ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় লড়াই করার মতো সংগ্রহ গড়া হয়নি। অল্প পুঁজি নিয়ে দারুণ লড়াই করেও তাই শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেননি বাংলাদেশের বোলাররা। শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে এশিয়া কাপ অভিযান শুরু করল সাকিব আল হাসানের দল।

শ্রীলঙ্কার পাল্লেকেলে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ৪২.৪ ওভারে ১৬৪ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। জবাবে ১১ ওভার ও ৫ উইকেট হাতে রেখে জয় নিশ্চিত করে স্বাগতিকরা। একদিনের ক্রিকেটে এটি তাদের টানা ১১তম জয়।

টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে সতীর্থদের আসা যাওয়ার মাঝে একাই লড়ছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ওয়ানডাউনে নেমে অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি তুলে নিয়ে করেন ৮৯ রান।

আর কোনো ব্যাটার ২০ পার করতে পারেননি। এক অঙ্কের ঘরে আউট হয়েছেন সাতজন। চতুর্থ উইকেট জুটি থেকে এসেছে সর্বোচ্চ ৫৯ রান। সেখানে শান্তর সঙ্গী ছিলেন তাওহিদ হৃদয়। তার সংগ্রহ ৪১ বলে ২০। ২ রানের মধ্যে শেষ ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ইনিংসে ছক্কা নেই একটিও।

চোটের কারণে শ্রীলঙ্কার প্রথম পছন্দের বোলারদের প্রায় সবাই-ই দলের বাইরে। অনভিজ্ঞ বোলারদের মোকাবেলায়ও পেরে ওঠেনি বাংলাদেশ। ৩২ রানে ৪ উইকেট নেন মাথিশা পাথিরানা। ১৯ রানে ২টি নেন মাহেশ থিকশানা।

পাল্লেকেলের এই মাঠ ব্যাটিং স্বর্গ হিসেবে পরিচিত হলেও এদিনের উইকেটে রান করা ছিল বেশ কঠিন। সেখানে টিকে থাকতে ভালো কিছুই করতে হত বাংলাদেশের ব্যাটারদের। কিন্তু শুরু থেকেই ব্যকফুটে যায় তারা।

তামিম ইকবাল ও লিটন কুমার দাসের অনুপস্থিতিতে একদিনের ক্রিকেটে এদিন অভিষেক হয় তানজিদ হাসান তামিমের। কিন্তু তরুণ ওপেনার টেকেন কেবল ২ বল। মাহিশ থিকশানার পুরোপুরি লাইন মিস করে হয়ে যান এলবিডব্লিউ।

আরেক স্পিনার ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার বলে তেড়ে এসে মারতে গিয়ে বল আকাশে তুলে সাজঘরে ফেরেন নাঈম শেখ। দলকে আরও বিপদে ফেলে ফেরেন সাকিবও। পাথিরানার দারুণ ডেলিভারি তার গ্লাভস ছুঁয়ে যায় উইকেটের পিছনে। বামে ঝাঁপিয়ে এক হাতে দারুণ ক্যাচ নেন কিপার কুসল মেন্ডিস।

এরপরই আসে চতুর্থ উইকেটে শান্ত-হৃদয়ের সেই ৫৯ রানের জুটি। হৃদয়ের বিদায়ে জুটি বিচ্ছিন্ন হওয়ার কিছুক্ষন পরই থার্ড ম্যানে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। মেহেদি হাসান মিরাজের রান আউটের দায় অবশ্য শান্তর। বল গিয়েছিল স্কয়ার লেগে ফিল্ডার বরাবর। মিরাজ রান নিতে চাননি। শান্ত নিজের প্রান্ত ছেড়ে চলে আসেন মিরাজের প্রান্তে। নিজের উইকেট বিলিয়ে মিরাজ আউট হন ১১ বলে ৫ রান করে।

শেখ মেহেদি হাসান এলবিডব্লিউ হওয়ার পরের ওভারেই শেষ হয় শান্তর লড়াই। থিকশানার বলে বোল্ড হওয়ার আগে এই টপ অর্ডার করেন ১২২ বলে সাত চারে ৮৯ রান। পাথিরানার একই ওভারে ফেরেন তাসকিন ও মুস্তাফিজ।

বল হাতে লঙ্কা শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন তাসকিন আহমেদ। নিজের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই দুর্দান্ত ডেলিভারিতে দিমুথ করুনারত্নেকে বোল্ড করে দেন এই পেসার। পরের ওভারে আরেক ওপনার পাথুন নিশানকাকে উইকেটের পিছনে মুশফিকুর রহিমের দারুণ ক্যাচ বানান শরিফুল ইসলাম।

১৫ রানে ২ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। কুসল মেন্ডিসকে বোল্ড করে তৃতীয় উইকেট জুটি বড় করতে দেননি সাকিব।

সামারাবিক্রমাকে (৭৭ বলে ৫৪) স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে চতুর্থ উইকেটে ৭৮ রানের জুটি ভাঙেন মেহেদি। এক ওভার পরেই নতুন ব্যাটার ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে বোল্ড করে দেন সাকিব। বড় জুটির আরেক ব্যাটসম্যান চারিথ আসালাঙ্কা ৯২ বলে ৬২ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। সঙ্গে ছিলেন অধিনায়ক দাসুন শনাকা।

‘বি’ গ্রুপের প্রথম ম্যাচ এটি। গ্রুপের অন্য দল আফগানিস্তান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৪২.৪ ওভারে ১৬৪ (নাঈম ১৬, তানজিদ ০, শান্ত ৮৯, সাকিব ৫, হৃদয় ২০, মুশফিক ১৩, মিরাজ ৫, মেহেদি ৬, তাসকিন ০, শরিফুল ২*, মুস্তাফিজ ০; রাজিথা ৭-০-২৯-০, থিকশানা ৮-১-১৯-২, ধানাঞ্জয়া ১০-০-৩৫-১, পাথিরানা ৭.৪-০-৩২-৪, ওয়েলালাগে ৭-০-৩০-১, শানাকা ৩-০-১৬-১)।

শ্রীলঙ্কা: ৩৯ ওভারে ১৬৫/৫ (নিশানকা ১৪, করুনারত্নে ১, মেন্ডিস ৫, সামারাবিক্রমা ৫৪, আসালাঙ্কা ৬২*, ধনাঞ্জয়া ২, শানাকা ১৪*; তাসকিন ৭-১-৩৪-১, শরিফুল ৪-০-২৩-১, সাকিব ১০-২-২৯-২, মুস্তাফিজ ৩-০-১২-০, মিরাজ ৫-০-২৬-০, মেহেদি ১০-০-৩৫-১)।

ফল: শ্রীলঙ্কা ৫ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: মাথিশা পাথিরানা (শ্রীলঙ্কা)।