আমিষের চাহিদা পুরনকারী ‘গরীবের গোসত’ খ্যাত ডালের সিংহভাগই উৎপাদন হচ্ছে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে
০১ অক্টোবর ২০২৩, ১১:৩৭ এএম | আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১১:৩৭ এএম
‘গরীবের গোসত’ খ্যাত মানব দেহের আমিষের চাহিদা পুরনকারী ডাল ফসলের প্রায় ৪৫ ভাগই বরিশাল কৃষি অঞ্চল যোগান দিলেও আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির তেমন উদ্যোগ নেই। এমনকি দেশে উৎপাদিত খেশারী ও মুগ ডালের সিংহ ভাগেরই যোগানদার বরিশাল কৃষি অঞ্চলের কৃষিভ’মি ও উপক’লীয় চরাঞ্চল। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র মতে দেশে ২৫ লাখ টনের বেশী চাহিদার বিপরিতে রবি ও গ্রীষ্ম মৌসুম মিলিয়ে ডাল জাতীয় ফসলের উৎপাদন ১০ লাখ টনেরও কম। তবে এ ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে খুব শিঘ্রই নিবিড় কর্মসূচী গ্রহন করা হতে পারে বলেও জানিয়েছেন ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। গত বছর রবি মৌসুমে দেশে প্রায় ৬.৬০ লাখ হেক্টরে সাড়ে ৮ লাখ টন ডাল ফসল উৎপাদনের কথা জানিয়েছে ডিএই। যা আবাদে আগের রবি মৌসুমের চেয়ে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর ও উৎপাদনে ৩৫ হাজার টন বেশী ছিল।
এরমধ্যে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে প্রায় পৌনে ৩ লাখ হেক্টর জমিতে ৪ লাখ ২৯ হাজার টন বিভিন্ন ডাল ফসল উৎপাদন হয়েছিল। তবে আসন্ন রবি মৌসুমে বরিশাল অঞ্চলে ডাল ফসল আবাদ কিছুটা হ্রাস পেয়ে ৩ লাখ ৪৩ হাজার হেক্টরে নির্ধারন করা হলেও উৎপাদন ৪ লাখ ৪১ হাজার ৬২১ টনে উন্নীত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর।
কৃষি বিজ্ঞানী ও পুষ্টিবীদদের মতে, গোশতের পরেই ডালে প্রোটিন বা আমিষের পরিমাণ সবচেয়ে বেশী বলে তা আমাদের দেশের দরিদ্র ও সল্পোন্নত মানবগোষ্ঠীর আমিষের চাহিদা পূরনে একটি সস্তা উৎস হিসেবেও বিবেচিত হয়। ডাল থেকে যে পরিমান প্রোটিন পাওয়া যায়, তা ডিম, দুধ বা গোশতের মাধ্যমে অর্জন করতে প্রায় তিনগুন অর্থ ব্যয় করতে হয়। এসব কারনে ডালকে ‘গরীবের গোশত’ বলেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।
কিন্তু এখনো দেশে ডালের চাহিদার বড় অংশই আমদানী নির্ভর। যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানী-রফতানী বাণিজ্যে ভারসাম্যেও বিঘœ ঘটাচ্ছে।
অথচ এক্ষেত্রে যথাযথ মনযোগ প্রদান করলে ডালের উৎপাদন আরো অন্তত ৩০ ভাগ বৃদ্ধি সম্ভব বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষিবিদগন। যেহেতু ডালের জন্য কৃষি জমি বৃদ্ধির খুব একটা সুযোগ নেই, সে ক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-বারি’ ও ‘বাংলাদেশ পরমানু কৃষি গবেষনা প্রতিষ্ঠান-বিনা’ উদ্ভাবিত উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল জাতের ডালের আবাদের কোন বিকল্প নেই বলেই মনে করছেন কৃষিবিদগন। বারি’র বিজ্ঞানীগন এ পর্যন্ত মসুর ডালের ৭টি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছেন। এছাড়া খেসারীর ৩টি, মুগ ডালের ৬টি, ছোলার ৯টি, মাষকলাই ডালের ৩টি, ফেলন ডালের ১টি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে বারি’র বিজ্ঞানীগন। বিনা’র বিজ্ঞানীগনও মুগ সহ বিভিন্ন ডাল ফসলের উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল একাধিক জাত উদ্ভাবন করেছেন।
বারি ও বিনা উদ্ভাবিত এসব উচ্চ ফলনশীল জাতের ডালের উৎপাদন হেক্টর প্রতি দেড় টন থেকে ২ টন পর্যন্ত হলেও মাঠ পর্যায়ে তার আবাদ সম্প্রসারন ঘটছে না। এমনকি উচ্চ ফলনশীল এসব ডালে আমিষের পরিমানও ২০-৩০ভাগ। কিন্তু এখনো আমাদের দেশে ‘বারি’ ও ‘বিনা’ উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল এবং অধিক প্রোটিন সমৃদ্ধ ডালের বীজ কৃষকের কাছে যেমনি পৌঁছছে না, তেমনি এসব ডাল-এর আবাদ প্রযুক্তিও মাঠ পর্যায়ে হস্তান্তর কাঙ্খিত মাত্রায় পৌছেনি।
বারি গবেষণার মাধ্যমে দেশের আবহাওয়া উপযোগী উচ্চ ফলনশীল ও কৃষক বান্ধব কৃষি পণ্য উদ্ভাবন করে তা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র কাছে হস্তান্তর করে থাকে। ডিএই তার মাঠ পর্যায়ের ব্লক সুপারভাইজারদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে এসব উফশী জাত-এর আবাদ ও উৎপাদন প্রযুক্তি কৃষকের কাছে পৌঁছে দেয়ার কথা। এমনকি এলক্ষ্যে বিভিন্ন ব্লকে প্রদর্শনী প্লট করেও কৃষকদের হাতে কলমে অভিজ্ঞতা বিনিময় করার কথা।
কিন্তু ডাল সহ অনেক ফসলের ক্ষেত্রেই তা এখনো কাঙ্খিত লক্ষে পৌঁছেনি। তবে ডিএই’র দায়িত্বশীল মহলের মতে, ‘দেশে ডালের উৎপাদন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। আর এ লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে’ বলে জানান হয়েছে। মহলটির মতে, ‘গত এক দশকে দেশে ডালের উৎপাদন কিছুটা বেড়েছে। তা আরো বৃদ্ধির লক্ষ্যে ডিএই’র প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে’ বলে জানান কর্মকর্তাগন।
গত বছর রবি মৌসুমে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩২৫ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ২০ হাজার ৪৪৩ টন মসুর ডাল উৎপাদন হয়। এছাড়া ২ লাখ ৭ হাজার ৯১৩ হেক্টরে ২ লাখ ৬০ হাজার ৪৯১ টন খেসারী ডাল উৎপাদন হলেও এর মধ্যে বারিশাল অঞ্চলেই প্রায় ৯৩ হাজার হেক্টরে ১ লাখ ১৪ হাজার টন খেসারী ডাল উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া গত রবি মৌসুমে দেশে প্রায় ২ লাখ ৮ হাজার হেক্টরে উৎপাদিত দু লাখ ৬১ হাজার টন মুগ ডালের মধ্যে বরিশাল অঞ্চলেই প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার হেক্টরে ২ লাখ ৫৩ হাজার টন মুগ ডাল উৎপাদন হয়েছে বলে ডিএই’র পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি গত বছর দেশে প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টরে ৪৬ হাজার টন ফেলন ডাল, ১০ হাজার হেক্টরে প্রায় ১৪ হাজার টন মটর ডাল ছাড়াও অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ মাসকলাই ডালের আবাদ ও উৎপাদন ছিল যথাক্রমে প্রায় ২৯ হাজার হেক্টর ও ৩৪ হাজার টন। এসব ডাল ফসলেরও একটি বড় অংশই বরিশাল কৃষি অঞ্চলে আবাদ ও উৎপাদন হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে সারা দেশে গত রবি মৌসুমে ছোলা ডালের আবাদ ও উৎপাদন ছিল মাত্র ৩ হাজার ১০৫ হেক্টরে মাত্র সাড়ে ৪ হাজার টনে মত। অথচ দেশে এ ডালের চাহিদা প্রায় ১ লাখ টনের মত।
তবে বিগত রবি মৌসুমে সারা দেশে মাত্র ৩৮০ হেক্টর জমিতে ৪৩৬ টন অড়হড় ডাল উৎপাদন হলেও বরিশাল কৃষি অঞ্চলে তার আবাদ ছিল ১০ হেক্টরেরও কম। অথচ বরিশাল সহ সারা দেশেই অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ এ ডালের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন কৃষিবীদগন।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ঐক্য-সংস্কার-নির্বাচন নিয়ে জাতীয় সংলাপ শুরু আজ
ইহুদিদের ইউসুফ (আঃ)- এর সমাধিতে নিয়ে গেল ইসরায়েলি সেনারা
কাকরাইলে সাদপন্থিদের জমায়েত নিষিদ্ধ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
ইয়েমেনে ইসরাইলি হামলা, অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন ডব্লিউএইচও প্রধান
ইসরায়েলি হামলায় ইয়েমেন ও গাজায় ব্যাপক প্রাণহানি
হেলিকপ্টারে সফর নিয়ে বিতর্ক, ব্যাখ্যা দিলেন আসিফ মাহমুদ
কুমিল্লায় ছুরিকাঘাতে যুবক খুন
সচিবালয়ে আগুন: সংগ্রহ করা হলো সিসিটিভি ভিডিও
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বাশার আল-আসাদের স্ত্রী আসমা
টেস্ট ক্যারিয়ারের রেকর্ডময় ৩৪তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন স্মিথ
জাহাজে ৭ খুন : লাগাতার কর্মবিরতিতে পণ্যবাহী নৌযান শ্রমিকেরা
লেস্টার সিটিকে হারিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে লিভারপুল
ফের্নন্দেসের লাল কার্ডের দিনে ফের হারল ইউনাইটেড
শেষের গোলে জিতে চেলসির জয়রথ থামাল ফুলহ্যাম
পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং: ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন
গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত
মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ
কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের
৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী