রাসূলুল্লাহর স: সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা
০৫ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
“তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ ।”(আল কুরআন) আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এ বাণীর আলোকে পৃথিবীর ইতিহাস তাঁকে নানাভাবে স্বরণ করে থাকে। বিভিন্নভাবে তাঁর গুণাবলীর শ্রেষ্টত্ব ইতিহাসের পাতাকে সৌন্দর্যম-িত করে। একজন পরিপুর্ণ ও পুর্ণাঙ্গ মহামানব হিসাবে সবগুলোরই যোগ্য তিনি। সুবিশাল, বিস্তৃত ও বর্ণাট্য জীবনের অধিকারী কোন একটি দিকে তাঁকে আবদ্ধ রাখা ঠিক নয়। কারণ ‘উত্তম আদর্শ’ এর মাধ্যমে তাঁর পরিপুর্ণতা প্রকাশিত হয়েছে। ধর্ম-সমাজ-সংসার, রাজনীতি-অর্থনীতি তথা সকলক্ষেত্রেই তিনি আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বেশী আলোচিত এ ব্যক্তিত্বের প্রতিটি কথা, কাজ ও আচরণ নিয়ে বৃহৎ কলেবরে রচিত হচ্ছে পৃথক পৃথক ইতিহাস। জীবন চরিতের এই যে ঝর্ণাধারা তা কোনদিন থামবে না, থামতে পারে না। কিয়ামত তক্ পৃথিবীকে সিক্ত করতেই থাকবে।
সীরাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়তী জীবনের দুটি অধ্যায় রয়েছে। প্রথম অধ্যায়টি হলো, তের বৎসরের মাক্কী জীবন। দ্বিতীয় অধ্যায়টি হলো, দশ বৎসরের মাদানী জীবন। এ ছাড়াও নবুয়তের বাইরে চল্লিশটি বৎসর কেটেছে মাতৃভূমি মক্কায়। মোট এ তেষট্রি বৎসরের জীবন ইতিহাস পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের সামনে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে বিদ্যমান রয়েছে। মুসলিম-অমুসলিম, শিক্ষিত-অশিক্ষিত প্রায় প্রতিটি মানুষই অল্পবিস্তর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন সম্পর্কে অবগত আছেন। অবশ্য পুর্ণাঙ্গ মহামানব রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এটিও একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তা’আলা বলেন “আমি কি তোমার আলোচনাকে উচ্চতর করে দেইনি?”(সুরা নাশরাহ:৪) যারা বিভিন্ন সময় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন চরিতের সাথে অসদাচরণ করেছে, তারাও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্রতম জিন্দেগীর কোথাও যে সামান্যতম কালো অধ্যায় বা অন্ধকার নেই, তা ভালভাবই জানে। একান্ত মুসলিম বিদ্বেষী মানসিকতার কারনে বা কোন বদমতলব হাসিলের নিমিত্তে বলে বেড়ায় যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তলোয়ারের জোরে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিপ্লব সাধন করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে এটি একটি তথ্য সন্ত্রাসীর প্রলাপমাত্র। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়েই তৎকালীন অধঃপতিত সমাজকে ধ্বংসের গভীর খাদ থেকে উদ্ধার করেছিলেন। ইসলামের যুদ্ধগুলো ছিল মুলতঃ যে কোন পরিস্থিতির একটি চুড়ান্তরূপ বা চুড়ান্ত ফয়সালা মাত্র ্এবং প্রতিটি যুদ্ধই ছিল আত্মরক্ষমূলক, এর কোনটিই আক্রমতাত্বক ছিল না।
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মের সমসাময়িক মক্কার সামাজিক অবস্থা কারো অজানা নয়। সে পরিবেশটি ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ ও ন্াজুক। জন্মের পরপরই তিনি দেখতে পেলেন বংশ পরস্পরার দীর্ঘমিয়াদী অন্যায় যুদ্ধ, সন্ত্রাস, রাহাজানি, কাটাকাটি, মারামারি ও খুন-খারাপি। এ ধরনের একটি পরিবেশে যে মানবশিশুটি ভুমিষ্ট হয়ে লালিত-পালিত হতে থাকে, সামাজবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে সে শিশূটিও সে শ্রোতেই গা এলিয়ে দেয়ার কথা।কিন্তু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শ্রোতের সম্পুর্ণ বিপরীত দিকে রওয়ানা করেন। তৎকাালিন সমাজ তাঁকে বিন্দুমাত্র প্রভাবিত করতে পারেনি। চারিদিকে যুদ্ধের ঢামাঢোলের মাঝেও তিনি অধঃপতিত জাতিকে কিভাবে সর্বনাশা পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করা যায়, তা নিয়েও শিশুমন সার্বক্ষণিক চিন্তায় মগ্ন থাকতো।
তৎকালীন একটি জটিল সমস্যার সমাধান প্রক্রিয়ার দিকে থাকালে তাঁর প্রজ্ঞার পরিধি সহজেই অনুমান করা যায়। পবিত্র কা‘বার হাজরে আসওয়াদ পুনঃস্থাপনকে কেন্দ্র করে অত্যাসন্ন একটি ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধ থেকে তৎকালীন সমাজকে তিনি প্রজ্ঞার জোড়ে রক্ষা করেছিলেন। অথচ তৎকালীন মক্কার এক অভিজাত বংশের ছেলে হিসাবে অন্যান্য গোত্রের ন্যায় এটি পুনঃস্থাপনের যৌক্তিক দাবী নিয়ে তিনিও এগিয়ে আসতে পারতেন। এবং নিরপেক্ষ বিচারে হাজরে আসওয়াদ পুনঃস্থাপনের দায়িত্বে তাঁদের ওপরেই আসত। কিন্তু সামাজিক বিশৃংখলার পরিবর্তে তিনি এর সঠিক, শান্তিপূর্ণ ও প্রজ্ঞাপুর্ণ সমাধানই দিয়েছিলেন। এভাবে ওহীবিহিন জিন্দিগীর ৪০টি বৎসর সামাজিক কল্যাণমুলক বিভিন্ন কর্মসুচী হাতে নিয়ে সমাজিক শৃংখলা ফিরিয়ে আনার আপ্রান প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। ফলে নৈতিকতার চরম বিপর্যয়ের সে যুগে অত্যন্ত কঠিণ হৃদয়ের মানুষগুলোর মন জয় করতে পেরেছিলেন। তাদের মাঝে তিনি সম্মানীত ব্যক্তির মর্যাদা ‘আল-আমীন’ হিসাবে পরিচিত ছিলেন।
শুরু হলো, নবুয়তী জিন্দিগীর মক্কা পর্ব। তিনি আল্লাহর নির্দেশ পেয়ে দূর্দশাগ্রস্থ তৎকালিন সমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে উদ্ধারে নিজেকে মনোনিবেশ করলেন। অধঃপতিত সমাজকে উদ্ধারের নিমিত্তে আল্লাহ তা’আলাই তাঁকে প্রজ্ঞা ও উত্তম উপদেশ ব্যবহারের নির্দেশ দেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“হে নবী, তোমার রবের পথে লোকদেরকে ডাকো, হেকমত এবং উত্তম উপদেশের মাধ্যমে।”(আন-নাহল ঃ ১২৫) তাই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বুদ্ধিমত্তার সাথে শ্রোতার মানসিকতা ও সামর্থ এবং ধারণ ক্ষমতা বুঝে উপযুক্ত স্থান, সময় ও সুযোগ অনুযায়ী দাওয়াত প্রদান করতে থাকেন। সব ধরনের লোকদেরকে একই ডান্ডা দিয়ে সোজা করার চেষ্টা করা ঠিক মনে করেননি। যে সকল ব্যক্তিবর্গের কাছে দাওয়াত পেশ করার ইচ্ছা পোষণ করতেন-প্রথমে তিনি তার রোগ নির্ণয় করতেন। অতঃপর এমন সব যুক্তি ও প্রমাণের সাহায্যে তার চিকিৎসা করতেন-যা তার মন-মানসিকতার গভীর থেকে সমস্ত রোগের উৎস মুল উপড়ে ফেলতে সামর্থ হতেন। শুধুমাত্র যুক্তি প্রমাণ দিয়ে বুঝিয়ে রাখার চেষ্টাকে যতেষ্ট মনে করেননি; বরং তার অনুভূতিকে জাগিয়ে তোলার চেষ্ঠা করেন। এ জন্য তিনি মানুষের মধ্যে জন্মগত ভাবে অন্যায়ের প্রতি যে ঘৃণা ও নফরত রয়েছে তাকে জাগ্রত করে এগুলোর অশুভ পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দেন। আমলে সালেহ্র প্রতি আকর্ষণ ও মহব্বত পয়দা করেন।
তিনি মানুষের মন-মননে ‘আল্লাহ ও আখিরাতের ভয়’ জাগ্রত করার কাজে মনোনিবেশ করেছিলেন। এ জন্য তিনি নেতিবাচক তথা উদ্যতভাব, খরগহস্ত ও কর্কষভাষী হননি। বরং তাঁর মনের সবটুকু দরদ ঢেলে দিয়ে, একান্ত অকৃত্রিম হিতাকাংঙী সেজে ও অত্যন্ত কোমলভাবে মানুষকে বুঝিয়েছেন। যার স্বীকৃতি স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা এভাবে দিয়েছেনঃ “আপনি যে, কোমল হৃদয় হতে পেরেছেন, সে আল্লাহ তা’আলার অনুগ্রহেরই ফল। কিন্তু আপনি যদি কঠিণ হৃদয় ও কর্কশভাষী হতেন তাহলে তারা সকলে আপনাকে ছেড়ে চলে যেত।” (সুরা আলে ইমরানঃ১৬) আল্লাহর পক্ষ থেকেও এ কৌশলই তাঁর প্রিয় বান্দাহকে অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “হে নবী, ভালো ও মন্দ কখনো সমান হতে পারে না। মন্দকে ভালো পন্থায় প্রতিরোধ করো। তখন দেখবে, তোমার সাথে যার শুত্রুতা, সে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধুতে পরিণত হয়েছে।(সুরা হা-মীম আস সেজদা-১৮) তাঁর প্রিয় রাসুলের প্রতি অবতীর্ণ প্রথম প্রথম আসমানী ফরমানগুলোর অধিকাংশই ছিল ‘আল্লাহ ও আখিরাতের ভয়’ সম্বলিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কী জীবনের আয়াতগুলো তার বাস্তব প্রমাণ। এ সমস্ত ফরমানের আলোকে তিনি বিশ্ববাসীকে প্রথমতঃ নৈতিকতা ও মানবতার চতুঃসীমার মধ্যে আবদ্ধ করার চেষ্ঠা করেন।
তিনি মানুষদেরকে তাওহীদ, রেসালাত, আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন এবং সমাজ কায়েমের আহবান জানাতেন। আল কুরআনে অঙ্কিত আখিরাতের ভয়াবহ দৃশ্য উপস্থাপণ করতেন। পাশাপাশি চুরি, ব্যভিচার, সন্তান হত্যা. মিথ্যা বলা, রাহাজানি করা, আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে ফিরানো প্রভৃতি কাজ থেকে বিরত রাখা ও তাদের মনে ঘৃণা জন্মানোর চেষ্টা করেন। তার লক্ষ্য ছিল আত্মার পবিত্রতা সাধন, মন মানসে মলিনতা, শোষণ এবং জৈবিক ও পাশবিক পংকিলতা সমুহ প্রক্ষালন করে মানুষের শ্রেষ্টত্বের মর্যাদাকে পুনরুদ্ধার করা। এ লক্ষ অর্জনে প্রথমেই তিনি তরবারীর কাছে নয় বরং হেদায়াতের আলোর প্রয়োজনীয়তাকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। হাত, পা ও মাথাকে নত করার আগে মানুষের মনের ব্যকুলতার প্রয়োজনীয়তার অনুভব করেছেন। শারীরিক বশ্যতার আগে আত্মার আনুগত্যশীলতাকে উজ্জীবিত করেছেন। কারণ আল্লাহর ভয় যার মনকে বিচলিত করে না, মানুষের ভয় তাকে কিভাবে বিচলিত করবে ?
হিযরতের মাধ্যমে শুরু হয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাদানী জীবন। এ জীবনেই সসস্ত্র যুদ্ধগুলো সংগঠিত হয়েছে। যদিও প্রতিটি যুদ্ধই ছিল মানবতার কল্যাণ ও সন্ত্রাসকে নির্মুল করে একটি সুস্থ সমাজ উপহার দেয়ার জন্য। সকল প্রকার বিপর্যয় ও নৈরাজ্য, লোভ ও লালসা, শত্রুতা ও প্রতিহিংসা, গোঁড়ামী ও কুপমন্ডুকতার সর্বাত্মক আগ্রাসনের প্রতিরোধের জন্য।তথাপি তিনি সর্বদা চেষ্টা করেছেন কিভাবে যুদ্ধকে এড়িয়ে শান্তিপুর্ণ উপায়ে সকল সমস্যার সমাধান করা যায়। তিনি চেষ্টা করেছেন ব্যাপক প্রাণহানি যাতে না ঘটে।
হুদায়বিয়ার সন্ধি হলো, তার অন্যতম উদাহরণ। হুদায়বিয়ার সন্ধি মুসলমানদের বা মুসলিম উম্মাহর শিক্ষা গ্রহনের এক গুরুত্বপূর্ন অধ্যায়। যদিও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কর্মময় জীবনের প্রতিটি অধ্যায় ও বিভাগ আমাদের চলার পথের পাথেয় হিসাবে সমান গুরুত্বের দাবীদার এবং চিরন্তন শিক্ষার দীপশিখা। তথাপি হুদায়বিয়ার সন্ধি একদিকে ইসলামের ইতিহাসে ইসলামী আন্দোলনের এক টার্নিং পয়েন্ট হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে আবহমানকাল ধরে। আর অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলনের জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুরদর্শী এ চিন্তার অনুুপম কৃতিত অম্লান থাকবে চীরদিন। এ সন্ধি এক দিকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রাজনৈতিক ও কুটনৈতিক প্রজ্ঞা, দুরদর্শিতা ও যোগ্য নেতৃত্বের বহি:প্রকাশ ঘটায়। অপরদিকে ইসলামকে পৃথিবীর বুক হতে মিটিয়ে দেয়ার জন্য সম্মিলিত কুফুরী শক্তি আধাজল খেয়ে মাঠে নেমেছিল, তারাই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গভীর প্রজ্ঞা ও সূচিন্তিত পদক্ষেপের কাছে আত্মসর্মপন করে সন্ধি চুক্তির মাধ্যমে প্রথমতঃ ইসলামী শক্তির অস্তিত্বকে স্বীকার করে নিল বা পৃথিবীবাসীর কাছে ইসলামকে এক উল্লেখযোগ্য শক্তির জানান দিল, দ্বিতীয়তঃ ইসলামের চুড়ান্ত বিজয়ের দ্বার উন্মোচিত করে দিল। বাহ্যিক দৃষ্টিতে সন্ধির ধারাগুলো ছিল মুসলমানদের স্বার্থের সম্পুর্ণ প্রতিকুলে। এমনকি এতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একান্ত অনুগত সাথীবর্গ পর্যন্ত সংশয়ে নিপতিত হয়েছিলেন। কিন্তু মুসলমানদের শত দুশ্চিন্তা ও অত্যন্ত বিচলিতা বোধ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দূরদর্শিতায় বিন্দুমাত্রও প্রভাব বিস্তার করতে পারিনি। বরং মরুদিগন্তে ইসলামী বিজয়ের সবুজ পতাকা তাঁর মনের আয়নায় পত্ পত্ করে উড়ছিল।
বরং এই সন্ধিকে আল্লাহ তা’আলা সুস্পষ্ট বিজয় বলে স্বীকৃতি দিলেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,“ হে নবী আমি তোমাকে সুষ্পষ্ট বিজয় দান করেছি যাতে আল্লাহ তোমার আগের ও পরের সব ত্রুটি-বিচ্যুতি মাফ করে দেন, তোমার জন্য তাঁর নিয়ামাতকে পূর্ণত্ব দান করেন, তোমাকে সরল সহজ পথ দেখিয়ে দেন এবং অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে সাহায্য করেন। তিনিই তো সে মহান সত্তা যিনি মু’মিনদের মনে প্রশান্তি নাযিল করেছেন যাতে তারা নিজেদের ঈমান আরো বাড়িয়ে নেয়। আসমান ও যমীনের সমস্ত বাহিনী আল্লাহর কর্তৃত্বাধীন। তিনি মহাজ্ঞানী ও কৌশলী।” (সুরা ফাতাহ্ ঃ ১-৪)
সন্ধির পর এ ধরনের সুসংবাদ শুনানো হলে লোকজন বিস্মিত হলো এ ভেবে যে, এ ধরনের একটি বৈষম্যমূলক ও চরম অবজ্ঞাপূর্ণ অসম সন্ধিকে বিজয় বলা যায় কি করে ? ঈমানের ভিত্বিতে আল্লাহর নির্দেশ মেনে নেয়া ভিন্ন কথা। কিন্তু তাকে বিজয় বলাটা কারোরই বোধগম্য হচ্ছিলনা । এ আয়াতটি শুনে হযরত উমর রাঃ জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! এটি কি বিজয়? কিন্তু রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের পর মুসলমানগণের সামনে বহিপ্রকাশ ঘটল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রাজনৈতিক ও কুটনৈতিক প্রজ্ঞা, দুরদর্শিতা ও যোগ্য নেতৃত্ব। পরবর্তিকালে উমার রাঃ বলতেন, “আমি সেদিনের সেই ভ্রান্ত আচরনের জন্য সারাজীবন সাদকা, নামায, রোযা ও গোলাম আযাদ করার মাধ্যমে কাফ্ফারা দেয়ার চেষ্টা চালিয়েছি। আমার কথা গুলোর খারাপ পরিণতি থেকে বাঁচার জন্য এসব করেছি। অবশেষে আমার আশার সঞ্চার হয়েছে যে, আমি ভাল ফল পাবো।”
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিরলস প্রচেষ্টায় গড়ে উঠে উন্নত চিন্তা, পবিত্র চরিত্র, পরিশীলিত আচরণ, নিরলস প্রয়াস, নিঃস্বার্থক, ত্যাগ-তিতিক্ষা, নিভীর্ক ও জ্ঞানের স্বচ্ছতা সম্পন্ন একদল মানুষ। ফলে অমানিশার ঘনঘোর অন্ধকারে উদিত হলো আদশের সুর্য। তাঁর নেতৃত্বে গড়ে উঠলো এক নতুন সমাজ ও সভ্যতা। প্রতিষ্ঠিত হলো মদীনা নামক ইসলামী রাষ্ট্র। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গড়া সমাজ ও রাষ্ট্রের দিকে গভীরভাবে মনোযোগ নিবদ্ধ করলে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলোকিত মানুষ গড়ার কাজে মন দিয়েছিলেন।
আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কর্মপন্থা গ্রহণ করার তাওফিক দিন। আমিন।
লেখক: ইসলামী চিন্তাবিদ, গবেষক।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন
শীতের দিনে ঝিরঝিরে বৃষ্টি স্থবির খুলনা শহুরে জীবন
টেকসই উন্নয়নের কথা মাথায় রেখেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য নীতি করার তাগিদ
লোকসংগীত শিল্পী নিপা আহমেদ সারাহ্ এর একক সঙ্গীত সন্ধ্যা
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি ও হার্ট ফাউন্ডেশনের কর্মশালা
বাফেদার ৩১তম এজিএম অনুষ্ঠিত
পাকিস্তান থেকে যেসব পণ্য নিয়ে এবার এলো জাহাজ
হারের বৃত্তে সিটি, নেমে গেল ছয়ে
ঈশ্বরদীতে দূর্বৃত্তের হামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আহত