ভারতের সভ্যতায় মুসলমানদের অবদান

শায়খ নাসির উদ্দীন মাহমুদ চেরাগ-ই-দেহলভী-৬

Daily Inqilab ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন

২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৪ এএম

খাজা নাসির উদ্দীন মাহ্মুদ চেরাগ-ই-দেহলভী (রহ.) এর মূল্যবান বাণীগুচ্ছ এখনও মানুষকে উদ্দীপিত করে ও প্রেরণা যোগায়। যেমন:
‘সব কাজের জন্য ভালো উদ্দেশ্য প্রয়োজন।’
‘ব্যবসায় উপার্জন করা একটি ভালো জিনিস।’
‘সৎ নিয়তে দুনিয়ার অন্বেষণ হলো আখিরাতের জীবনের সন্ধান।’
‘মানুষ কুরআন ও ঐতিহ্যকে পরিত্যাগ করেছে, তাই তারা কষ্ট পাচ্ছে।’
‘মানুষকে খুশি রাখাই সর্বোত্তম প্রার্থনা’।

‘যদি কেউ বাড়িতে বা কর্মস্থলে চলাফেরা করার সময় কুরআন তেলাওয়াত করে, তবে তার জন্য কোনো সেবা বা পেশা অবলম্বনে কোনো বাধা নেই। এমন ব্যক্তি হচ্ছেন একজন সুফী।’
‘অবশ্যই সমস্ত ব্যবসায়িক লেনদেনে মহানবী (সা.) এর শিক্ষা অনুসরণ করতে হবে, বিশেষ করে নবী (সা.) এবং আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। বাণিজ্য পরিচালনা করার সময় কখনই মিথ্যা বলা যাবে না।’

‘কৃষিকাজ একটি অত্যন্ত সম্মানজনক পেশা এবং অনেক দরবেশ এটি গ্রহণ করেছেন। বীজ বপনের সময়, কৃষকের হৃদয় এবং জিহ্বাকে তার বীজ থেকে ভালো ফল পাওয়ার জন্য আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে। ভালো উদ্দেশ্য ছাড়া কোনো কাজ শুরু করা উচিত নয়। লোক দেখানোর জন্য যদি কেউ নামাজ পড়ে, তবে আল্লাহর কাছে তার নামাজ কবুল হয় না। কারণ এটি মানুষের কাছ থেকে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য করা হয় এবং নামাজের মধ্যে এই অসারতা আল্লাহ পছন্দ করেন না।’

একবার এক দরবেশ হযরত নাসির উদ্দীন চেরাগ-ই-দেহলভীর কাছে এসে অভিযোগ করলেন যে, তিনি জুলুমের শিকার হয়েছেন। সাধক তাকে উপদেশ দিয়ে বলেন: ‘আপনাকে অবশ্যই সংযত থাকতে হবে এবং অত্যাচারী যদি জীবিত থাকে তবে আপনাকে অবশ্যই তাকে ক্ষমা করতে হবে। কারণ মহান দরবেশরা এমনটি করেছেন। আপনি দেখতে পাবেন যে দীর্ঘমেয়াদে নিপীড়ককে কুদরতি শক্তি দ্বারা শাস্তি দেওয়া হবে।’
খায়রুল মাজালিসের ভাষ্য মতে, বাদশাহর এক কর্মকর্তা, যিনি একজন সৈয়দ ছিলেন, হযরত নাসির উদ্দীনের মুরীদ হয়েছিলেন। সাধক তাকে বস্তুবাদ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত নসিহত করেন:

‘আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, আপনার প্রাসাদে আপনার ঘোড়া, আপনার চাকর এবং আপনার টাকা সবই একদিন আপনার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হবে। এই জাতীয় জিনিস নিয়ে ব্যস্ত থাকা অর্থহীন। এগুলোর পরিবর্তে সেই জিনিসগুলি নিয়ে আপনার চিন্তা করা উচিত, যা চিরন্তন।’

সিয়ারুল আউলিয়ার মতে, আধ্যাত্মিক শিষ্যের দায়িত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন: ‘প্রকৃত শিষ্য হল সেই ব্যক্তি, যে তার আধ্যাত্মিক গুরু ও পথপ্রদর্শকের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে। তিনি কেবল তা দেখেন, যা তার আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক তাকে দেখান। তিনি তার আধ্যাত্মিক গাইডকে আল্লাহর পথের পথপ্রদর্শক হিসাবে গ্রহণ করেন। তিনি তার আধ্যাত্মিক গাইডের নজরে আনেন তার সমস্ত ভালো এবং খারাপ ধারণা যা তার মনের মধ্যে উদ্ভূত হতে পারে। যে ব্যক্তি তার আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শককে সামান্যতম মাত্রায়ও অমান্য করে তাকে সত্যিকার আধ্যাত্মিক মুরীদ বলা যায় না।’

তিনি বলেন, ‘সৎ উপায়ে জীবিকা নির্বাহ করা উচিত। ব্যবসার লেনদেনে সৎ হওয়া উচিত এবং মিথ্যা কথা বলে মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করা উচিত নয়। কালোবাজারি ও মুনাফাখোরী ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। নফস দ্বারা পরিচালিত হলে মানুষের কোনো প্রচেষ্টাই সফল হতে পারে না। যারা উপদেশ প্রদান করে এবং অন্যদেরকে ন্যায়ের পথে আমন্ত্রণ জানায়, তাদের একেবারে নিঃস্বার্থ হওয়া উচিত। একজন ধর্মপ্রচারকের লক্ষ্য অর্থ বা খ্যাতি নয়, বরং একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হওয়া উচিত।’

এই মহান সাধক ও ধর্মপ্রচারক ১৮ রমজান ৭৫৭ হিজরি মোতাবেক ১৩৫৭ খ্রিস্টাব্দে ৮২ বা ৮৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন এবং তাঁকে ভারতের দক্ষিণ দিল্লীর একটি অংশে সমাহিত করা হয়। তাঁর মৃত্যুর পর ১৩৫৮ সালে দিল্লীর সুলতান ফিরুজ শাহ তুঘলক (১৩৫১-১৩৮৮) তাঁর সমাধি নির্মাণ করেন এবং পরে সমাধিসৌধের দু’পাশে দুটি গেটওয়ে যুক্ত করা হয়। (সমাপ্ত)


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

আক্রমণের ঝড় তুলেও হারল পিএসজি,১১ বছর পর ফাইনালে ডর্টমুন্ড

আক্রমণের ঝড় তুলেও হারল পিএসজি,১১ বছর পর ফাইনালে ডর্টমুন্ড

মাইশার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ

মাইশার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ পুতিনের, ছয় বছর ভোগ করবেন একচ্ছত্র ক্ষমতা

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ পুতিনের, ছয় বছর ভোগ করবেন একচ্ছত্র ক্ষমতা

রাত পোহালেই ফরিদপুর ৩ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন

রাত পোহালেই ফরিদপুর ৩ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন

বিএনপির সমাবেশ: সবকিছু বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত দেবে ডিএমপি

বিএনপির সমাবেশ: সবকিছু বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত দেবে ডিএমপি

সোনার দাম এবার ভরিতে বাড়লো ৪৫০২ টাকা

সোনার দাম এবার ভরিতে বাড়লো ৪৫০২ টাকা

সিরি-এ বর্ষসেরা মিডফিল্ডার ফার্গুসন

সিরি-এ বর্ষসেরা মিডফিল্ডার ফার্গুসন

আগামীকাল হরিরামপুর উপজেলা ভোটগ্রহণ : ত্রিমুখী লড়াইেয়র সম্ভাবনা

আগামীকাল হরিরামপুর উপজেলা ভোটগ্রহণ : ত্রিমুখী লড়াইেয়র সম্ভাবনা

স্কটল্যান্ডের বিশ্বকাপ দলে হুইল ও জোন্স

স্কটল্যান্ডের বিশ্বকাপ দলে হুইল ও জোন্স

বান্দরবানে সেনাবাহিনীর অভিযানে একজন কেএনএফ সদস্য নিহত, বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার

বান্দরবানে সেনাবাহিনীর অভিযানে একজন কেএনএফ সদস্য নিহত, বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার

মেসিদের লিগকে যে পরামর্শ দিলেন ফিফা সভাপতি

মেসিদের লিগকে যে পরামর্শ দিলেন ফিফা সভাপতি

বজ্রপাতে নগরকান্দায় ২১ মাদ্রাসা ছাত্র আহতের ১১ জন এখনও হাসপাতালে

বজ্রপাতে নগরকান্দায় ২১ মাদ্রাসা ছাত্র আহতের ১১ জন এখনও হাসপাতালে

গোদাগাড়ীতে ৩ কেজি ৪শ’ গ্রাম হেরোইনসহ ২ জন গ্রেফতার

গোদাগাড়ীতে ৩ কেজি ৪শ’ গ্রাম হেরোইনসহ ২ জন গ্রেফতার

উপজেলা নির্বাচনে ইভিএমে প্রথমবারের মতো ভোট দিচ্ছে মতলব উত্তরবাসী

উপজেলা নির্বাচনে ইভিএমে প্রথমবারের মতো ভোট দিচ্ছে মতলব উত্তরবাসী

১ বছরে আদানি গ্রিনের ২৫ শতাংশ মুনাফা বৃদ্ধি

১ বছরে আদানি গ্রিনের ২৫ শতাংশ মুনাফা বৃদ্ধি

শপআপ-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগদান করলেন মামুন রশীদ

শপআপ-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগদান করলেন মামুন রশীদ

টেকসই রাজস্ব নিশ্চিতে করতে গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে প্রয়োজন নীতিনির্ধারণে ধারাবাহিকতা

টেকসই রাজস্ব নিশ্চিতে করতে গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে প্রয়োজন নীতিনির্ধারণে ধারাবাহিকতা

সোনালী ব্যাংকের মুনাফা ৮৩ শতাংশ বেড়েছে

সোনালী ব্যাংকের মুনাফা ৮৩ শতাংশ বেড়েছে

ব্যাটারি রিপ্লেসমেন্ট সুবিধা আনলো ভিভো ভি৩০ লাইট

ব্যাটারি রিপ্লেসমেন্ট সুবিধা আনলো ভিভো ভি৩০ লাইট

বাগেরহাটে যুবলীগ নেতাকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন আওয়ামী লীগ নেতা

বাগেরহাটে যুবলীগ নেতাকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন আওয়ামী লীগ নেতা