ঢাকা   বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উত্তরণ নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারে

Daily Inqilab জামালউদ্দিন বারী

০৪ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:৫২ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৩৯ এএম

আমরা নানা কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করতে পারি। আধিপত্যবাদী ও যুদ্ধবাদী পররাষ্ট্রনীতির জন্য মার্কিনীদের অভিযুক্ত করতে পারি। কিন্তু বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের অবস্থানে পৌঁছার মূল মন্ত্রটি হচ্ছে, রাষ্ট্র পরিচালনায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি বিশ্বের মানুষের আগ্রহ ও জনপ্রিয়তা। ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মার্কিন জনগণকে মুক্ত করার প্রত্যয় ঘোষণা করে মার্কিন ফাউন্ডিং ফাদাররা যে মানবিক সাম্য ও শাসনতান্ত্রিক ঐক্যের কথা বলেছিলেন, মার্কিন সমাজ ও প্রশাসনের অভ্যন্তরে থাকা ঔপনিবেশিক বর্ণবাদী শক্তির দালাল ও স্বার্থান্বেষী মহল সে স্বপ্ন পূরণে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এ কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একটি শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের পাশাপাশি, দাস প্রথা বিলোপ ও উদার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সমুন্নোত করার জন্য দেশপ্রেমিক ইউনিয়ন সমর্থক রাজনৈতিক শক্তিকে দক্ষিণের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে প্রতিহত করতে অস্ত্র ধারণ করতে হয়েছিল। মার্কিন সিভিল ওয়ারে বিজয়ের মধ্য দিয়ে মার্কিন গণতন্ত্রের বিজয় অর্জিত হয়েছিল। সিভিল ওয়ারের নেতা ও ষোলতম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের দেয়া গণতন্ত্রের সংজ্ঞাই এ যাবৎকালের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। তিনি বলেছিলেন, ‘ডেমোক্রেসি অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল অ্যান্ড ফর দ্য পিপল’ Ñ গণতন্ত্র হচ্ছে, জনগণের কল্যানের জন্য, জনগণের দ্বারা পরিচালিত জনপ্রতিনিধিত্বমূলক শাসনব্যবস্থা। গ্রীক শব্দ ডেমোস (জনগণ) এবং ক্রিটোস (শাসনক্ষমতা) শব্দদ্বয়ের সমন্বয়ে ডেমোক্রেসি শব্দটির উদ্ভব। আব্রাহাম লিঙ্কন সত্যিকার অর্থে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে কল্যাণমূলক জনপ্রতিনিধিত্বশীল রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার আকাক্সক্ষা পোষণ করেছিলেন। সেই আকাক্সক্ষা বাস্তবায়ণের পথে বর্ণবাদী কায়েমী স্বার্থবাদী শক্তির পথের কাঁটা হয়ে দেখা দেয়ায় ১৮৬৫ সালে তাকে আততায়ীর গুলিতে মরতে হয়েছে। সেই মৃত্যু তাঁকে আরো মহীয়ান ও অমর করে রেখেছে। সতেরশ’ ছিয়াত্তর সালে স্বাধীনতার প্রায় এক শতাব্দী পর আঠারশ’ ষাটের দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে রাজনৈতিক ঐক্য ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সমুন্নোত রাখতে সিভিল ওয়ারের পথ অতিক্রম করতে হয়েছে। সিভিল ওয়ারের নেতা আব্রাহাম লিঙ্কনকে হত্যার পর সে দেশের গণতন্ত্রের কাক্সিক্ষত অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। এ কারণে সিভিল ওয়ারের পর একশ’ বছর পেরিয়ে এসে ১৯৬০-এর দশকে গণতান্ত্রিক প্রত্যাশা, ভোটাধিকার, বর্ণবাদ ও সিভিল রাইটের দাবিতে ব্যাপিটিস্ট মিনিস্টার মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের সাথে আফ্রো-আমেরিকান মুসলিম গণতান্ত্রিক নেতা ম্যালকম এক্স-এর সম্মিলনে যে রাজনৈতিক কেমিস্ট্রি গড়ে উঠেছিল সেটাই ছিল আব্রাহাম লিঙ্কনের রাজনৈতিক লক্ষ্য। ১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট ওয়াশিংটন ডিসির লিঙ্কন মেমোরিয়ালের সামনে সাদা-কালো লক্ষ লক্ষ জনতার সামনে মার্টিন লুথার কিং তার ঐতিহাসিক বক্তৃতা ‘আই হ্যাভ অ্যা ড্রিম’ তুলে ধরেন। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষ মার্কিন জনগণের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সাম্য, চাকরি ও ভোটাধিকারের প্রশ্নে কালোদের বঞ্চনা দূর করে রাষ্ট্র মেরামতের দৃঢ় প্রত্যাশাই ছিল কিংয়ের আই হ্যাভ অ্যা ড্রিম বক্তৃতার মূলমন্ত্র। সে সময়ের রাজনৈতিক আন্দোলনের দ্বারা প্রভাবিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি আততায়ীর গুলিতে নিহত হন ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর। একইভাবে ম্যালকম এক্স নিহত হন ১৯৬৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এবং মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রকে হত্যা করা হয় ১৯৬৮ সালের ৪ঠা এপ্রিল। এভাবেই একের পর এক আততায়ীর গুলিতে মার্কিন জনগণের সাম্য ও স্বাধীনতার স্বপ্ন ও সম্ভাবনা অন্ধকারের আততায়ীর গুলিতে স্তব্ধ করে দেয়া হয়।

আধুনিক বিশ্বে উদারনৈতিক গণতন্ত্র হচ্ছে, স্বাধীনতার সমার্থক শব্দ। পশ্চিমারা নিজেদের মধ্যে বহুত্ববাদী সংস্কৃতির প্রলেপে আধুনিক গণতন্ত্রের ছবক বিতরণ করলেও এখন গণতন্ত্রের উপর নিওকন বর্ণবাদ ও কর্পোরেট পুঁজিবাদের গোপণ এজেন্ডাই মূল চালিকা শক্তি হয়ে উঠেছে। কপোর্রেট পুঁজিবাদে ভর করে বিশ্বের উপর সা¤্রাজ্যবাদের আগ্রাসী নিয়ন্ত্রণ কৌশল গণতন্ত্রের সামাজিক-রাজনৈতিক মূল্যবোধের প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভগ্নপ্রায় সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর মার্কিন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কোনো রকমে টিকে থাকলেও পুঁজিবাদের কালোহাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সা¤্রাজ্যবাদী আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপর বশংবদ ব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রের কারণে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সর্বত্র প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে। হোয়াইট সুপ্রীমেসিস্ট, কু-ক্লাক্স ক্লানদের সন্ত্রাসী তৎপরতার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের বদলে বর্ণবাদী শক্তির ভোটের হিসাবকে সামনে রেখে আফ্রো-আমেরিকান ও মুসলিম বিদ্বেষী অপতৎপরতায় মার্কিন রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহারের খেসারত দিতে হচ্ছে মার্কিন গণতন্ত্র ও জনগণকে। বৃটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে মার্কিন স্বাধীনতার লড়াই, সিভিল ওয়ার এবং সিভিল রাইট মুভমেন্টের আন্দোলনে আফ্রো-আমেরিকান ও মার্কিন মুসলমানদের গৌরবময় ভ’মিকা রয়েছে। একইভাবে বৃটিশবিরোধি আন্দোলন ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মত্যাগের ইতিহাসে ভারতীয় মুসলমানদের অবদান হিন্দুদের চেয়ে বেশি ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত পর্যন্ত উদার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও মাল্টিকালচারালিজমকে ক্ষতিগ্রস্ত করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের গণতান্ত্রিক প্রত্যাশা সাথে সাথে সংখ্যালঘু মুসলমানদের অবদান, ইতিহাস ও পুনর্জাগরণের সম্ভাবনাকে অগ্রাহ্য ও রুদ্ধ করার সর্বাত্মক অপতৎপরতা চলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিভিল রাইটস আন্দোলন তাদের সিভিল ওয়ার ও ফাউন্ডিং ফাদারদের সামাজিক-রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি থেকে বিচ্যুতির ফসল। ষাটের দশকের সিভিল রাইটস মুভমেন্টের নেতারা জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ও সিভিল রাইটস নেতা মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধীর পদাঙ্ক অনুসরণে পরিচালিত হয়েছিল। মার্টিন লুথার কিং, ম্যালকম এক্স’কে হত্যা করার আগে বর্ণবাদী ভারতীয় সন্ত্রাসবাদীরা ভারতের স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে চার মাসের মাথায় মহাত্মা গান্ধীকে গুলি করে হত্যা করে। স্বাধীনতা, স্বাধিকার ও সাম্য প্রতিষ্ঠার নেতাদের হত্যা করে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো এখন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিশ্বে অশান্তি, বৈষম্য ও নিরাপত্তাহীনতা ছড়িয়ে মানবাধিকারের দাবিকে পদদলিত করে চলেছে। ভারতে সাধারণ মানুষের মধ্যে মুসলিম বিদ্বেষ ও হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাস ছড়িয়ে ভারতের মাটিতে এখন বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম গণহত্যার আশঙ্কা সৃষ্টি করা হয়েছে। গত কয়েক বছরে একাধিকবার এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক জেনোসাইড ওয়াচের পক্ষ থেকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে। ভারতের নিকটতম প্রতিবেশী এবং শতকরা ৯০ ভাগ মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশের জন্য ভারতীয় হিন্দুত্ববাদ অনেক বড় উদ্বেগ, হুমকি ও আশঙ্কাজনক বিষয়।

স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য আত্মদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে অদ্বিতীয় ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক মুক্তি, সাম্য, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রের দাবিকে সামনে রেখে যে দেশের লাখো মানুষ জীবন দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল, স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী পেরিয়ে এসেও সে দেশের মানুষের কাছে গণতন্ত্র এখনো সোনার হরিণ। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রত্যাশা ও আশা-আকাক্সক্ষাকে পদদলিত করে সা¤্রাজ্যবাদের ক্রীড়নক, কিছু সংখ্যক কর্পোরেট ও কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠির মদতে গণতন্ত্র ও মানবতাবিরোধী অপতৎরতা স্বাধীনতার লক্ষ্য থেকে জাতিকে বিচ্যুত করে চলেছে। উগ্র জাতীয়তাবাদের নামে, স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামের চেতনার নামে বিশেষ কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠির ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পক্ষগুলো জনগণের স্বার্থ ও প্রত্যাশাকে অগ্রাহ্য করে লাখো শহীদের রক্তের দামে কেনা রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক মুক্তি ও গণতান্ত্রিক ন্যায্যতাকে খর্ব করে চলেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, দুর্নীতি-লুটপাট, অস্বচ্ছতার মাধ্যমে দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করে দেশকে দেউলিয়াত্বের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে ভারত-বাংলাদেশসহ গণতান্ত্রিক বিশ্ববাস্তবতায় এক অভিন্ন পুঁজিবাদের কালোহাত তার বিস্তৃতি ঘটিয়ে চলেছে। ঔপনিবেশিক যুগের শেকড়বিচ্ছিন্ন আমলাতন্ত্র, একচেটিয়া পুঁজিতন্ত্র ও ক্লেপ্টোক্রেসির কাছে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের দাবিগুলো চরমভাবে মার খাচ্ছে। পরাশক্তিগুলোর ভূ-রাজনৈতিক এজেন্ডা আঞ্চলিক সংঘাত, গৃহযুদ্ধ থেকে ইউক্রেন যুদ্ধের মত পরিস্থিতি বিশ্বকে একটি পারমানবিক সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে উদ্ধত হয়েছে। বিশ্বের অন্যতম জনবহুল উপমহাদেশে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে ঘিরেও একটি ভূ-রাজনৈতিক টাগ অব ওয়ার শুরু হয়েছে। একদিকে দেশের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা প্রত্যাশা, অন্যদিকে ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতা প্রত্যাশী চক্রের গোপণ কারসাজির সুযোগ নিচ্ছে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক আধিপত্যবাদীরা। ভূ-রাজনৈতিক কৌশলে মিয়ানমার এবং বাংলাদেশকে নিয়ে চীন, ভারত, রাশিয়া-আমেরিকার মধ্যে এক ধরণের ঠান্ডা লড়াই চলছে। সেখানে আধিপত্যের লড়াইয়ের কাছে জনগণের আকাঙ্খা, গণতন্ত্র ও নিরাপত্তার প্রশ্নগুলো যেন গৌণ হয়ে পড়েছে। মিয়ানমার সরকার রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিকত্ব ও মানবাধিকারের দাবিগুলোকে অগ্রাহ্য করে তাদেরকে জাতিগতভাবে নিশ্চিহ্ন করতে গণহত্যা চালানোর ঘটনায় চীন ও ভারত প্রায় অভিন্ন ভূমিকা গ্রহণ করতে দেখা গেছে। পশ্চিমারা কিছু লিপ সার্ভিস দিলেও বড় ধরণের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্বার্থ না থাকলে মুসলমানদের মানবাধিকার ও নিরাপত্তা নিয়ে তাদের উদ্বেগের কণ্ঠস্বর খুব বেশি উঁচুতে উঠেনা। উইঘুর ও কাশ্মিরের পরিস্থিতি ও বাস্তবতা ভিন্ন হলেও মুসলমানদের জাতিগত নিস্পেষিত করে ঠান্ডা করে দিতে চীন ও ভারত নিজ নিজ অবস্থান থেকে এথনিক ক্লিনজিংয়ের পন্থা গ্রহণ করলেও ভূ-রাজনৈতিক কারণে পশ্চিমাদের মানবাধিকারের কণ্ঠস্বর এখানে ভিন্নতর ও অত্যন্ত ক্ষীণ। সা¤্রাজ্যবাদী ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য হাজার হাজার কোটি ডলারের সমরাস্ত্র ও বাজেট নিয়ে ইউক্রেনের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জন্য মায়াকান্না করলেও তার চেয়ে ১০গুন সংখ্যক মুসলমানের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও মানবাধিকারের প্রশ্নে তাদের নিরব ভূমিকা গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রশ্নে তাদের অবস্থানকে বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।

তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের অবস্থান ও ভূমিকা যাই হোক, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক লক্ষ্য অর্জনের পথে জনগণের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম কখনো ব্যর্থ হয়না। একাত্তুরের স্বাধীনতা যুদ্ধের ফলাফল তার বাস্তব উদাহরণ। তবে একাত্তুরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ভূমিকার বিপরীতে ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। এখনকার রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংগ্রামে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রত্যাশার বিপরীতে পশ্চিমাদের লিপ সার্ভিস ও চীন-ভারত-রাশিয়ার প্রায় অভিন্ন অবস্থান পরিস্থিতিকে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে জটিল করে তুলেছে। মুক্তবাজার বিশ্বে চলমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সব পরাশক্তিই নিজ নিজ অবস্থান ধরে রেখে টিকে থাকার প্রয়াস চালাচ্ছে। সেখানে আমাদের মত স্বল্পন্নোত দেশের সংকট মোকাবেলায় তেমন কাউকেই সহযোগী হিসেবে খুঁেজ পাওয়া যায়নি। আইএমএফ’র শর্ত মেনে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়া না গেলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা চরমভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা ছিল। আশঙ্কা এখনো আছে। রফতানি আয় কমছে, ডলারের সংকট এবং টাকার অবমূল্যায়ণ বেড়ে চলেছে। এহেন বাস্তবতায় পশ্চিমা বিশ্বের সাথে যে কোনো রাজনৈতিক টানপোড়েন তৈরী পোশাক খাতসহ রফতানি বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করলে তা জাতীয় অর্থনীতির জন্য ধ্বংসাত্মক পরিনতি ডেকে আনতে পারে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক-সাংবিধানিক ইনস্টিটিউশনগুলোর সক্ষমতা ও ভাবমর্যাদা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে। ইতিমধ্যে এলিট ফোর্স র‌্যাব ও পুলিশের কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান শীর্ষ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার খড়গ ঝুলে আছে। সম্পর্কের টানপোড়েন যদি বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞায় গিয়ে পৌঁছায় তা দেশের জন্য বড় ধরণের সামাজিক-অর্থনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। আলামত ক্রমশ খারাপের দিকেই যাচ্ছে। দুইবছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত প্রথম গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রিত বিশ্বের ১১০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম ছিল না। গত মাসে দ্বিতীয়বারের মত অনুষ্ঠিত গণতন্ত্র সম্মেলনে এবার উপমহাদেশ থেকে ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ, পাকিস্তানসহ ১২০টি দেশ আমন্ত্রণ পেলেও বাংলাদেশ পায়নি। যে দেশের মানুষ গণতন্ত্রের জন্য বার বার রক্ত দিয়েছে, গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে ছিটকে পড়া সে দেশের জন্য অনেক বড় রাজনৈতিক ট্রাজেডি। প্রথম গণতান্ত্রিক সম্মেলনে দাওয়াত না পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, সম্ভবত দুর্বল গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সেই সাথে তিনি পরের বছর আমন্ত্রণ পাওয়ার প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেছিলেন। পক্ষান্তরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে বলা হয়েছে, যে সব দেশ গণতন্ত্র সম্মেলনে দাওয়াত পায়নি ২০২২ সাল তাদের জন্য বাস্তবায়নের বছর। এ নিরিখে ২০২৩ সালের সম্মেলনে নতুন ১০টি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের রোডম্যাপ দেখতে চায়। একইভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বও গণতন্ত্রকামী মানুষের পক্ষে অভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। বিশ্বমানের নিরপেক্ষ নির্বাচনে পশ্চিমাদের তাগিদের বিপরীতে বাহ্যিকভাবে ক্ষমতাসীন সরকার যেন থোরাই কেয়ার করছে। সংবিধানকে যথেচ্ছভাবে পরিবর্তন করে সংবিধানের দোহাই দিয়ে তামাশা-কারচুপির নির্বাচন করে ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করে দেশকে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকভাবে একটি বিপজ্জনক অবস্থানে ঠেলে দেয়ার হঠকারিতা জনগণ আর মেনে নেবে না। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক করতে রাজনৈতিক সমঝোতার কোনো বিকল্প নেই।

[email protected]


বিভাগ : আজকের পত্রিকা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

অতিরিক্ত মালবাহী গাড়িতে বেহাল দশা
কমলনগরে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে কিশোর গ্রেফতার
সড়ক সংস্কারের দাবিতে বরগুনাবাসীর মানববন্ধন
২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ওসি বদল
শিশু শিহাব হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন
আরও

আরও পড়ুন

মধ্যরাতে হাসনাতের পোস্ট : ঐক্যের ডাক

মধ্যরাতে হাসনাতের পোস্ট : ঐক্যের ডাক

লুলা দা সিলভাকে হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগে ব্রাজিলে ৪ সেনা, ১ পুলিশ গ্রেপ্তার

লুলা দা সিলভাকে হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগে ব্রাজিলে ৪ সেনা, ১ পুলিশ গ্রেপ্তার

ইসরাইলি বর্বর হামলায় গাজায় প্রাণ গেলো আরও ৫০ ফিলিস্তিনির

ইসরাইলি বর্বর হামলায় গাজায় প্রাণ গেলো আরও ৫০ ফিলিস্তিনির

জুলাই গণহত্যা: সাবেক আইজিপিসহ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে আটজনকে

জুলাই গণহত্যা: সাবেক আইজিপিসহ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে আটজনকে

জাবিতে মতবিনিময় সভায় শিবিরের উপস্থিতি নিয়ে হট্টগোল

জাবিতে মতবিনিময় সভায় শিবিরের উপস্থিতি নিয়ে হট্টগোল

মাস্কের স্টারশিপ রকেট উৎক্ষেপণ দেখতে সশরীরে উপস্থিত হলেন ট্রাম্প

মাস্কের স্টারশিপ রকেট উৎক্ষেপণ দেখতে সশরীরে উপস্থিত হলেন ট্রাম্প

যশোরে যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ

যশোরে যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ

যশোরে ঝটিকা মিছিল থেকে যুবলীগের ৩ কর্মী গ্রেফতার

যশোরে ঝটিকা মিছিল থেকে যুবলীগের ৩ কর্মী গ্রেফতার

ব্রাজিল হোঁচট খেল আবারও

ব্রাজিল হোঁচট খেল আবারও

ইসরাইল-হিজবুল্লাহের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তি পর্যালোচনা করছে লেবানন

ইসরাইল-হিজবুল্লাহের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তি পর্যালোচনা করছে লেবানন

আ.লীগকে যারা পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেবে তারা গণশত্রু, যা বললেন নেটিজেনরা

আ.লীগকে যারা পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেবে তারা গণশত্রু, যা বললেন নেটিজেনরা

প্রশংসায় ভাসছে সারজিস

প্রশংসায় ভাসছে সারজিস

মেসির রেকর্ডের ম্যাচে আর্জেন্টিনার জয়

মেসির রেকর্ডের ম্যাচে আর্জেন্টিনার জয়

ইয়াং-নিকোলস লড়াইয়ের পর বৃষ্টির বাধা

ইয়াং-নিকোলস লড়াইয়ের পর বৃষ্টির বাধা

শ্রীলঙ্কা সফরের জন্য অ-১৯ দল ঘোষণা

শ্রীলঙ্কা সফরের জন্য অ-১৯ দল ঘোষণা

'বন্ধু' আমোরি চাইলে ইউনাইটেডে ফিরবেন রোনালদো

'বন্ধু' আমোরি চাইলে ইউনাইটেডে ফিরবেন রোনালদো

ইয়ামালের জন্য ২৫ লাখ ইউরো প্রস্তাবের খবর নাকচ পিএসজির

ইয়ামালের জন্য ২৫ লাখ ইউরো প্রস্তাবের খবর নাকচ পিএসজির

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাবেক দুই মন্ত্রী, চার এমপিসহ ১০৬ জনের নামে মামলা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাবেক দুই মন্ত্রী, চার এমপিসহ ১০৬ জনের নামে মামলা

সিলেটে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করলো ‘আশা'

সিলেটে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করলো ‘আশা'

মোহাম্মদ জহিরুল কবিরের শেরপুর জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে যোগদান : জেলা পুলিশের শুভেচ্ছা

মোহাম্মদ জহিরুল কবিরের শেরপুর জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে যোগদান : জেলা পুলিশের শুভেচ্ছা