আল কোরআন : তাজকেরায়ে মীলাদ নামায়ে আম্বিয়া (আ:)
০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
উল্লিখিত আয়াতসমূহের মধ্যে হুজুর নবীয়ে আকরাম (সা:)-এর এই রং ও গন্ধপূর্ণ। পৃথিবীতে আগমনের বিবরণ মূলত : তার পবিত্র বেলাদতেরই আলোচনা বৈ কিছুই নয়। এই আয়াতসমূহের মর্মের প্রতি লক্ষ্য করলে অবশ্যই বুঝা যাবে যে, আল্লাহ পাক স্বীয় মাহবুব (সা:)-এর বেলাদতের বর্ণনা সকল মানব জাতির জন্যই করেছেন। এতে সকল ঈমানদারদের ছাড়াও সকল আহলে কিতাব এবং কাফের ও মুশরিকরাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাদের প্রত্যেককেই অবহিত করা হয়েছে যে, হাবীবে খোদা (সা:) তশরীফ এনেছেন। এবং তারপর তাঁর আগমনকে তামাম কায়েনাতের জন্য নেয়ামত ও রহমত নির্ধারণ করেছেন। আল্লহ তাবারাকা ওয়া তায়ালা স্বীয় মাহবুব পয়গাম্বর (সা:)-এর আগমনের বিবরণ এতখানি সতর্কতা ও ধারাবাহিকতার সাথে করেছেন যে, কোন লোকের পক্ষেই এ কথা বলা সম্ভব নয় যে, ইহা সাধারণ বিবরণ ও আলোচনা।
এই কথা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, আমার মাহবুবের বেলাদতের আলোচনা কিয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী মানব জাতির জন্য লাজেম বা আবশ্যক। সুতরাং এ কথা মনে করা যে, রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর বেলাদতের আলোচনা করার ফায়দা কি? তবে তা হবে কোরআনুল কারীমের অসংখ্য আয়াতের নির্দেশ অস্বীকার করা এবং এমন ধারণা পোষণ করা একই রকম। কেননা, আম্বিয়া (আ:)-এর বেলাদতের আলোচনা করা এবং তাদের মীলাদনামা কোরআনুল কারীমে বয়ান করে তা তিলাওয়াত করার হুকুম স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দিয়েছেন এবং এটাই আল্লাহপাকের ইচ্ছা বা অভিপ্রায়। যখন আমরা হুযুর নবীয়ে আকরাম (সা:)-এর আলোচনা মীলাদ শিরোনামে উদযাপন করি, তখন আমরা অবশ্যই আল্লাহতায়ালার হুকুম পালন করি এবং আল্লাহর সুন্নাতের ও সুন্নাতে নববীর উপর আমল করি। যদি আমরা এ সকল আয়াতের অর্থ ও মর্মের প্রতি লক্ষ্য করি, যেগুলোতে আল্লাহতায়ালা স্বীয় মাহবুব এবং বরগুজিদাহ বান্দাহদের কেলাদতের ঘটনা বর্ণনা করেছেন, তাহলে আমরা অবশ্যই অনুধাবন করতে সক্ষম হব যে, এই আয়াতসমূহে বিবৃত ঘটনাবলীর সম্পর্ক সরাসরিভাবে উম্মতে মুসলিমার তা’লীম ও তরবিয়তের ফরযিয়াতের সাথে নেই। তবে এতটুকু সহজেই উপলব্ধি করা যায় যে, এগুলোর উদ্দেশ্য ও মাকসুদ হচ্ছে আম্বিয়া (আ:)-এর মীলাদের আলোচনা করা ও সে সম্পর্কিত বিষয়াদির বয়ান করা।
৪। মীলাদ নামায়ে আম্বিয়া (আ:) হতে মীলাদ নামায়ে মোহাম্মাদ মুস্তফা (সা:) পর্যন্ত একটি সমীক্ষা।
আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত স্বীয বরগুজিদাহ আম্বিয়া (আ:)-এর বেলাদতের বর্ণনা এতখানি সচেতনতা ও পরিপাটি সহকারে করেছেন যে, এতে মানুষের মনে উদ্ভুত ধারণাগুলোকেও তুলে ধরেছেন। আল কোরআনে বর্ণিত হযরত ইয়াহইয়া (আ:)-এর মীলাদনামা পাঠ করুন, তাহলে অবশ্যই বুঝতে পারবেন যে, যখন তাঁর শ্রদ্ধেয় পিতা হযরত যাকারিয়া (আ:) হযরত মারয়ামের জন্য নির্মিত কামরায় প্রবেশ করলেন এবং তার নিকট বেমওসুমের ফলফলাদি দেখতে পেলেন, তখন সেখানে দাঁড়িয়েই নিজের সন্তান লাভের খোশখবরী লাভ করলেন, তখন তাঁর অন্তরে মানবসুলভ প্রত্যাশার আলোকে একটি খেয়াল পয়দা হলো যে, আমি এতখানি বৃদ্ধ হয়ে পড়েছি এবং আমার স্ত্রী ও বন্ধা হয়ে গেছে, এমতাবস্থায় আমাদের ছেলে সন্তান কেমন করে হবে? এ খেয়াল মনের কোণে উদয় হতেই অল্লাহপাকের দরবারে আরজ করলেন, প্রশ্ন করলেন। কোরআনুল কারীমে এই প্রশ্নের কথা, জিজ্ঞাসার কথা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে এবং এই খেয়ালের পরিণামে আগত প্রশ্নাবলীর উত্তর ও প্রদান করা হয়েছে। একই সাথে আল্লাহপাক হযরত যাকারিয়া (আ:)-এর প্রশ্নের উত্তর খোলাখুলিভাবে প্রদান করেছেন। অনুরূপভাবে মীলাদ নামায়ে ঈসা (আ:)-এর পর্যালোচনাও বড়ই ঈমান আফরোজ এবং চিন্তা ও গবেষণার আকর হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ইহার কোন কোন অংশ পাঠ করে মনের কোণে প্রশ্নের উদয় হতে পারে যে, এ সকল সাধারণ বস্তুুসমূহের কথা বর্ণনা করার কি দরকার ছিল? কেন এগুলোর অবতারণা করা হয়েছে? উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, হযরত জিব্রাঈল (আ:) হতে শুরু করে হযরত ঈসা (আ:)-এর বেলাদত পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তের ঘটনাবলীর আলোচনা, প্রসবকালীন কথা ও বেদনার আলোচনা এবং পেরেশানীর হালতে হযরত মারয়াম (আ:)-এর একথা বলা যে, আহা! কি ভাল হতো, যদি আমি আগেই মরে যেতাম, আমার কথা মানুষের মন হতে মুছে যেত ইত্যাদি। এ ধরনের কথা উল্লেখ করে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালা উম্মতে মুসলিমাকে এই অনুভূতি ও উপলব্ধি দান করেছেন যে, যেভাবে কোরআনুল কারীম অন্য আম্বিয়াদের বেলাদত বিষয়ের সাথে অনেক ঘটনার কথা বয়ান করেছে, ঠিক সেভাবেই হাবিবে কিবরিয়া, সাইয়্যেদুল আম্বিয়া হযরত মোহাম্মাদ মোস্তফা (সা:)-এর কথাও আলোচনা করেছে এবং তাঁর বেলাদত সম্পর্কেও বিস্তারিত বিবরণ পেশ করেছে। হযরত আদম (আ:) হতে শুরু করে হযরত আবদুল্লাহ (রা:) পর্যন্ত এবং সাইয়্যেদাহ আমেনা (রা:) এর কোল হতে শুরু করে হযরত হালিমা সাদিয়া (রা:)-এর গ্রাম পর্যন্ত সকল ঘটনা মীলাদুন নবী (সা:)-এর অনুষ্ঠানে ও মাহফিলে বর্ণনা করা হয়। আর যে সকল কামালাত ও বারাকাত তাঁর পবিত্র হায়াতে প্রত্যক্ষ করা গেছে সেগুলোর বর্ণনাও করা হয়। এটাই সুন্নাতে ইলাহিয়া এবং কোরআনুল কারীমের লক্ষ্য। অন্য আম্বিয়ায়ে কেরামের কথা ওহীয়ে ইলাহীর মাধ্যমে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা:)বর্ণনা করেছেন। স্বাভাবিকভাবে রাহমাতুল্লিল আলামীন (সা:)-এর কথা পরবর্তীতে আগমনকারী নবীরই বর্ণনা করার কথা ছিল। যেহেতু তিনি খাতামুন নাবিয়্যিন, সেহেতু তারপর আর কোন নবীর আগমন ঘটবে না, যিনি তাঁর কথা উল্লেখ করবেন। এ জন্য তার কথা তার উম্মতগণ আলোচনা করবে, প্রচার করবে, এটাই স্বত:সিদ্ধ ব্যাপার।
মীলাদ নামায়ে মুস্তাফা (সা:) বলতে ওই সকল ঘটনাবলীর আলোচনা ও বয়ান বুঝায়, যা রাহমাতুল্লিল আলামীন (সা:)-এর মর্যাদাপূর্ণ বেলাদতের পূর্ববর্তী সময়ে এবং বেলাদতের সময়ে প্রকাশ পেয়েছে। নূরে মোহাম্মাদী (সা:) হযরত আদম (আ:) হতে শুরু করে হযরত আবদুল্লাহ (রা:) পর্যন্ত কিভাবে পবিত্র পৃষ্ঠদেশসমূহ হতে পবিত্র রেহেমসমূহে স্থানান্তরিত হয়েছে। তাঁর বেলাদতের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা বিশ্ব মানবতার ওপর কি কি এহসানাত প্রদর্শন করেছেন। আশেকানে মুস্তাফা (সা:)এমনিতেই তো সারা বছর রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর মহব্বতের সানা ও প্রশংসা করতে থাকে। কিন্তু যখনই মাহে মীলাদুন্নবী (সা:) রবিউল আউয়াল মাস আগমন করে তখন তাদের মহব্বতে নতুন মাত্রা যোগ হয়। এবং নবীপ্রেমে ভালোবাসার আগুনে জোঁশ এসে যায়। তারা তাদের প্রাণপ্রিয় মাহবুব পিয়ারা নবী (সা:)-এর মর্যাদাপূর্ণ বেলাদতের সুন্দর ও মনোহর আলোচনার দ্বারা নিজেদের দেহ-মন ও অন্তরকে মুনাওয়ার করে তোলে। আর রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর মহব্বতের পয়গাম সাধঅরণ্যে প্রচার করার লক্ষ্যে নির্দিষ্টভাবে মাহফিলে মীলাদের আয়োজন করে এবং মুহিব্বানে রাসূল (সা:) স্বত:স্ফূর্তভাবে উক্ত মাহফিরে অংশগ্রহণ করেন। ইহা একটি ঈমান আফরোজ পরিবেশ। এই পর্যায়ে কোন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর চুল মোবারক, চেহারা মোবারকের বিবরণ পেশ করে, আবার কেউ হাবীবে খোদা (সা:)-এর পবিত্র দীদারের আনন্দের কথা প্রকাশ করে, আবার কেউ সবুজ গম্বুজের প্রাণস্পর্শী দৃশ্য তুলে ধরে, আবার কেউ রওজায়ে আকদাসের সোনালী ঝালরগুলোর বর্ণনা পেশ করে, আবার কেউ মদীনা মুনাওয়ারা শহরের অলি-গলির কথা বর্ণনা করে। আবার মদীনা মুনাওয়ারার অন্তরকাড়া আলোকোজ্জ্বল রওনকের কথা কেউ বয়ান করে। আবার কেউ সাইয়্যেদাহ আমেনা (রা:)-এর গৃহখানির কথা আলোচনা করে। আবার কেউ হযরত হালিমা সাদিয়া (রা:)-এর মক্কা শহরে আগমন এবং প্রিয়নবী (সা:)-কে সাথে নিয়ে প্রত্যাবর্তনের কথার বিবরণ দেয়। আবার কেউ পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর বাল্যকালের কথা বিবৃত করে, আবার কেউ কৈশোরের কথার বিবরণ দেয় এবং কেউ চৌদ্দশ বছর পেছনে প্রত্যাবর্তন করে মক্কা শহরের উপত্যকায় রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর আনন্দ-চঞ্চল সৌন্দর্যের বর্ণনা করে। মোট কথা, এই মাসে শুধু কেবল নবী প্রেমের প্রশস্তি ও প্রশান্তি চারদিকে গুঞ্জরিত হতে থাকে; প্রেম নিবেদনের মোহনীয় তারানা চলতে থাকে। মর্যাদাপূর্ণ বেলাদত ও জীবনাদর্শের প্রচার হতে থাকে। এতসব আয়োজন ও এতসব ভালবাসার গুঞ্জরন এ জন্যই করা হয় যেন রাসূল প্রেমের এই আহ্বান শ্রবণ করে ঈমানদারদের অন্তরে রাসূলে পাক (সা:)-এর প্রতি নব অনুরাগের আকর্ষণ সৃষ্টি হয় এবং নব উদ্যমে প্রেরণা ও প্রভঞ্জন অনুরণিত হয়। (চলবে)
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মাগুরার শালিখায় অজ্ঞাত বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের
ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন