যাকাতঃঅর্থনীতি বণ্টনে সুষম হাতিয়ার
০৮ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৮ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৪ এএম
যাকাত,অর্থনীতি বন্টনে সুষম হাতিয়ার।যাকাত প্রদানে সম্পদের বৃদ্ধি,পবিত্রতা লাভ হয়।তাছাড়া যাকাত হচ্ছে আল্লাহর ইবাদত।সম্পদ শালীদের উপর নিসাব পরিমান সম্পদ এক বছর থাকলে যাকাত ফরজ। ইহা অস্বীকারকারী কাফের।এরশাদ হচ্ছে-‘তোমর সালাত কায়েম কর ও যাকাত আদায়ন কর।তোমরা উত্তম কাজে যা কিছু পুর্বে প্রেরন করবে আল্লাহর নিকট তা পাবে। তোমরা যা কর নিশ্চয়ই আল্লাহ তার জাননে দেখেন’।(বাকারাহÑ১১০)।
যাকাত শব্দটি আরবী। শাব্দিক অর্থ পবিত্রতা,বৃদ্ধি পাওয়া,পরিশুদ্ধ হওয়া,আধিক্য ইত্যাদি।ইসলামী পারিভাষায়,সম্পদ শালীদের ধনমালে আল্লাহর নিধারিত অংশ দেয়াকে যাকাত বলে। যাকাত ধন সম্পদকে পবিত্র,পরিশুদ্ধ করে। দানকারীর মন মানসিকতা ও ধ্যান ধারনার উন্নতি ঘটে।ইসলাম ধর্মে প্রত্যেক মুসলমানকে সম্পদের সুষম বন্টনের তাগিদ দিয়েছে। মানুষের হাতে সম্পদ জমা হলে,সমাজে ব্যাপক অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি হয়,অভাব অনটন বেড়ে যায়।আইন শৃঙ্গলার অবনতি ঘটে,নৈতিক চরিত্রে বিপর্যয় ঘটে। মানুষ সম্পদ জমা করুক আল্লাহ তা চান না। তিনি চান,সমাজে অর্থনীতির চাকা গতিশীল থাকুক। যাকাতের সম্পদে গরীবের অধিকার রয়েছে। ইহা আদায় করলে আল্লাহ রহমত,গরীবের মাঝে আথির্ক নিরাপত্তা নিশ্চিত,মানসিক ধ্যান ধারনার পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়।এরশাদ হচ্ছে,‘তাদের সম্পদ থেকে সদকা( যাকাত) গ্রহন করুন। এর দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন’(তওবাÑ ১০৩)।আল্লাহ আরো বলেন,‘তোমরা সালাত কায়েম কর ও যাকাত আদায় কর।তোমরা উত্তম কাজে যা কিছু পুর্বে প্রেরন করবে আল্লাহর নিকট তা পাবে। তোমরা যা কর নিশ্চয়ই আল্লাহ তার ¯্রষ্টা(বাকারাহ-১১০)। ‘হযরত আবু হুরাইয়া (রা) হতে বর্নিত তিনি বলেন,বিশ^ নবী (দ) দরবারে,জনৈক বেদুঈন ব্যক্তি খেদমতে এসে বললেন,আমাকে একটি আমল বাতলিয়ে দিন যা করলে আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব। নবী (দ) বললেন,তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তার সাথে কোন কিছু শরীক করবে না,ফরজ সালাত আদায় করবে, ফরজ যাকাত প্রদান করবে এবং রমজান মাসে সাওম পালন করবে। তিনি বলেন,যার হাতে আমার প্রাণ সে সত্তার কসম, আমি এ থেকে কিছু বৃদ্ধি করব না,কমও করব না। তখন ঐ ব্যক্তি ফিরে যাওয়ার কালে নবী (দ) বললেন,জান্নাতি কোন ব্যক্তিকে দেখে কেউ যদি আনন্দিত হতে চায়, তবে সে যেন এই ব্যক্তিকে দেখে নেয়’।আব্দুল্লাহ ইবনে যায়দ বলেন,নামাজ ও যাকাত উভয়ই ফরজ। এ কাজে কোন পার্থক্য নেই। রাসুল (দ) বলেন,কেউ যদি আল্লাহর পুরুস্কারের আশায় যাকাত দেয় তা হলে তাকে পুরুস্কৃত করা হবে।কিন্তু যে যাকাত দিতে অস্বীকার করবে তার কাছ থেকে শক্তি প্রয়োগ করে যাকাত আদায় করতে হবে এবং আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী তার অর্ধেক সম্পতির নিয়ে নেয়া হবে’(বুখারী)। এরশাদ হচ্ছে,‘যে তওবা করে,সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়,তবে তারা তোমাদের দীনি ভাই’(সুরা তওবা)।‘জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ (রা) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন,আমি নবী (দ) এর নিকট সালাত কায়েম করা,যাকাত দেয়া ও সকল মুসলিমের কল্যাণ কামনা করার উপর বাইয়াত করি’। যাকাত হালাল আর সুদ হারাম। সুদ সম্পদকে শোষন করে।গৃহিতা ধ্বংস হয়। সুদের মাহাজন সম্পদ শালী হয়।অপর দিকে যাকাত ও ছদকা শর্ত ছাড়া বিলিয়ে দেয়া হয়।আল্লাহ বলেন, ‘আাল্লাহ সুদকে নিশ্চিহৃ করেন ও ছদকাকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ কাফের ও পাপীকে ভালোবাসেন না’(বাকারাহ-২৭৬) । বিশ^ নবী (দ) বলেন,ছদকা ও যাকাত সম্পদ হ্রাস করে না। নিসাব পরিমান সম্পদের মালিকানায় এক বছর পুর্ণ,ঋণ মুক্ত হলে,যাকাত আদায় করা ফরজ। নিসাব মানে,সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রৌপ্য। শত করা আড়াই টাকা হারে যাকাত ফরজ।যে ব্যক্তি ঋণ গ্রস্থ,তাকে প্রথমে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।তারপর দেখতে হবে যাকাত দেয়ার মত সম্পদ আছে কি না? সোনার মুল্য বেশী আর রোপার মুল্য কম। এ জন্য সাড়ে বায়ান্ন ভরি রোপার মুল্যের সম পরিমাণ টাকা হিসাব ধরতে হবে। যা প্রদান করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরুস্কার রয়েছে। যাকাত আদায়ের মাধ্যমে একজন ব্যক্তির নৈত্তিক ও মানসিক উন্নতি সাধিত হয়।সমাজে শ্রেনী বৈষম্য দুর হয়।গড়ে ওঠে অসহায়,গরীব ও বিত্তবানদের মাঝে সুমধুর সর্¤úক। ধনীÑগরীবের মাঝে আতœার সর্ম্পক সুদৃঢ হয়। অন্তর পরিস্কার ও পরিশুদ্ধ হয়। কৃপণতা থেকে মুক্তি লাভ করে। আল্লাহ বলেন,‘আপনি তাদের সম্পদ হতে ছদকাহ (যাকাত) আদায় করুন,যা তাদেরকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে’।(তওবা-১০৩)।যাকাত প্রদানকারী বান্দা আল্লাহ আনুগত্য শীল বান্দা হিসাবে প্রকাশ পায়।অভাব গ্রস্থ বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্টা করে। বরকত ও বিনিময় লাভ করে। গোনাহ সমুহ মোচন হয়। অর্থের অন্ধ মোহ হ্রাস ও কৃপণতা দুর হয়। অপচয় থেকে মুক্ত, গরীব দুঃখীদের দুঃখ -দৃর্দশা লাঘব হয়।যাকাত আদায় কারীর সম্পদ বৃদ্ধি ও পবিত্র করা ছাড়াও মহা পুরুস্কার রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা উক্ত সম্পদ থেকে যা ব্যয় করবে তার পুরু¯কার পুরো পুরি পেয়ে যাবে। আর তোমাদের প্রতি কোন প্রকার জুলুম করা হবে না’।(বাকারা- ২৭২)।তিনি আরো বলেন,‘আার যারা নামাজ কায়েম করে,যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ইমান রাখে আমি তাদেরকে মহা পুরুস্কার দেব।যারা সালাত প্রতিষ্টা কারী,যাকাত প্রদান কারী হবে,তাদেরকে সত্বও মহান পুরুস্কারে ভুষিত করা হবে’।(নিসা-১৬২)।শুধু পুরুস্কার আর পুরুস্কার। এরশাদ হচ্ছে- ‘তোমরা যাকাত দেওয়ার সময় যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে থাক,তাহলে দ্বিগুন প্রাপ্ত হবে’(রুম-৩৯)। ‘আর তোমরা যা ব্যয় করবে আল্লাহ তার প্রতিদান দিবেন। তিনি উত্তম রুযীদাতা’।(সুরা সারা ৩৯)। আল্লাহ বলেন,‘যারা আল্লাহর পথে নিজেদের ধন সম্পদ ব্যয় করে তাদের দৃষ্টান্ত একটি শস্যবীজের ন্যায়।যা হতে উৎপন্ন হয় সাতটি শীষ এবং প্রত্যেক শীর্ষে একশত করে শস্যদানা । আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা আরো বর্ধিত করে দের। আল্লাহ মহান দাতা ও মহা জ্ঞানী’।(বাকারা-২৬১)।
যাকাত বন্টনের জন্য আল্লাহ ঘোষনা করেন,‘সদকা তো কেবল ফকির ও মিসকিনদের জন্য এবং সদকা সংক্রান্ত কাজে নিযুক্ত লোকদের জন্য,যাদের চিত্তাকর্ষন করা হয় তাদের জন্য,দাস মুক্তির জন্য,ঋণ গ্রস্তদের জন্য,আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বঞ্জ,প্রঞ্জাময়।(সুরা তওবা-৬০)। আরো এরশাদ করেন,‘আমি তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করলে,তারা সালাত কায়েম করবে,যাকাত দিবে এবং সৎকাজের আদেশ দিবে এবং অসৎকাজের নিষেধ করবে।(সুরা হজ-৪১)। অন্য জায়গায় বলেন,‘তাদের ধন সম্পদে রয়েছে বঞ্চিতদের হক।(সুরা যারিয়াত-১৯)।পুরুস্কারের পাশা পাশি অস্বীকার কারীর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। আল্লাহ বলেন,‘যারা সোনা রুপা পুন্জীভুত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না( এখানে যাকাত অর্থে) তাদেরকে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তির সংবাদ দিন,যে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দিয়ে তাদের কপালে,পাশ^দেশে এবং পিঠে দাগ দেয়া হবে। সে দিন বলা হবে,এটাই তা,যা তোমরা নিজেদেও জন্য পুন্জীভুত করতে সুতরাং তোমরা যা পুন্জীভুত করেছিলে তা আস্বাদন র্ক।(সুরা তাওবা৩৪-৩৫)।তিনি বলেন,‘আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে দিয়েছেন তাতে যারা কৃপণতা করে,তাদের জন্য তা মঙ্গল এ যেন তারা কিছুতেই মনে না করে। না এটা তাদের জন্য অমঙ্গল।যাতে তারা কৃপণতা করবে কিয়ামতের দিন তাই তাদের গলায় বেড়ি হবে।(সুরা আলে ইমরান-১৮০)। সেই শাস্তি থেকে আমাদেরকে কেউ বাচাতে পারবে না। আল্লাহ বলেন,‘ধ্বংস অনিবার্য ঐ সকল মুশরিকের জন্য,যারা যাকাত আদায় করে না’।(সুরা হামিম আস সাজদা৬-৭)।সুতুরাং কোরআন ও হাদীসের আলোকে যথাযথ ভাবে যাকাত প্রদান বন্টন করি এবং দরিদ্রতা নিরসন করি। শ্রমিকদের প্রান্তিক দক্ষতা বৃদ্ধি,কর্ম সংস্থা সৃষ্টি করি। উৎপাদন শীলতা বৃদ্ধি,পুজির প্রান্তিক দক্ষতা বৃদ্ধি,সম্পদের সুষম বন্টন করি।এই হোক আজকের প্রত্যাশা।( সহকারী অধ্যাপক আরবী,গ্রন্থকার)।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক (আরবী), পঞ্চগড়।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের
ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন
শীতের দিনে ঝিরঝিরে বৃষ্টি স্থবির খুলনা শহুরে জীবন