প্রশাসনিক সংস্কার সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ
০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম
আজ অন্তর্বর্তী সরকারের ৩ মাস পূর্ণ হচ্ছে। প্রশাসনে গতি বাড়লেও ফাইলের হয়রানি থামেনি। অপসারণ করতে পারেনি ইউপি চেয়ারম্যানদের। প্রশাসন, পুলিশ, মানবাধিকার, অর্থনীতি ও আইন-শৃঙ্খলাসহ নানা ক্ষেত্রে বেশকিছু সিদ্ধান্ত, পদক্ষেপসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এছাড়া ৭টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। ইতোমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটি গঠন করেছে। ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো নামের তালিকা দেয়া শুরু করেছে। এ সরকারের তিন মাসে বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের কঠোর সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা দিয়েছে। প্রশাসনে এখনো কিছুটা গতি বাড়লেও ফাইলের হয়রানি থামেনি। প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ ও দলবাজ কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করলেও তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেনি। পদে পদে জনগণ হয়রানির শিকার হচ্ছে। সব কিছু মিলে প্রশাসনিক সংস্কার সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসনের প্রায় ৩ শতাধিক কর্মকর্তাকে বদলি আর ১০ জন সচিবকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) এবং ৬ জন সচিবের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়সহ বেশিরভাগই মন্ত্রণালয়ে থাকা ফ্যাসিবাদী ও ক্ষমতাধর কর্মকর্তাদের বদলি করা হলেও স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে উপদেষ্টার পিএস নাসির উদ্দিন এবং ওবায়দুল কাদেরের জনসংযোগ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়নি। এসব কর্মকর্তার বদলী ঠেকাতে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপদেষ্টার চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। গত তিন মাস থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পৃথক পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বলে এ তথ্য জানা গেছে। সব মিলে প্রশাসনিক সংস্কার সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। আজ ৮ নভেম্বর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টাসহ এ সরকারের সদস্যসংখ্যা ২১ জন। উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার দু’জন বিশেষ সহকারী, একজন আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার : প্রশাসনের প্রায় ৩ শতাধিক কর্মকর্তাকে বদলি আর ১০ জন সচিবকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) এবং ৬ জন সচিবের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়সহ বেশিরভাগই মন্ত্রণালয়ে থাকা ফ্যাসিবাদী ও ক্ষমতাধর কর্মকর্তাদের বদলি করা হলেও স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে উপদেষ্টার পিএস নাসির উদ্দিন এবং ওবায়দুল কাদেরর জনসংযোগ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়নি। এসব কর্মকর্তার বদলি ঠেকাতে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপদেষ্টার চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বর্তমান জনপ্রশাসনে আন্তক্যাডার বৈষম্য বড় সমস্যা। জনপ্রশাসনে সবচেয়ে প্রভাবশালী সার্ভিস প্রশাসন ক্যাডার। প্রশাসন ক্যাডারে যে বাড়তি সুবিধা দেয়া হয়েছে, তা অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। জনপ্রশাসনের সামগ্রিক দক্ষতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য এবং সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে কর্মসন্তুষ্টি অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে অন্য সব ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই বৈষম্য নিরসন করা জরুরি এবং প্রশাসনের পদোন্নতি, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধার ক্ষেত্রে একটি স্বচ্ছ ও সমতাভিত্তিক নীতি করা প্রয়োজন।
সাবেক প্রেসিডেন্টে জিয়াউর রহমানের আমলে ‘পে অ্যান্ড সার্ভিস কমিশন’ গঠন করা হয়, যার লক্ষ্য ছিল প্রশাসনের পুনর্গঠন ও বেতনকাঠামো উন্নয়ন। তার পরবর্তী সময়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১০টি সংস্কার কমিশন গঠন করেন। পরে এসব কমিশনের উদ্যোগে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন বলতে থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা এবং নতুন বেতনকাঠামো প্রবর্তন করা হয়। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার প্রশাসনিক পুনঃগঠনের জন্য একটি সংস্কার কমিটি গঠন করে। যদিও এই কমিটি কোনো সুপারিশ জমা দিতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তী সময় ১৯৯৬ ও ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার প্রশাসন সংস্কার কমিশন (এসিআর) এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন (পিএআরসি) গঠন করে, যার লক্ষ্য ছিল স্বচ্ছ, জবাবদিহি ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা। কিন্তু পরে তা দলীয় ফ্যাসিবাদে পরিণত হয়। গত ২০০৫ সালে বিএনপি সরকার ‘ট্যাক্স অমবাডসম্যান আইন’ পাস করে, যা আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সহায়ক ছিল। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালে ‘রেগুলেটরি রিফর্ম কমিশন’ গঠন করে এবং নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক করা হয়। গত ২০০৮ পরবর্তী সময়ে আমলাতন্ত্র তার নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেলে এবং দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে বেশি গুরুত্ব দিতে থাকে। আওয়ামী লীগ সরকার তাদের সমর্থক সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করে। একারণে প্রশাসন জনগণের থেকে ক্রমে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বর্তমান সংস্কার কমিটির অন্যতম লক্ষ্য প্রশাসনকে জনমুখী করা। এটা অত্যন্ত কঠিন চ্যালেঞ্জ। অতীতে প্রশাসন জনগণের প্রত্যাশা পূরণে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। এ ছাড়া ক্যাডার নন-ক্যাডার বৈষম্য রয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ বেশকয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে বর্তমানে সচিব নেই। এসব দফতরে দায়িত্ব পাওয়া অতিরিক্ত সচিবরা সচিবের রুটিন কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত হচ্ছে না। মাঠ প্রশাসনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ জেলা প্রশাসক (ডিসি)। যাদর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে এখনো তাদের প্রত্যাহার করা হয়নি। শূন্য পদ পূরণে তোড়জোড় শুরু করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। কোথাও কাউকে পদায়ন করার পরই আদেশ বাতিল করার ঘটনাও ঘটছে। এদিকে যুগ্ম সচিব ও উপসচিব পদে দুটি ব্যাচের বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা পদোন্নতির অপেক্ষায়। পদায়ন ও পদোন্নতির কাজে দক্ষতা দেখাতে না পারলেও, উল্টো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা নানা বিতর্কে নিজেদের জড়িয়ে ফেলছেন। ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্য প্রমানিত হয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কার্যকর বিকেন্দ্রীকরণে জোর দেয়া উচিত, যাতে স্থানীয় পর্যায়ে জনগণের চাহিদা ও সমস্যা সরাসরি প্রতিফলিত হয়। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতায়ন করে সরকারি কর্মকর্তাদের তাঁদের নিয়ন্ত্রণের আওতায় ন্যস্ত করা উচিত, যাতে স্থানীয় জনগণের কাছে জবাবদিহির পরিবেশ তৈরি হয়। সংকট মোকাবিলা করে জনপ্রশাসনে বৈষম্যমূলক প্রথা এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একটি পেশাদার কাঠামো গঠন করা দরকার। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরে গত ১৯ আগস্ট সব উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়রদের অপসারণ ও প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। তবে এখনো সারা দেশে পতিত হাসিনা সরকারের ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের অপসারণ করা হয়নি। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের আরো কিছু দিন পদে রাখার আবার ১২ আগস্ট বিভিন্ন পদে থাকা চুক্তিভিত্তিক সব নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। পরে তা কার্যকর করা হয়। আবার প্রশাসনে নতুন করে চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগও দেয়া হয়। সব সরকারি কর্মচারীকে সম্পদের হিসাব দেয়ার সিদ্ধান্ত হয় ১ সেপ্টেম্বর। জনপ্রশাসন ও পুলিশের শীর্ষ পদগুলোতে পরিবর্তন এসেছে। উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে।
ছয় সংস্কার কমিশনের প্রধানদের নাম আগেই ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে এবার পাঁচটি কমিশনের সদস্যদের নামসহ আনুষ্ঠানিকভাবে কমিশন গুলো গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে গঠিত সংস্কার কমিশন প্রধানদের সঙ্গে গত ৪ নভেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠক করেছেন। সংস্কার কমিশনের প্রধানরা কমিশনের কাজের অগ্রগতি জানিয়েছেন। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়েছে। কমিশন প্রধান আব্দুল মুয়িদ চৌধুরী জানান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সবার মতামত সংগ্রহ শুরু হয়েছে। কমিশনের সদস্যরা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সফর করে জনসাধারণের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। আরার জনগণের মতামত চাওয়া হয়েছে। কমিশনগুলো ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদনের সুপারিশ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। এরপর পরামর্শমূলক মতবিনিময় করার কাজ শুরু হয়েছে। যেখানে সমাজের সব পর্যায়ের মানুষের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। এভাবেই সংস্কারকাঠামো চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা করেছে সরকার।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠনের কথা জানান। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী। আর সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে প্রথমে বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিকের নাম ঘোষণা করা হলেও পরে তা পরিবর্তন করে অধ্যাপক আলী রীয়াজকে দায়িত্ব দেয়া হয়। আজ এটা বাদে বাকি কমিশনগুলোর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি:
বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ হবে গণশুনানির মাধ্যমে, নির্বাহী আদেশে নয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চুক্তি পর্যালোচনায় কমিটি গঠন হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০-এর আওতায় নতুন কোনো চুক্তি হবে না। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর তা বিক্রি করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) কাছে। এ উৎপাদনের জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে জ্বালানি তেল আমদানি করতে হয়। এলসি খোলা ও ঋণের কারণে তারা ব্যাংকের কাছে দেনাদার থাকে। এদিকে বিপিডিবি যে দামে কেন্দ্রগুলোর কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনে, তার চেয়ে অনেক কম দামে বেচে বাজারে। তবে কেনা দাম ও বাজার দামের পার্থক্য ভর্তুকি আকারে দেয় অর্থ বিভাগ। বিপিডিবির মোট দেনা ৪৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে আইপিপিগুলো পাবে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। বাকি অর্থের মধ্যে গ্যাস বিল রয়েছে ১৭ হাজার কোটি, সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ১০ হাজার কোটি এবং ভারতের আদানি গোষ্ঠী পাবে ১০ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের দিক থেকে আদানি পাওয়ারের ঝাড়খন্ড কেন্দ্রই সবচেয়ে বড়। এ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের পাওয়ার কথা দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ, পাচ্ছে তার অর্ধেক। কারণ, অর্ধেক উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে ভারতীয় কোম্পানিটি। আদানি পাওয়ার ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তির আওতায় বিপিডিবিকে বিদ্যুৎ দিয়ে আসছে ২০২৩ সালের মার্চ থেকে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য বাংলাদেশ দিচ্ছে ১২ টাকা করে, যে দর ভারতীয় বেসরকারি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় ২৫ শতাংশের বেশি। তবে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর জন্য বন্ড ছাড়ার পাশাপাশি সরকার এখন আদানির বকেয়া পরিশোধ নিয়েও সজাগ বলে জানা জানা গেছে। বাংলাদেশের কাছে আদানির পাওনা দাঁড়িয়েছে ৮৫ কোটি ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর আদানিকে মাসে মাসে পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে। তিন মাসে আদানিকে অন্তত ৩৫ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। আদানি বকেয়ার আরও অর্থ চায়। বকেয়া পরিশোধের জন্য কোম্পানিটির একটি তাগিদের শেষ।
ভূমি রাজস্ব আয় বাড়াতে : জমিতে বিরোধে নিষ্পত্তির ক্ষমতা এসিল্যান্ডদের হাতে থাকলেও খতিয়ানের করণিক ভুলের সংশোধণে অনিহা ডিসি-এডিসি-এসিল্যান্ডদের। খতিয়ানের করণিক ভুল সংশোধনের বেড়াজালে ভূমি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দেশে প্রায় ৩ কোটি মানুষ। জমির খতিয়ানের করণিক ভুলের কারণে ভূমি সেবায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে কয়েক কোটি জমির মালিকদের। মাঠপর্যায়ে ভূমি অফিসগুলোতে দুর্নীতি রোধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে একটি সার্কুলার জারি করা হবে। পর্যায়ে এখন ভূমি মন্ত্রণালয় আছে, জমির খতিয়ান, খারিজ করা ও খাজনা দেয়া, মিউটেশন ইত্যাদি বিষয়ে জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচার আদৌ হয়নি। আমি বলবো না অল্প-বিস্তর হয়েছে। আদৌ হয়নি। ফলে এখনো মানুষ এখনো ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। তবে এডিসি-এসিল্ড্যান্ডদের বক্তব্য হচ্ছে “জনগণের স্বার্থ দেখবেন না সরকারি স্বার্থ রক্ষা করবেন” এ ধারা নিয়ে বিপাকে ডিসি-এডিসি-এসিল্যান্ডরা। সরকারি স্বার্থ না দেখলে ডিসি-এডিসি-এসিল্যান্ডদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে সরকার। এমন বিধান আওয়ামী লীগ সরকার যুক্ত করায় এক দিকে বিপাকে পড়েছে দেশের জনগণ, অন্যদিকে বিরোধে নিষ্পত্তি করতে অনীহা ডিসি-এডিসি-এসিল্যান্ডরা। গত সাড়ে ১৫ বছরে সারাদেশে লাখ লাখ মানুষের ব্যক্তিগত জমি হাতিয়ে নিয়েছে সরকার
ভূমি সেবায় জনগণের দুর্ভোগ ও হয়রানী বন্ধে ভূমি আইন সংস্কার ও ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটালকরণে ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে চিঠি দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। গত ২৪ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পরিচালক প্রশাসন এ কে এম মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠানো হয়েছে।
অপরদিকে ভূমি সেবায় জনগণের দুর্ভোগ ও হয়রানী বন্ধে সারাদেশে মাঠ প্রশাসনে ডিসি-এডিসি এবং এসিল্যান্ডদের নির্দেশনা দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। ভূমি মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত ও হয়রানির শিকার না হন। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে করে কেউ ন্যায্যতা থেকে বঞ্চিত না হয় সে বিষয়ে ডিসি-এডিসি-এসিল্যান্ডদের নির্দেশনা দিয়েছেন ভূমি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।
এলজিআরডি ও ভূমি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেছেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় জনস্বার্থে তাৎক্ষণিক প্রয়োজন এবং সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে ভূমি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম নিয়ে প্রায়ই অনিয়মের তথ্য পাওয়া যায়। ভূমি মালিকগণ ক্ষতিগ্রস্ত ও হয়রানির শিকার হন। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে করে কেউ ন্যায্যতা থেকে বঞ্চিত বা মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ না পান। এ বিষরেয় ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, আসলে গত ১৫ বছরে সারাদেশে জমি-জমা নিয়ে জনগণের হয়রানি বৃদ্ধি পেয়েছিলো। জনগণের হয়রানি বন্ধে ইতোমধ্যে আমি রংপুরের নীলফামারী জেলায় ভূমি অফিস পরিদর্শন করেছি। ভূমি রাজস্ব আয় বাড়াতে কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম সমন্বিতকরণের তাগিদ। সালেহ আহমেদ বলেন, ভূমি মালিকদের ভূমি সেবা বিষয়ে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টির উপর গুরুত্বারোপ করে রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে। এজন্য কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের তত্ত্বাবধান কার্যক্রম সমন্বিত উপায়ে জোরদার করতে হবে। এতে করে জাতীয় অর্থনীতির বিকাশে অবদান রাখা সম্ভব।
জাতীয় পানি মহাপরিকল্পনার
সরকার কর্তৃক গৃহীত জাতীয় পানি নীতি ও জাতীয় পানি মহাপরিকল্পনার এবং এই ধারার অন্যান্য বিধানাবলি সাপেক্ষে, বোর্ড নি¤œবর্ণিত কার্যাবলি সম্পাদন এবং তদুদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় প্রকল্প প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও মূল্যায়ন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহণ হাতে নেয়া হচ্ছে। নদী ও নদী অববাহিকা নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন এবং বন্যা নিয়ন্ত্রন, পানি নিষ্কাশন, সেচ ও খরা প্রতিরোধের লক্ষ্যে জলাধার, ব্যারেজ, বাঁধ, রেগুলেটর বা অন্য কোন অবকাঠামো নির্মাণ। সেচ, মৎস্য চাষ, নৌ-পরিবহন, বনায়ন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও পরিবেশের সার্বিক উন্নয়নে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে পানি প্রবাহের উন্নয়ন কিংবা পানি প্রবাহের গতিপথ পরিবর্তনের জন্য জলপথ, খালবিল ইত্যাদি পুনঃখনন। নদীর তীর সংরক্ষণ এবং নদী ভাঙ্গন হইতে সম্ভাব্য ক্ষেত্রে শহর, বাজার, হাট এবং ঐতিহাসিক ও জাতীয় জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহ সংরক্ষণ। উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণ। লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ রোধ এবং মরুকরণ প্রশমন; সেচ, পরিবেশ সংরক্ষণ ও পানীয় জল আহরণের লক্ষ্যে বৃষ্টির পানি ধারণ। প্রকল্প প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রকল্প এলাকার জনগণের অংশগ্রহণ সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রণয়ন। প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে কৃষিকাজ, পরিবেশ, নৌ-চলাচল, পানি প্রবাহ, মৎস্য সম্পদ, জনজীবন ও পারিপার্শ্বিক এলাকায় উহার প্রভাব ও বিরুপ প্রতিক্রিয়া (যদি থাকে) এবং উহার সম্ভাব্য প্রতিকার সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রণয়ন। এছাড়া তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজের গতি বাড়াতে পারেনি সরকার।
নির্বাহী আদেশ ও সিদ্ধান্ত : ৫ সেপ্টেম্বর গণভবনকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২৯ আগস্ট ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া অনুমোদন দেয় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এর ফলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা বিশেষ নিরাপত্তাসুবিধা পাবেন না।
সংসদ, আদালত-ইসি : ৬ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন। ২ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী পদত্যাগ করেন। গত ১০ আগস্ট প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি পদত্যাগ করেন। একই দিনে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তার আগে ৮ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামানকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ৫ সেপ্টেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করেন। ৬ আগস্ট বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেয়া হয়। ২৮ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী ও এর অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করে জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়। ৫ সেপ্টেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফ্যাসিবাদী দল ও জোট পুনর্বাসনের সুযোগ পাবে না।
গত ১৩ আগস্ট উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের সাধারণ ছুটি বাতিল করা হয়। ৪ সেপ্টেম্বর সরকারি অর্থে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনার নামকরণের বিষয়ে আইনি কাঠামো ঠিক করতে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই দিনে সরকারের সব পর্যায়ে সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করতে সচিবদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মেরিটাইম সেক্টরে বিদেশীদের বিনিয়োগের আহবান উপদেষ্টার
সাঁতারে আক্ষেপের নাম ‘ইলেক্ট্রোনিক্স স্কোরবোর্ড’!
সাবিনাদের জন্য শনিবার পুরস্কার ঘোষণা করবে বাফুফে
ঈশ্বরদীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত-২ আহত-৩
সর্বনি¤œ হজ প্যাকেজ ৫ লাখ ১৮ হাজার টাকা ঘোষণা
যশোরে মাদক ব্যবসায়ীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
৭ নভেম্বরের চেতনাকে যারা ধারণ করে না, তারা গণতন্ত্রের শত্রু - ডা.মাজহার
প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার ২ সেকেন্ডের মধ্যেই কার চাকরি খাবেন ট্রাম্প?
ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস; চব্বিশের প্রেরণা
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে জাগপার আলোচনা সভা
মানুষের মতোই কথা বলবে, আচরণ করবে এআই!
আখাউড়া প্রেসক্লাবের নতুন কমিটি গঠন
পরিবহনব্যবস্থা
রমজানের নিত্যপণ্য আমদানিতে ব্যাংকে লাগবে না নগদ অর্থ: গভর্নর
ময়নামতি ও বসুরহাটে ইউসিবির দুই নতুন শাখা উদ্বোধন
অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস : সাফল্য ও ব্যর্থতা
৫ আগস্টের আয়নায় দেখা ৭ নভেম্বর
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন
জাইকার সহযোগিতায় রাজউকের তৃতীয় ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট সেমিনার অনুষ্ঠিত
হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর তৈলতত্ত্ব ও আমাদের সাহিত্য সমাজ