রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উর্দু বিভাগের ফল বিপর্যয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অফিস, সেমিনার, শ্রেণীকক্ষসহ শিক্ষকদের চেম্বারে তালা দিয়ে সকল একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ করে, অনশন ও আন্দোলন করে আসছে বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তবে এ আন্দোলন এখন বহুমুখী রুপ ধারণ করেছে। বেড়িয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
গত ৫ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির আশ্বাসে আন্দোলন সাময়িক বন্ধ করলেও ৬ মার্চ থেকে বিভাগে তালা দিয়ে পুনরায় আন্দোলন শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা।
বিভাগের একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আন্দোলনকে ঘিরে বিশৃংখলা সৃষ্টি, শিক্ষকদের সাথে অশোভন আচরণ, প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা ব্যক্তিদের সাথে উদ্ধতপূর্ণ আচরণ, বিভাগে পাল্টাপাল্টি নোটিশ প্রদান, সহপাঠীর দ্বারা হুমকি, শিক্ষকদের মধ্যে মতোপার্থক্যসহ শিক্ষক দ্বারা শিক্ষার্থীর নামে জিডি করার মত চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। যার ফলে বিভাগের শিক্ষকদের মাঝেও দুটি গ্রুপের পাল্টাপাল্টি অবস্থান এখন দৃশ্যমান। বাহ্যিকভাবে ফলাফল নিয়ে আন্দোলনের কথা বলা হলেও এর পিছনে রয়েছে অন্য কিছু । যার ফলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বড় অংশ আন্দোলন ছেড়ে শ্রেণীকক্ষে মনযোগ দিয়েছে।
আন্দোলন থেকে সরে আসা উর্দু বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, পরীক্ষার পূর্ব মুহুর্তে প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী ৭ দিনের শিক্ষা সফরে যায়। শিক্ষাবর্ষের ২য় সেমিস্টারে ৩টি কোর্সের মধ্যে ২টি (ইংরেজী ও উর্দু) কঠিন থাকায় শিক্ষার্থীরা ভাল পরীক্ষা দিতে পারেনি। আর অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর অধিকাংশই শিক্ষা সফরে গিয়েছিলো। আশানুরূপ ফল না পেয়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যেও বিরোধ চলমান। আর একারণেই অন্য শিক্ষকগণ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে সমাধানের ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। কোন স্যার ইনকোর্স নেওয়ার নোটিশ দিলে চেয়ারম্যান স্যার তা বন্ধের নোটিশ দিচ্ছে। এখন আমরা হয়েছি বলির পাঠা। ফল প্রকাশের ৬ মাস পেরোলেও এখনো ভর্তি হতে পারিনি। এমনিতেও করোনার কারনে আমরা পিছিয়ে আছি। এসব বিবেচনা করে আমরা অধিকাংশ শিক্ষার্থী আন্দোলন থেকে ফিরে এসেছি।
বৃহস্পতিবার (০৯ মার্চ) দুপুর ১টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিভাগে তালা দিয়ে ৪জন শিক্ষার্থী সেখানে অবস্থান করে আছেন। এসময় আন্দোলকারী শিক্ষার্থী বায়েজীদ হোসাইন বলেন, আমাদের দ্বিতীয় সেমিস্টারের প্রকাশিত ফলাফল পুরোটাই অসঙ্গতিপূর্ণ হয়েছে। যদিও পরীক্ষা কমিটি ফলাফল পূনর্মূল্যায়ন করে বলেছে যে অস্বচ্ছতা নাই। তবুও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল তার প্রতিবেদন আমরা চাই। তারাও যদি একই কথা বলে তাহলে আমাদেরকে খাতা দেখার সুযোগ করে দিতে হবে। অস্বচ্ছতা না পেলে আমরা মেনে নিবো। তবে অস্বচ্ছতা পেলে সংশ্লিষ্ট কোর্স শিক্ষকদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আমরা দীর্ঘদিন যাবত আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা কোনো সমাধান পাইনি। আমাদের বিষয় সমাধান না করেই ভর্তির নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমাদের দাবি না মানলে এই আন্দোলন অব্যহত থাকবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের সেমিস্টার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৩০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৬ জন ২য় বর্ষে ভর্তি এবং সেমিস্টার পরীক্ষা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করে বলেন, বিভাগে তালা লাগানোর সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা আর একটি দিনও নষ্ট করতে চাই না। এমনিতেই আমরা ২ বছর পিছিয়ে আছি। এসময় বিভাগের অফিস ও ক্লাস রুম খুলে দেওয়াসহ ৭ দফা দাবি জানিয়ে প্রশাসন বরাবর স্মারক লিপি জমা দিয়েছেন তারা।
বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান বলেন, গত ৬ মার্চে ভর্তির নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এর পর থেকেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা একাডেমিক ভবনে তালা দিয়ে আন্দোলন শুরু করেছে। তাদেরকে আমরা বুঝানোর চেষ্টা করেও আন্দোলন থেকে সড়াতে পারছিনা। তবে তাদের দাবির প্রেক্ষিতে একাডেমিক পরীক্ষা কমিটিকে ফল পুন:বিবেচনার অনুরোধ করেছিলাম। পরীক্ষা কমিটি তাদের ফল বিবেচনা করে কোন অস্বচ্ছতা পায়নি বলে জানিয়েছেন। এবিষয়ে প্রশাসন থেকেও ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে কিন্তু প্রতিবেদন এখনো জমা দেয়নি।
তবে পরীক্ষার পূর্বমুহূর্তে শিক্ষার্থীদের ৭দিনের শিক্ষা সফরে নিয়ে যাওয়া, শিক্ষকদের মধ্যে মতোপার্থক্যসহ শিক্ষক দ্বারা শিক্ষার্থীর নামে জিডির বিষয়ে জানতে চাইলে এই বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মো: সুলতান-উল ইসলাম বলেন, আন্দোলনের কারণে কোন বিভাগ বন্ধ হয়ে থাকাটা প্রত্যাশিত নই। প্রতিটি বিভাগে একজন সভাপতি ও পরীক্ষা কমিটি রয়েছে। কোন ক্রটি থাকলে তা শিক্ষকদের সাথে নিয়ে এর সমাধার করার দায়িত্ব বিভাগের। তা নাহলে তাদের দায়িত্বের অপারগতা প্রকাশ পাবে। তাদের নির্দিষ্ট দায়িত্বে ব্যর্থ হলে তাদেরও জবাব দিতে হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তাদের প্রতিবেদন দ্রুতই জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। ##