প্রশ্ন: ইসলামে ধৈর্যের প্রতিদান কি?
০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০২ এএম
উত্তর : ধৈর্যধারণ মানুষের একটি মহৎ গুণ। ধৈর্যের প্রমাণ দেয়া ত্যাগের পরিচয়। ত্যাগের পরিচয় দানের মধ্যেই ব্যক্তি সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের প্রিয়ভাজন হয়। ভোগে কখনোই সকল মানুষের কাছে প্রিয় হওয়া যায় না। ধৈর্যশীলতার পরিচয় দেয়ার অর্থই হচ্ছে ধৈর্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া মানে শয়তানের সাথে প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়া। কেননা শয়তানের কাজ হচ্ছে মানুষকে অধৈর্যে পরিণত করে নানাবিধ ক্ষতিকর কাজে লিপ্ত করা। মানুষ যখনই ধৈর্যের পরিচয় দেয় তখন সে একটি মহৎ কাজ করে। শয়তান তখন নিরাশ হয়ে ফিরে যায়। পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ১৫০নং আয়াতে আল্লাহতাআলা উল্লেখ করেছেন- “ইন্নাল্লাহা মায়াছ সবেরিন” অর্থাৎ আল্লাহ তা›আলা নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদের সাথে থাকেন। সুতরাং আল্লাহ তা›আলা যখন যেখানে যে কাজে ধৈর্যশীলদের সাথে থাকেন অর্থাৎ ধৈর্যধারীর উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়, শয়তান তখন থাকে সীমানার বাইরে। জীবন চলার প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন সময় মানুষ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে। বিপদ আপদ কখনো বলে আসেনা। বিপদে পরে মানুষ অনেক সময় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পরে। মানুষ স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেলে। নিজেকে বড় অসহায় মনে করে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। সে ক্ষেত্রে এমন কোন অস্বাভাবিক আচরণ করা যাবে না, যা ইসলাম সমর্থন করে না। বিপদে ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কে সরণ করা মানুষের একান্ত কর্তব্য। এ সময় আল্লাহকে সরণ করার অর্থ হলো তার হুকুম পালন করা এবং অভিশপ্ত শয়তানকে তিরস্কার করা। এতে আল্লাহতালা ওই বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন। হাদিসে উল্লেখ রয়েছে- “যারা আল্লাহর হুকুম আহকাম পালন করবে আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করবে, বিপদে ধৈর্য অবলম্বন করবে আল্লাহ তাদেরকে মিসকিনদের মধ্যে পরিগণিত করবেন না। আর যারা তার বিপরীতমুখী কাজ করবে তারা যেন আল্লাহ তায়ালার আকাশ মন্ডলের সীমানা পরিত্যাগ করে অন্য কোথাও চলে যায়।” জীবনের সকল অবস্থায় ধৈর্যের সাথে চলাই সকলের কর্তব্য। অধিক বিপদে বা মানুষ মারা গেলে শোকতাপ সম্পর্কে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে - “উচ্চস্বরে ক্রন্দনকারী, তাদের সহবাসী এবং শ্রোতা মন্ডলী ও নিকটবর্তী সবাইকে আল্লাহ আল্লাহ ও তার ফেরেস্তা কুল অভিশাপ দিয়ে থাকে।” মৃতের জন্য উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করা নাজায়েজ। আল্লাহ তাআলা বলেন- “মানুষ মারা গেলে যারা উচ্চস্বরে কান্নাকাটি শোকতাপ করে তারা যেন আমার সাথে যুদ্ধ শুরু করে দিল।” কোরআন শরীফে উল্লেখ আছে- “ইন্নামা ইওয়াক কাচ্ছাবিরীনা ওয়াছরাহুম বিগাইরি হিসাব” অর্থাৎ ধৈর্যশীলদেরকে অসংখ্য প্রতিদান প্রদান করা হবে। মৃতের জন্য বিলাপ ও গানের সুরে কান্না করা, বস্ত্রাদী ছিঁড়ে ফেলা ও আঘাত করা যাবে না। হযরত ইমাম হাসান রা’.র ইন্তেকালের পর তার স্ত্রী এক বছর কাল কবরের পাশে পড়ে থাকে। বছরান্তে তাবু গোটানোর সময় কবরের ভিতর থেকে আওয়াজ এলো- “ওহে ! যাকে তুমি হারিয়েছ তাকে কি ফিরে পেয়েছ? মৃতের জন্যে শোক প্রকাশে কোনক্রমে ফরজ ওয়াজেবের বরখেলাপ করা যাবে না। আন্তরিকতার সাথে নিরব অশ্রু মৃতের জন্য দোয়া স্বরূপ। আল্লাহ সর্বজ্ঞানী, সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। তিনি বান্দার মনের অবস্থানে ছোট্ট কথাও শোনেন, বোঝেন এবং তা কবুল করে থাকেন। বিপদে অধৈর্য হয়ে না পরে আল্লাহতালার উপর নিজেকে সফর্দ করা বান্দার কর্তব্য। এতে উল্লেখ হাদিসে উল্লেখ রয়েছে- “বিপদে অধৈর্য হয়ে যে ব্যাক্তি জামার পকেট ফিরিয়ে ফেলে আল্লাহ তাকে স্বধর্মচ্যুত করেন।” বিপদে অধৈর্য হয়ে যে নিজের গন্ড দেশে চপটাঘাত করে বা চেহারা ক্ষতবিক্ষত করে, আল্লাহ পাকের দর্শন লাভ তার জন্য হারাম হয়ে যায়। বিপদে ধৈর্যধারন করলে আল্লাহ তরফ থেকে ওই ব্যাপারে রহমত পাওয়া যায়। ব্যক্তি এতে সফলতা অর্জন করে থাকে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনের সূরা নাহলের ৯৬নং আয়াতে আল্লাহতালা বলেন- “ওয়ালা নাজজিয়াল্লাজিনা সাবারু আজরাহুম বি-আহছানি মাকানু ইয়ামালুন” অর্থাৎ যারা ধৈর্যশীল, আল্লাহর নিশ্চয়ই তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করবেন।
সমাজের হিংসুক প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর অনেক শাসক ও বিচারকের দুর্ব্যবহারে সাধারণ মানুষ নিরুপায় হয়ে অশেষ দুঃখ-কষ্ট ও লাঞ্ছনা সহ্য করে থাকে। বিচারকরাও আল্লাহতালার কাছে রেহাই পাবে না। বিচারকদের প্রতি আল্লাহ তায়ালা তার কালামে পাকের সুরা নিসার ১৩৫নং আয়াতে উল্লেখ করেছেন- “হে বিশ্বাসীগণ তোমরা ন্যায় বিচারে দৃঢ় থাকবে। তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে সাক্ষ্য দিবে যদিও তা নিজের পিতা-মাতা এবং আত্মীয় স্বজনের বিরুদ্ধে হয়; সে বিত্তবান হোক, বা বৃত্তহীন হোক আল্লাহ উভয়েরই যোগ্যতর বন্ধু। দুনিয়ার ন্যায় বিচার করতে কামনার অনুগামী হয়ো না, যদি তোমরা প্যাঁচালো কথা বলো বা পাশ কেটে চলে। তোমরা যা কর আল্লাহ তার খবর রাখেন।” বিচারকের অবিচারে নিরপরাধ মানুষ দোষী সাব্যস্ত হলে সে হয় মজলুম। এই মজলুমের দোয়া আল্লাহতায়ালা কবুল করে থাকেন। কেননা নীরহ এবং দুর্বল অবস্থায় ধৌর্য অবলম্বন করা ছাড়া তার কোন গত্যান্তর থাকে না। এজন্যেই তো কথায় বলে নির্গতির গতি, নিরুপায়ের উপায়, অসহায়ের সহায় একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহতায়ালা তার কালামে পাকে উল্লেখ করেছেন- “ইন্নি জাইজাতু হুমুল ইয়াওমা বিমা সাবারু আল্লাহুম হুমুল ফায়িযুন” অর্থাৎ আমি তাদের ধৈর্যের কারণে এমনভাবে পুরুষ্কৃত করলাম যে তারাই হলো সফলকাম। সূরা আনআমের ৩৪ নং আয়াতে আল্লাহ পাক আরও বলেন- “মিথ্যাবাদী বলা ও ক্লেশ দেয়া সত্বেও যে পর্যন্ত না আমার সাহায্যে এসেছে, তারা ধৈর্য ধারণ করেছিল।”
উত্তর দিচ্ছেন : অধ্যাপক মীর মোশারফ হোসেন
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
র্যাবকে সমাজে রাখা ঠিক হবেনা -রাজশাহীতে নূর খান
নওগাঁয় ৩ জনকে পিটিয়ে জখম, আহতদের উদ্ধার করলো পুলিশ
মাদারীপুরে গুড়ি বৃষ্টি আর হিমেল বাতাসে জনজীবন স্থবির
দুমকীতে বীর মুক্তিযোদ্ধার লাশ দাফনে বাঁধা
দুবাই মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে বাংলাদেশি মেধাবী শিক্ষার্থীর অ্যাওয়ার্ড লাভ
'বরবাদ' সিনেমা শতকোটির গন্ডি পেরিয়ে যাবে! কি বললেন শাকিব?
রাজশাহীর পুঠিয়ায় বাস চাপায় মা ছেলেসহ একই পরিবারের তিনজন নিহত
দোয়ারাবাজারে ভারতেীয় সীমান্তে ৩০০ বস্তা রশুন আটক করেছে টাস্কফোর্স
রাজশাহীতে নেসকোর ভৌতিক বিল বন্ধসহ নানারকম হয়রানীর প্রতিবাদে বিক্ষোভ
শ্যামনগর থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার
যুবদলের উদ্যোগে ৩১ দফা অবহিতকরণে আলোচনা সভা
এমাজউদ্দীন আহমদের গ্রহণযোগ্যতা ছিল সর্বজনীন
বাংলাদেশে সা'দ পন্থিদের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে: হাটহাজারীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে বক্তারা
ভারত বাধা পেরিয়ে শিরোপা জিততে মরিয়া বাংলাদেশ
দোয়ারাবাজারে ভ্যানের ধাক্কায় শিশু নিহত
গারো পাহাড়ের পানি হাতায় ঘুরতে এসে ভোগা নদীতে ডুবে ২ শিক্ষার্থীর মৃত্যু
সিলেট-তামাবিল চার লেন উন্নতিকরণে অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ
১০ বছর আগে উধাও মালয়েশিয়া বিমানের নতুন করে খোঁজ শুরু
৯/১১-র ধাঁচে রাশিয়ায় ড্রোন হামলা ইউক্রেনের, বন্ধ বিমানবন্দর
আজ ঐতিহ্যবাদী লেখক হোসেন মাহমুদের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী