ভারতের সভ্যতায় মুসলমানদের অবদান

শায়খ নাসির উদ্দীন মাহমুদ চেরাগ-ই-দেহলভী-১

Daily Inqilab ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন

০৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২২ এএম | আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২২ এএম

শায়খ নাসির উদ্দীন মাহমুদ নিজামী চিশতী (১২৭৪-১৩৩৭) মরমীকবি এবং চিশতী তরিকার এক বিখ্যাত সুফি সাধক। তাঁর ভক্ত-অনুসারীরা তাঁকে ‘রওশন চেরাগ-ই-দেহলভী’ বলে অবহিত করেন, যার অর্থ ‘দিল্লির আলোকিত বাতি।’ তিনি ছিলেন সুফি সাধক শায়খ নিজাম উদ্দীন আউলিয়ার শিষ্য এবং পরবর্তীকালে তাঁর উত্তরসূরি। শায়খ নিজাম উদ্দীন আউলিয়ার ধর্মপ্রচার ও মানবসেবার মিশনকে তিনি এগিয়ে নিয়ে গেছেন দূরদূরান্তে। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশে তাঁর সময়ের একজন মহান সাধক ও ধার্মিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন যে, ‘জাতি, বর্ণ বা ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষের প্রতি দয়া প্রসারিত করা উচিত। প্রতিটি মানুষের উচিত আল্লাহ নির্দেশিত নৈতিকতা অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া, যিনি তাঁর সমস্ত সৃষ্টির প্রতি তাঁর দানশীলতা ও দয়া প্রসারিত করেন। যখন সূর্য উদিত হয়, এটি তাদের অবস্থান নির্বিশেষে সকলকে আলো এবং উষ্ণতা দেয়। বৃষ্টি হলে সবাই এর সুফল পায়। এগুলো হল আল্লাহতায়ালার রহমত ও নৈতিকতার বহিঃপ্রকাশ এবং মানুষের উচিত, যতটা সম্ভব সেগুলোকে অনুকরণ করার চেষ্টা করা।’

তিনি মানুষকে তিন ভাগে শ্রেণীবদ্ধ করেন, ১. সাধারণ মানুষ (আওয়াম), ২. নির্বাচিত (খাওয়াস), ৩. সুপার-ইলেক্ট (আখাস-উল-খাওয়াস)। এই শ্রেণীবিভাজন সামাজিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক পার্থক্যের উপর ভিত্তি করে নয়, আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে। এটি সাধারণ মানুষের চেয়ে নির্বাচিতদের জন্য আধ্যাত্মিক শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা আরও কঠিন করে তোলে। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে যা আল্লাহ তায়ালার দর্শনকে বাধা দেয় তাহল পাপ; নির্বাচিতদের ক্ষেত্রে এটি অবহেলা (গফলাত) বা বৈধ আনন্দে লিপ্ত হওয়া; সুপার-ইলেক্টের ক্ষেত্রে পর্দা হল হাসানাত (গুণ)। শেষ শ্রেণীর একজনের কাছে তার ধার্মিকতায় শ্রেষ্ঠত্বের আশা করা হয়, কারণ নিছক মঙ্গল তার জন্য কিছুই নয়।

সময়ের ব্যবধানে তিনি দিল্লীতে সুপরিচিত হয়ে উঠেন। দিল্লী থেকে তিনি পার্শ্ববর্তী ও দূরবর্তী অঞ্চলে ইসলামের বিস্তৃতির আশায় জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। হযরত খাজা নাসির উদ্দীন চেরাগ-ই-দেহলভীর আমলে এমন কোনো ব্যক্তিত্ব ছিল না, যিনি এই ধরনের প্রচেষ্টা করেছিলেন। পরবর্তীতে তাঁর শিষ্যরা ইসলামের বাণী নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েন। বিশেষভাবে তাঁর শিষ্যগণ দাক্ষিণাত্যে ইসলামের শিক্ষা ও প্রচারের জন্য স্থানান্তরিত হন এবং তাদের প্রচেষ্টা সেখানে সফলতা লাভ করে। তাঁর শিষ্য ও উত্তরসূরিদের মধ্যে হযরত বুরহান উদ্দীন (রহ.), যিনি আওরঙ্গাবাদে গিয়ে সেখানে শিক্ষকতা ও ধর্মপ্রচারের কাজ শুরু করেন এবং তিনি সেখানেই বনে যান সবচেয়ে সফল ব্যক্তি। খাজা চেরাগ-ই-দেহলভী শিষ্যদের যে নির্দেশ দেন, তাঁরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন। তিনি বলেন, ‘একজন মরমীবাদীর এমন আচরণ করা উচিত নয়, যেন সে অন্যদের থেকে আলাদা। শ্রেষ্ঠত্বের একটি ঘৃণ্য অনুভূতির প্রজনন ছাড়াও, এটি তার এবং মানুষের মধ্যে একটি উপসাগর তৈরি করে। তাকে বিভিন্ন মেজাজ ও পেশার মানুষের সাথে মিশতে হবে এবং এমন আচরণ করতে হবে, যেন সে তাদের একজন।’


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ওয়ালটন ‘ননস্টপ মিলিয়নিয়ার’ ক্যাম্পেইনে ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়া

ওয়ালটন ‘ননস্টপ মিলিয়নিয়ার’ ক্যাম্পেইনে ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়া

জোড়া গোলে মিউনিখে বায়ার্নকে রুখে দিলেন ভিনিসিয়ুস

জোড়া গোলে মিউনিখে বায়ার্নকে রুখে দিলেন ভিনিসিয়ুস

মার্কিন পতাকা নামিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে উড়ল ফিলিস্তিনের ঝান্ডা!

মার্কিন পতাকা নামিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে উড়ল ফিলিস্তিনের ঝান্ডা!

ক্যাডবারি চকোলেটের ওপর মিলল ফাঙ্গাস

ক্যাডবারি চকোলেটের ওপর মিলল ফাঙ্গাস

পেরুতে ৬৫০ ফুট গভীর খাদে পড়ল বাস, হতাহত ৪৫

পেরুতে ৬৫০ ফুট গভীর খাদে পড়ল বাস, হতাহত ৪৫

সেমিকন্ডাক্টর রফতানিতে জাপানের কড়াকড়ি : চীনের উদ্বেগ

সেমিকন্ডাক্টর রফতানিতে জাপানের কড়াকড়ি : চীনের উদ্বেগ

সিনচিয়াংয়ের মরুভূমিতে চলছে ধানচাষ

সিনচিয়াংয়ের মরুভূমিতে চলছে ধানচাষ

পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে ভয়ংকর হাতিয়ার বানাল ইরান

পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে ভয়ংকর হাতিয়ার বানাল ইরান

রুকু থেকে উঠার সময় ‘সামিআললাহু লীমান হামিদাহ’ বলা প্রসঙ্গে।

রুকু থেকে উঠার সময় ‘সামিআললাহু লীমান হামিদাহ’ বলা প্রসঙ্গে।

যুক্তরাষ্ট্রে আসামি ধরতে গিয়ে গুলিতে ৩ পুলিশ কর্মকর্তা নিহত

যুক্তরাষ্ট্রে আসামি ধরতে গিয়ে গুলিতে ৩ পুলিশ কর্মকর্তা নিহত

ইন্দোনেশিয়ায় ফের আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত

ইন্দোনেশিয়ায় ফের আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত

অতি বাম আর অতি ডান মিলে সরকার উৎখাতে কাজ করছে : প্রধানমন্ত্রী

অতি বাম আর অতি ডান মিলে সরকার উৎখাতে কাজ করছে : প্রধানমন্ত্রী

জার্মানিতে ৬ বছরের নিখোঁজ শিশুর সন্ধানে ১,২০০ জন

জার্মানিতে ৬ বছরের নিখোঁজ শিশুর সন্ধানে ১,২০০ জন

বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণ ‘প্রত্যাখ্যান’ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের

বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণ ‘প্রত্যাখ্যান’ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের

কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদ কি বৈধ?

কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদ কি বৈধ?

পান্নুনকে খুন করতে ‘হিটম্যান’ পাঠিয়েছিল ‘র’ অফিসার!

পান্নুনকে খুন করতে ‘হিটম্যান’ পাঠিয়েছিল ‘র’ অফিসার!

জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান প্রেসিডেন্টের

জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান প্রেসিডেন্টের

২০৩০ সাল নাগাদ চীনে বাণিজ্যিকভাবে আসবে ৬-জি

২০৩০ সাল নাগাদ চীনে বাণিজ্যিকভাবে আসবে ৬-জি

কলম্বিয়ায় হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ৯ সেনা নিহত

কলম্বিয়ায় হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ৯ সেনা নিহত

বহির্বিশ্বে মিলল প্রাণের সন্ধান!

বহির্বিশ্বে মিলল প্রাণের সন্ধান!