সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযান-৩
২৮ এপ্রিল ২০২৩, ১১:১২ পিএম | আপডেট: ২৫ জুন ২০২৩, ০৮:১৪ পিএম
সুলতান মাহমুদ ভারতে ১৭ বার অভিযানে সময় নিয়েছেন ২৭ বছর। লাগাতার এত বছর অভিযান চালানো বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। লক্ষ করার বিষয়, সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া তিনি একটি অভিযানও চালাননি। প্রতিটা অভিযানের পেছনে আলাদা আলাদা কারণ আছে। কোনো কারণই অযৌক্তিক-অহেতুক নয়। কিছু ইতিহাস লেখক অভিযোগ করেছেন, ইসলাম প্রচার ও সম্পদ লুণ্ঠনই ছিল সুলতান মাহমুদের আসল লক্ষ্য। এ অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি ইসলাম প্রচারের জন্য ভারতে আসেননি এবং ইসলাম প্রচারও করেননি। এর কোনো প্রমাণ নেই। ইসলাম প্রচার ও প্রসারের জন্য অধিকৃত এলাকায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা অনুকূল অবস্থা বা পরিবেশ সৃষ্টি করে। কিন্তু সুলতান মাহমুদ পাঞ্জাব বাদে বিজিত আর কোনো এলাকা তার রাজ্যভুক্ত করেননি। ভারতে রাজত্ব বিস্তারে তার যে আগ্রহ ছিল না, এ থেকে সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না। সম্পদ লুণ্ঠনের প্রসঙ্গে বলা যায়, এটা তৎকালীন যুদ্ধনীতিতে বৈধ বলেই স্বীকৃত ছিল। বিজিত রাজ্যের ধনরতœ ও সম্পদের ওপর বিজয়ী রাজশক্তির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতো।
সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের পেছনে ধর্মীয় মনোভাব মোটেই সক্রিয় ছিল না। লক্ষ করা গেছে, তিনি শুধু হিন্দু রাজাদের বিরুদ্ধেই অভিযান চালাননি, বিভ্রান্ত মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধেও অভিযান চালিয়েছেন। মুক্তির বিনিময়ে তার কাছ থেকে অর্থও লাভ করেছেন। যেমন কোনো কোনো পরাজিত হিন্দু রাজাদের কাছ থেকেও অর্থ লাভ করেছেন। গজনীর নিরাপত্তাঝুঁকি দূর করা ছাড়া সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের অন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণটি ছিল রাজনৈতিক। সে সময় ধন-সম্পদ মন্দিরে গচ্ছিত রাখার রেওয়াজ ছিল। এমনকি জলদস্যুরাও মন্দিরে তাদের অর্থ জমা রাখত। এসব কারণে কোনো কোনো মন্দির রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। ড. ঈশ্বরী প্রসাদ লিখেছেন, মাহমুদ ভারতে যে মন্দিরগুলো আক্রমণ করেছিলেন, সেগুলো বিপুল, বর্ণনাতীত ধন-রতেœ পূর্ণ ছিল এবং তাদের মধ্যে কয়েকটি ছিল রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের কেন্দ্রস্থল। বলা বাহুল্য, কথিত রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ বন্ধে কেন্দ্রগুলোতে হানা দেয়া সুলতান মাহমুদ জরুরি ও অপরিহার্য মনে করেছিলেন। নেহেরুর মতে, সুলতান মাহমুদ যা করেছেন, তিনি মুসলমান না হয়ে অন্য কোনো ধর্মাবলম্বী হলেও তাই করতেন।
সুলতান মাহমুদের বিরুদ্ধে আরো একটি অভিযোগ, তিনি নির্বিচারে হিন্দু হত্যা করেছেন এবং ভারত থেকে দাস হিসেবে বহু লোককে নিয়ে গেছেন। এ অভিযোগের সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। তৎকালীন বিশ্বে বিজিত রাজ্যে হত্যা ও ধ্বংসের তা-ব করে ভীতি-ত্রাস সৃষ্টি করা অস্বাভাবিক ছিল না। কিন্তু সুলতান মাহমুদ সেটা করার চেষ্টা করেননি। যুদ্ধকালে প্রতিপক্ষ হত্যায় দোষ ধরা হয় না। এসএলফিন স্টোন বলেছেন, এ রকম ঘটনা কোথাও দেখা যায়নি যে, যুদ্ধ ব্যতীত কোথাও কোনো হিন্দুকে তিনি প্রাণদ- দিয়েছেন। এটাও বিশেষভাবে লক্ষ্যযোগ্য, যুদ্ধে পরাজিত রাজা বা প্রতিপক্ষকে হত্যা করা সেকালে বিরল কোনো ঘটনা ছিল না। অথচ, সুলতান মাহমুদ তার একজন প্রতিপক্ষ রাজাকেও হত্যা করেননি, মৃত্যুদ- দেননি। আনুগত্য স্বীকার, সন্ধি, কর প্রদানের প্রতিশ্রুতি, উপঢৌকন প্রদান ইত্যাদির বিনিময়ে তারা মুক্তি পেয়েছেন। রাজা হিসেবে তাদের ক্ষমতাও বহাল থেকেছে।
মথুরা, বৃন্দাবন প্রভৃতি ধর্মীয় স্থান এবং সোমনাথ মন্দিরে অভিযান, মন্দির ভাঙচুর, বিগ্রহের ক্ষতিসাধনের যে অভিযোগ কতিপয় ভারতীয় ও ব্রিটিশ ইতিহাস লেখক এবং রাজনীতিক করেছেন, তাতে মুসলিম বিদ্বেষ যতটা প্রধান, বাস্তব অবস্থা ও সত্যতা ততটা পরিস্ফুুট নয়। মন্দির যখন যুদ্ধ ক্ষেত্রে পরিণত হয়, অর্থভা-ার হিসেবে আকর্ষণীয় হয়, তখন ভাঙচুর ও বিগ্রহের ক্ষতিসাধন অসম্ভব নয়। ঐতিহাসিক ফিরিশতাসহ বিভিন্ন ইতিহাসবেত্তা লিখেছেন, বিগ্রহের পেটে সোনাদানা, অলঙ্কার লুকিয়ে রাখা হতো, যার ফলে বিগ্রহের ভাঙচুর ও ক্ষতিসাধন হওয়া স্বাভাবিক। (চলবে)
বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিএনপির ভাবনায় ক্লান্ত ওবায়দুল কাদের: রিজভী
ইউপি চেয়ারম্যানকে ‘ডিও লেটার’ বন্ধের হুমকি এমপি একরামের স্ত্রীর
মাগুরায় বিএনপির উপজেলা নির্বাচন বর্জনের আহবান
২৫ বৈশাখ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্ম জয়ন্তী
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ও ইজরায়েলের বর্বর নির্যাতনের প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় পদযাত্রা
বরগুনায় 'গণমাধ্যমে হলুদ সাংবাদিকতা প্রতিরোধ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা' শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত
আসছে ঘূর্ণিঝড়, দেশজুড়ে কালবৈশাখীর সতর্কতা
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ২ ইউনিয়নে প্রখর রোদ আর তীব্র গরম।।দুর্বিষহ চরবাসীর জীবন
বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর প্রাণী অনুপ্রবেশ করতে যাচ্ছে ব্রিটেনে
পিরিয়ডে হেভি ফ্লো নিয়ে হ্যাসেল-ফ্রি থাকতে, কী করবেন
নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাচন চেয়ারম্যান পদে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা
বিশ্বে অস্থিরতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে চীন
ইসরায়েলে মার্কিন গোলাবারুদের চালান আটকে দিল বাইডেন প্রশাসন
আল-জাজিরা বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জাতিসংঘের
স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া, ছেলেকে কুমির ভর্তি নদীতে ফেলে দিলেন মা
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাক্ষাত
পাঁচ বছর পর ইউরোপ সফরে শি জিনপিং
বাবর-রিজওয়ানদের জন্য মোটা অঙ্কের বোনাস ঘোষণা
মে মাসে ১৩টি বজ্রঝড়ের আভাস
‘সর্বজনীন’ পেনশন স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অন্তর্ভুক্তি বৈষম্য তৈরি করবে: ইউট্যাব