রোহিঙ্গা ক্যাম্প অশান্ত করার নেপথ্যে কারা?
০৮ মার্চ ২০২৩, ০৪:৪৪ পিএম | আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৩, ০৯:৩৫ পিএম

- সাড়ে চার মাসে ৩০ রোহিঙ্গা খুন
- নিরাপত্তাহীন সাধারণ রোহিঙ্গা ও এনজিও কর্মীরা, উদবিগ্ন স্থানীয়রা
উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে প্রায় প্রতিদিন খুনখারাবি, অপহরণ, ধর্ষণ ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটছে। কারা এই অপকর্মের পেছনে জড়িত বা কারা রোহিঙ্গা শিবির অশান্ত করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চায়? এই প্রশ্ন অনেকের।
পরিস্থিতি ক্রমে অবনতির দিকে যাওয়ায় শরণার্থীদের পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন আশ্রয় শিবিরে কর্মরত সরকারী-বেসরকারি সংস্থার কর্মীরা। অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা আশ্রয় শিবিরের বাইরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কে আছেন স্থানীয় লোকজনও। পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের তথ্য মতে, গত সাড়ে চার মাসে আশ্রয় শিবিরে ২৫টির বেশি সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় ৩০ জন রোহিঙ্গা খুন হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন ১৫ জন রোহিঙ্গা মাঝি, ৭ জন আরসা সন্ত্রাসী ও অন্যান্য সাধারণ রেহিঙ্গা।
গত রোববার দুপুরে উখিয়ার বালুখালীর ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে দুই হাজার শেড এর দেড় লাখ রেহিঙ্গা আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। আহত হয় শত শত নারী ও শিশু।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আশ্রয় শিবিরে মাদক, অস্ত্র, সোনার চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এবং রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন বাহিনী ও মাস্টার মুন্না বাহিনীর মধ্যে এসব ঘটনা ঘটছে।
পাশাপাশি কিছু এনজিও কর্মীর বিতর্কিত ভূমিকা যেন ওই অপকর্মকারীদের উস্কানী দিয়ে থাকে।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয় শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে দেশটির সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে।
আশ্রয় শিবিরগুলোর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত আছেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) পৃথক তিনটি ব্যাটালিয়নের ২ হাজার ৩০০ সদস্য। আশ্রয় শিবিরগুলো পরিচালিত হয় সরকারের দুর্যাগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অধীন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের আওতায়।
এপ্রসঙ্গে আরআরআরসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, রাতের বেলায় আশ্রয়শিবিরে সন্ত্রাসীদের গোলাগুলি সংঘর্ষের ঘটনায় সাধারণ রোহিঙ্গারা ঘুমাতে পারছেন না। দিনদুপুরে খুনখারাবির ঘটনাও ঘটছে। সেখানে কাজ করতে যাওয়া এনজিও-আইএনজিওর কর্মীরাও উদ্বিগ্ন। তাঁদের অনেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
গত এক সপ্তাহে আশ্রয় শিবিরের ১৫ জনের বেশি রোহিঙ্গা নেতা, বেসরকারি সংস্থার কর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় জনপ্রতিনধি এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে অচাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য।
তাঁরা বলছেন আশ্রয় শিবিরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হলে সেখানে মাদক, নিয়ন্ত্রণ, চোরাচালান রোধ এবং রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে দ্রুত যৌথ অভিযান চালানো জরুরি। আরআরআরসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানও যৌথ অভিযান চান। তিনি বলেন, ‘আশ্রয় শিবিরের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে কথা হয়েছে। আশ্রয় শিবিরগুলোকে মাদক, অস্ত্র ও সন্ত্রাসমুক্ত রাখতে খুব শিগগিরি যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
তিনি জানান, আশ্রয়শিবিরের চারদিকে দ্রুত কাঁটাতারের বেড়ার কাজ শেষ করা, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের ক্রম বৃদ্ধি ও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।
৫২টি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) সমন্বিত মোর্চা কক্সবাজার সিএসও এনজিও নামের (সিসিএএফ) কো-চেয়ারম্যান আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরের পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। অপহরণ, ধর্ষণ, খুনি বেড়ে চলেছে। সেখানে কর্মরত এনজিও আইএনজিওর কর্মীরা উদবিগ্ন।
নিরাপত্তার কারণে বিকেল চারটার পরপর সবাইকে আশ্রয় শিবির ত্যাগ করতে হচ্ছে। যৌথ অভিযানের মধ্যমে সন্ত্রাসীদের তৎপরতা নির্মূল করা না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
প্রায় প্রতিদিন আশ্রয় শিবিরগুলোতে গোলাগুলি, সংঘর্ষ লেগেই আছে। গত কয়েকদিনে পরপর তিনজন রোহিঙ্গা মাঝিকে হত্যা করা হয়েছে। গত রোববার দুপুরে উখিয়ার বালুখালীর ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে দুই হাজার শেড এর দেড় হাজার রেহিঙ্গা আশ্রয়হীনহয়ে পড়ে। আহত হয় শত শত নারী ও শিশু।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে কুতুপালং শান্তি সলিম আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৫) আরসা ও আরএসওর মধ্যে কয়েক ঘণ্টা ধরে হাসেন গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন রোহিঙ্গা মাঝি গত (নেতা) সলিম উল্লাহ (৩৪)। একই দিন দুপুরে উখিয়ার বালুখালী ঘটনা আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮) আরসা ও আরএসও সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলিতে দুই রোহিঙ্গা শিশু গুলিবিদ্ধ হয়। উম্মে হাফসা নামের ১১ বছর অপ বয়সী শিশুর কোমরে এবং আট বছর বয়সী আবুল ফয়েজের ডান পায়ে গুলি লাগে। তাদের চিকিৎসা চলছে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে। উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয় শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা জালাল আহমদ বলেন, মিয়ানমারের দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং আটটি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী বাহিনীর কারণে সাধারণ রোহিঙ্গারা শান্তিতে থাকতে পারছে না। দিনের বেলায় এপিবিএন ক্যাম্পে টহল দিলেও সন্ধ্যার পর আশ্রয়শিবির অরক্ষিত হয়ে পড়ে। তখন সন্ত্রাসীদের রাজত্ব শুরু হয়। গভীর রাত পর্যন্ত চলে গোলাগুলি-সংঘর্ষ, অপহরণ ও খুনোখুনির ঘটনা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, আশ্রয়শিবিরে মাদক চোরাচালানের অন্যতম হোতা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন। তাঁর বাহিনীর কয়েক শ সদস্য ইয়াবা, আইস ও সোনার কারবার নিয়ন্ত্রণ করে। শুরুর দিকে আরসার সঙ্গে মিলেমিশে মাদক চোরাচালান করতেন। দেড় বছর আগে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর আরসা থেকে বেরিয়ে মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ শুরু করে নবী হোসেন। দল ভারী করতে নবী হোসেন কাছে টানেন আরএসওকে। এখন আরএসও এবং নবী হোসেন বাহিনী মিলে আশ্রয়শিবির থেকে আরসাকে উৎখাত করতে মরিয়া।
উখিয়ার ২৬টি আশ্রয়শিবিরের মধ্যে -৫টির নিরাপত্তা দিচ্ছে ১৪ এপিবিএনের সাত শতাধিক সদস্য। রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। অন্যদিকে ১১টি আশ্রয়শিবিরে নিরাপত্তা দিচ্ছে ৮ এপিবিএনের সমসংখ্যক সদস্য। ১১ আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা থাকেন আরও তিন লাখের বেশি। আশ্রয়শিবিরগুলোতে এপিবিএনের সদস্যরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টহল ও চৌকিতে তল্লাশি চালান। মাদক, অস্ত্র উদ্ধার ও অপরাধীদের ধরতে অভিযান চালান। কিন্তু সন্ধ্যার পর নিরাপত্তার অভাবে
আশ্রয়শিবিরের দুর্গম পাহাড়ের সরু অলিগলিতে টহল পরিচালনা সম্ভব হয় না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বিভাগ : বাংলাদেশ
আরও পড়ুন

বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার মামলায় অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন ৭ মে

টানা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ হয়েছে : আইনমন্ত্রী

সরকার দেশের সব মানুষের কাছে পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও সুদৃশ্য ইলিশ পৌঁছানোর লক্ষ্যে কাজ করছে : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী

অভিযানে অংশ নেয়া ১১ র্যাব সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ

সাংবাদিক শামসুজ্জামান কারাগারে

সাংবাদিকদের গ্রেফতার ও ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে দেখেশুনে যাচাই করা প্রয়োজন : ইইউ

সাংবাদিক নির্যাতন নিয়ে বিদেশি বিবৃতি আমলে নিচ্ছে না সরকার

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের নিউজপেপার ওনার্স এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (নোয়াব)-এর বক্তব্য

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ

সুপ্রিম কোর্ট বার দ্বি-খ-িত হচ্ছে?

অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন ৭ মের মধ্যে জমার আদেশ

১৪ দল নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক চায়

১০ দিন আগের ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু কাল

তরবারির জোরে ভারতে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়নি

আর্থিক সহায়তার ২০ শতাংশ পায় ইউক্রেন

পুতিন তুরস্কের এনপিপি উদ্বোধনে যোগ দিতে পারেন

ইমাম গাজ্জালীর দৃষ্টিতে কোরআন তেলাওয়াতের শর্ত-২

আল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ মাধ্যম দোয়া

ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশনের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাবে অনুমোদন সরকারের