নির্বাচন আর রাজনৈতিক অস্থিরতায় দৃষ্টির আড়ালে বরিশাল অঞ্চলের ডেঙ্গু পরিস্থিতি
০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৫০ পিএম | আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৫০ পিএম
বরিশাল অঞ্চলের শুধু সরকারী হাসপাতালগুলোতে ভর্তিকৃত প্রায় ৩৮ হাজার ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে মৃত্যুর মিছিলে সংখ্যাটা ২শর কাছে পৌছেছে। এমনকি এখনো প্রতিদিনই সরকারী হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪শ। স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবেই এখনো ঢাকার পরে বরিশালেই ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশী। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিতরতা ও নির্বাচনী ডামাডোলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি অনেকটা দৃষ্টির আড়াল হচ্ছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকগন। বরিশাল অঞ্চলের সরকারী হাসপাতালগুলোতে অক্টোবরে প্রায় ৮ হাজার ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ৪৮ জনের মৃত্যুর পরে নভেম্বরেও ভর্তিকৃত আরো ৪ সহশ্রাধিকের মধ্যে মৃত্যুর মিছিলে ৪০ জনের নাম যোগ হয়েছে। এমনকি নভেম্বরের বেশ কয়েক দিনই দৈনিক ৪-৬ জনেরও মৃত্যু হয়েছে। যার বেশীরভাগই বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এমনকি নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেই ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বরিশাল অঞ্চলে।
এমনকি বিগত বছরগুলোতে সারা দেশের মত বরিশাল অঞ্চলে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রনে আসলেও এবছর ডিসেম্বরের শুরুতেও সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে ডেঙ্গু হানা দিচ্ছে। নভেম্বরের প্রথমভাগে প্রতিদিন ২শর ওপরে ডেঙ্গু রোগী সরকারী হাসপাতালে ভর্তি হলেও মাসের শেষভাগে তা কিছুটা কমে এসেছে। এর পেছনে অবশ্য গত ২৪ নভেম্বর বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র প্রভাবে প্রবল বর্ষণকে আশির্বাদ বলছেন স্বাস্থ্য বিভাগের অনকেই। তাদের মতে ঐ ঝড়ের প্রভাবে মাত্র ১২ ঘন্টায় বরিশাল মহানগরীতেই প্রায় ৩শ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। এত অল্প সময়ের টানা প্রবল বর্ষণে পুরো দক্ষিণাঞ্চলেই এডিস মশা ও তার লার্ভা ধুয়ে মুছে অনেকটাই সাফ হয়ে গেছে বলে মনে করছেন সিটি করপোরেশন সহ স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল মহলও। তবে মৃত্যুর মিছিল এখনো ক্রমশ দীর্ঘতর হচ্ছে।
অপরদিকে এ উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যে এখনো অন্তত তিনগুন ডেঙ্গু রোগী সরকারী হাসপাতালের বাইরে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানিয়েছেন। এমনকি এখনো ঢাকা ও চট্টগ্রামের পরে বরিশালেই ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেশী বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য বিভাগেরই একাধিক সূত্র।
গত ১ অক্টোবর পর্যন্ত দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার সরকারী হাসপাতাল গুলোতে ভর্তিকৃত প্রায় ২৫ হাজার ডেঙ্গু আক্রান্তের মধ্যে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছিলেন ২৩ হাজার ৫৯০ জন। কিন্তু ১৮ অক্টোবরই এ অঞ্চলের সরকারী হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যা ৩০ হাজার অতিক্রম করে। ঐদিন পর্যন্ত মৃত্যু হয় ১০২ জনের। যারমধ্যে ৭২ জনই বরিশালে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের সরকারী হাসপাতালগুলোতে ভর্তিকৃত ৩২ হাজার ৭৩২ জন রোগীর মধ্যে দেড়শ জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। আর ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আক্রান্ত সাড়ে ৩৭ হাজারের মধ্যে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় ৮ হাজার সহ বরিশাল জেলায়ই ভর্তিকৃত রেগীর সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার। যার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৫৫ জনের। মৃতের এ সংখ্যার মধ্যে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ১৫১ জন মারা গেছেন। এখনো শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটিতে মৃতদের বেশীরভাগই ভর্তির ২৪ থেকে ৩৬ ঘন্টার মধ্যে মারা যাচ্ছেন। পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে এ হাসপাতালেই মৃত্যুহার সর্বাধিক বলে স্বাস্থ্য বিভাগের পরিংখ্যান বলছে। কতৃপক্ষের দাবী, ‘সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের সর্বাধিক জটিল ও মুমূর্ষ রোগীদেরই এ হাসপাতালে পাঠান হচ্ছে।
অপরদিকে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ জেলাটিতে ভর্তিকৃত প্রায় ৮ হাজার ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। ভোলাতে প্রায় ৪ হাজার ভর্তিকৃত রোগীর মধ্যে ১০জন মারা গেছেন। পিরোজপুরে প্রায় ৭ হাজার ২শ ভর্তিকৃত রোগীর মধ্যে ১২ জনের মৃত্যুর কথা বলেছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর। বরগুনাতেও সরকারী হাসপাতাল গুলোতে ভর্তিকৃত প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ডেঙ্গু রোগীর ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর মাত্র ৪ উপজেলা নিয়ে গঠিত সবচেয়ে ছোট জেলা ঝালকবাঠীর সরকারী হাসপাতালগুলোতে ভর্তিকৃত সহশ্রাধিক ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ১ জনের মৃত্যুর কথা বলছে স্বাস্থ্য দপ্তর। তবে বরিশাল মহানগরীর পাশের এ জেলাটির সিংহভাগ রোগীই শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত এ হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নেয়া ও মৃত্যু বরনকারী রোগীদের একটি অংশই ঝালকাঠী জেলার বলে স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে।
অপরদিকে ইতোমধ্যে বরিশাল বিভাগের সরকারী হাসপাতালে ভর্তিকৃত প্রায় ৩৮ হাজার ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ৩৬,৭৯৩৭ হাজার সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন বলে স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে। শণিবার বরিশাল বিভাগের ২টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ৫টি জেনারেল হাসপাতাল ছাড়াও ৩৬টি উপজেলা হাসপাতাল সহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ৩শ। যা আগের মাসের এ সময়ের প্রায় অর্ধেক।
তবে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ‘মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু’র পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রনে আবারো মশক নিধনে নিবিড় কর্মসূচী গ্রহনের বিকল্প নেই’ বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল জানিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগের পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ঞ মন্ডল জানান, ‘এডিস মশা নির্মূল ছাড়া ডেঙ্গু থেকে পরিত্রানের কোন বিকল্প পথ চিকিৎসা বিজ্ঞানে আপতত নেই। বরিশাল সিটি করপোরেশন সহ বিভিন্ন পৌরসভা ও স্থানীয় সরকার প্রশাসনকে এ বিষয়টি বার বারই স্মরন করিয়ে দেয়া হচ্ছে’ বলে জানিয়ে তিনি ‘এ লক্ষ্যে সবাইকে আন্তরিক পদক্ষেপ গ্রহনের’ও অনুরোধ জানান।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঢাকার সাথে আর কোনও সমস্যা বাড়াতে চায় না নয়াদিল্লি: দ্য হিন্দু
সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার পথে সাগরে আটকা পড়া ৭২ পর্যটক উদ্ধার
‘ইন্ডিয়া’ থেকে কংগ্রেসের বহিষ্কার চায় কেজরিওয়ালের দল!
নরওয়েতে বাস দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত, গুরুতর আহত ৪
ঐক্য-সংস্কার-নির্বাচন নিয়ে জাতীয় সংলাপ শুরু আজ
ইহুদিদের ইউসুফ (আঃ)- এর সমাধিতে নিয়ে গেল ইসরায়েলি সেনারা
কাকরাইলে সাদপন্থিদের জমায়েত নিষিদ্ধ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
ইয়েমেনে ইসরাইলি হামলা, অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন ডব্লিউএইচও প্রধান
ইসরায়েলি হামলায় ইয়েমেন ও গাজায় ব্যাপক প্রাণহানি
হেলিকপ্টারে সফর নিয়ে বিতর্ক, ব্যাখ্যা দিলেন আসিফ মাহমুদ
কুমিল্লায় ছুরিকাঘাতে যুবক খুন
সচিবালয়ে আগুন: সংগ্রহ করা হলো সিসিটিভি ভিডিও
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বাশার আল-আসাদের স্ত্রী আসমা
টেস্ট ক্যারিয়ারের রেকর্ডময় ৩৪তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন স্মিথ
জাহাজে ৭ খুন : লাগাতার কর্মবিরতিতে পণ্যবাহী নৌযান শ্রমিকেরা
লেস্টার সিটিকে হারিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে লিভারপুল
ফের্নন্দেসের লাল কার্ডের দিনে ফের হারল ইউনাইটেড
শেষের গোলে জিতে চেলসির জয়রথ থামাল ফুলহ্যাম
পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং: ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন