ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

রাবি শিক্ষার্থী আয়াতুল্লাহর ৬৪ জেলা ভ্রমণ

Daily Inqilab রাবি সংবাদদাতা

২২ অক্টোবর ২০২৩, ১১:১৬ এএম | আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৩, ১১:১৬ এএম

অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে পুঁজি করে নানা বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা ভ্রমণ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী মুহাম্মাদ আয়াতুল্লাহ। মূলত বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই তার ভ্রমণ পিপাসা। তীব্র ইচ্ছাশক্তি থেকেই ২০১৮ সালে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন দিনাজপুরে। ভ্রমণকালে ছিনতাইয়ের শিকার, অর্থ স্বল্পতায় খেয়ে না খেয়ে রেলস্টেশন, মসজিদ ও রাস্তার পাশে ঘুমিয়ে রাত যাপন এবং পায়ে হেঁটেও ভ্রমণ করেছেন তিনি। তিক্ত এ অভিজ্ঞতা থেকেই তার ভ্রমন শুরু এবং ২০২২ সালের শেষের দিকে নেত্রকোনা জেলা ভ্রমনের মাধ্যমে দেশের ৬৪ জেলা ভ্রমন শেষ করেন তিনি।

মুহাম্মাদ আয়াতুল্লাহ ঝালকাঠি জেলা সদরের বাসিন্দা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। বর্তমানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে এম.ফিল/পিএইচডি এর জন্য পরীক্ষা দিয়েছেন।

ভ্রমন বিষয়ে জানতে চাইলে আয়াতুল্লাহ বলেন, আমি ৬৪ জেলার প্রায় ৯৫% প্রত্নতত্ত্ব স্থাপনাগুলো দেখেছি কারণ প্রত্নতত্ত্ব স্থাপনাগুলো একটি দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক-বাহক। বিভিন্ন সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, মানুষের আচার-আচরণ, বিভিন্ন জেলার মানুষের বৈশিষ্ট্যের বৈচিত্র্যতা, ইতিহাস, ঐতিহ্য ইত্যাদি জানতে এবং শিখতে আমি সবসময় উৎসুক। আমি পুরো দেশকে জানতে চেয়েছিলাম, দেশের প্রতিটি কোনায় কোনায় যেতে চাচ্ছিলাম। বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে শত-শত পুরাতন ঐতিহাসিক স্থাপনা। এগুলো দেখাই ছিলো আমার মূল লক্ষ্য।

সারা দেশ ভ্রমনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ৭ জন মহান বীরশ্রেষ্ঠের সমাধির মধ্যে ৬ জন বীরশ্রেষ্ঠের সমাধিতে গিয়েছি। এটা আমার নিকট একটি বড় অর্জন। আমি রেলস্টেশনে ঘুমিয়েছি, লঞ্চঘাটে ঘুমিয়েছি, মসজিদে ঘুমিয়েছি, রাস্তার পাশে তাবু করে ঘুমিয়েছি, ৫০ টাকার হোটেলে থেকেছি, বান্দরবানে উপজাতিদের ঘরে ঘুমিয়েছি। উপজাতিদের জুম ঘরে থেকেছি, জ্যান্ত কাঁকড়া খেয়েছি, ব্যাঙের ভর্তা খেয়েছি, আধা কাঁচা মুরগী রান্না করা খেয়েছি, কখনো কখনো আর্থিক সমস্যার কারণে ৩ বেলাই না খেয়ে থেকেছি।

তিনি আরো জানান, বাংলাদেশের বিভিন্ন বড় বড় পাহাড়ে যাওয়ার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা হেঁটেছি না খেয়ে। এমনকি কখনো কখনো গভীর রাতে টর্চ লাইট জ্বালিয়ে পাহাড়ে হেঁটেছি, যা ছিলো ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। এই পাহাড়গুলোতে যাওয়ার জন্য বুক সমান পানির মধ্যে হেঁটেছি। আর খারাপ অভিজ্ঞতা হল- আমি দুই বার ছিনতাইয়ের স্বীকার হয়েছি, যে সময় ছিনতাইকারীরা আমাকে লুট করেছিলো।

ভ্রমনের টাকার উৎস জানতে চাইলে তিনি জানান, বাসা থেকে ভ্রমনের জন্য আমি কোনদিন টাকা নেইনি। পরিবার এ বিষয়ে কিছুই জানতো না। কারণ তারা এগুলো সমর্থন বা পছন্দ করে না। প্রতি মাসের হাতখরচ থেকে টাকা জমিয়ে কয়েকমাস পর পর ভ্রমনে বের হতাম এবং এই কারণে আমার ভ্রমন শেষ করতে এতো বেশী সময় লেগেছে। তবে বন্ধুরা ও বড় ভাইয়েরা সবসময় উৎসাহ দিয়েছে। এমনও হয়েছে যে, তাদের নিকট থেকে আমি ধার করে এই ভ্রমন সম্পন্ন করেছি।

ভ্রমণকালে তিনি কিছু সামাজিক বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন। এগুলো হল: সন্তানকে শিক্ষা দানের গুরুত্ব, মাদকের ভয়াবহতা, ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের গুরুত্ব, পরিবেশ সচেতনতার ব্যাপারে গুরুত্ব, ভ্রমনের গুরুত্ব ও শিশু শ্রম বন্ধকরণ।

তার ভ্রমনের মাধ্যম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, বাংলাদেশের একমাত্র প্লেন বাদে সব পরিবহনে আমি ভ্রমন করেছি। যেমন: লোকাল বাস, ট্রেন, রিক্সা, টেম্পু মটরসাইকেল, অটোরিকশা, নৌকা, লঞ্চসহ ইত্যাদি।

আয়াতুল্লাহকে সাধুবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারীজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান জানান, "ভ্রমণ মানুষকে জ্ঞানে ও মননে সমৃদ্ধ করে" ! এই দর্শন কেউ কেউ আমরা শুনি মাত্র কিন্তু ধারণ করতে পারি না সমর্থ থাকা সত্বেও! কিন্তু কেউ কেউ আবার স্বল্প সমর্থকে নিজের প্যাশন দিয়ে সম্প্রসারিত করে ঐ দর্শন সাথে নিয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করেন। আমার জানা মতে আয়াতুল্লাহ সেই মনেরই একজন মানুষ, যে নিজেকে ও নিজের মনকে সমৃদ্ধ করে নিতে পেরেছেন, তাঁর নিজের ভালোবাসার বিষয়গুলোকে ৬৪টি জেলা ঘুরে ঘুরে দেখে ! এমন প্যাশনেট মানুষের মঙ্গল কামনা করাও সৌভাগ্যের বিষয় । এই প্যাশনেট পর্যটকের অগ্রযাত্রা চলতে থাকুক তাঁর জীবনকাল জুড়ে এই দোয়া করছি ।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দুইবার এগিয়ে গিয়েও জেতা হলো না মায়ামির

দুইবার এগিয়ে গিয়েও জেতা হলো না মায়ামির

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো