ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

চট্টগ্রামের শহর কুতুব শাহ্ আমানত (র.)

Daily Inqilab মুহাম্মদ কায়ছার উদ্দীন আল-মালেকী

২৭ জুন ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৭ জুন ২০২৪, ১২:০১ এএম

চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একটি সুপরিচিত নাম। সাগর, পাহাড়, নদীর এক অপরূপ সৌন্দর্যের উপর ভর করে দাড়িঁয়ে আছে বারো হাজার বছরের পুরানো শহর চট্টগ্রাম; যাঁকে ইতিহাসবিদরা মদীনাতুল আউলিয়া বলে আখ্যায়িত করেছেন। চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী-ও। সেই প্রাচীনকালেও সমুদ্র পথের বাণিজ্যিক জাহাজগুলো-ও চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙ্গর করতো। শিল্প, বাণিজ্য, ইতিহাস, ঐতিহ্যের মতো ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও অঞ্চলের গৌরাবান্বিত ইতিহাস রয়েছে। রাসূল (দ.)’র সাহাবাদের পদধূলিতে ধন্য হয়েছে এ নগরী। এসেছেন বিশ্ববিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা-ও। এ নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে হাজারো ধর্মপ্রচারক পীর-আউলিয়ার গৌরবান্বিত জীবন কাহিনী, ইতিহাস, ঐতিহ্য। এ ধন্য নগরীর হাজারো স্মৃতির সাথে জড়িয়ে আছে অষ্টাদশ শতকের প্রখ্যাত অধ্যাত্মবিদ, মরমি চিন্তানায়ক, বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, পীরে মুকাম্মেল, শহর কুতুব, হজরত শাহ্সুফি সৈয়দ আমানত শাহ্ (র.)। পাক-ভারত উপমহাদেশে তিনি আত্মিক শুদ্ধপুরুষ হিসেবে সর্বসমহলে সমাদৃত ও প্রসিদ্ধ অধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব।
ইতিহাসগ্রন্থে জন্মসাল উল্লেখ না থাকলে-ও ইতিহাস পর্যালোচনা করে অনুমান করা যায় যে, তাঁর জন্ম সপ্তদশ শতাব্দীতে; অর্থাৎ ১৬৭৪-১৬৬৪ সাল। অনুমান করা যায় যে, শিক্ষক মাও. আবদুর রহিম শহীদ কাশ্মীরীর (জন্ম- ১৬৫৪, ওফাত- ১৭৪৫ খ্রি.) সোহবতে আসেন; আনুমানিক ২০-৩০ বয়সে। ওস্তাদের আনুমানিক বয়স ছিলো ৪০ বছর। এ হিসেবে তাঁর জন্মসাল দাঁড়ায় ১৬৭৪-১৬৬৪ খ্রি.।
বিহার ভারতের একটি রাজ্য। বিহারের রাজধানী পাটনা শহর। বিহার তার ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত। এ নগরীতে জন্ম নেন, বড়পীর আবদুল কাদের জিলানীর অধস্তন বংশধর পীর শাহ্ আমানত (র)। জনশ্রুতি আছে, তাঁর পূর্বপুরুষদের আদি নিবাস ছিল ইরাকের বাগদাদে। ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে পিতামহ শায়খ ছদরুদ্দীন (র.) স্ব-পরিবারে চলে আসেন ভারতের বিহারে। পিতার ওফাতের পর পুত্র শাহ্সুফি নিয়ামত (র.)-ও ধর্মপ্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। তাঁদের হাতে অসংখ্য মানুষ ইসলাম কবুল করেছেন। শাহ্ নিয়ামত’র ¯েœহধন্য সন্তান ছিলেন, শাহ্ আমানত (র.)।
তৎকালীন সময়ে সুফিয়ানে কেরামের নিরাপদ স্থান ছিল- কাশ্মীর, পাটনা, লক্ষেèৗ, মুর্শিদাবাদ, বিহার। বহু সুফি-দরবেশ বিহারে খানকা প্রতিষ্ঠা করে ইসলামের সুবিশাল খেদমতের আঞ্জাম দিয়েছেন। সমকালীন সময় বসবাস করতেন, হযরত শাহ্সুফি মখদুম শাহ্ মুহাম্মদ মোনেম পাকবাজ (র.)। দু’জনেই পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন।
শাহ্ আমানত (র.) পারিবারিক পরিবেশে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে স্থানীয় আলেমদের সাহচর্যে শরিয়ত ও তরিক্বতের প্রাথমিক জ্ঞান শিক্ষা নেয়। পরবর্তীতে তরিক্বত জগতের এক আকুল ইশারায় পিত্রালয় ত্যাগ করে কাশ্মীরের সুপ্রসিদ্ধ আলেমেদ্বীন ও পীরানে তরিক্বত মাওলানা শাহ্সুফি আবদুর রহিম শহীদ কাশ্মীরি (র.)’র সাহচর্যে তরিক্বতের ইলম হাসিল করেন; এভাবে প্রায় বারো বছর পীরের পায়রবি করে ইলমে মারিফতের অফুরন্ত নেয়ামত হাসিল করেন। আল্লামা ইকবাল বলেছিলন,‘তোমার পথ আমিরি নয়; ফকিরি’।
কাশ্মীরী (র.) তাঁর অভাবনীয় আত্মোৎকর্ষিত রূহানি শক্তির প্রাণসঞ্চার অনুভব করে। তিনি অনুধাবন করতে পারলেন, তাঁর অন্তরে আল্লাহর প্রেমের জজবায়ে মারেফতের ধন-ভান্ডার পরিপূর্ণ এবং আল্লাহর সাথে মিলনাঙ্খায় অতিশয় ব্যাকুল। রূহানি শক্তি মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিতে তিনি তাঁকে আরো গভীরভাবে ইলমে মারিফতের তালিম দেন। এক পর্যায় তিনি মঞ্জিলে মকসুদে পৌঁছে যান এবং আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় হাবিব রাসূলে আকরাম (দ.)’র রূহানি সংযোগ স্থাপনে চূড়ান্ত সফলতায় উত্তীর্ণ হন। এক শুভলগ্নে কাশ্মীরী (র.) তাঁকে কাদেরিয়া, চিশতিয়া, মাদারিয়া, নকশবন্দিয়া ও মোজাদ্দেদিয়া তরিক্বার খেলাফতের দায়িত্ব অর্পণ করেন। তিনি পীর ভাইদেরও ফয়য ও তাওয়াজ্জুহ প্রদান করতেন। তিনি সবসময় কাশ্মীরী (র.)’র চারটি নির্দেশনা মেনে চলতেন, (ক) পার্থিব কার্যকলাপের মাধ্যমে আল্লাহর জিকির, (খ) রসুল (দ.) এর যাবতীয় সুন্নতের পায়রবি (গ) হালাল উপায়ে জীবিকার্জন, (ঘ) মৌনতা অবলম্বন। আমানত শাহ্ (র.)’র পীর ভাইগণ অধিকাংশই কাশ্মীরের আলেম-ওলামা; তবে উল্লেখযোগ্য কজন হলেন- মাওলান শাহ্সুফি আব্বাস (র.), হজরত শাহ্সুফি পীর মুহাম্মদ (র.), হজরত শাহ্সুফি নজিমুদ্দীন (র.), শাহ্সুফি বাহাউদ্দীন (র.) প্রমুখ। তিনি শরিয়ত ও তরিক্বতের সর্বোচ্চ জ্ঞান লাভ করে ধর্মপ্রচারে আত্মনিয়োগ করেন এবং সর্বোচ্চ সফলতার সাথে জীবনের মধ্যসীমা পর্যন্ত ভারতে তরিক্বতের অজ¯্রধারায় খেদমতের আঞ্জাম দেন। কাশ্মীরী (র.)’র নির্দেশে তিনি অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে বঙ্গদেশের পূর্বাঞ্চলে হিজরত করেন। তৎকালীন সময়ে (মুঘল আমল) চট্টগ্রামের নাম ছিলো ইসলামাবাদ। শাহ্ আমানত (র.) চট্টগ্রামে শুভ আগমনকাল নিয়ে ইতিহাসবিদদের মাঝে মতানৈক্য থাকলে-ও বস্তুত তিনি চট্টগ্রামে শুভ আগমন করেন, আনুমানিক অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে। উইকিপিয়া তথ্যমতে, আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ। চট্টগ্রাম বিজয়ের স্মৃতি ধরে রাখতে সম্রাট আরঙ্গজেবের নির্দেশে শায়েস্তা খাঁ ১৬৬৭ খ্রিষ্টাব্দে মসজিদটি নির্মাণ করেন। ১৭২৩ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রামের আরেক মোঘল ফৌজদার ইয়াসিন খাঁ কিছুটা দূরে পাহাড়ের দক্ষিণ-পূর্ব দিকের একটি টিলার উপর আরেকটি পাকা মসজিদ নির্মাণ করে তাতে ‘কদম রসূল’ রাখলে সাধারণের কাছে মসজিদটি গুরুত্ব পেয়ে যায় এবং আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ তুলনামূলক লোকশূন্য হয়ে পড়ে। ১৭৬১ খ্রিষ্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী, মসজিদটিকে গোলাবারুদ রাখার গুদাম হিসেবে ব্যবহার করতে থাকে। ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে ঐতিহাসিক হামিদুল্লাহ খাঁ’র আবেদনের প্রেক্ষিতে মসজিদটি মুসলমানদের জন্য আবারও উন্মুক্ত করা হয়।
‘আজিমপুর দায়রা শরীফ’ বই এবং উইকিপিয়া তথ্যমতে, আজিমপুর দায়রা শরীফের প্রতিষ্ঠাকাল ১৭৬৬-১৭৬৮ সাল। শাহ্সুফি সৈয়দ দায়েম শাহ্’র তরিক্বতের প্রথম শায়খ শাহ্ আমানত (র.), দ্বিতীয় শায়খে তরিক্বত হলেন, শাহ্সুফি মখদুম শাহ মুহাম্মদ মোনেম পাকবাজ (র.); তিনি পাকবাজের পায়রবিতে ছিলেন ১২ বছর। তারপর পাকবাজের আদেশ অনুযায়ী তিনি বঙ্গদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। স্বদেশে ফিরে তিনি সর্ব সর্বপ্রথম স্বাক্ষাৎ করেন, পীর শাহ্ আমানত (র.)’র সাথে।
শাহ্ আমানত (র.) ¯েœহধন্য রূহানী সন্তান সৈয়দ সুফি দায়েম পাক (র.) কে প্রায় এক যুগ পরে দেখে খুশিতে মাতোয়ারা। খেতে দিলেন কাঠাল। তৎপর অতীতের ভুল ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখে পুনরায় বেলায়াত দান করেন এবং ক্বাদেরিয়া, চিশতিয়া, নকশবন্দিয়া ও মুজাদ্দেদিয়া তরিক্বাভূক্ত মাদারিয়া সিলসিলার খেদমতে বায়াত করার অনুমতি ও খেলাফতের দায়িত্ব অর্পণ করেন।
কাশ্মীরী (র.) ও শাহ্ আমানত (র.)’র জীবন কাহিনী মূলক বিভিন্ন গ্রন্থের বর্ণনা মতে, কাশ্মীরী (র.) হায়াতে থাকাবস্থায় তিনি প্রায়শ ঢাকার লক্ষ¥ীবাজারস্থ (মিয়া সাহেবের ময়দান) খানকায় যাওয়া-আসা করতেন। বার্ধক্যাবস্থায়-ও কাশ্মীরী (র.)’র মাজার জিয়ারতের জন্য ঢাকায় আসতেন। কাশ্মীরী (র.) ভারতের মুর্শিদাবাদ হতে ঢাকার আসেন ১১২০ হিজরীতে (১৭০৯ খ্রি), ওফাতকাল ১৭৪৫ ইং। এসব তথ্য উপাত্ত থেকে অনুমান করা যায়, কাশ্মীরী (র.) এবং সাগরেদ শাহ্ আমানত একই সময়ে বঙ্গদেশে শুভ আগমন করেন।
ঐতিহাসিক মৌলভী হামিদুল্লাহ খান বাহাদুর এর ভাষ্যমতে, শাহ্ আমানত (র.) বিহার থেকে এসে চট্টগ্রামের লালকুঠির নিকটে তথা- লালদীঘির পূর্ব সীমান্তের একটি কুড়েঁ ঘরে বসবাস করতেন। পরবর্তীতে সেখানে খানকা স্থাপন করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
শাহ্ আমানত (র.) চট্টগ্রামে শুভ আগমনের পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম কোর্টে কাজ করতেন কিনা এ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মাঝে নানান মতানৈক্য। পরিসংখ্যান ও ইতিহাস পর্যালোচনা করলে সত্যতা অনুমান করা যায়, বাংলায় মুগল শাসনকাল (১৫৭৬-১৭৫৭) এবং বাংলায় বৃটিশ শাসন (১৭৫৭-১৯৪৭)। ১৭৬০ সালে মীর কাশিম আলীর কাছ থেকে ব্রিটিশরা শাসনভার গ্রহণ করার পরপরই ১৭৬১ সালে বৃটিশরা পতুর্গিজ ভবন তথা- বৃটিশ ঔপনিবেসিক ভবন সরকারি হাজী মুহাম্মদ মুহসিন কলেজের পাহাড়ের চূড়ায় চট্টগ্রামে প্রথম বিচারালয় হিসেবে বিচারকার্যক্রম শুরু করে; যার নাম ছিলো ‘দারুল আদালত’। এটি ছিলো আদালত ভবন ও প্রশাসনিক অফিস। পরবর্তীতে ১৮৫৭ সালে বৃটিশরা লালদীঘি সংলগ্ন পরীর পাহাড়ের চূড়ায় আদালত এবং অন্যান্য সরকারি অফিস স্থানান্তর করেন। ১৮৯৩-১৮৯৪ সালে এ পাহাড়ের চূড়ায় ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি দোতলা ভবন নির্মিত হয়। উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৭৩ সালে চট্টগ্রামকে পৃথক প্রশাসনিক অঞ্চল ঘোষণা করলে প্রশাসনিক কাজের জন্য কোর্ট বিল্ডিং এর দ্বিতল ভবনটি নির্মাণ করা হয়। বৃহৎ আকারে আদালতের কাজ সম্পন্ন করার জন্য ১৮৯২ সালে নির্মাণ কাজ শুরু করলে-ও ১৮৯৮ সালে নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়। এসব তথ্য থেকে অনুমান করা যায়, বৃটিশ আমলে শাহ্ আমানত (র.) কোর্টে চাকরী করেননি। কারণ পর্তুগিজ ভবনে আদালত কার্য শুরু হয়, ১৭৬১ সালে।
শাহ্ আমানত (র.) তাঁর প্রিয় সাগরিদ শাহ্সুফি সৈয়দ দায়েম (র.) কে ঢাকার আজিমপুরে প্রেরণ করেন ১৭৬৬-১৭৬৮ সালে। এ সমস্ত ঘটনা থেকে অনুমান করা যায়, ১৭৬১ সালের বহু পূর্বেই শাহ্ আমানত (র.)’র প্রসিদ্ধতা বঙ্গদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, শাহ্ আমানত (র.) ‘দারুল আদালত’-ও চাকুরী করেননি। হজরত শহীদ (র.)’র ‘গ’ নং আদর্শনামা হতে অনুমান করা যায় যে, শাহ্ আমানত চট্টগ্রামে শুভ আগমণ করে হালাল উপার্জনের জন্য হয়ত বা কোন একটি চাকুরি জুটে নিয়েছিলেন। হতে পারে সেটি নবাবি আমলের কোন একটি দাপ্তরিক কাজ। তিনি সবসময় ইহরামের কাপড়ের মতো সাদা কাপড় পরিধান করতেন, শরীরকে একটি শুভ্র চাদর দ্বারা আবৃত রাখতেন, মৌনতা বা নিরবতা তথা মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতেন, অল্পকথা, অল্পাহার, অল্পনিদ্রায় অভ্যস্ত ছিলেন, ধনী গরীবের মাঝে কোন ভেদাভেদ করতেন না, ব্যক্তিতান্ত্রিক মতাদর্শ প্রচারের ঘোর বিরোধী ছিলেন, আদবের প্রতি যথেষ্ট যতœশীল ছিলেন, বে-আদবীকে কখনো প্রশ্রয় দিতেন না, লালদীঘি অঞ্চলের ঘন অরণ্যরাজির ভেতর নীরবে প্রভুর এবাদাত করতেন, অধিক রাত জেগে বিশ^ নিয়ন্তার দরবারে মুনাজাত করতেন, কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক জীবন-যাপন করতেন, প্রত্যহ বাদে আছর মুরিদ সন্তানদের নিয়ে মোরাক্বাবা-মোশাহেদা করতেন। তাঁর চেহারা ছিলো, নূরের পোয়ালার মত উদ্ভাসিত। প্রায় সময় চেহারাতে নূর চমকাতো। তাঁর কথায়, কাজে, দৃষ্টিতে মানুষ প্রবলভাবে আল্লাহর দিকে মুতাওয়াজ্জুহ হতো। তাঁকে দেখলে মানুষের অন্তরে আল্লাহর স্মরণ চলে আসতো। তাঁর জিকিরের ধ্বনিতে মানুষ আল্লাহর প্রেমে পাগলপারা হয়ে যেত। তিনি ইলমে শরিয়তের শিক্ষা ছাড়াও ইলমে মারিফতের তালিম দিতেন। অধ্যাত্ম বিদ্যায় উৎসাহী লোকদের বিনয়ীভাবে ক্ষুদ্র কুঠিরে আহবান জানাতেন। এ জ্ঞানকে বলা হয় ইলমে তাসাউফ। সেকালে বহু বুযুর্গ-দরবেশ ও আলেম-ওলামাসহ বহু অমুসলিম পর্যন্ত খোদাতত্ত্ব জ্ঞান শেখার জন্য ভীড় জমাতেন তাঁর খানকায়। ধর্মপ্রিয় মানুষদের আনাগোনা বাড়লে; খানকার পাশে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। সর্বসাধারণের জন্য একটি লঙ্গরখানা-ও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। উপযুক্ত ব্যক্তিদের তরিক্বতের মধ্যে দাখেল করতেন এবং তরিক্বতের অজিফা দিতেন। পরবর্তীতে বায়’আত পূর্বক উপযুক্ত ব্যক্তিদের তরিক্বতের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য খেলাফত বহশিশ করতেন। তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সন্তানসন্ততির জনক ছিলেন।
শাহ্ আমানত (র.) যখন চট্টগ্রামের জনপদে শুভ আগমন করেন; তখন চট্টগ্রামের জনপদে শ্রেষ্ঠতম কামেল পীর আউলিয়ার অভাবনীয় শূণ্যতা বিরাজ করেছিলো। ইলমে মারিফতের শিক্ষাকে সবার জন্য উম্মুক্ত করার জন্য মূলত তিনি বঙ্গদেশে আগমন করেন। যাতে সকলে সানন্দে এ জ্ঞান লাভ করতে পারে। তাঁর কাছে আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় হাবীব (দ.)’র সান্নিধ্য প্রাপ্তির বিশেষ জ্ঞান ছিলো। এ জ্ঞান অত্যন্ত দুর্লভ। তাঁর সাড়া জাগানো খেদমতের কারণে চট্টগ্রামের পরতে পরতে পীর-মুরিদী প্রথা চালু হয়। তিনি ছিলেন সেকালের শ্রেষ্ঠতম কামেল অলি-আল্লাহ। তাঁর সংস্পর্শে বহু মানুষ আল্লাহর প্রিয় বান্দাতে পরিণত হয়েছেন। তন্মধ্যে- (এক) ঢাকার বিখ্যাত আজিমপুর দায়রা শরীফের প্রতিষ্ঠাতা শাহ্ সূফি সৈয়দ দায়েম (র.), (দুই) হজরত মাওলানা শাহ্ সূফি কেয়ামুদ্দীন (র.), (তিন) শাহ্ সূফি মিয়া মুহাম্মদ হাজী দৌলত (র.), (চার) হজরত শাহ্ সূফি মাওলানা আজিম (র.)। (চলবে)
লেখক: প্রাবন্ধিক, কলামিষ্ট, সুফী, গবেষক।


বিভাগ : ধর্ম দর্শন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা