তাঁর চরিতের কাছে ফিরে আসতেই হবে
১২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
ক্লান্ত পাখিরা দিন শেষে ফিরে আসে আপন নীড়ে, নদীর পানি কল কল রবে বয়ে যায় সমুদ্রের পানে, দিন ঢুকে পড়ে রাতের অন্ধকারে, রাত দূরীভূত হয় দিনের আলোয়- এভাবে সকলেই ফিরে যায়, ফিরে আসে, ফিরে আসতে হয় তার আসল ঠিকানায়। পৃথিবীও ঘুরে ফিরে আশাহত ভঘœ হৃদয় নিয়ে বার বার আশ্রয় নেয় মহান এক চরিতের কাছে, তিনি হলেন, মানবতার পরম সহৃদ মহান বন্ধু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি খুলুকে আজিম বা বিশাল চরিত্রের অধিকারী। তাঁর চরিতই হলো অশান্ত পৃথিবীর শান্তির ঠিকানা। সুতরাং তাকে ফিরে আসতেই হবে। পৃথিবী তো অনেকবার অনেক চরিতের কাছে গিয়েছে। কিন্তু কোথাও শান্তি নাই। কারণ তাদের চরিত্র ছিল আংশিক, একপেশে এবং একান্তই সীমিত ও নি¤œ পর্যায়ের। একমাত্র মুহাম্মদ সা: এর চরিত্রই ছিল মহান যা তাঁর প্রভুই তাকে দান করেছেন এবং তিনি ঘোষনাও করেছেন। তিনি বলেছেন, “ইন্নাকা লা’আলা খুলকিন আজিম”।
“ওয়া ইন্নাকা লা‘আলা খুলুকিন আজিম” অর্থাৎ এবং নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী (সুরা কলম-৪)। বলেছেন স্বয়ং মহান রাব্বুল আলামীন যিনি নিজে ‘রাব্বিয়াল আজিম’। আয়াতে ব্যবহৃত “আজিম” শব্দটি আল্লাহর গুণবাচক নাম সমুহের একটি। অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তা’আলা এমন মহান বা বিশাল সত্ত্বা যার মহানত্ব ও বিশালতার সীমা পরিসীমা আমাদের কল্পনা, চিন্তা ও ইন্দ্রিয়ানুভূতির অনেক বাইরে। অর্থাৎ তিনি সীমা বা আয়ত্বের দূর্বলতা থেকে পবিত্র। এমন কি কেউ তার বড়ত্বের একটা আন্দাজ করেছেন তিনি সেই আন্দাজ-অনুমান থেকেও পবিত্র। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নৈতিক চরিত্রের মহানত্ব প্রকাশ করার জন্য আল্লাহ তা’আলা ‘আজিম’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এর দ্বারা এই কথাই বুঝানো হয়েছে যে, তাঁর চরিত্রের বিশালতাও সীমাহীন। আমাদের কল্পনা, চিন্তা ও ইন্দ্রিয়ানুভূতিরও বাইরে।
‘আজিম’ শব্দটি সম্পর্কে শুরুতেই বলা হয়েছে যে, এটি এমন বিশালতার প্রকাশ ঘটায় যার সীমা পরিসীমা আমাদের কল্পনা, চিন্তা ও ইন্দ্রিয়ানুভূতির বাইরে। যার বিশালতাকে কোন পরিমাপক যন্ত্রও আয়ত্ব করতে পারে না। যার দৈর্ঘ, প্রস্ত ও উচ্চতা আয়ত্ব করা মানুষের সাধ্যের বাইরে। মানুষ গ্রহ-নক্ষত্র, চাঁদ-সুর্য ও সৌরজগত সম্পর্কে আনুমানিক বা মোটামুটি একটি ধারণা আয়ত্ব করতে পারে। বিশাল সৌরজগতে বা বিশাল সৃষ্টি জগতে সুর্য হলো, আল্লাহর একটি বৃহৎ ও শক্তিশালী সৃষ্টি। আধুনিক আকাশ বিজ্ঞানীরা সুর্য সম্পর্কে সঠিক হোক আর বেঠিক হোক একটি পরিমাপ তারা করতে পেরেছে যে, সুর্য সমগ্র সৌরজগত নিয়ে প্রতি সেকেন্টে ২০ কিলোমিটার গতিতে এগিয়ে চলছে। পৃথিবী থেকে সুর্যের দুরত্ব ১৫ কোটি ৬৬ লক্ষ মাইল। কিন্তু ‘আজিম’ এর পরিমাপ করা কোন বিশেষজ্ঞের পক্ষে আদৌ সম্ভব হয়নি আর হবেও না।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নৈতিক চরিত্রের সর্বোত্তম সংগা দিয়েছেন উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা:। তিনি বলেছেন, কুরআনই ছিলো তাঁর চরিত্র। কুরআন সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,“ওয়ালাকাদ আতাইনা সাবয়াম মিনাল মাসানি ওয়াল কুরআনিল আজিম” অর্থাৎ “আমি তোমাকে এমন সাতটি আয়াত দিয়ে রেখেছি যা বার বার আবৃত্তি করার মতো এবং তোমাকে দান করেছি মহান কুরআন”(সুরা হিজর:৮৭) কুরআনের বেলায়ও ‘আজিম’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যার অর্থ এ এক মহান বা বিশাল কিতাব, যার মহত্ব ও বিশালতার কোন সীমা পরিসীমা নেই। এটি সকল কালের জন্য প্রযোজ্য, যা কখনো সেকেলে বা পুরাতন হয় না। সকল কালের জন্য এটি নতুনভাবে আবির্ভুত হয়। কুরআনের মহত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন, ”আমি যদি এ কুরআন কোন পাহাড়ের উপড়ও অবতীর্ণ করে দিতাম তাহলে হে নবী! আপনি লক্ষ্য করতেন যে, আল্লাহর ভয়ে ধসে যাচ্ছে, দীর্ণ-বিদীর্ণ হচ্ছে।”(সুরা হাশর-২১) ”আমি আকাশ পৃথিবী ও পর্বতমালার সামনে এ আমানত (আল-কুরআন) পেশ করলাম। কিন্তু তারা তা গ্রহন করতে প্রস্তুত হল না, তারা ভয় পেয়ে গেল।কিন্তু মানুষ তার স্কন্ধে তুলে নিল।”(সুরা আহযাব-৭২)”অচিরেই আমি তোমার উপড় একটি ভারী কিছু রাখতে যাচ্ছি।” (সুরা মুয্যাম্মেল-৫)
যেহেতু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন জীবন্ত কুরআন সেহেতু তাঁর চরিত্রও ছিল মহান। তাঁর চরিত্র বা সুন্নাহ সকল কালের জন্য প্রযোজ্য। তাঁর চরিত্র বা সুন্নাহ কখনো সেকেলে বা পুরাতন হয় না। বরং সকল যুগে সকল কালে রাসুলের চরিত্র ও সুন্নাহ নতুনভাবে কার্যকরী প্রতিষেধক। তাই তাঁর মহান চরিত্র চীর আধুনিক এবং যে কোন যুগ বা কালের সংকীর্ণতার উর্ধ্বে। আর এটিই ‘খুলুকে আজিম’ এর প্রধান বৈশিষ্ট্য। অর্থাৎ পৃথিবী যখন যেই সমস্যার সম্মুখীন হবে, রাসুলের চরিত্র ও সুন্নাহ তখন কার্যকরী প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করবে। সুতরাং পৃথিবীকে তাঁর চরিতের কাছে ফিরে আসতেই হবে। বিকল্প পথে শুধু শুধুই মানবতার লাঞ্চনা ও প্রবঞ্চনা ছাড়া আর কিছুই নহে।
আপনি যদি আমাকে প্রশ্ন করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্র কেমন ছিল? তাহলে আমি আপনাকে পাল্টা প্রশ্ন করবো যে, আচ্ছা আপনি তো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্র সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন, তার আগে আপনি পৃথিবীর দ্রব্য সামগ্রীর একটা বর্ণনা পেশ করুন তো? আপনি বলবেন, তা কি আদৌ সম্ভব হতে পারে? তাহলে আপনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্র সম্পর্কে অবহিত করা কিভাবে সম্ভব? কারণ আল কুরআনে দুনিয়ার দ্রব্য সামগ্রীকে মহান আল্লাহ ‘কালীলা’ বা স্বল্প বলে আখ্যায়িত করেছেন, অথচ এই স্বল্পের বর্ণনাকে আপনি অসম্ভব বলছেন। অথচ সেই কুরআনেই আল্লাহ তা’আলা তাঁর রাসুলের চরিত্রের বর্ণনা দিয়েছেন “আজিম” শব্দ দিয়ে। অর্থাৎ তিনি বিশাল বা মহান চরিত্রের অধিকারী। দুনিয়ার সমস্ত দ্রব্য-সামগ্রীকে বলা হয়েছে “কালীলা” বা যতসামান্য স্বল্প আর রাসুলের চরিত্রকে বলছেন “আজিম” বা মহান। আপনি যদি স্বল্পের উত্তর না দিতে পারেন তবে আমি কি কওে আজিম এর উত্তর দিবো?
কিন্তুু দু:খের বিষয় হলো, আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সেই মহান চরিত্র ও সুন্নাহকে ভুলে মানুষের মস্তিস্ক প্রসূত চিন্তার দ্বারন্থ হই, ফলে সমাধানের পরিবর্তে হাজারো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার জালে আবদ্ধ হয়ে জীবনকে অতিষ্ট করে তুলি। তাই বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে অনুরোধ পৃথিবীতে শান্তি আনয়নের জন্য, পৃথিবীকে সন্ত্রাসমুক্ত করার জন্য, পৃথিবীকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য ও পৃথিবীকে মানুষের বাস উপযোগী করার জন্য হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহান চরিতের অনুসরণ করুন। আমি জানি, একটু শান্তির প্রত্যাশায় বিশ^ নেতৃবৃন্দ দিন-রাত মাড়িয়ে চলেছেন। তাদের আন্তরিকতার প্রশ্নে কোন মন্তব্য না করে তাদের এ চলা যে অনেকটা তারাহীন রাত্রির দিকভ্রান্ত পথিকের মতো তাতে সন্দেহ নেই। শান্তির প্রত্যাশায় প্রয়োগকৃত তাদের হাজারো ভ্রান্ত উদ্যোগ বার বার চপেটাঘাত করে শুধু ফিরিয়েই দিচ্ছে। দুর্ভাগ্য ও দু:খ তাদের জন্য, যারা দেখে না, বুঝে না অতি নিকট ইতিহাসে ঘটে যাওয়া দিবালোকের মতো স্পষ্ট একজন মানুষ এসেছিলেন নিকষ অন্ধকারে ডুবে থাকা জাজিরাতুল আরবের বুক চিরে, তপ্ত বালুকায় চিক চিক আলো রশ্মির ঢেউ তুলে মরু সাইমুম মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম:। তিনি আল্লাহর নির্দেশনায় শত শত বছরের অন্ধকারে ঘুমন্ত মানুষকে জাগিয়ে তুললেন। অন্ধকার দূরীভুত হলো, মানুষ জেগে উঠল একরাশ সোনালী আভায়। পথহারা মানুষ ফিরে পেলো সঠিক পথের দিশা।
এই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আজকের বিশে^র নেতৃবৃন্দ ও প্রতিটি দেশের শাসকবৃন্দকে আবারো বলছি সত্যিই আপনারা যদি বিবেকের সাথে প্রতারণায় লিপ্ত না হোন, সত্যি সত্যিই পৃথিবীতে বা প্রত্যেকের সংশ্লিষ্ট দেশে সার্বিক শান্তি আনতে চান এবং পৃথিবীকে সন্তাস ও জঙ্গীমুক্ত করতে চান, যা কোনক্রমেই পারছেন না, খুব দ্রুত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিতের দিকে মনোনিবেশ করুন। আমি আবারো জোর দিয়ে বলছি আপনার রাষ্ট্র ও সমাজ নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ আবাসস্থল হিসেবে একশভাগ গড়ে উঠবে।
লেখক: কলামিষ্ট ও গবেষক।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের
ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন
শীতের দিনে ঝিরঝিরে বৃষ্টি স্থবির খুলনা শহুরে জীবন
টেকসই উন্নয়নের কথা মাথায় রেখেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য নীতি করার তাগিদ