বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে এ যাত্রায়ও পরাজয়ের গণ্ডি থেকে বের হতে পারল না পাকিস্তান। রোহিত শর্মার দলের বিপক্ষে স্রেফ উড়ে গেছে বাবর আজমের দল।

বিশ্বকাপের হাইভোল্টেজ ম্যাচে শনিবার পাকিস্তানকে স্রেফ ১৯১ রানে গুটিয়ে ৭ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় ভারত। ১১৭ বল হাতে রেখে সহজেই লক্ষ্য পূরণ করে আসরের অন্যতম ফেভারিট দলটি।

মামুলি লক্ষ্য রোহিতের টি-টোয়েন্টি মেজাজের ব্যাটিংয়ে হয়ে যায় আরও মামুলি। ছয়টি করে ছক্কা চারে ভারত অধিনায়ক ৮৬ রান করেন স্রেফ ৬৩ বলে।

এক লাখ ৩২ হাজার ধারণক্ষম বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট ভেন্যু আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে তিল ধারণেই ঠাই ছিল না ক্রিকেটের সবচেয়ে কাঙ্খিত ম্যচটিতে। প্রতি বলের সাথে গর্জে উঠে পুরো স্টেডিয়াম। কিন্তু যে লড়াই দেখার অধীর আগ্রহে ছিল ক্রিকেটপ্রেমীরা তা হয়নি। ম্যাচটি হয়েছে একপেশে।

স্বাগতিক দর্শকদের চাপ, বিশ্বকাপে দরটির বিপক্ষে না জেতার রেকর্ড- সবকিছু সামলে শুরুটা মন্দ ছিল না পাকিস্তানের। কিন্তু ৩৬ রানে শেষ ৮ উইকেট হারিয়ে প্রথম ইনিংসেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় তারা।

আসরে তিন ম্যাচ থেকে শতভাগ জয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠেছে ভারত। সমান ম্যাচে সমান জয় আছে নিউজিল্যান্ডেরও। কিন্তু নেট রান রেটে এগিয়ে থাকায় শীর্ষে ভারত। তিন ম্যাচে দুই জয়ে পাকিস্তান চারে। দুই ম্যাচে দুটিতেই জেতা দক্ষিণ আফ্রিকা আছে তিনে।

রান তাড়ায় ডেঙ্গু জ্বর কাটিয়ে দলে ফেরা শুবমান গিল এ যাত্রায় সফল হতে পারেননি। শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে থামেন এই ওপেনার। ২৩ রানে ভাঙে ওপেনিং জুটি। এরপর বিরাট কোহলিকে নিয়ে ৪২ বলে ৫৬ রানের জুটি গড়েন রোহিত।

হাসান আলিকে হাঁকাতে গিয়ে মিড অনে কোহলি ক্যাচ দিলে ভাঙে জুটি। গিলের মতো তার সংগ্রহও ১৬। এরপর শ্রেয়াস আয়ারের সঙ্গে ৭১ বলে ৭৭ রান যোগ করে তারপর আউট হন রোহিত। ১৪ রানের জন্য বিশ্বকাপে অষ্টম সেঞ্চুরি করা হলো না এই ওপেনারের। আফ্রিদির স্লেয়ার অফ কার্টারে মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে আউট হন এই মারকুটে ব্যাটার।

বাকি কাজ সহজেই সারেন লোকেশ রাহুল ও শ্রেয়াস। শ্রেয়াস অপরাজিত থাকেন ৬২ বলে ৫৩ রানে, ২৯ বলে ১৯ রানে রাহুল।

এর আগে বাবর আজম আর মোহাম্মদ রিজওয়ানের জুটিতে দিচ্ছিল ভালো কিছুর আভাস। কিন্তু দলটা যে পাকিস্তান! এক দমকা ঝড়েই সবকিছু তুছনছ হয়ে যায়। ২ উইকেটে ১৫৫ রান করা দল গুটিয়ে যায় দুইশ’র আগেই।

অষ্টম ওভারে প্রথম সফলতার দেখা পায় ভারত। মোহাম্মদ সিরাজের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান আব্দুল্লাহ শফিক। ভাঙে ৪১ রানের ওপেনিং জুটি। আরেক ওপেনার ইমাম-উল হকও আউট হন উইকেটে থিতু হয়ে। হার্দিক পান্ডিয়ার বলে কট বিহাইন্ড হয়ে যান তিনি ৩৮ বলে ৩৬ রান করে।

৭৩ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানোর পর ১০৩ বলে ৮২ রানের জুটি গড়েন বাবর ও রিজওয়ান। দারুণ সব শট খেলতে থাকেন তারা। পাকিস্তানের বাউন্ডারিতেও গ্যালারী ছিল শান্ত। রোহিত শর্মার মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ানো জুটি ভেঙে ভারত শিবিরে হাসি ফোটান সিরাজ। আবার গর্জে ওঠে পুরো স্টেডিয়াম। ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়ে বাবর আউট হন ৫৮ বলে ৫০ রান করে।

অধিনায়কের উইকেট দিয়েই ঝড়ের কবলে পড়ে পাকিস্তান। ওভারে দুই উইকেট তুলে নেন কুলদিপ যাদব। সউদ শাকিলকে এলবিডব্লিউ করার তিন বল পর ইফতিখার আহমেদকে বোল্ড করে দেন এই স্পিনার।

পাকিস্তানের ভরসার প্রতীক হয়ে থাকা রিজওয়ানকেও পরের ওভারে স্লোয়ার ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন বুমরাহ। ৬৯ বলে ৪৯ রান করেন রিজওয়ান।

 বুমরাহর পরের ওভারে লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে যান শাদাব খান। উইকেটে এসে দিশা খুঁজে না পাওয়া মোহাম্মদ নওয়াজ শেষ পর্যন্ত বাজে শট খেলে মিড অনে ক্যাচ দেন পান্ডিয়ার বলে। এই সাথেই শেষ হয় স্বীকৃত ব্যাটারদের তালিকা।

বল হাতে প্রধান ৫ বোলারই নিয়েছেন দুটি করে উইকেট। তবে ৭ ওভারে স্রেফ ১৯ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন বুমরাহ। কুলদিপ ২ উইকেট নেন ১০ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে। সিরাজ খরুচে হলেও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নেন দুটি উইকেট।

পাকিস্তান: ৪২.৫ ওভারে ১৯১ (আবদুল্লাহ ২০, ইমাম-উল-হক ৩৬, বাবর ৫০, রিজওয়ান ৪৯, শাকিল ৬, ইফতিখার ৪, শাদাব ২, নওয়াজ ৪, হাসান ১২, শাহিন ২*, হারিস ২; অতিরিক্ত ৪; বুমরাহ ৭-১-১৯-২, সিরাজ ৮-০-৫০-২, পান্ডিয়া ৬-০-৩৪-২, কুলদিপ ১০-০-৩৫-২, জাদেজা ৯.৫-০-৩৮-২, শার্দুল ২-০-১২-০)।

ভারত: ৩০.৩ ওভারে ১৯২/৩ (রোহিত ৮৬, গিল ১৬, কোহলি ১৬, শ্রেয়াস ৫৩*, রাহুল ১৯*; অতিরিক্ত ২; শাহিন ৬-০-৩৬-২, হাসান ৬-০-৩৪-১, নওয়াজ ৮.৩-০-৪৭-০, হারিস ৬-০-৪৩-০, শাদাব ৪-০-৩১-০)।

ফল: ভারত ৭ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: জাসপ্রিত বুমরাহ।