বাংলাদেশের মানুষ কেমন আছে
০৪ জুন ২০২৪, ১২:১৮ এএম | আপডেট: ০৪ জুন ২০২৪, ১২:১৮ এএম
আমরা অনেকেই হয়তো জানি না যে গড় মাথাপিছু জিএনআই এর দিক থেকে বাংলাদেশের জনগণ পশ্চিমবঙ্গের জনগণকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। (জিএনআই হলো জিডিপি ও নিট রেমিট্যান্সের যোগফল)। পশ্চিমবঙ্গের মাথাপিছু জিএনআই ভারতের গড় মাথাপিছু জিএনআই এর সমান। কিন্তু, জীবনযাত্রার মানের দিক থেকে এখনো পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বাংলাদেশের মানুষের চাইতে খানিকটা ভাল রয়েছে বলে আমার বিশ^াস। এর পেছনে প্রধান কারণটি হলো, বেশিরভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও সেবার দাম পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের চাইতে কম। খাদ্যদ্রব্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা, যেগুলোকে ‘মৌল প্রয়োজন’ বলা হয় সেগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট প্রায় সব পণ্য ও সেবার দাম বাংলাদেশে পশ্চিমবঙ্গের চাইতে বেশি।
উদাহরণ: ১) চাল, আটা, ময়দা, মশলাপাতি, তরিতরকারি, ডালসমূহ, মুরগী, ডিম, দুধ, মাখন সবই পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের চাইতে সস্তা; ২) শার্ট, ট্রাউজার, জিনস, টি-শার্ট ও জুতো-স্যান্ডেল ছাড়া নারী-পুরুষ কিশোর-কিশোরী-শিশুর কাপড়-চোপড় পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের চাইতে সস্তা; ৩) ভারতে কম্পিউটারসহ অধিকাংশ ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রীর দাম বাংলাদেশের চাইতে কম, মোবাইল টেলিফোন কল অবশ্য বাংলাদেশে সস্তা; ৪) ভারতে বিদেশী গাড়ী খুব বেশি ব্রান্ডের পাওয়া না গেলেও ভারতে উৎপাদিত গাড়ীর দাম বাংলাদেশে আমদানি করা গাড়ীর তুলনায় অনেক কম; ৫) পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ শহরে এবং গ্রামে জমি-জমার দাম বাংলাদেশের চাইতে কম; ৬) পশ্চিমবঙ্গে অধিকাংশ নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাংলাদেশের চাইতে কম, তাই এপার্টমেন্ট বা পাকা বাড়ীর দাম এবং নির্মাণ খরচও কম; ৭) পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা-খরচ প্রাইমারী থেকে উচ্চতম লেভেল পর্যন্ত সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলাদেশের কাছাকাছি হলেও প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা-খরচ বাংলাদেশে পশ্চিমবঙ্গের চাইতে বেশি; ৮) স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা খরচ পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের তুলনীয় পর্যায়ে হলেও এসব সেবার মান পশ্চিমবঙ্গে উন্নততর; এবং ৯) পশ্চিমবঙ্গে বাস, ট্রেন, টেক্সি ও প্লেনের ভাড়া বাংলাদেশের চেয়ে তুলনায় কম। ফলে এখন বাংলাদেশের মাথাপিছু নমিনাল জিডিপি ভারতের চাইতে বেশি হলেও পশ্চিমবঙ্গের জনগণ ভোক্তা হিসেবে বাংলাদেশীদের চাইতে অনেক সুলভে ও স্বচ্ছন্দে জীবন নির্বাহ করতে পারছেন।
মাথাপিছু জিডিপি যেহেতু একটি গড় সূচক তাই মাথাপিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে যদি দেশে আয়বন্টনে বৈষম্যও বাড়তে থাকে তাহলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির সুফল সমাজের উচ্চবিত্ত জনগোষ্ঠির কাছে পুঞ্জীভূত হওয়ার প্রবণতা ক্রমশ শক্তিশালী হতে থাকে। যার ফলে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ প্রবৃদ্ধির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। ২০২২ সালের হাউসহোল্ড ইনকাম এন্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে মোতাবেক বাংলাদেশের আয়বৈষম্য-পরিমাপকারী জিনি সহগ বেড়ে ০.৪৯৯ এ পৌঁছে গেছে। এর মানে এখন বাংলাদেশ উচ্চ আয়বৈষম্যের দেশে পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘ওয়েলথ এক্স’ এর প্রতিবেদন ওয়ার্ল্ড আল্ট্রা ওয়েলথ রিপোর্ট-২০১৮ মোতাবেক ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ এই পাঁচ বছরে অতি-ধনী (আলট্রা-হাই নেট ওয়ার্থ ইনডিভিজুয়াল, যাদের সম্পদের পরিমাণ কমপক্ষে তিন মিলিয়ন ডলার) ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধির দিক দিয়ে বিশে^র বড় অর্থনীতির দেশগুলোকে পেছনে ফেলে বিশ^-চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। ঐ পাঁচ বছরে বাংলাদেশে অতি-ধনীর সংখ্যা বেড়েছে বার্ষিক ১৭.৩ শতাংশ হারে। পশ্চিমবঙ্গে আয়বৈষম্য বাংলাদেশের চাইতে অনেক কম। উপরন্তু পশ্চিমবঙ্গের জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা আমাদের দেশের জনগণের চাইতে অনেক বেশি হওয়ায় ওখানকার কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার ও গ্রাম-পঞ্চায়েতের শাসনব্যবস্থা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি জনবান্ধব।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল থেকে একনদী রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জনকারী বাংলাদেশ ছিল একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত এবং চরম দারিদ্র্য-কবলিত দেশ, যেখানে জনসংখ্যার ৮২ শতাংশই ছিল দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থানকারী জনগোষ্ঠী। সুতরাং বাংলাদেশের স্বাধীনতার অব্যবহিত পর পশ্চিমবঙ্গের মানুষ দারিদ্র্যপীড়িত হলেও বাংলাদেশের মানুষের চাইতে জীবনযাত্রার মানে অনেকখানি এগিয়ে ছিল। এমনকি বিংশ শতাব্দীর আশির দশক ও নব্বই দশকে বাংলাদেশের এবং পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জীবনযাত্রার মানের তুলনা করলেও যে বিষয়গুলো সামনে চলে আসবে তাহলো, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বামফ্রন্টের দীর্ঘ শাসনামলে যথাযথ গুরুত্ব পাওয়ায় এবং অপারেশন বর্গার মত কৃষি সংস্কারের সুফল পাওয়ায় বাংলাদেশের মানুষের চাইতে জীবনযাত্রার মানে আরো এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সত্তর দশকের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে গত সাড়ে চার দশকে বাংলাদেশ থেকে যে এক কোটি পঞ্চান্ন লাখ অভিবাসী বিশে^র বিভিন্ন দেশে অভিবাসন করেছেন ও বেশিরভাগ কর্মরত রয়েছেন তাঁদের পাঠানো ক্রমবর্ধমান রেমিট্যান্সের অর্থপ্রবাহ এদেশের গ্রামীণ জনগণের জীবনে সচ্ছলতার একটা বড়সড় উপাদান নিয়ে এসেছে, যা পশ্চিমবঙ্গে তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। এই একটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গকে এতখানি পেছনে ফেলে দিয়েছে যে এখন বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ অর্থনীতির চাইতে অনেক বেশি গতিশীল ও সচ্ছল হয়ে উঠেছে।
ফর্মাল চ্যানেলে ২০২২-২৩ অর্থ-বছরে বাংলাদেশে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স এসেছে ২১.৬১ বিলিয়ন ডলার। সাবেক অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল বলেছিলেন, প্রায় অর্ধেক রেমিট্যান্স এখন হুন্ডি পদ্ধতিতে দেশে আসছে। আমি মনে করি বাংলাদেশের সিংহভাগ রেমিট্যান্স-প্রেরকরা হুন্ডি পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। অতএব ২১-২২ বিলিয়ন ডলার যদি ফর্মাল চ্যানেলে দেশে রেমিট্যান্স আসে তাহলে কমপক্ষে আরো ২১-২২ বিলিয়ন ডলার বা তার চাইতেও বেশি রেমিট্যান্স (টাকার আকারে) হুন্ডি পদ্ধতিতে দেশের অর্থনীতিতে ঢুকছে। তার মানে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ফর্মাল-ইনফর্মাল চ্যানেলে মোট রেমিট্যান্স ও দেশে নিয়ে আসা বৈদেশিক মুদ্রার যোগফল কমপক্ষে ৪৫ বিলিয়ন ডলার। ৪৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ প্রতিবছর অর্থনীতিতে যুক্ত হওয়া কি সামান্য ব্যাপার? বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগণের দারিদ্র্য দ্রুত নিরসনের বড় কারণ এই রেমিট্যান্স প্রবাহ। রেমিট্যান্স প্রবাহের সুফলভোগী পরিবারগুলোর বর্ধিত ভোগ, সঞ্চয় ও বিনিয়োগে গ্রামীণ অর্থর্নীতিতে বড়সড় সমৃদ্ধির জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বাড়ীঘর পাকা হচ্ছে, অন্যান্য ধরনের বসতঘরেরও মান বৃদ্ধি পেয়েছে, ছেলেমেয়েরা ভাল স্কুল-কলেজে-বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ছে, পরিবারের সদস্যদের আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সামর্থ্য বাড়ছে, শিশুমৃত্যুর হার কমছে, সেনিটারি পায়খানার প্রচলন বাড়ছে, ঘরে ঘরে টিউবওয়েল বসে গেছে, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ চলে এসেছে, কৃষির যান্ত্রিকীকরণ তরান্বিত হচ্ছে, গ্রামে শপিংমল স্থাপনের হিড়িক পড়েছে। গ্রামের রাস্তাঘাটেও আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা চালু হয়ে গেছে।
এর ফলে গ্রামীণ জনগণের মধ্যে প্রায় আশি লাখ পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ৪ থেকে ৫ কোটি মানুষ এখন নিম্ন-মধ্যবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত অবস্থানে উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। কৃষিখাতের সাফল্যের পেছনেও বাংলাদেশী অভিবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য। কৃষিতে উচ্চ ফলনশীল প্রযুক্তির প্রসার, সেচ ব্যবস্থার ব্যাপক প্রচলন, কৃষির যান্ত্রিকীকরণ, গ্রামীণ যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, আধুনিক স্বাস্থ্য সুবিধা গ্রহণের পারঙ্গমতা বৃদ্ধি, গ্রামীণ জনগণের খাদ্যের পুষ্টিমান বৃদ্ধি, ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স বিপুল অবদান রাখছে।
ড. ইউনূস উদ্ভাবিত ক্ষুদ্র ঋণ আন্দোলনের সাফল্য গ্রামের ভূমিহীন নারীদের কাছে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ পৌঁছে দেওয়ার একটা অত্যন্ত কার্যকর হাতিয়ার বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছে, এবং এই সফল উদ্ভাবনটি ড. ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংকের নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হওয়ার মধ্যেমে বিশ^স্বীকৃতি অর্জন করেছে। গ্রামীণ ব্যাংক এবং কয়েক হাজার এনজিও’র ক্ষুদ্র ঋণের সহায়তায় গ্রামীণ নারীর স্ব-কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাংলাদেশ বিশে^ সফল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের গ্রামীণ দারিদ্র্য নিরসনে ক্ষুদ্র ঋণ তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বাংলাদেশের নারীদের প্রায় ৪১ শতাংশ বাড়ীর আঙিনার বাইরে অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে ক্রিয়াশীল। দেশের দ্রুত বিকাশমান পোষাক শিল্পে ৩৩ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আর এই শ্রমিকদের ৬০ শতাংশেরও বেশি নারী, যাদের সিংহভাগই গ্রাম থেকে এসে শহরে কর্মসংস্থানকে বেছে নিয়েছেন। সমাজের দরিদ্র ও প্রান্তিক অবস্থানের এসব নারীর প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পখাতে কর্মসংস্থান তাঁদের বঞ্চনা ও চরম দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখছে।
এর উল্টোদিকে পশ্চিমবঙ্গে গত তিন দশক ধরে এক ধরনের ‘বি-শিল্পায়ন’ (de-industrialisation) প্রক্রিয়া ক্রিয়াশীল হয়ে উঠেছিল আক্রমণাত্মক ট্রেড ইউনিয়ন ও রাজনৈতিক হানাহানির কারণে। অনেক শিল্পপতি পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে তাঁদের শিল্প-কারখানা সরিয়ে নিয়েছেন বৈরী রাজনীতির শিকার হয়ে। ২০১১ সালে মমতা ব্যানার্জীর তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতাসীন হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের এই নেতিবাচক ইমেজ এখনো দূর হয়নি। এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ যে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৫০ শতাংশ শ্রমজীবী মানুষ এখনো কৃষিখাতে কর্মরত, অথচ বাংলাদেশে কৃষিখাতে কর্মরত শ্রমশক্তি এখন ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে।
অন্যদিকে কিছুদিন আগেও মনে করা হতো কৃষিখাতের অগ্রগতি বাংলাদেশের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে বেশি। অপারেশন বর্গার সাফল্য পশ্চিমবঙ্গকে এই অগ্রগতি অর্জনে সহায়তা করেছিল। কিন্তু এখন বাংলাদেশের কৃষিখাতেও সমৃদ্ধির ছোঁয়া লেগেছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর নেতৃত্বে কৃষি ও কৃষক-বান্ধব নীতিমালা গ্রহণের কারণেই কৃষিখাতে এই চমকপ্রদ সাফল্যের ধারা সূচিত হয়েছিল। ২০০৯ সালে মহাজোট আবার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর তাদের নিষ্ঠাবান প্রয়াসের ফলে ২০১১ সালে বাংলাদেশ মোটা ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ১৯৭২ সালে দেড় কোটি টন ধান লাগতো আমাদের, অথচ উৎপাদন করতে পারতাম মাত্র এক কোটি দশ লাখ টন। গত ২০২২ সালে এদেশে তিন কোটি বিরান্নব্বই লাখ টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। সতের কোটির বেশি মানুষের খাদ্যশস্য যোগান দিয়েও এখন প্রায় প্রতি বছর মোটা ধান উদ্বৃত্ত হচ্ছে আমাদের। ধান, গম ও ভুট্টা মিলে ২০২২ সালে খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল চার কোটি ষাট লাখ টন।
মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশে^ তৃতীয়, তরি-তরকারী উৎপাদনে বিশে^ চতুর্থ। আলু, হাঁস-মুরগীর ডিম ও মাংস উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। গরুর মাংস ও দুধ উৎপাদনে দেশে এখনো ঘাটতি রয়ে গেলেও মাংস উৎপাদনে কয়েক বছরের মধ্যেই স্বয়ম্ভরতা অর্জন করা যাবে। (প্রতি বছর আমরা ৫৫/৬০ লাখ টন গম আমদানি করি)। খাদ্যসাহায্য এখন আমাদের বৈদেশিক ঋণ/অনুদানের এক শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। উচ্চফলনশীল প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার, সেচ ব্যবস্থার আওতায় আসায় দেশের অধিকাংশ জমিতে বোরো চাষের সম্প্রসারণ, যথাযথ ভর্তুকি প্রদান, কৃষিঋণ পদ্ধতির সহজীকরণ, ফসলের বহুধাকরণ, কৃষির লাগসই যান্ত্রিকীকরণ, উচ্চফলনশীল ফসল, তরিতরকারী, মাছ, হাঁস-মুরগী ও ফলমূল চাষের ব্যাপক প্রচলন, রাসায়নিক সার, বীজ ও কীটনাশকের সহজলভ্যতা, ইত্যাদি কৃষিখাতের উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
ফলে উৎপাদনশীলতার উল্লম্ফন বাংলাদেশেও একটি কৃষি বিপ্লবের সূচনা করেছে। অবশ্য বাংলাদেশের জিডিপি’র মাত্র ১৩ শতাংশ এখন কৃষিখাত থেকে আসছে, যা ক্রমহ্রাসমান। গ্রামীণ সড়ক-উন্নয়ন এবং আধুনিক পরিবহন চালুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। গ্রামীণ বিদ্যুতায়নেও বাংলাদেশের সাফল্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে বেশি।
পশ্চিমবঙ্গের গ্রামগুলোর সাক্ষরতার হার এখনো বাংলাদেশের গ্রামীণ সাক্ষরতার হারের চাইতে অনেক বেশি। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষার মানও বাংলাদেশের চাইতে ভাল, উচ্চশিক্ষিত মানুষও পশ্চিমবঙ্গে অনেক বেশি। তথ্য প্রযুক্তির প্রসারেও পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের চাইতে অগ্রগামী, ডিজিটাল পণ্য রফতানি থেকে পশ্চিমবঙ্গের আয় চার বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। গ্রামীণ জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা বাংলাদেশের চাইতে পশ্চিমবঙ্গে অনেক বেশি হওয়ায় স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ওখানে অনেক কম দুর্নীতিগ্রস্ত। অথচ, বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগণের জীবনের সবচেয়ে বেশি দুর্দশা, যাতনা ও হয়রানি ঘটিয়ে চলেছে স্থানীয় সরকারের দুর্নীতি। সেজন্যই প্রশ্ন উঠছে, অর্থনৈতিক অভাব-অনটন বেশ খানিকটা কমে গেলেও বাংলাদেশের মানুষ কি ভাল আছেন?
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে সুষ্ঠু গণতন্ত্রের সুফল জনগণের তৃণমূল পর্যায়েও পৌঁছে গেছে। ওখানকার গ্রাম-পঞ্চায়েতগুলো জনগণের অংশগ্রহণমূলক ও জবাবদিহিমূলক স্থানীয় সরকারের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিধানসভা এবং লোকসভার নির্বাচনগুলোও পশ্চিমবঙ্গে জালিয়াতিমুক্ত বলা চলে। গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি’র ভরাডুবি তারই অকাট্য প্রমাণ বহন করছে। অবশ্য বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার প্রায় ১৮ থেকে ১৯ শতাংশ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছে।
লেখক : একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ, লেখক-কলামিস্ট, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর অর্থনীতি বিভাগ চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়
বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সেনবাগে মর্মান্তিক মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় ভাগ্নে নিহত : মামা আহত
কুষ্টিয়ায় সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় গৃহবধুকে নির্যাতন
রাজশাহীর বাগমারায় পুকুর থেকে ভ্যান চালকের লাশ উদ্ধার
কুষ্টিয়ায় ট্রাক ও নছিমন সংঘর্ষে গরু ব্যবসায়ী নিহত
র্যাবকে সমাজে রাখা ঠিক হবেনা -রাজশাহীতে নূর খান
নওগাঁয় ৩ জনকে পিটিয়ে জখম, আহতদের উদ্ধার করলো পুলিশ
মাদারীপুরে গুড়ি বৃষ্টি আর হিমেল বাতাসে জনজীবন স্থবির
দুমকীতে বীর মুক্তিযোদ্ধার লাশ দাফনে বাঁধা
দুবাই মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে বাংলাদেশি মেধাবী শিক্ষার্থীর অ্যাওয়ার্ড লাভ
'বরবাদ' সিনেমা শতকোটির গন্ডি পেরিয়ে যাবে! কি বললেন শাকিব?
রাজশাহীর পুঠিয়ায় বাস চাপায় মা ছেলেসহ একই পরিবারের তিনজন নিহত
দোয়ারাবাজারে ভারতেীয় সীমান্তে ৩০০ বস্তা রশুন আটক করেছে টাস্কফোর্স
রাজশাহীতে নেসকোর ভৌতিক বিল বন্ধসহ নানারকম হয়রানীর প্রতিবাদে বিক্ষোভ
শ্যামনগর থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার
যুবদলের উদ্যোগে ৩১ দফা অবহিতকরণে আলোচনা সভা
এমাজউদ্দীন আহমদের গ্রহণযোগ্যতা ছিল সর্বজনীন
বাংলাদেশে সা'দ পন্থিদের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে: হাটহাজারীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে বক্তারা
ভারত বাধা পেরিয়ে শিরোপা জিততে মরিয়া বাংলাদেশ
দোয়ারাবাজারে ভ্যানের ধাক্কায় শিশু নিহত
গারো পাহাড়ের পানি হাতায় ঘুরতে এসে ভোগা নদীতে ডুবে ২ শিক্ষার্থীর মৃত্যু