ভোট চুরি আর দখলের মাস্টারমাইন্ড হাসিনার ভাতিজা উদ্ধত নিক্সন
২০ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২৪ এএম | আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২৪ এএম

২০১৪ সালের বিতর্কিত সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে নির্বাচিত মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরীর ছেলে এবং সাবেক চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটনের ছোট ভাই নিক্সন। তার শ্বশুর আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তিনি জাতীয় পার্টির (জেপি) নেতা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী ছিলেন।
শেখ পরিবারের এ সদস্য আগে কখনও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। শুধু শেখ পরিবারের সদস্য হওয়ায় ২০১৪ সালের নির্বাচনের মাত্র ১৯ দিন আগে শিবচরে এসে ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য হয়ে যান। ‘রাজনীতি না করলেও জনগণের ভালোবাসায়’ তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন- এমন তথ্য বিভিন্ন সভায় তিনি নিজেই গর্বের সঙ্গে জানান দেন।
তাকে ভাঙ্গায় এনে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক, ভাঙ্গা উপজেলা সদরের বাসিন্দা ও সদ্য সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন। ২০২০ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন নিক্সন। এ পদ দিয়েই সরাসরি আওয়ামী রাজনীতিতে প্রবেশ করেন তিনি।
সংসদ সদস্য হিসেবে রাজনৈতিক জীবন শুরুর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের নামে একটি পেজ খোলেন তিনি। শুরুর দিকে শামীম হাওলাদার নামের এক ব্যক্তি তার ভিডিওগুলো ফেসবুকে প্রকাশ করতেন। বিভিন্ন সভা-সমাবেশের ভিডিও ধারণ এবং তা এডিট করে নানা রঙ লাগিয়ে মানুষের সামনে উপস্থাপন করা হতো। ফেসবুকে এসব ভিডিও দেখে এলাকার লোকজনসহ প্রবাসীরাও তার ভক্ত হয়ে ওঠেন। সংসদে এমনকি বিভিন্ন সভা-সমাবেশে প্রবাসীদের পক্ষে ভালো ভালো কথা বলে তা নিজের ফেসবুক পেজে আপলোড দিয়ে তুমুল জনপ্রিয়তা পান নিক্সন। এসব ভিডিও মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ হয়।
প্রবাসী অধ্যুষিত ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসনের লোকজনের কাছে এভাবেই হিরো হয়ে ওঠেন নিক্সন। পাশাপাশি ঈদ ও কোরবানিতে নিজ বাড়িতে গরু-খাসি জবাই করে নেতাকর্মীদের ভূরিভোজ করাতেন। ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে গাড়িতে ঘুরে ঘুরে শাড়ি-লুঙ্গি বিতরণ করতেন। এগুলো ফেসবুকে ভিডিও ও পোস্ট আকারে প্রচার করতেন। ফলে দিনদিন বাড়তেই থাকে তার জনপ্রিয়তা।
কিন্তু কেউ কি জানতেন, ভালো ওই মুখের আড়ালে লুকিয়ে আছে মানুষরূপী এক অমানুষ! গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আস্তে আস্তে বের হতে থাকে নিক্সনের আসল রূপ।
নিক্সন চৌধুরী আগে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। কাওড়াকান্দি ঘাটের স্পিডবোট ও ট্রলারের চাঁদা ওঠাতেন তিনি। ২০১৪ সালে নিক্সন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরও পুলিশ-প্রশাসনের ওপর কর্তৃত্ব ছিল আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা কাজী জাফর উল্যাহর। টাকা-পয়সা দিয়ে, ভয়ভীতি দেখিয়ে তিন উপজেলার জাফর উল্যাহপন্থী বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও দলীয় নেতাদের নিজের কবজায় আনেন নিক্সন। কোণঠাসা হতে থাকেন কাজী জাফর উল্যাহ ও তাঁর অনুসারীরা। স্থানীয় বিভিন্ন নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন দিতেন জাফর। তাঁর বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে প্রশাসন ম্যানেজ, ভোট কারচুপি আর সহিংসতার পথ বেছে নিয়ে তাঁদের জিতিয়ে আনতেন নিক্সন। এসব কাজ করার জন্য তাঁর ছিল বিশাল এক মোটরসাইকেল বাহিনী।
প্রশাসন যখন নিক্সনের হাতিয়ার
২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি। কথা না শোনায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) দিয়ে গ্রেপ্তার করানো হয় জাফর উল্যাহর অনুসারী ও ভাঙ্গা উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ আরাফাতকে। গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের তৃতীয় তলার দপ্তরে আনা হয় তাঁকে। ওই রাতে তাঁর ওপর চলা কয়েক দফা নির্যাতনের ভিডিও পরে ভাইরাল হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, জীবন বাঁচাতে আরাফাত হাতজোড় করে মিনতি জানালে তৎকালীন ওসি (ডিবি) আহাদুজ্জামান আহাদ বলেন, ‘আমি তোদের লোক না। আমি নিক্সন চৌধুরীর লোক।’ এভাবেই ফরিদপুরের পুলিশ-প্রশাসন পছন্দের ব্যক্তিদের দিয়ে সাজান নিক্সন।
গালাগাল করতেন প্রতিপক্ষকে
দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, যখন যাঁকে প্রতিপক্ষ মনে করেছেন তাঁকেই বাক্যবাণে বিদ্ধ করতেন নিক্সন। কাজী জাফর উল্যাহ, সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র কাদের মির্জা (ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই), বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানাÑ কেউই তাঁর গালাগাল থেকে নিস্তার পাননি। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তাঁর প্রার্থীকে বিশেষ সুবিধা না দেওয়ায় মুঠোফোনে এক নারী ইউএনওকে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেন। ওই নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়ায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) অতুল সরকারকে রাজাকারসহ অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন নিক্সন। ওই ঘটনায় নির্বাচন কমিশন মামলা করলেও তার অগ্রগতি চোখে পড়েনি।
হাজার বিঘা জমি দখল
স্থানীয়রা জানায়, যে জমি পছন্দ হতো, তা আদায় করে ছাড়তেন নিক্সন। ভাঙ্গার আজিমনগরের ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামে তিনি যে বাগানবাড়িটি করেছেন সেটিও নামমাত্র টাকায় কেনা। মহাসড়কের কাছাকাছি এসব ফসলি জমি বিঘাপ্রতি তিনি পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকায় কিনে নেন, যার প্রকৃত মূল্য ছিল অন্তত তিন গুণ।
ভাঙ্গার সূর্যনগর বাসস্ট্যান্ড থেকে নিক্সনের বাগানবাড়ির দূরত্ব দুই থেকে তিন কিলোমিটার। এই পথে যেতে সড়কের দুই পাশে হাজারেরও বেশি বিঘা ফসলি জমি আর কিছু খাসজমিও দখলে নিয়েছেন তিনি। জায়গাটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘আয়মান আইল্যান্ড’।
এলাকাবাসী জানায়, জমি দখলে নিতে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখাতেন নিক্সন। তাদের বলা হতো, সেখানে হাসপাতাল হবে, পার্ক হবে ইত্যাদি। তারপর মহাসড়কের পাশে, পদ্মা সেতুর কাছাকাছি এই এলাকায় প্লট আকারে জমি বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন তিনি। আশপাশের দু-তিনটি পরিবারের সদস্যরা এই প্রতিবেদককে জানান, আয়মান আইল্যান্ডে তাঁদের জমি তো নিয়েছেনই, বসতবাড়িও চেয়েছিলেন। রাজনৈতিক পালাবদল না হলে হয়তো বাড়িও ছেড়ে দিতে হতো।
নিজ বাড়ি যখন সাবরেজিস্ট্রি অফিস
স্থানীয়রা জানায়, নিক্সন ও তাঁর ভাই লিখন চৌধুরীর যেসব জমি পছন্দ হতো, সেগুলো দলিল করে দিতে জমির মালিক রাজি না হলে মোটরসাইকেল বাহিনী লেলিয়ে দেওয়া হতো। জোর করে বালু ফেলে ভরাট করা হতো পছন্দের জমি। কাজটি করতেন নিক্সনের ভাই লিখন। এরপর জমির মালিকের কাছে ছবি চেয়ে নিয়ে দলিল তৈরি করে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রারকে বাড়িতে নিয়ে আসতেন নিক্সন। তাঁর বাড়িতেই নামমাত্র মূল্যে হতো দলিল রেজিস্ট্রি।
এখনো মুখ খুলতে চায় না স্থানীয়রা
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নিক্সন পলাতক। তবে তাঁর সীমাহীন অত্যাচারে এখনো শিউরে ওঠে স্থানীয়রা। তাঁর এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে কেউ সাহস পায় না। তাদের বক্তব্য, নিক্সনের অনেক টাকা। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভাতিজা। তিনি হয়তো সব কিছু ম্যানেজ করে আবার ভাঙ্গায় ফিরে আসবেন। আর ফিরে এলে মুখ খোলার কারণে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হতে পারে।
স্থানীয় বিভিন্ন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিপরীতে প্রার্থী দিয়ে তাদের জিতিয়ে আনতেন নিক্সন। এসব নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন দিতেন জাফর উল্ল্যাহ। সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচনে তিনি ও তার মনোনীত প্রার্থীদের জেতাতে সহিংস পথ বেছে নিতেন নিক্সন। টাকা-পয়সা দিয়ে প্রশাসন ম্যানেজসহ ভোট কারচুপির সুযোগ থাকলে তিনি সেটাই করতেন। টাকা-পয়সা কাজে না আসলে লেলিয়ে দিতেন নিজের সন্ত্রাসী বাহিনী। তার ছিল বিশাল এক মোটরসাইকেল বাহিনী। নিজ উপজেলা শিবচর থেকে সেই বাহিনী শোভাযাত্রা করে এসে বিভিন্ন কেন্দ্রে ঢুকে পড়ত। এরপর দেদারসে ভর্তি করত ব্যালট বক্স। কাউকে টার্গেট করলে তাকে তুলে আনা হতো এ বাহিনীর মাধ্যমে।
বিএনপিনেত্রী রুমিন ফারহানা এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের প্রতি ‘আসেন খেলা হবে’ বলে মন্তব্য করেন। জবাবে নিক্সন বলেন, ‘আপনি মহিলা মানুষ, আপনার সাথে খেললে ঘরে বউ ঢুকতে দেবে না। অশ্রাব্য বাক্যবাণে বিদ্ধ করতেন প্রতিপক্ষকে
দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, যখন যাকে প্রতিপক্ষ মনে করেছেন তাকেই অশ্রাব্য বাক্যবাণে বিদ্ধ করতেন নিক্সন। কাজী জাফর উল্ল্যাহকে তিনি বিভিন্ন সভায় ‘রাজাকার’ বলে সম্বোধন করতেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র কাদের মির্জাকে বলতেন ‘পাগল’। সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের উদ্দেশে বলতেন, ‘আপনার মতো কাগুজে বাঘ আমি সকাল-বিকাল নাশতা খাই’।
২০২০ সালের অক্টোবরে চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে তার প্রার্থীকে বিশেষ সুবিধা না দেওয়ায় মুঠোফোনে এক নারী ইউএনওকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন তিনি। এরপর ইউএনওকে হুঁশিয়ারি করে দিয়ে ভবিষ্যতে তার নেতাকর্মীদের কোনো কাজে বাধা দিলে হাত-পা ভেঙে দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেন। ওই নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়ায় ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) অতুল সরকারকে রাজাকারসহ অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন নিক্সন। অবশ্য ওই ঘটনায় নিক্সনের নামে একটি মামলা করে নির্বাচন কমিশন। তবে, মামলার খুব একটা অগ্রগতি চোখে পড়েনি।
মেজাজ খারাপ হলে কাউকেই ছাড় দিতেন না নিক্সন। দলীয় লোক হোক বা ইউপি চেয়ারম্যান, তাদের পরিবারের সামনে চরমভাবে অপমান-অপদস্থ করতেন তিনি। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সদরপুরে নিজের প্রার্থীকে জেতাতে শহিদুল ইসলাম নামের এক চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অস্ত্রের মুখে তুলে আনেন তার বাংলোবাড়িতে। এরপর তার ওপর অকথ্য নির্যাতন চালান
‘আয়মান আইল্যান্ড’ গড়তে হাজার বিঘা জমি দখল
২০১৪ সালে ভাঙ্গার রাজনীতিতে আবির্ভূত হন নিক্সন। এর আগেই শিবচরের দত্তপাড়া থেকে ভাঙ্গার রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আশা নিয়ে আজিমনগরের ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামে আবাস গড়ে তোলেন তার ভাই লিখন চৌধুরী। তবে, তিনি ভাঙ্গার রাজনীতিতে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। এরপর নিক্সন সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ব্রাক্ষণপাড়ায় ভাইয়ের বাড়িতে ওঠেন।
ব্রাহ্মণপাড়ায় তিনি গড়ে তোলেন সুবিশাল বাগানবাড়ি। নামমাত্র টাকায় জমি কিনে তিনি এটি নির্মাণ করেন। স্থানীয়রা জানান, যে জমি পছন্দ হতো তিনি তা আদায় করে ছাড়তেন। যেখানে তিনি বাগানবাড়িটি করেছেন সেটি ছিল ফসলি জমি। আড়িয়াল খাঁর তীরবর্তী এসব জমিতে পটল, ঢ্যাঁড়স, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গাসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ হতো। এসব জমি বিঘাপ্রতি তিনি তখন পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকায় কিনে নেন। মহাসড়কের কাছাকাছি হওয়ায় তখন ওইসব জমির প্রকৃত মূল্য ছিল অন্তত ১৪ থেকে ১৫ লাখ টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের কাছে সূর্যনগর বাসস্ট্যান্ড। বাসস্ট্যান্ড থেকে পশ্চিমে চলে গেছে একটি পাকা সড়ক। ওই সড়ক ধরে এগোলে মিলবে এমপি নিক্সনের বাংলোবাড়ি। সূর্যনগর থেকে নিক্সনের বাড়ির দূরত্ব আনুমানিক দুই থেকে তিন কিলোমিটার। এ পথে যেতে সড়কের দুই পাশে হাজারেরও বেশি বিঘা ফসলি জমি ভরাট করা হয়েছে। সরকারি কিছু খাস জমিও রয়েছে। সেগুলোও তিনি দখলে নিয়েছেন। সূর্যনগর থেকে ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামে যাওয়ার পথে অন্তত দেড় কিলোমিটার পথের দুই পাশ বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। জায়গাটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘আয়মান আইল্যান্ড’। ইট বিছিয়ে পুরো এলাকা যেন পরিপাটি করে সাজানো হয়েছে।
জমি দখলে নিতে স্থানীয়দের বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখাতেন নিক্সন। তাদের বলা হতো, সেখানে হাসপাতাল হবে, হবে পার্ক। মূলত জায়গাটি মহাসড়কের পাশে, পদ্মাসেতু ও ঢাকা শহরের কাছাকাছি হওয়ায় সেখানে বিশেষ অঞ্চল বানিয়ে প্লট আকারে জমি বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন তিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছিল প্লট ব্যবসার নামে জমি দখলের পরিধি। ওই এলাকার আশপাশে দুই-তিনটি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের অনেক জমিই ‘আয়মান আইল্যান্ডে’ দিতে হয়েছে। বসতবাড়িও তারা চেয়েছিল। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন না হলে হয়তো তাদের বসতবাড়িও ছেড়ে দিতে হতো।
জোর করে বালু ফেলে ভরাট করা হতো পছন্দের জমি। কাজটি করতেন নিক্সনের ভাই লিখন। এরপর জমির মালিকের কাছে ছবি চাওয়া হতো। সেই ছবি নিয়ে দলিল প্রস্তুত করে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রারকে বাড়িতে নিয়ে আসতেন নিক্সন। তার বাড়িতেই সম্পন্ন হতো দলিল রেজিস্ট্রির কার্যক্রম। যে জমির মূল্য ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকা, সেখানে জমির মালিককে দেওয়া হতো সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা। এ নিয়ে টু শব্দ করারও সুযোগ ছিল না।
এখনও ভয়ে মুখ খুলতে চান না স্থানীয়রা
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নিক্সন পলাতক রয়েছেন। কোথায় আছেন, এটা কেউ বলতে পারেন না। তবে, তার সীমাহীন অত্যাচার ও দুঃশাসনের এখনও শিউরে ওঠেন স্থানীয়রা। তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে কেউ সাহস দেখান না।
সম্প্রতি ওই এলাকা ঘুরে নিক্সনের বিষয়ে ক্যামেরার সামনে মুখ খুলবেন, এমন কাউকে পাওয়া যায়নি। পরিচয় গোপন করে যারাই কথা বলার চেষ্টা করেছেন, একটু-আধটু বলেই তারা থেমে যাচ্ছিলেন। পাশের আরেকজনকে বলতে অনুরোধ করছিলেন। তাদের বক্তব্য, ভাই নিক্সনের অনেক টাকা। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাতিজা। তিনি হয়তো সবকিছু ম্যানেজ করে আবার ভাঙ্গায় ফিরে আসবেন। আর ফিরে এলে মুখ খোলার কারণে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হতে পারে। এ কারণে সবাই চুপ আছেন।
এত বড় মাপের একজন নিপীড়ক ও ভূমিদস্যু, তার বিরুদ্ধে কেউ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। হাসিনা সরকারের রথী-মহারথীরা গ্রেপ্তার হচ্ছেন, অথচ তার কোনো খোঁজ মিলছে না। কাজী জাফর উল্যাহ গ্রেপ্তার হয়েছেন, অথচ নিক্সন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এটা কী বার্তা দেয়? সূত্র : কালেরকণ্ঠ
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

আবুধাবিতে খুন হন বিশ্বনাথে ফয়জুল

আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক এর ৪২১তম পরিষদ সভা অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে

সংস্কার চিরস্থায়ী কোনো বন্দোবস্ত নয়: রিজভী

পাওনা টাকা চাওয়ায় চার জনকে পিটিয়ে জখম--গ্রেফতার ১

প্রস্তুত রমনা বটমূল, গান-কবিতায় হবে বর্ষবরণ

গাজায় ইসরায়েলি নৃশংসতার প্রতিবাদে চাঁদপুরে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের বিক্ষোভ

১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিল করেছে সরকার

গত ২৪ ঘন্টায় বিশেষ অভিযানে ৩জনসহ আটক ২৫

অবশেষে বিটি মাটেই হচ্ছে কেরাণীগঞ্জে সর্ববৃহৎ বৈশাখী মেলা

খুনি হাসিনার দোসর শেখ বাদল এখনো অধরা

নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় বসাতে এত অনিহা কেন অন্তবতীকালীন সরকারের, জনগণ তা জানতে চায় - প্রিন্স

সুদানে আরএসএফের হামলায় শতাধিক নিহতের আশঙ্কা

সোনালী ব্যাংকের নতুন ডিএমডি হলেন মো. রেজাউল করিম

চার দিনের সম্মেলনে বিনিয়োগ এসেছে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার

সিংগাইরে আগুনে পুড়ে নিঃস্ব ২ পরিবার, পুড়লো গরু ও টাকা

অভিবাসীদের জন্য নতুন নিয়ম, গ্রিনকার্ড নিয়ে আরও কঠোর মার্কিন সরকার

বগুড়া চেম্বারে মতবিনিময় সভায় ইরানি রাস্ট্রদূত

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য ভান্ডার সংরক্ষণের জন্য 'সার্ভার স্টেশন' উদ্বোধন

সৌদি রাষ্ট্রদূতের কাছে পাঁচ মিলিয়ন ডলার দাবি করেছিল প্রতারক চক্র