প্রশ্ন: নবিজিকে ভালোবাসবো কী কারণে?
২৬ জুলাই ২০২৩, ০৯:৩৫ পিএম | আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৩, ১২:০৭ এএম
উত্তর: এই পৃথিবীতে কেউ কাউকে অকারণে ভালোবাসে না। যদি কোন লোকের মধ্যে ভালোবাসার মতো গুণ, বৈশিষ্ট্য, বিশেষত্ব ও অসাধারণত্ব বিদ্যমান থাকে, তাহলেই কেবল তাকে ভালোবাসে। যদি কোন ব্যক্তির মধ্যে ভালোবাসার মতো গুণ ও বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান না থাকে, তাহলে তাকে কেউ ভালোবাসে না। সম্মান করে না ও মর্যাদা দেয় না। বিশ্বনবি হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মধ্যে ভালোবাসার মতো সমুদয় স্বভাব, প্রকৃতি, নৈপুণ্য, দক্ষতা, পূর্ণতা ও যোগ্যতা পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান ছিল। পৃথিবীতে যত সুন্দর গুণ রয়েছে সকল গুণের আকর ছিলেন মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাই বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমরা মনেপ্রাণে ভালোবাসবো।
নবিজির কল্যাণকামনা: মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মতকে হৃদয় দিয়ে ভালবাসতেন। তিনি সব সময় নিজের উম্মতের কল্যাণ কামনা করতেন। তার কাছে উম্মতের কষ্ট-ক্লেশ, আপদ-বিপদ ও বালা-মুসিবত অত্যন্ত অসহ্যকর ছিল। ঈমানদার লোকদের প্রতি কল্যাণকামনায় তার হৃদয় ভরপুর ছিল। আর যে মহান সত্তার মধ্যে কল্যাণকামনার এই গুণ বিদ্যমান থাকে লোকে তাকে ভালবাসে। মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মধ্যে উম্মাহর প্রতি কল্যাণ কামনা বিদ্যমান থাকার কারণে তিনি উম্মতের প্রতিটি সদস্যের ভালোবাসা পাওয়ার হকদার। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মধ্যে কল্যাণ কামনার গুণ বিদ্যমান থাকার সাক্ষ্য দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রাসুল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তার পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়।’ (সুরা তওবা, আয়াত : ১২৮)
চরিত্রবান হওয়া: চরিত্রহীন মানুষ পশুর সমান। চরিত্রহীন মানুষ ও পশুর কর্মকা-ের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না। মন্দ চরিত্রের অধিকারী মানুষ যা ইচ্ছা তাই করে বেড়ায়। তাই এমন লোককে কেউ ভালবাসে না। কেবল চরিত্রবান লোকই মানুষের ভালোবাসা পায়। কোন ব্যক্তি নিজের কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানে লোক নিয়োগ দেওয়ার পূর্বে চরিত্রবান লোকের সন্ধান চালায়। বিবাহ দেওয়া ও করানোর পূর্বে লোকেরা বর বা কন্যা চরিত্রবান কিনা তা অনুসন্ধান করে। যদি লোকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্যাপারে চরিত্রবান হওয়ার সাক্ষ্য দেয়, তাহলে এমন লোক কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়ার কিংবা বিবাহ শাদি নিষ্পন্ন করা ও করানোর পছন্দের তালিকায় থাকে। মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি চরিত্রের ষোলকলাপূর্ণ করার জন্যই পৃথিবীর বুকে আগমন করেছিলেন। তাই আমরা তাকে ভালোবাসবো। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়ার সাক্ষ্য দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সুরা কলম, আয়াত : ৪)
দয়াশীল হওয়া: বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, মানুষ দয়ার দাস। যদি কোন ব্যক্তি কারো উপর দয়া করে, তাহলে সেই ব্যক্তি দয়াশীল ব্যক্তিকে ভালোবাসে। মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোমল হৃদয়ের অধিকারী ও দয়ার আধার ছিলেন। তিনি সাহাবায়ে কেরামের সুবিধা ও অসুবিধার প্রতি তীক্ষè দৃষ্টি রাখতেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেন। একবার কতিপয় যুবক সাহাবি মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বিশরাত অবস্থান করলে তিনি বুঝতে পারলেন তারা তাদের স্ত্রী-সন্তানদের প্রতি অতিশয় আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তখন তিনি তাদেরকে বাড়িতে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। হজরত মালিক ইবনু হুওয়াইরিস রা. বলেন, আমরা প্রায় একই বয়সের কিছু যুবক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বিশদিন অবস্থান করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু ও নম্র হৃদয়। তিনি বুঝতে পারলেন, আমরা আমাদের পরিবারের লোকজনের প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েছি। তাই নিজ পরিবারে আমরা কাকে কাকে রেখে গিয়েছি এ বিষয়ে তিনি আমাদের জিজ্ঞেস করলে আমরা তাকে সে বিষয়ে অবহিত করলাম। তখন তিনি বললেন, ঠিক আছে, তোমরা নিজ পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে যাও এবং তাদের মধ্যে অবস্থান করে তাদেরকে ইসলাম সম্পর্কে শিক্ষাদান করো।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৪২১)
নবিজি আল্লাহর বন্ধু: সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। তিনি আসমান, জমিন, চন্দ্র, সূর্য ও গ্রহ নক্ষত্রের সবকিছুই সৃষ্টি করেছেন। তার ক্ষমতার বাইরে কোন কিছুই নেই। তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। অতএব, যদি তার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা যায় এবং তার অন্তরঙ্গ বন্ধুকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসা যায়, তাহলে নিজের মনস্কাম পূর্ণ করা সহজ হবে। আর আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআলার অন্তরঙ্গ বন্ধু। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহান আল্লাহর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ার ঘোষণা নিজেই প্রদান করেছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জেনে রাখো! কারো সাথে আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব নেই, যদি কাউকে বন্ধু বানাতাম তবে আবু বকরকেই বানাতাম। তোমাদের সঙ্গী আল্লাহর ঘনিষ্ঠ বন্ধু।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬০৭০)
মহানবির সঙ্গলাভের জন্য: মানব সৃষ্টির সূচনা লগ্ন থেকে নিয়ে কেয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ এই পৃথিবীতে আগমন করেছে, করছে ও করবে তাদের সকলের মধ্যে মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে বেশি প্রিয়। তাই বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতে মর্যাদার সর্বোচ্চ স্থানে অধিষ্ঠিত থাকবেন। বেহেশতে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে থাকার অন্যতম উপায় হলো তাকে ভালোবাসা। কেননা যে ব্যক্তি যাকে ভালোবাসে তার সঙ্গেই তার হাশর হবে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রা. বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলো। অতঃপর সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললো, হে আল্লাহর রাসুল! সে লোকটি সম্পর্কে আপনি কী মনে করেন, যে একটি সম্প্রদায়কে ভালোবাসে অথচ সে তাদের সাথে মিলিত হয়নি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে যাকে ভালোবাসে পরকালে সে তার সঙ্গেই থাকবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৬১১)
নবির স্নেহশীলতার কারণে: বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মতের প্রতিটি সদস্যের প্রতি অত্যন্ত স্নেহপরায়ণ ছিলেন। নবীজির স্নেহশীলতার কারণে উম্মতের প্রতিটি সদস্যের জন্য সমীচীন হলো তাকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসা। এক হাদিসে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেকে উম্মাহর জন্য স্নেহশীল পিতার মতো বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি তার উম্মতকে স্নেহশীল পিতার মতোই ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে চলার নিয়ম কানুন পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে শিক্ষা দিয়েছেন। এমনকি তার শিক্ষা দানের আওতা হতে শৌচ কর্মের নিয়ম-কানুনও বাদ যায় নি। হজরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি তোমাদের জন্য পিতৃতুল্য, তোমাদেরকে আমি দ্বীন শিক্ষা দিয়ে থাকি। তোমাদের কেউ পায়খানায় গেলে কেবলাহমুখী হয়ে বসবে না এবং কেবলার দিকে পিঠ দিয়েও বসবে না, আর ডান হাতে শৌচ করবে না। মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনটি ঢিলা ব্যবহারের নির্দেশ দিতেন এবং গোবর ও হাড় দ্বারা শৌচ করতে নিষেধ করতেন।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ০৮)
উত্তর দিচ্ছেন: আবদুল কাইয়ুম শেখ
শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, চকবাজার, ঢাকা-১২১১
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে-ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন
শীতের দিনে ঝিরঝিরে বৃষ্টি স্থবির খুলনা শহুরে জীবন
টেকসই উন্নয়নের কথা মাথায় রেখেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য নীতি করার তাগিদ
লোকসংগীত শিল্পী নিপা আহমেদ সারাহ্ এর একক সঙ্গীত সন্ধ্যা
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি ও হার্ট ফাউন্ডেশনের কর্মশালা
বাফেদার ৩১তম এজিএম অনুষ্ঠিত
পাকিস্তান থেকে যেসব পণ্য নিয়ে এবার এলো জাহাজ
হারের বৃত্তে সিটি, নেমে গেল ছয়ে
ঈশ্বরদীতে দূর্বৃত্তের হামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আহত
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
টাঙ্গাইলে সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলেসহ নিহত ৪
মাগুরায় পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত
দেশের প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে নতুন সম্ভাবনা তৈরিতে বাজারে অত্যাধুনিক ফিড নিয়ে এল আকিজ রিসোর্স
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আফগানিস্তানের টানা ষষ্ঠ সিরিজ জয়
কমিউনিটি ব্যাংকে ট্রাফিক মামলার জরিমানা দেওয়া যাবে