আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক হারের লজ্জা পেল পাকিস্তান। গতকাল চেন্নাইয়ের এম চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের কাছে ৮ উইকেটে হেরে যায় সাবেক বিশ্ব চ্যাস্পিয়নরা। আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৮২ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ পায় পাকিস্তান। জবাবে মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে ৬ বল আগেই জয় তুলে নেয় হাশমতউল্লাহ শহিদীর দল। পাকিস্তানের বিপক্ষে আফগানিস্তান দুটি টি-টোয়েন্টি জিতলেও ওয়ানডে সংস্করণে প্রথম জয় এটিই। বিশ্বকাপে একবারসহ এই সংস্করণে আটবার মুখোমুখি হয়েছিল। ওয়ানডেতে আফগানদের সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড এটি। এর আগে সর্বোচ্চ ২৭৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় জিতেছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে, ২০১৪ সালে। এক ম্যাচ আগে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডে পর এবার আরেকটি চমক দেখাল আফগানিস্তান। আফগান ক্রিকেটের উন্নতির চিত্র ফুটে ওঠে আরেকটি পরিসংখ্যানে। বিশ্বকাপে তাদের প্রথম দুই আসর মিলে ১৫ ম্যাচে জয় ছিল ¯্রফে একটি। সেখানে চলতি আসরে ৫ ম্যাচেই জয় হলো দুটি। সেই দুটি আবার বর্তমান ও সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে! আসরে প্রথম দুই ম্যাচে জয়ের পর টানা তিনটি হেরে সেমি-ফাইনালের স্বপ্নে বড় ধাক্কা খেল পাকিস্তান।
রান তাড়ায় পাকিস্তানকে সেভাবে সুযোগই দেয়নি আফগানিস্তান, যেটি প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে একাধিক জয় এনে দিয়েছে তাদের। ম্যাচের মাঝপথে আফগানিস্তানের সামনে রেকর্ড রান তাড়ার বড় একটা চাপ ছিল। তবে প্রথম ১০ ওভারে বিনা উইকেটে ৫৬, প্রথম ২০ ওভারে বিনা উইকেটে রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরানের ১২৮ রানের উদ্বোধনী জুটি আফগানিস্তানের তাড়াকে বানিয়ে ফেলে সহজ। বোলিং, ফিল্ডিং, শরীরী ভাষা- কোনোটিতেই ঠিক উজ্জীবিত মনে হয়নি তখন পাকিস্তানকে। রানের গতি ধরে রেখে আফগানরা করেছে ঝুঁকিমুক্ত ব্যাটিং, যেটি শুধু হতাশই করেছে পাকিস্তানিদের। গুরবাজ অর্ধশতক পান ৩৮ বলে, ইব্রাহিমের লাগে ৫৪ বল। ২২তম ওভারে ফিরতি স্পেলে ফেরা শাহিন শাহ আফ্রিদি গুরবাজকে থামান ঠিকই, কিন্তু পরের উইকেটের দেখা দ্রæতই পায়নি পাকিস্তান। শতক থেকে ১৩ রান দ‚রে থাকা ইব্রাহিম যতক্ষণে হাসান আলীর বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন, তার আগেই রহমত শাহর সঙ্গে তার জুটিতে উঠে গেছে ৬০ রান। ইব্রাহিমের উইকেট পাকিস্তানের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রথম সোপান যে হবে না, সেটি নিশ্চিত করেন রহমত ও শহীদি। ইব্রাহিম ফেরার পর রানের গতি কমে এসেছিল, কিন্তু সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে উইকেটের দেখা পায়নি পাকিস্তান। রহমত ও হাশমত আফগানিস্তানকে নিয়ে এগিয়েছেন দারুণভাবে। গুরবাজ, ইব্রাহিমের পর রহমত (৭৭*) -আফগানিস্তানের প্রথম তিন ব্যাটসম্যানই ৫০ পেরিয়েছেন। বিশ্বকাপে রান তাড়ায় এমন ঘটনা এটিই প্রথম। অধিনায়ক হাশমত অপরাজিত ছিলেন ৪৫ বলে ৪৮ রান করে, ম্যাচজয়ী রান এসেছে তার ব্যাট থেকেই।
এর আগে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৩৬২ বল পর প্রথম পাওয়ার প্লেতে পাকিস্তানের ছক্কার খরা ঠিকই কাটিয়েছিলেন আবদুল্লাহ শফিক, তবে উইকেট ধরে রেখে ব্যাটিংয়ের নীতিটা ঠিক কার্যকরী হয়নি তাদের। প্রথম ৫ উইকেট জুটিতেই ভালো সম্ভাবনা জাগালেও কোনোটিই সেভাবে বড় হয়নি। পাকিস্তানের ৫৬, ৫৪, ১০, ৪৩ ও ৪৩ রানের জুটি আফগানিস্তানকে পুরো ছিটকে দিতে পারেনি প্রথম ৪০ ওভারে। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান শফিকের পর অর্ধশতক পেয়েছেন অধিনায়ক বাবর আজমও, কিন্তু শতক পর্যন্ত যেতে পারেননি কেউই। দুজনই থেমেছেন বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা ১৮ বছর বয়সী রিস্ট স্পিনার নুর আহমেদের বলে। প্রথম ৩১ বলে ৩৫ রান করা শফিক আফগান স্পিনারদের বিপক্ষে খেই হারিয়ে ফেলেছিলেন, আউট হওয়ার আগে ৪৪ বলে করতে পারেন ২৩ রান। শফিক-বাবরের সঙ্গে মোহাম্মদ রিজওয়ানের উইকেটও নেন নুর।
চেন্নাইয়ে মোহাম্মদ নবীসহ চারজন স্পিনার খেলিয়েছে আফগানিস্তান। সেটির সুফলও পেয়েছে তারা। মুজিব উর রহমানকে (৮ ওভারে ৫৫) বাদ দিলে বাকি ৩ স্পিনার মিলে ৩০ ওভারে ১২১ রান দিয়ে নেন ৫ উইকেট, সেখানে দুই পেসার নাভিন উল হক ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই ১২ ওভারেই দেন ১০২ রান। পেসারদের ওপর বড় ঝড়টা গেছে ইফতিখার আহমেদ ও শাদাব খানের ৪৫ বলে ৭৩ রানের জুটিতে। ইফতিখার পেয়েছিলেন নিজের আদর্শ মঞ্চ, ২৭ বলে ৪০ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেছেন সেখানে দাঁড়িয়ে। ৩৮ বলে ৪০ রান করা শাদাব খানও দারুণ সঙ্গ দেন তাঁকে। তবে দিন শেষে সঙ্গী হারের গøানিই।