতে জিম্মি’

বৈষম্য বিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কার্য-নিবাহী কমিটি ঘোষণা

দাউদকান্দিতে বসতঘর ও রান্নাঘর দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়ে ছাই

নগরকান্দায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্র সহ গ্রেফতার-৪

১১ দিন পর কড়ইতলী-গোবরাকুড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু

পাঁচবিবিতে ফিলিস্থিনে ইসরাইলী হামলার প্রতিবাদে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ