ব্যাটারদের মিলিত প্রচেষ্টায় চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহই পেয়েছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু ডেভন কনওয়ে আর রাচিন রবীন্দ্রর বিধ্বংসী ব্যাটে তা হয়ে গেল মামুলি। দুজনের অপরাজিত জোড়া শতকে চ্যাম্পিয়নদের গুড়িয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করল নিউজিল্যান্ড।

আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের উদবোধনী ম্যাচে কিউইদের জয় ৯ উইকেটে। ইংল্যান্ডের দেওয়া ২৮৩ রানের লক্ষ্য ৮২ বল হাতে রেখে পেরিয়ে যায় দলটি। দ্বিতীয় উইকেটে ২১১ বলে অবিচ্ছিন্ন ২৭৩ রানের জুটি গড়েন কনওয়ে ও রবীন্দ্র।

নিউজিল্যান্ডের ওয়ানডে ইতিহাসে দ্বিতীয় উইকেটে সর্বোচ্চ জুটি এটিই। তারা পেরিয়ে যায় উইল ইয়াং ও মার্টিন গাপটিলের ২০৩ রানের জুটির আগের রেকর্ড।

গত আসরের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল এই দুই দলই। সেই ম্যাচে জেতা হয়নি কিউইদের। আসল লড়াইয়ের পর সুপার ওভারও টাই হওয়ায় বাইন্ডারি সংখ্যায় পিছিয়ে প্রথম শিরোপার স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয় দল। সেই আক্ষেপ ঘোচানোর অভিযানে শুরুটা দুর্দান্ত হলো ব্ল্যাক ক্যাপস বাহিনীর।

দ্বিতীয় ওভারেই উইল ইয়াংকে ফিরিয়ে লড়াইয়ের আভাস দিয়েছিল ইংল্যান্ড। প্রথম দুই ম্যাচে কোনো রান না দিয়ে ইয়াংকে শিকারে পরিণত করেছিলেন স্যাম কারান। বল হাতে ইংলিশদের সফলতার গল্প শেষ এখানেই। আর কোনো সুযোগই দেননি কনওয়ে ও তিনে নামা রবীন্দ্র। দুজনেরই প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচ এটি।

৮৩ বলে ক্যারিয়ারের পঞ্চম ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের দ্বিতীয় শতক পূর্ণ করেন কনওয়ে। ছক্কা হাঁকিয়ে ৩৬ বলে ফিফটি করা রবীন্দ্র ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৮২ বলে। ম্যাচজুড়েই দুর্দান্ত সব শট উপহার দিয়েছেন এই ব্যাটিং অলরাউন্ডার।

১২১ বলে ১৯ চার ও ৩ ছক্কায় ১৫২ রানে অপরাজিত থাকেন কনওয়ে। রবীন্দ্রর ব্যাট থেকে আসে ৯৬ বলে ১১টি চার ও ৫ ছক্কায় অপরাজিত ১২৩ রান। বল হাতেও এক উইকেট নেওয়া রবীন্দ্রর হাতে উঠেছে ম্যাচসেরার পুরষ্কার।

প্রথম ওভারেই ১৭ রান দেন ইংল্যান্ডের প্রধান বোলার মার্ক উড। সব মিলিয়ে ৫ ওভারে এই পেসারের খরচ ৫৫ রান। ওভারপ্রতি সাতের উপরে রান বিলিয়েছেন অন্য দুই পেসার ক্রিস ওকস ও কারানও।

ইংল্যান্ডের সব ব্যাটারই পৌঁছান দুই অঙ্কে। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে যে ঘটনা এই প্রথম। কিন্তু ফিফটির দেখা পান কেবল জো রুট। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৩ রান অধিনায়ক জস বাটলারের। ত্রিশোর্ধে ইনিংস নেই আর কারো। ৪৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডের সফলতম বোলার ম্যাট হেনরি। দুটি করে নেন মিচেল স্যান্টনার ও গ্লেন ফিলিপস।

ট্রেন্ট বোল্টের প্রথম ওভারে ১২ রান নেন জনি বেয়ারস্টো ও ডেভিড মালান। অষ্টম ওভারে মালানকে কট বিহাইন্ড করে জুটি ভাঙেন হেনরি। চারটি চার ও এক ছক্কায় দারুণ শুরু পাওয়া হ্যারি ব্রুককে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ বানান রাচিন রবীন্দ্র। দারুণ ডেলিভারিতে মইন আলিকে বোল্ড করে দেন গ্লেন ফিলিপস। ১১৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে চ্যাম্পিয়নরা।

এরপর সবচেয়ে বড় জুটির দেখা পায় ইংলিশরা। জস বাটলারকে নিয়ে ৭২ বলে ৭০ রানের জুটি গড়েন রুট। এই জুটিই ইংল্যান্ডকে তিনশোর্ধো সংগ্রহের আশা দেখাচ্ছিল। কিন্তু বাটলার ফিরতেই সেই স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। বোলিংয়ে ফিরে দলপতিকে কট বিহাইন্ড করেন হেনরি। ৪২ বলে দুটি করে ছক্কা-চারে ৪৩ রান করে ফেরেন বাটলার।

ভালো শুরু পেয়েছিলেন লাইম লিভিংস্টোনও। তাকে শিকারে পরিনত করেন বোল্ট। সপ্তম ব্যাটার হিসেবে ফিলিপসের বলে বোল্ড হওয়া রুটের ব্যাট থেকে আসে ৮৬ বলে ৪টি চার ও ১ ছক্কায় ৭৭ রান। শুরুতে টাইমিং পেতে লড়লেও পরে দারুণ সব শট উপহার দেন এই নির্ভরশীল ব্যাটার।

শেষ উইকেটে আদিল রশিদ ও মার্ক উড যোগ করেন ২৬ বলে মহামূল্যবান ৩০ রান। তবে ব্যাটিং উইকেটে এই পুঁজি নিয়ে রশিদ-উডরা প্রতিপক্ষকে কতটা চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে সেটাই এখন দেখার।  

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৮২/৯ (বেয়ারস্টো ৩৩, মালান ১৪, রুট ৭৭, ব্রুক ২৫, মইন ১১, বাটলার ৪৩, লিভিংস্টোন ২০, কারান ১৪, ওকস ১১, রশিদ ১৫*, উড ১৩*; অতিরিক্ত ৬; বোল্ট ১০-১-৪৮-১, হেনরি ১০-১-৪৮-৩, স্যান্টনার ১০-০-৩৭-২, নিশাম ৭-০-৫৬-০, রবীন্দ্র ১০-০-৭৬-১, ফিলিপস ৩-০-১৭-০)।

নিউজিল্যান্ড: ৩৬.২ ওভারে ২৮৩/১ (কনওয়ে ১৫২*, ইয়াং ০, রবীন্দ্র ১২৩*; অতিরিক্ত ৮; ওকস ৬-০-৪৫-০, কারান ৬-২-৪৭-১, উড ৫-০-৫৫-০, মইন ৯.২-০-৬০-০, রশিদ ৭-০-৪৭-০, লিভিংস্টোন ৩-০-২৪-০)।

ফল: নিউজিল্যান্ড ৯ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: রাচিন রবীন্দ্র।