পর্যটন শিল্পে সম্ভাবনা
০৪ জুন ২০২৪, ১২:১৮ এএম | আপডেট: ০৪ জুন ২০২৪, ১২:১৮ এএম
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন অনস্বীকার্য। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক। প্রধানমন্ত্রী পর্যটন শিল্প বিকাশের স্বার্থে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। কক্সবাজারে রেল লাইন নির্মাণ করেছেন। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ করেই ক্ষান্ত হননি, এখন সময়ের প্রয়োজনে মেরিন ড্রাইভকে চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যুগে যুগে ভ্রমণকারীরা মুগ্ধ হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে এ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশে পর্যটন শিল্প উন্নয়নের সম্ভাবনা অপরিসীম। বাংলাদেশ স্বল্প আয়তনের দেশ হলেও বিদ্যমান পর্যটক আকর্ষণে যে বৈচিত্র্য তা সহজেই পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পারে। পৃথিবীতে পর্যটন শিল্প আজ বৃহত্তম শিল্প হিসেবে স্বীকৃত।
২০২৫ সালের মধ্যে পর্যটন শিল্পের সর্বোচ্চ বিকাশে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। পুরো দেশকে আটটি পর্যটন জোনে ভাগ করে প্রতিটি স্তরে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রথমবারের মতো সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে কক্সবাজার পর্যটন অবকাঠামো নির্মাণে ২৫টি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলোতে প্রায় প্রত্যক্ষভাবে বিনিয়োগ হবে ৩৭ হাজার কোটি টাকা আর পরোক্ষভাবে বিনিয়োগ হবে এক লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা।
কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণ, মহেশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, ঘুমধুম পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণ, কুতুবদিয়া বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প, এথনিক ভিলেজ, সোনাদিয়া পর্যটনকেন্দ্র, আধুনিক হোটেল মোটেল নির্মাণ, সাবরাং ও নাফ ইকোট্যুরিজম পার্ক ইত্যাদি। এসব প্রকল্পে প্রায় কয়েক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে, যা এ অঞ্চলের বেকারত্বসহ অর্থনীতির পথ সুগম করবে।
কক্সবাজারের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজতর করার জন্য সরকার কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে কয়েক লেনে উন্নীত করে গড়ে তুলছে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশ এবং জেলা প্রশাসনের বিচ কর্মী। হোটেল-মোটেলে পর্যটকদের সুবিধা-অসুবিধা তদারকি করার জন্য ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন যথেষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছে। সে সঙ্গে সৈকতে পুলিশের পক্ষেও ওয়ান-স্টপ সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
পর্যটন শিল্পের বিকাশের ওপর বাংলাদেশের উন্নয়ন অনেকখানি নির্ভর করছে। দেশে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটলে কর্মসংস্থান ঘটবে ও বেকারত্ব দূরীকরণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন সফল হবে। ভিন্ন ভিন্ন দেশের প্রাচীন যুগের ইতিহাস ও শিল্প, সাহিত্য, কালচার ও প্রথার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ঐতিহাসিক স্থান দেখার জন্যও পর্যটকরা নিজ দেশের সীমানা পেরিয়ে দূর-দূরান্তে ছুটে চলে প্রতিনিয়ত। পর্যটন হলো একটি বহুমাত্রিক শ্রমঘন শিল্প। এ শিল্পের বহুমাত্রিকতার কারণে বিভিন্ন পর্যায়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সম্ভাবনা তৈরি হয়। ফলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশে রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত রয়েছে কক্সবাজারে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের সৌন্দর্য যে-কাউকে বিমোহিত করবে। বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলা পর্যটনপ্রেমীদের আকর্ষণ করার জন্যও যথেষ্ট। এ দেশে রয়েছে ৫ হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস। রয়েছে অসংখ্য পুরাকীর্তি।
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের নগরী কক্সবাজারের সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সরাসরি রেল যোগাযোগ চালু হয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার লাইন বাংলাদেশ রেলওয়ের এমন একটি রেলপথ। যেখানে যাত্রাপথে কখনো চোখে পড়ছে নদীর সৌন্দর্য। মুগ্ধ করছে টিলা-পাহাড়ি এলাকার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য। যেতে যেতে কখনো দুই ধারে দেখা মিলছে বিস্তীর্ণ ধানখেতের নয়নাভিরাম দৃশ্য।
এখন বছরজুড়েই কক্সবাজারে পর্যটকেরা আসেন। তবে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পর্যটকের আগমন বেশি। রেলের মতো নিরাপদ বাহন চালু হওয়ায় মৌসুমের বাইরেও পর্যটক বাড়ছে। পর্যটক যত বাড়ছে, তত বেচাকেনা বাড়ছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের তৈরি পণ্যের বিক্রি বাড়ছে। লেনদেনও বাড়ছে। পর্যটনের পর কক্সবাজারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কয়েকটি খাত হলো- লবণ, কৃষিপণ্য, মৎস্য ও শুঁটকি। এসব পণ্য কম খরচে আনা-নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। কৃষিপণ্য সহজে আনা-নেওয়ার সুবিধা থাকলে কৃষকেরও দাম পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যেও গতি আনছে নতুন রেললাইন।
পর্যটনের অপার সম্ভাবনা হয়ে দেখা দিয়েছে দেশের তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, দৃষ্টিনন্দন পাহাড় এবং সবুজের সমারোহে প্রাণ জুড়িয়ে যায় ভ্রমণ পিপাসুদের। সাজেক, নীলগিরি আলী কদমে পর্যটকদের যাতায়াত বাড়ছে। এ অঞ্চলটি এখন সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস হতে যাচ্ছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কোনো তুলনা নেই। আমাদের দরকার কেবল ভ্রমণ পিপাসুদের সহজ যাতায়াতের সঙ্গে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। তাহলেই নিরাপদ পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা সহজতর হয়। দেশের পর্যটনখাত আরও উন্নত হলে দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন আরও বাড়বে। পাশাপাশি বহুমাত্রিক উন্নয়নের দ্বার উন্মোচিত হবে। এতে অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন আসবে।
লেখক: সংসদ সদস্য ঢাকা-১৮, সদস্য, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রাস্তা আটকে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে বিক্ষোভ, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা
পবিত্র কোরআন শরীফের পরে সত্য হিসেবে মানুষ সংবাদপত্রকে মনে করতো-বিটিভি মহা পরিচালক
লালমোহনে বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে ৭০ বছরের বৃদ্ধ নিহত
বিচারের আগে ফ্যাসিস্ট আ. লীগের রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ নেই : নাহিদ
ড. ইউনূসকে নিয়ে এক দশক আগে যা বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি
গাজীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুতের তারের স্পর্শে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু
লেবাননে জাতিসংঘ মিশনে হামলা, চার ইতালীয় সেনা আহত
এ আর রহমানের নামে মিথ্যাচার রটানোর অভিযোগে তীব্র ক্ষোভ ঝাড়লেন ছেলে এ আর আমিন
ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোন ধর্মই নিরাপদ ছিল না-এড.আহমেদ আযম খান
শব্দের চেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন বাধ মানে না এমন ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত আছে : পুতিন
ঢাকা আজ বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় চতুর্থ
পলাতক পুলিশ সদস্যদের বেতন বন্ধ, হচ্ছে মামলা
ছয়-সাত মাসেই টিয়ার কাবিখার ২০০ কোটি লুটেছিলেন হাসিনা দোসর মহিবুর
আদানির দুই চুক্তি বাতিল করলো কেনিয়া
হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে ক্ষতবিক্ষত বাবুকে থাইল্যান্ড নেয়া হচ্ছে
দীর্ঘ ১৭ বছর পর মানিকগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত
কলাপাড়ায় নিম্নবিত্তদের স্বস্থি দিতে স্থাপন করা হলো সরাসরি কৃষকদের সবজি বাজার
ঝিনাইদহে দুই ট্রাকে মুখোমুখি সংঘর্ষে চালক নিহত
ফ্যাসিবাদের পতনের পরে বাংলাদেশ এখন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে-শামা ওবায়েদ
কানাইঘাটে দোকানের ভিতর থেকে আইসক্রিম বিক্রেতার লাশ উদ্ধার