পদত্যাগ নয় ফের নির্বাচন করবেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) চারবারের সভাপতি, সাবেক তারকা ফুটবলার ও সদ্য পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর খ্যাত কাজী মো.সালাউদ্দিন!
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে পড়ে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে গেলে তার সরকারের পতন হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের ফুটবল ও ক্রিকেটসহ বিভিন্ন ফেডারেশনের নেতৃত্বে পরিবর্তনের জোর দাবি উঠেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকে নাজমুল হাসান পাপন ও বাফুফের কাজী সালাউদ্দিনের অপসারণ চাইছে বিভিন্ন সংগঠন থেকে শুরু করে ফুটবলপ্রেমী আমজনতা। এই ইস্যুতে পাপন একেবারে নীরব থাকলেও মুখ খুলেছেন সালাউদ্দিন। পদত্যাগের দাবি উড়িয়ে দিয়ে বাফুফের সভাপতি পদে আবারও নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে সালাউদ্দিন এ ঘোষণা দেন।
আগামী ২৬ অক্টোবর বাফুফের নির্বাচন হওয়ার কথা। এই নির্বাচনে পঞ্চম মেয়াদে সভাপতি পদে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমি পদত্যাগ করব না। নির্বাচন করব। নির্বাচন করা আমার গণতান্ত্রিক অধিকার। সেটা থেকে আমাকে বঞ্চিত করবেন কীভাবে?’ তিনি যোগ করেন,‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বললে আমি ব্যাপারটা ভেবে দেখতাম। কিন্তু কোথা থেকে কিছু ছেলেপেলে আমাকে হুমকি দেবে, এটা তো মেনে নেওয়া যায় না। ওরা (বাংলাদেশ ফুটবল আলট্রাস) বলেছে, আমাকে যেখানে পাবে, সেখানেই নাকি মারবে। এটা ওরা বলতে পারে না।’
দেশের ফুটবল সমর্থকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ ফুটবল আলট্রাস’ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই সালাউদ্দিনের পদত্যাগ ইস্যুতে বেশ সরব। বাফুফের বর্তমান সভাপতিকে পদত্যাগের আলটিমেটাম দিয়েছে তারা। তবে সেই আলটিমেটামকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না ২০০৮ সাল থেকে বাফুফের সভাপতি পদে থাকা সালাউদ্দিন। তিনি মনে করেন, পদত্যাগ করার মতো অন্যায় কিছু করেননি। নির্বাচনে হারলেই কেবল তিনি সরবেন। কোনো হুমকিতে ভীত হতে নারাজ সালাউদ্দিন। প্রয়োজনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে নিরাপত্তা চাইবেন বাফুফে সভাপতি।
কাজী সালাউদ্দিন গত ১৫ বছর ধরে সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনও (সাফ) সভাপতি। তার মতে, নির্বাচন না করার জন্য জোর করা ঠিক নয়। সালাউদ্দিন বলেন, ‘ওরা বলছে, আমি এখন পদত্যাগ না করলে ঘোষণা দিতে হবে, যাতে নির্বাচন না করি। এটা তো জোর করা। নির্বাচন করব না, এই প্রতিশ্রুতি আপনি জোর করে আদায় করতে পারেন না।’ সালাউদ্দিন বিরোধী ফুটবল সংগঠকদের দিকে আঙুল তুলে তিনি বলেন,‘ আপনি তখনই আমার পদত্যাগের কথা বলতে পারতেন যদি ফেডারেশনে নির্বাচন না হতো। নির্বাচন হবে ২৬ অক্টোবর। আপনি নিজে নির্বাচন করেন। আমার বিরুদ্ধে আপত্তি করার কে? আমি কিন্তু ২০০৮ সালে নির্বাচন করে চেয়ারে বসেছি। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল। বাদল রায়, সালাম মুর্শেদী, হারুনুর রশীদ, এদের বিপক্ষে নির্বাচন করেছি। আমি নির্বাচন করেই এসেছি। আপনিও নির্বাচন করে আসুন।’
সালাউদ্দিনের পদত্যাগের দাবি করা সংগঠন ‘বাংলাদেশ ফুটবল আলট্রাস’ বিলুপ্ত হওয়া সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে কথা বলছে বলেও জানান বাফুফের সভাপতি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওরা আমার পদত্যাগ চাওয়ার কে, সেটা আমি জানতে চাই। ফুটবলে এভাবে কাউকে নিষিদ্ধ করার নিয়ম কোথায় আছে, তা আমি জানতে চাই। ওরা বললেই তো হবে না। ওরা কারা? ওরা সাইফ স্পোর্টিংয়ের (২০২২ সালে বিলুপ্ত ক্লাব) কর্ণধার তরফদার রুহুল আমিনের হয়ে কথা বলছে। ফুটবলে তাদের কতটুকু অবদান আছে?’
ফুটবল আলট্রাস সালাউদ্দিনের পদত্যাগে এক দফা দাবি ঘোষণা করে বলছে, ‘বাফুফের বর্তমান সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন দীর্ঘ ষোল বছর দায়িত্ব পালন করলেও দেশের ফুটবল উন্নয়নে তার ভূমিকা সকলের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ। দেশের ফুটবলে তার উন্নয়নের ছাপ নেই। অন্যদিকে তার সভাপতি থাকাকালীন সময়ে ফিফার তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হয়ে জরিমানার কবলে পড়েছেন বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী। যা দেশের ফুটবলের ভাবমূর্তিক্ষুন্ন করেছে।’
উল্লেখ্য, দেশের সরকার পরিবর্তন হলেও বাফুফেতে সরকারের হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই। ফিফার নিয়ম অনুযায়ী, কোনো দেশের ফুটবল ফেডারেশনের ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকলে তাদের সদস্য পদ স্থগিত করা হয়। এমনটা অতীতে হয়েছে অনেকে দেশেই।