গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙাল হরিনাথ
০৪ জুন ২০২৪, ১২:১৮ এএম | আপডেট: ০৪ জুন ২০২৪, ১২:১৮ এএম

সাংবাদিক হিসেবেই পরিচিত কাঙাল হরিনাথ মজুমদার, যদিও তিনি সাহিত্য সাধক, শিক্ষাব্রতী, সমাজ সংস্কারকও ছিলেন। কাঙাল হরিনাথ ১৮৩৩ সালের ২২ জুলাই কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর কুণ্ডুপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা হরচন্দ্র মজুমদার, মায়ের নাম কমলীনি দেবী। বাবা-মাকে শৈশবে হারিয়ে দুঃখ-দুর্দশার মধ্যেই বেড়ে ওঠেন তিনি। পাশাপাশি দেখেন এলাকাবাসীর দুঃখ-দুর্দশা। এসব কিছু তাকে সংগ্রামী করে তোলে। এভাবেই তিনি গ্রামবাসীর হাতিয়ার হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলেন।
১৮৬৩ সালে কুমারখালীতে স্থাপিত হয় মথুরনাথ যন্ত্র। বিখ্যাত ঐতিহাসিক অক্ষয় কুমার মৈত্রর বাবা হরিনাথের বন্ধু মথুরনাথ মৈত্র এটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে তিনি মুদ্রণযন্ত্রটি হরিনাথকে দান করেন। ১৮৭৩ সাল থেকে এ যন্ত্রেই গ্রামবার্তা প্রকাশিকা প্রকাশিত হয়। ২৫ বছর ধরে নিয়মিত প্রকাশিত হয় এটি। কাঙাল হরিনাথ মজুমদার নারী জাগরণের অন্যতম দিকপাল হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। ১৮৬৩ সালে তিনি কুমারখালীতে একটি মেয়েদের স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। যার নাম কুমারখালী পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। স্বয়ং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সে সময় স্কুলটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
১৮৭৩ সালে বন্ধু ও সহযোদ্ধা মথুরানাথ মৈত্র’র আর্থিক সহায়তায় কুমারখালীতে এমএন প্রেস গড়ে তোলেন। তার আগে ১৮৫৭ সালে হাতে লেখা প্রকাশনা গ্রাম্যবার্তা দিয়ে কাঙাল হরিনাথের সাংবাদিকতার জীবন শুরু। গ্রাম্য বার্তার মাধ্যমে কাঙাল হরিনাথ মজুমদার নীলকরদেরসহ সে সময় জমিদারদের অত্যাচার ও অনাচারের বাস্তবতা তুলে ধরেন। তাছাড়া নিজের সাধনা, দর্শন ও সাহিত্যচর্চা তো ছিলই। সাত বছর পর ১৮৬৩ সালে কলকাতার গ্রিশ চন্দ্র বিদ্যা প্রেস থেকে গ্রাম্যবার্তা নিয়মিত প্রকাশ শুরু হয়, যা পূর্ণাঙ্গ রূপ পায় ১৮৭৩ সালে এমএন প্রেস স্থাপিত হলে।
কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের প্রেস ঘরে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা বোমা ফেলেছিল। সে সময় প্রেসটি অক্ষত থাকলেও প্রেসঘর বা কাঙাল কুঠিরের বেশ ক্ষতিসাধন হয়।
তাঁর স্মৃতিকে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে নির্মাণ করা হয়েছে একটি জাদুঘর। জাদুঘরটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। টিকিট কেটে ঢুকতে হয় জাদুঘরে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন জাদুঘরটি জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ দেখভাল করছে। কিছুদিন আগেও জাদুঘরে আসা দর্শনার্থীদের অপূর্ণ থাকতে হয়েছে। কেননা জাদুঘরের ভেতর ছিল না হরিনাথের শেষ স্মৃতিচিহ্ন সেই অমূল্য ঐতিহাসিক সম্পদ, যা দিয়ে হরিনাথ রাত জেগে পত্রিকা ছাপতেন। সেই ছাপাযন্ত্রটি জাদুঘরে ছিল না। খুব সম্প্রতি ছাপাযন্ত্রটি জাদুঘরে স্থানান্তর করা হয়েছে। হরিনাথের সেই কুটিরে গিয়ে দেখা যায়, ইটগুলো খসে পড়ছে, দেয়াল ভাঙা। দরজা-জানালা ভেঙে পড়েছে। ধসে গেছে মেঝেও। আগাছা জন্মে টিনের চালা ঘরটি রূপ নিয়েছে ঝোপঝাড়ে। আছে মাকড়সার বসতিও। এই হচ্ছে গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের বাড়ি।
১৯৮৪ সালে সর্বশেষ এই যন্ত্রে কিছু ছাপা হয়েছিল। এরপর আর কোনো ছাপা হয়নি। এই যন্ত্রে লালন, মীর মশাররফ ও জলধর সেনের হাতের স্পর্শ রয়েছে।
লাল ইটের নান্দনিক জাদুঘরটির ভেতরে রয়েছে বেশ কিছু ছবি ও লেখা। হরিনাথ কুটিরের আদলে ভেতরের সজ্জা করা হয়েছে। দোতলায় প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে হরিনাথের বিশাল এক ছবি। এরপরই তাঁর পরিচিতি। হরিনাথসহ তাঁর স্ত্রী এবং লালন, মীর মশাররফের ছবিও আছে। হরিনাথের স্বহস্তে লেখা কবিতাও শোভা পাচ্ছে দেয়ালে লাগানো অ্যালবামে। যেসব অক্ষর ছাপাযন্ত্রে ব্যবহার করা হতো, সে সব অক্ষরও রাখা হয়েছে জাদুঘরে। জাদুঘরের একপাশে রয়েছে গ্রন্থাগার। সেখানে আছে ছয় শতাধিক বই।
লেখক: বিশেষ সংবাদদাতা, কুষ্টিয়া।
বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

রাঙা সকালে শাবনাজের না বলা কথা

জে-হোপের সুইট ড্রিমস

ঈদে চ্যানেল অইতে ৭ সিনেমার ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার

বিশাল আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রে জেমসের কনসার্ট

অ্যাভাটারের তৃতীয় পর্ব মুক্তি পাবে ১৯ ডিসেম্বর

মাইকেল চাকমাকে পাসপোর্ট দিতে রুল

কেউ কেউ কৃত্রিমভাবে বিরোধ তৈরির চেষ্টা করছে : মির্জা আব্বাস

জুলাই-আগস্টে ঢাবি ক্যাম্পাসে সহিংস ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন ভিসির কাছে হস্তান্তর

বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তাক্বওয়ার শিক্ষা নিয়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে Ñজমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ

শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলায় খালাস পেলেন উপসচিব রেজাউল করিম

চার্চের শিক্ষক সুব্রত বৈদ্য হত্যায় সব আসামি খালাস

জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখতে নরসিংদীতে কর্মবিরতি

আছিয়ার মৃত্যু দেশ ও জাতির জন্য লজ্জাজনক : ইউট্যাব

সংস্কার সুপারিশ নিয়ে মতামত দিয়েছে ৭ দল, ১৬ দল সময় চেয়েছে

ঢাকা সংবাদপত্র হকার্স সুপারভাইজার সমিতি গঠিত

রামপালে অবাধে চলছে ঘের দখল ও চাঁদাবাজি

মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের আয়োজনে দোয়া ও ইফতার

সুন্দরবনের কাঠসহ ১০ চোরাকারবারী আটক

কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করার দাবিতে মানববন্ধন

নোবিপ্রবিতে ৮০০ কেভিএ বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন উদ্বোধন