ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১

প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে আন্তরিক অভিনন্দন

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৯ মে ২০২৩, ০৯:২১ পিএম | আপডেট: ৩০ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট পদে রিসেপ তাইয়েফ এরদোগান টানা তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন। গত রবিবার দ্বিতীয় দফা ভোটে তিনি বিজয়ী হয়েছেন। প্রায় শতভাগ ভোট গণনা শেষে দেখা গেছে, এরদোগান পেয়েছেন প্রদত্ত ভোটের ৫২ দশমিক ১৪ শতাংশ। আর প্রধান বিরোধীদলীয় জোটের প্রার্থী কেমাল কিলিচদারোগ্লু পেয়েছেন ৪৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। প্রথম দফা ভোটে এরদোগান ও কিলিচদারোগ্লু কেউই ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় ভোট দ্বিতীয় দফায় গড়ায়। প্রেসিডেন্ট পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় আজারবাইজান, কাতার, হাঙ্গেরী উজবেকিস্তান, উত্তর সাইপ্রাস, পাকিস্তান, রাশিয়া, ইরান, জর্জিয়া কসোভোসহ বিভিন্ন দেশ এরদোগানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০০৩ সালে তরস্কের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ক্ষমতা নিয়েছিলেন এরদোগান। ২০১৪ সালে তরস্ককে সংসদীয় পদ্ধতি থেকে প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতিতে রূপান্তর করেন তিনি। সেই থেকে তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার মধ্যে দিয়ে তার ক্ষমতা তৃতীয় দশকে পদার্পণ করলো। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ ও মানুষ এরদোগান প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফের নির্বাচিত হোন, এটা মনে প্রাণে চাইলেও যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা চায়নি। তারা শুরু থেকেই এরদোগানের তীব্র বিরোধিতা করেছে এবং বিরোধী জোটের প্রার্থীকে সর্বাত্মক সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়েছে। মার্কিন ও পশ্চিমা মিডিয়া এরদোগানের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রপাগান্ডা চালিয়েছে। প্রচার করেছে এরদোগান শোচনীয়ভাবে পরাজিত হবেন ও বিরোধী জোটের প্রার্থী বিপুলভাবে বিজয়ী হবেন। মার্কিন ও পশ্চিমাদের এই এরদোগান বিরোধিতা, বৈরী প্রচারণা, বিরোধীজোটের প্রার্থীর প্রতি সমর্থন ও সহায়তা কোনো কাজে আসেনি। তুরস্কে গত ফেব্রুয়ারিতে ঘটে যাওয়া নজিরবিহীন ভূমিকম্প, বিপুল প্রাণহানি এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতার বিরোধী জোটীয় সমালোচনা এবং করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাপক মূল্যস্ফীতি, জনদুর্ভোগ ইত্যাদি নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে বলে অনেকে মনে করলেও শেষ পর্যন্ত তাও তেমন প্রভাব রাখেনি বলে প্রতীয়মান হয়েছে। তুরস্কের জনগণ তুরস্কের স্বার্থ, এরদোগানের ভূমিকা ও অবদানকেই সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিয়েছে। দ্বিতীয় দফা ভোটের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর সমর্থকদের উদ্দেশ্য এরদোগান বলেছেন, ‘একমাত্র বিজয়ী তুরস্ক।’ তার এথার সত্যতা অস্বীকার করা যায় না। এর সঙ্গে যোগ করা দরকার, কেবল তুরস্কই বিজয়ী হয়নি, এইসঙ্গে গণতন্ত্র বিজয়ী হয়েছে, এরদোগানের নীতি-আদর্শ বিজয়ী হয়েছে।

রিসেপ তাইয়েফ এরদোগান শক্তিশালী, মর্যাদাশীল, উন্নত, সমৃদ্ধ ও ইসলামী ভাবাদর্শভিত্তিক এক তুরস্কের স্বপ্ন দেখেন। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে তিনি আন্তরিক ও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এটা শুধু তারই স্বপ্ন নয়, তুরস্কের জনগণেরও স্বপ্ন। তার ‘নব্য তুরস্ক’ গঠনের সংগ্রাম যেমন জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে, অনুপ্রাণীত করে তেমনি তার ধর্মপ্রাণতা, চরিত্র, নীতিনিষ্ঠতা, ন্যায়পরায়নতা, সাহস, দৃঢ়তা ইত্যাদিও অনুপ্রাণিত করে। পর্যবেক্ষক-বিশ্লেষকরা স্বীকার করেছেন, এরদোগান তার সমাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও বৈদেশিক নীতির মাধ্যমে বৈশ্বিক অঙ্গনে তুরস্ককে একটি দৃঢ় ও প্রভাবশালী দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ক্ষমতায় আসার শুরুর দিকে এরদোগানের উল্লেখযোগ্য নীতির মধ্যে একটি ছিল আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে তুরস্কের ভূমিকাকে সম্প্রসারিত ও গতিশীল করা। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে তুরস্কের ভূমিকার কথা এখানে স্মরণ করা যেতে পারে। সিরীয় শরণার্থীদের তুরস্কে অবাধে আশ্রয় দান ব্যাপক প্রসংশা অর্জন করে। এরদোগানের অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক নীতির মধ্যে ওসমানীয় খেলাফতের গৌরব ফিরিয়ে আনা এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে ইসলামের অনুশাসন প্রতিষ্ঠা প্রধান। এই নীতি তুরস্কের জনগণকেই উদীপ্ত-উজ্জীবিত করেনি, মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে তার সম্পর্কও সম্প্রসারিত ও উন্নত করেছে। এরদোগান এখন তুরস্কেরই নেতা নন, মুসলিম বিশ্বেরও নেতা। এরদোগানের প্রতিরক্ষা নীতি তুরস্ককে সামরিক দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে দিয়েছে ও শক্তিশালী করেছে। প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন, উন্নয়ন, আধুনিকীকরণ ও গবেষণা তুরস্ককে বিশ্বে সামরিক দিক দিয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তার বিশ্বসেরা ড্রোনের প্রশংসা সর্বত্র। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে ‘এরদোগান নীতি’ অগ্রগামী। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে শুরু করে ইউক্রেন যুদ্ধ পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনায় তুরস্কের ভূমিকা প্রশংসিত। বিশ্ব নেতাদের মধ্যেও এরদোগান সামনের সারিতে স্থান করে নিয়েছেন। সাম্প্রতিককালে এরদোগান মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্যএশিয়ার দিকে বিশেষ নজর দিয়েছেন। এই দুই অংশের উন্নয়ন, যোগাযোগ, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠা তার অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে গণ্য হচ্ছে। বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এরদোগান সা¤্রাজ্যবাদী, বর্ণবাদী, আগ্রাসনবাদী, শোষণবাদী মার্কিন বলয় থেকে সরিয়ে তুরস্ককে চীন-রাশিয়া-ইরান অর্থাৎ প্রতিপক্ষ বলয়ে সংযুক্ত করেছেন। এতে তার বিচক্ষণতা ও দূরদৃষ্টির প্রখরতা প্রতিপন্ন হয়েছে।

এরদোগানের প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হওয়া তুরস্কের জন্য অতি জরুরি ছিল। প্রায় এক শতাব্দীকাল ধরে তুরস্ক ধুকছিল নানা দুর্বলতায়। ধর্মনিরপেক্ষ দুঃশাসনে তুরস্কের জনগণ আত্মপরিচয় ও গৌরবময় অতীত ভুলতে বসেছিল। এই অবস্থা থেকে দেশ-জাতির উদ্ধারে এরদোগান ও তার বিচক্ষণ সাথীরা কম সংগ্রাম ও ত্যাগ স্বীকার করেননি। অবশেষে ক্ষমতা তাদের পদচুম্বন করেছে। নব্য তুরস্ক এবং নতুন মুসলিম বিশ্ব গঠনের সুযোগ সামনে এসেছে। সা¤্রাজ্যবাদীদের ও ইসলামবিদ্বেষীদের কাম্য নয় সবল তুরস্ক, শক্তিশালী মুসলিম বিশ্ব। এরদোগান যেহেতু সবল তুরস্ক ও শক্তিশালী মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ প্রবক্তা সুতরাং সা¤্রাজ্যবাদীরা, ইসলাম বিদ্বেষীরা তার বিরোধিতা করবেই, তার পথে কাঁটা বিছাবেই। ভবিষ্যতেও হয়তো এ আচরণ ও কার্যধারা অব্যাহত থাকবে। এটা মনে রেখে অবশ্যই সতর্ক ও সাবধান হতে হবে। তুরস্ক দ্রুত উন্নয়ন করছে বটে। তবে উন্নয়ন আকাক্সক্ষা অশেষ। যুদ্ধের কারণে, বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার কারণে অন্যান্য দেশের মতো তুরস্কের উন্নয়নধারা বিঘিœত হচ্ছে, পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বর্ধিত হচ্ছে, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান কম হচ্ছে। তুরস্ক সরকারকে এসব দিকে আরো মনোযোগ দিতে হবে। এই সঙ্গে ‘এরদোগান নীতি’ এগিয়ে নিতে হবে। আমরা প্রেসিডেন্ট পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় এরদোগানকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। এই সঙ্গে তার সুস্বাস্থ্য ও সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করি।


বিভাগ : আজকের পত্রিকা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

অতিরিক্ত মালবাহী গাড়িতে বেহাল দশা
কমলনগরে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে কিশোর গ্রেফতার
সড়ক সংস্কারের দাবিতে বরগুনাবাসীর মানববন্ধন
২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ওসি বদল
শিশু শিহাব হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন
আরও

আরও পড়ুন

দেশের মানুষ আর ভোট বিহীন সরকার দেখতে চায় না - আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী

দেশের মানুষ আর ভোট বিহীন সরকার দেখতে চায় না - আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী

সর্বদলীয় সভায় অংশগ্রহণে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিএনপি

সর্বদলীয় সভায় অংশগ্রহণে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিএনপি

কিশোরগঞ্জে ভূয়া মানবাধিকার চক্রের ৯ সদস্য আটক

কিশোরগঞ্জে ভূয়া মানবাধিকার চক্রের ৯ সদস্য আটক

ভারতের বক্তব্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তীব্র প্রতিক্রিয়া

ভারতের বক্তব্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তীব্র প্রতিক্রিয়া

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতা ফয়েজ হত্যা : শেখ হাসিনাসহ ৪১ জনের নামে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতা ফয়েজ হত্যা : শেখ হাসিনাসহ ৪১ জনের নামে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ

ঢাকা-লক্ষ্মীপুর মহাসড়ক বালিতে বায়ু দূষণ, অতিষ্ঠ জনসাধারণ

ঢাকা-লক্ষ্মীপুর মহাসড়ক বালিতে বায়ু দূষণ, অতিষ্ঠ জনসাধারণ

‘কর্মের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে নিজেদেরকে মর্যদাশীল করা সম্ভব’

‘কর্মের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে নিজেদেরকে মর্যদাশীল করা সম্ভব’

ডা. ফয়েজ হত্যা: শেখ হাসিনাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল

ডা. ফয়েজ হত্যা: শেখ হাসিনাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল

সাইফের শরীরে একাধিক অস্ত্রোপচার, ডাকাত সন্দেহে আটক ৩

সাইফের শরীরে একাধিক অস্ত্রোপচার, ডাকাত সন্দেহে আটক ৩

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদের গেজেট প্রকাশ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদের গেজেট প্রকাশ

টুইটারের পর এবার টিকটক কিনছেন মাস্ক?

টুইটারের পর এবার টিকটক কিনছেন মাস্ক?

বর্ধিত ১৫% ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে নরসিংদীতে রেস্তোরা মালিক সমিতির মানববন্ধন

বর্ধিত ১৫% ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে নরসিংদীতে রেস্তোরা মালিক সমিতির মানববন্ধন

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে সউদী আরব

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে সউদী আরব

সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার

সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার

বাম চোখের পরিবর্তে ডান চোখে অপারেশন, চিকিৎসক গ্রেফতার

বাম চোখের পরিবর্তে ডান চোখে অপারেশন, চিকিৎসক গ্রেফতার

টিউলিপকে দুর্নীতিবাজ বলে আখ্যা দিলেন ইলন মাস্ক

টিউলিপকে দুর্নীতিবাজ বলে আখ্যা দিলেন ইলন মাস্ক

এনআইডি স্বরাষ্ট্রে নেওয়ার আইন বাতিল করতে প্রস্তাব

এনআইডি স্বরাষ্ট্রে নেওয়ার আইন বাতিল করতে প্রস্তাব

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সর্বদলীয় বৈঠকে অংশ নেবে না এলডিপি

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সর্বদলীয় বৈঠকে অংশ নেবে না এলডিপি

ফুডি অ্যাপে ডোমিনোজের পিৎজা অর্ডার করলেই ৪০% ছাড়!

ফুডি অ্যাপে ডোমিনোজের পিৎজা অর্ডার করলেই ৪০% ছাড়!

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় গ্রেপ্তার নিয়ে যা জানালেন দুই উপদেষ্টা

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় গ্রেপ্তার নিয়ে যা জানালেন দুই উপদেষ্টা