ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
১১ মার্চ ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৪, ১২:০২ এএম
হিমালয় কন্যা নেপালের মাঠ যেন বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের জন্য পয়মন্ত। ছেলেরা না পারলেও নেপাল থেকে লাল-সবুজের মেয়েরা দেশকে একের পর এক ট্রফি এনে দিচ্ছেন। ১৭ মাস পর ফের সেই নেপালেই উড়ল লাল-সবুজ পতাকা। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের সিনিয়র আসরে দাপটের সঙ্গে খেলেই অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয় নারী দল। ওই আসরের ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সাফ শিরোপা জিতেছিলেন সাবিনা খাতুনরা। সিনিয়রদের দেখানো পথে এবার সাফল্য পেল বাংলাদেশের কিশোরীরা। দাপটের সঙ্গে খেলেই তারাও অপরাজিত থেকে সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করলো। গতকাল বিকালে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর আনফা কমপ্লেক্সে টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভারতকে টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ। নির্ধারিত সময়ের খেলা ১-১ ব্যবধানে ড্র থাকলে টাইব্রেকারে ফাইনালের ভাগ্য নির্ধারণ হয়। নির্ধারিত সময়ে ভারতের পক্ষে আনুশকা কুমারী ও বাংলাদেশের মরিয়ম বিনতে হান্না একটি করে গোল করেন। পেনাল্টি শুটআউটে বাংলাদেশের মরিয়ম বিনতে হান্না, থুইনুয়ে মারমা ও সাথি মুন্ডা গোল করলেও ব্যর্থ হন সুরভী আকন্দ প্রীতি এবং আলপি আক্তার। অন্যদিকে ভারতের শ্বেতা রানী ও অন্বিতা রঘুরামন গোল পেলেও ব্যর্থ হন আলেনা দেবী সারাংথেম, বনিফিলিয়া শুলাই এবং দিব্যানি লিন্ডা।
ফাইনাল জিতে টুর্নামেন্টে ভারতকে দ্বিতীয়বার হারালো বাংলাদেশ। এর আগে টুর্নামেন্টের রাউন্ড রবিন লিগে লাল-সবুজের মেয়েরা ৩-১ গোলে হারিয়েছিল ভারতীয়দের। গত মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে টসকাণ্ডে এই ভারতের সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি ভাগাভাগি করতে হয়েছিল বাংলাদেশ দলকে। এবার ভারতীয়দের আর সেই সুযোগ দেয়নি লাল-সবুজের কিশোরী দল।
কাল ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দেয় ভারত। বাংলাদেশ কিছুটা এলোমেলো ফুটবল খেললেও ধীরে ধীরে গুছিয়ে ওঠে। শুরুতেই গোল হজম করে বাংলাদেশ। ম্যাচের ৫ মিনিটে ভারতের আনুশকা কুমারী গোল করে দলকে নেন (১-০)। পিছিয়ে পড়ে গোল শোধের জন্য মরিয়া হয়ে লড়লেও প্রথমার্ধে সমতায় ফিরতে পারেনি অর্পিতা বিশ্বাস বাহিনী। ফলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় ভারত। দ্বিতীয়ার্ধে ক্রানুচিংয়ের বদলে অনন্যা মুরমু বিথি ও ফাতেমা আক্তারের জায়গায় মমিতাকে নামানোর পর বাংলাদেশ দলের খেলার গতি বদলে যায়। ভারতের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে খেলতে থাকে লাল-সবুজের মেয়েরা। ফলে সফলও হয় তারা। আক্রমণের ধারাবাহিকতায় থেকে ম্যাচের ৭১ মিনিটে মরিয়ম বিনতে হান্না’র গোলে সমতায় ফেরে বাংলাদেশ (১-১)। নির্ধারিত সময়ে আর কোনো গোল না হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। যেখানে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক গোলরক্ষক ইয়ারজান বেগম। তিনি টাইব্রেকারে ভারতের পাঁচ শটের মধ্যে তিনটিই ফিরিয়ে দেন। টাইব্রেকারের শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি বাংলাদেশের। দলের হয়ে প্রথম শট নেওয়া সুরভী আকন্দ প্রীতি মিস করেন। তার শট ঠেকিয়ে দেন ভারতীয় গোলরক্ষক। টাইব্রেকারের জন্য ভারতীয় কোচ ম্যাচ শেষ হওয়ার এক মিনিট আগে গোলরক্ষক পরিবর্তন করেন। ভারত প্রথম শটে গোল করলে বংলাদেশ পিছিয়ে পড়ে। ভারতের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শট টানা সেভ করে বাংলাদেশকে ম্যাচে রাখেন ইয়ারজান বেগম। পক্ষান্তরে মরিয়ম ও থুইনুয়ে মারমা গোল করলে বাংলাদেশ ২-১ এর লিড পায়। ভারত চতুর্থ শটে গোল করলে স্কোরলাইনে হয় ২-২। বাংলাদেশের পঞ্চম শটে সাথী মুন্ডা গোল করলে ব্যবধান দাঁড়ায় ৩-২। ভারতকে খেলায় টিকে থাকতে হলে পঞ্চম শটে গোল করতেই হতো। কিন্তু সেটা পারেননি দিব্যানি লিন্ডা। তার শট বাংলাদেশের গোলরক্ষক ইয়ারজান বেগম রুখে দিলে ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন হয় লাল-সবুজরা।
চার দলের সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ টুর্নামেন্টের পুরোটা জুড়েই ফেভারিট ছিল বাংলাদেশ। লিগ পর্বে স্বাগতিক নেপালকে ২-০, ভারতকে ৩-১ ও ভুটানকে ৬-০ গোলে হারিয়ে সেরা দল হিসাবেই ফাইনালে উঠেন অর্পিতা বিশ্বাসরা। আর ফাইনালে সমানে সমান লড়ে টাইব্রেকারে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা উৎসব করে লাল-সবুজের মেয়েরা। দলীয় সাফল্যের পাশাপাশি টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের ব্যক্তিগত অর্জনও রয়েছে অনেক। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের সুরভী আকন্দ প্রীতি সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। তিনি ৫ গোল করার পাশাপাশি টুর্নামেন্ট জুড়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেন। সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কারটাও অল্পের জন্য মিস করেছেন প্রীতি। ভারতের আনুশকা কুমারী ৬ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার জিতে নেন। সর্বোচ্চ গোলদাতা ভারত পেলেও সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশের ইয়ারজান বেগম। পুরো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ মাত্র দু’টি গোল হজম করেছে। পাশাপাশি ফাইনালের টাইব্রেকারে ভারতের তিনটি শট রুখে দিয়েছেন বাংলাদেশের এই গোলরক্ষক। তাই সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কারও জিতে নিয়েছেন তিনি।
ম্যাচ শেষে আনন্দে আত্মহারা ইয়ারজান বলেন, ‘আমার অনেক ভালো লাগছে। প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলে সাফল্য পেলাম। সেরা গোলরক্ষক হওয়ার অনুভূতিই আলাদা। কোচকে ধন্যবাদ জানাই আমাকে এ পর্যন্ত নিয়ে আসার জন্য। সেরা গোলরক্ষক হতে পেরে আজকে আমি অনেক খুশি।’ এই পুরস্কার তিনি উৎসর্গ করেন তার বাবা ও গোলরক্ষক কোচ আরিফুর রহমান পান্নুকে। এই উৎসর্গ করার কথা বলতে গিয়ে তিনি কেঁদে ফেলেন ইয়ারজান। টুর্নামেন্টের ফেয়ার প্লে ট্রফি পায় ভুটান।
বিভাগ : খেলাধুলা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতকে ছেড়ে কেন চীনের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে শ্রীলঙ্কা?
রাজনৈতিক উত্তরণে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করবে জাপান
প্রবাসী উপদেষ্টার আশ্বাসে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছুদের আন্দোলন স্থগিত
মহার্ঘভাতার সঙ্গে ভ্যাট বাড়ানোর কোনো সম্পর্ক নেই: অর্থ উপদেষ্টা
পুরো বইমেলা মনিটরিং হবে ড্রোনে-ডিএমপি কমিশনার
যানবাহন চালক-পথচারীদের জন্য ডিএমপির বিশেষ নির্দেশনা
মাস্ক বা অন্য কেউ টিকটক কিনলে বিনিয়োগ করবে প্রিন্স তালালের কোম্পানি
মৃত বাবার রেখে যাওয়া ঋণ পাওনাদার নিতে না চাওয়া প্রসঙ্গে?
খেলাধুলার মাধ্যমে তরুণদের শারীরিক ও মানসিক বিকশিত হয় -ডিসি তৌফিকুর রহমান
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিজিবি বিএসএফ বৈঠক
জিয়াউল হক মাইজভা-ারী ট্রাস্টের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান
অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তে সিলেটজুড়ে স্বস্তি
৪ দিনের রিমান্ডে সাবেক এমপি আবু রেজা নদভী
মাদারীপুরে জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবপাচারের আন্তঃসম্পর্কবিষয়ক কর্মশালা
রাজশাহীতে ছাত্রাবাসে ঢুকে সমন্বয়ককে মারধর
মাদারীপুরে হত্যার দায়ে ৫ জনের যাবজ্জীবন
এক বছরে উখিয়া-টেকনাফে ১৯২ জন অপহরণ
‘সমন্বয়ক মরার জন্য প্রস্তুত হ’ দেয়ালে লিখে হত্যার হুমকি
বিমানের এই কর্মকা- সহ্য করার মতো নয় -সিলেট সুধীজন
বাণিজ্যমেলায় শেষ মুহূর্তে নিত্যপণ্য কেনাকাটার ধুম