যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই

Daily Inqilab সরদার সিরাজ

১১ মার্চ ২০২৩, ০৭:৪৫ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৭:৩৬ এএম

পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কায় আতংকিত হয়ে পড়েছে বিশ্ববাসী। পরমাণু বোমার অধিকারী যে কোনো একটি দেশ ভুল করেও বোমা ছুড়লে সাথে সাথে পরমাণু বোমার অধিকারী সব দেশ সব পরমাণু বোমা ছুড়বেই। উপরন্তু যার যে অস্ত্র আছে, তা ব্যবহার করবে। ফলে বিশ্ব ধ্বংস হয়ে যাবে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিণতি দেখার মতো কেউ বেঁচে থাকবে না। তবুও পরমাণু বোমা ব্যবহারের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন! রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াবকভও গত ২ মার্চ জেনেভায় নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনে বলেছেন, ইউক্রেনে সশস্ত্র সংঘর্ষে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর ক্রমবর্ধমান সম্পৃক্ততা বিপর্যয়কর পরিণতিসহ পারমাণবিক শক্তিগুলোর সরাসরি সামরিক সংঘর্ষের ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। সম্ভাব্য এই বিশ্বযুদ্ধের প্রথম কারণ হচ্ছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালায়। সাথে সাথে ইউক্রেন প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করে। শুরু হয়ে যায় দু’দেশের মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ। তাতে আমেরিকা ও তার মিত্র দেশগুলো (মোট ১৯টি দেশ) ইউক্রেনের পক্ষে ছায়াযুদ্ধে লিপ্ত হয়। রাশিয়া কোনো দেশের সহায়তা ছাড়া একাই যুদ্ধ করছে। এই ভয়াবহ যুদ্ধ দ্বিতীয় বর্ষে পদার্পণ করেছে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি। এ যুদ্ধের ফলাফল হচ্ছে, রাশিয়া আকাক্সক্ষানুযায়ী সমগ্র ইউক্রেন দখল করতে পারেনি, শুধু দনবাস এলাকা দখল করেছে। ইউক্রেনও রাশিয়ার দখলী এলাকার এক বিন্দুও পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। উপরন্তু বেদখলের এলাকা বেড়েই চলেছে। সর্বশেষে বাখমুত শহরও বেদখল হতে চলেছে। রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী গত ৪ মার্চ ইউক্রেনের যুদ্ধ এলাকায় রুশ সেনাদের সঙ্গে দেখা করে উৎসাহ দিয়েছেন। এছাড়া, যুদ্ধে দু’দেশেরই ব্যাপক জানমালের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ সর্বাধিক হয়েছে ইউক্রেনেরই। কারণ, মূল যুদ্ধ হচ্ছে ইউক্রেনেই। জাতিসংঘের মতে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের ৮০ লাখ মানুষ ঘর ছেড়েছে। যুদ্ধ ইউরোপেও সম্প্রসারিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বৈশ্বিক পণ্য সরবরাহ বন্ধ/বিঘিœত হওয়ায় বিশ্বব্যাপী পণ্যমূল্য আকাশচুম্বী হয়েছে। উপরন্তু নিষেধাজ্ঞা যুদ্ধ শুরু হয়েছে, যার ক্ষতি মূল যুদ্ধের চেয়ে কম নয়। এভাবে গত ৩ বছর যাবত বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারিসৃষ্ট বৈশ্বিক মহামন্দা আরো তীব্রতর হয়েছে। দারিদ্র ও বেকারত্ব বেড়েছে বিশ্বব্যাপী। সর্বোপরি এ যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্বযুদ্ধ বাঁধার উপক্রম হয়েছে। এমনকি পারমাণবিক যুদ্ধ পর্যন্ত। রাশিয়া ইতোমধ্যেই আমেরিকার সাথে সম্পাদিত পরমাণু অস্ত্র চুক্তি বাতিল করেছে এবং পারমাণবিক অস্ত্রের ভা-ার সম্প্রসারণ করার ঘোষণা দিয়েছে। আমেরিকা ও তার মিত্ররা ইউক্রেনকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। পশ্চিমা অনেক নেতা কিয়েভ সফর করে যুদ্ধে উৎসাহ দিয়েছেন, যার উদ্দেশ্য, যুদ্ধে রাশিয়াকে পরাস্ত, প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ক্ষমতাচ্যুত এবং দেশটিকে আর্থিকভাবে পঙ্গু করা। অবশ্য পশ্চিমাদের মনোবাসনার একটিও পূরণ হয়নি। যুদ্ধে রাশিয়া পরাজিত হয়নি, বীর দর্পে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। পুতিনের পতন হয়নি, বরং জনপ্রিয়তা বেড়েছে। রাশিয়ার বাণিজ্যও কমেনি, বরং বেড়েছে। অর্থনীতি পঙ্গু হয়নি। অন্যদিকে, রাশিয়ার জ্বালানি বন্ধ/হ্রাস পাওয়ায় সমগ্র ইউরোপে ত্রাহিভাব সৃষ্টি হয়েছে পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায়। আমেরিকারও একই অবস্থা হয়েছে। এ যুদ্ধ নিয়ে মিথ্যা প্রচারণাযুদ্ধও চলছে ব্যাপক। এ ক্ষেত্রে পশ্চিমারা এগিয়ে রয়েছে। এ অবস্থায় হঠাৎ করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন গত ১ মার্চ বলেন, ইউক্রেনযুদ্ধে চীন রাশিয়াকে অস্ত্র দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে। এটি বাস্তবায়ন করলে বেইজিংকে মারাত্মক পরিণতি বরণ করতে হবে। চীন এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি’র রাশিয়া সফরে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য জাতিসংঘের উদ্যোগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তবুও যুদ্ধ বন্ধ হয়নি। তবে, রাশিয়ার দখলকৃত কৃঞ্চসাগর দিয়ে পণ্য সরবরাহ নির্বিঘœ করার চুক্তি হয়ে বাস্তবায়িত হয়েছে। এ যুদ্ধে ইউক্রেনে পশ্চিমাদের যুদ্ধাস্ত্র বিক্রি বেড়েছে অনেক। চীন ও ভারত রাশিয়ার সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য পেয়ে অনেক লাভবান হয়েছে।

বর্তমান বিশ্বযুদ্ধ-ভাবের দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, আমেরিকা চীনের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ-ভাব সৃষ্টি করেছে। চীনের অনুমতি ছাড়াই তাইওয়ানে ব্যাপক আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দিচ্ছে। উপরন্তু আমেরিকা মাঝে-মধ্যেই তার মিত্র দেশগুলোকে নিয়ে চীন সাগরে সামরিক মহড়া চালাচ্ছে। সর্বোপরি তারা চীনের বিরুদ্ধে অনেক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া চীনের চিপ ব্যবসা কমাতে ফোরাম চালু করেছে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। তাইওয়ান চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে চীন বহুবার বলার পরও আমেরিকা তাইওয়ান নিয়ে যুদ্ধ বাঁধানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া, সম্প্রতি ফিলিপিনের সাথে সামরিক চুক্তি করেছে। আমেরিকার লক্ষ্য চীনকে চারদিক থেকে চেপে ধরে দুর্বল করা। এ অবস্থায় চীন-রাশিয়া ও অন্য দেশের সাথে চীন সাগরে সামরিক মহড়া চালাচ্ছে প্রায়ই। তারা আমেরিকার বিরুদ্ধে অনেক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

আমেরিকার নেতৃত্বে ন্যাটো, কোয়াড ও অকাস জোট রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য, একক পরাশক্তিত্ব অটুট রাখা। সে লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বারের মতো বিশ্ব গণতান্ত্রিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে, যা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৯-৩০ মার্চ ভার্চুয়ালি। তাতে ১১১টি দেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। চীন ও রাশিয়া আমেরিকার একক পরাশক্তিত্ব মানতে নারাজ। তাদের লক্ষ্য, মার্কিন নেতৃত্বাধীন একমেরুকেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করে বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এ ক্ষেত্রে তারা অনেকটা সফলও হয়েছে। তাদের পরাশক্তিত্বও প্রকাশিত হয়েছে। চীন ও রাশিয়ার সম্পর্ক খুবই গভীর হয়েছে। এছাড়া, আরো অনেক দেশের সাথে তাদের সম্পর্ক গভীর রয়েছে। তারা মিত্রদের নিয়ে মার্কিন বিরোধী একটি জোট গড়ারও চেষ্টা করছে। চীন বিশ্ব আধিপত্যবাদ বিরোধী সম্মেলন করার চেষ্টা করছে। তাতে রাশিয়ার সম্মতি রয়েছে। বিশ্বে মার্কিন আধিপত্যবাদ বিরোধী মনোভাব যত বাড়ছে, চীন-রাশিয়া বলয়ের পাল্লা তত ভারী হচ্ছে। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, ‘ইউরোপের জন্য আমেরিকাবিহীন নতুন ন্যাটো প্রয়োজন।’ স্মরণীয় যে, ২০২১ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে ১৯৩টি দেশের মানুষকে যুক্ত করে বিশ্বব্যাপী এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। তাতে আলোচকদের ৯০ শতাংশই বিশ্বের চলতি কমন সংকটগুলো বহুপাক্ষিকতাবাদের মাধ্যমে নিরসন করার আহ্বান জানান। তবুও আমেরিকা তার একক পরাশক্তিত্ব অটুট রাখার চেষ্টা করছে। ফলে বিশ্ব দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তরের ন্যায় স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়েছে। উভয় পক্ষই তাদের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে। ফলে সামরিক ব্যয় বাড়ছে। স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক প্রতিবেদন মতে, বিশ্বের শীর্ষ ১০০ প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানের অস্ত্র ও সামরিক সেবা বিক্রির পরিমাণ ২০২১ সালে ১.৯% বেড়ে ৫৯২ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। এর মধ্যে ৪০টিই মার্কিন মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। ২০২২ সালে সমরাস্ত্র বিক্রির পরিমাণ আরো বেড়েছে। এছাড়া, পরমাণু অস্ত্র রক্ষণা-বেক্ষণেরও ব্যয় বিপুল। ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু অ্যাবোলিস নিউক্লিয়ার এর ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন মতে, বিশ্বের নয়টি পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ ২০২১ সালে তাদের অস্ত্র পরিমার্জন করতে ৮২.৪ বিলিয়ন ব্যয় করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৮% বেশি। এ ব্যয় ২০২২ সালে আরো বেড়েছে! ২০২৩ সালেও বাড়ছে। চলতি বছরের জন্য সামরিক খাতে বাজেট ঘোষণা করেছে (মার্কিন ডলারে) চীন ২২৫ বিলিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র ৮০০ বিলিয়ন (বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক)। অন্য দেশগুলোও চলতি বছরে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি করছে।

২০২২ সালে প্রকাশিত সিপ্রি’র তথ্য মতে, পারমাণবিক বোমা আছে: রাশিয়ার ৬৩৭৫টি, আমেরিকার ৫৮০০টি, চীনের ৩২০টি, ফ্রান্সের ২৯০টি, যুক্তরাজ্যের ২১৫টি, পাকিস্তানের ১৬০টি, ভারতের ১৫০টি, ইসরাইলের ৯০টি, উত্তর কোরিয়ার ৩০-৪০টি। এছাড়া, ইরানও পারমাণবিক বোমা তৈরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। সর্বোপরি অনেক দেশের কাছে বহু হাইপারসোনিক যুদ্ধ বিমান ও পরমাণু বোমা বহনে সক্ষম হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। এছাড়া, অন্য সামরিক অস্ত্রের ও সেনার সংখ্যার অন্ত নেই। এ অবস্থায় বিশ্বযুদ্ধ বাঁধলে কী হবে তা আগেই বলা হয়েছে। তাই এ ক্ষেত্রে শুধু জাতিসংঘের মহাসচিবের অভিমত প্রণিধানযোগ্য। তিনি গত ১ আগস্ট জাতিসংঘে বলেন, ‘বিশ্ব এখন এমন একটি অবস্থায় রয়েছে যে, কোনো ভুল পদক্ষেপ হলেই পরমাণু যুদ্ধে সব নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তবুও পরাশক্তিত্ব জাহির করার লড়াই চলছে। চীন সম্প্রতি বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরমাণু হুমকির উৎস। ডেমোক্র্যাট রাজনীতিবিদ জিওফ ইয়ং বলেছেন, ওয়াশিংটন একটি পরমাণু যুদ্ধকে অবশ্যম্ভাবী করে তুলেছে। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারের স্থলে স্ব-স্ব মুদ্রা ব্যবহার করার প্রচেষ্টা চলছে। এটা সফল হলে মার্কিন ডলারের একক রাজত্ব খর্ব হবে।

বলা বাহুল্য, সামরিক ব্যয় বৃদ্ধিতে বেশিরভাগ দেশের মানবসম্পদের উন্নতি চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিশ্ব যুদ্ধ বাঁধলে তা পারমাণবিক যুদ্ধে পরিণত হয়ে সমগ্র বিশ্ব ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই যুদ্ধ নয়-শান্তি চাই কামনা বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ এবং রাশিয়াকে ইউক্রেন থেকে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি। এই প্রস্তাবের পক্ষে ১৪১টি দেশ পক্ষে, ৩২টি দেশ ভোটদানে বিরত থেকেছে এবং রাশিয়াসহ সাতটি দেশ বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। উপরন্তু ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা বন্ধ করার জন্য ইউরোপ ও আমেরিকায় প্রতিবাদ জোরদার হয়েছে। চীন ইউক্রেন সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের জন্য ১২টি প্রস্তাব দিয়েছে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র দুজারিক বলেছেন, ইউক্রেন সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের যে প্রস্তাব চীন দিয়েছে, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাঙ্গেরি ও বেলারুশ চীনের প্রস্তাব সমর্থন করেছে। গত ২ মার্চ ভারতের নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত জি-২০ এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে চীন-রাশিয়া ইউক্রেন ভূখ- থেকে সম্পূর্ণ ও নিঃশর্ত সেনা প্রত্যাহারে অসম্মত হলেও বাকি দেশগুলো ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে মত দিয়েছে। এ সম্মেলনে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রশ্ন করেছেন, ‘আপনারা কি কখনো আমেরিকা বা ন্যাটোর কাছে জানতে চেয়েছেন, তারা আফগানিস্তান, ইরাক, ইরানে কী করেছে?’ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গত ৪ মার্চ কাতারে জাতিসংঘের মহাসচিবের সাথে বৈঠকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে যত দ্রুত সম্ভব বিশেষ ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। অবশ্য, ইউক্রেন ও আমেরিকা চীনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। অন্যদিকে, ক্রেমলিনের মুখপাত্র পেসকভ গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বলেছেন, ইউক্রেনের সাথে তারা আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তবে রাশিয়া কখনও দখলকৃত অঞ্চল (দোনেতস্ক, লুহানস্ক, খেরসন এবং জাপোরিজঝিয়া) নিয়ে কোনো ছাড় দেবে না। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন গত ৩ মার্চ বলেছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে কোনো ধরনের দায়মুক্তি দেওয়া সম্ভব নয়।

যা’হোক, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ ও মানুষ ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে। তাই এই যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। আমেরিকার উচিত তাইওয়ান নিয়ে পানি ঘোলা না করে এক চীন নীতি মেনে চলা। ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বর্বরতা বন্ধ করে দু’রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধানের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। সর্বোপরি আমেরিকার একক পরাশক্তিত্ব ভাব ত্যাগ করে বিশ্বের সব সংকট জাতিসংঘের মাধ্যমে নিরসন এবং বিশ্বের সর্বত্রই শান্তি ও সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জাতিসংঘকে সংস্কার করে বিশ্ববাসীর আকাক্সক্ষা পূরণ করতে হবে, যার অন্যতম হচ্ছে: নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পদ বৃদ্ধি/পুনর্গঠন করে মুসলিম দেশের জন্য একটি ও আফ্রিকার জন্য একটি নির্ধারণ ও ভেটো পাওয়ার বাতিল করতে হবে। উপরন্তু যে দেশ নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত পালন করবে না, জাতিসংঘে তার সদস্য পদ বাতিল করার বিধান করতে হবে। সর্বোপরি সব দেশের সামরিক ব্যয় হ্রাস করে সে অর্থ গরিব দেশের মানব সম্পদ উন্নয়নে সহায়তা করতে হবে। ধনী দেশগুলোর উচিত হবে গরিব দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধ করা।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ছাত্র সংসদ এখন সময়ের দাবি
চ্যালেঞ্জের মুখে অর্থনীতি
সকলের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে
তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে
শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে
আরও

আরও পড়ুন

ভিনিসিয়ুসের লাল কার্ড,বেলিংহ্যামের পেনাল্টি মিসের পরেও রিয়ালের নাটকীয় জয়

ভিনিসিয়ুসের লাল কার্ড,বেলিংহ্যামের পেনাল্টি মিসের পরেও রিয়ালের নাটকীয় জয়

রিকেলটনের অনবদ্য ইনিংসে রান পাহাড়ের পথে দক্ষিণ আফ্রিকা

রিকেলটনের অনবদ্য ইনিংসে রান পাহাড়ের পথে দক্ষিণ আফ্রিকা

নাঈমুল ইসলাম ও তার পরিবারের ব্যাংক হিসাব ১৬৩টি, জমা ৩৮৬ কোটি

নাঈমুল ইসলাম ও তার পরিবারের ব্যাংক হিসাব ১৬৩টি, জমা ৩৮৬ কোটি

সবার ঐক্যমতে দ্রুতই হবে ডাকসু নির্বাচন : ঢাবি ভিসি

সবার ঐক্যমতে দ্রুতই হবে ডাকসু নির্বাচন : ঢাবি ভিসি

ডলার বেচাকেনায় ব্যবধান ১ টাকার বেশি নয়

ডলার বেচাকেনায় ব্যবধান ১ টাকার বেশি নয়

আবুবকর সরকার সভাপতি তুহিন হোসেন সাধারণ সম্পাদক

আবুবকর সরকার সভাপতি তুহিন হোসেন সাধারণ সম্পাদক

পীর ইয়ামেনী মসজিদের ইমাম মাওলানা এমদাদুলের ইন্তেকাল

পীর ইয়ামেনী মসজিদের ইমাম মাওলানা এমদাদুলের ইন্তেকাল

খতমে নবুওয়ত না মানলে ঈমান থাকবে না

খতমে নবুওয়ত না মানলে ঈমান থাকবে না

সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অহেতুক বিতর্ক না করে দ্রুত নির্বাচন দিন

সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অহেতুক বিতর্ক না করে দ্রুত নির্বাচন দিন

পান্থকুঞ্জে গাছ রক্ষা আন্দোলনকারীদের প্রতিবাদ সমাবেশ

পান্থকুঞ্জে গাছ রক্ষা আন্দোলনকারীদের প্রতিবাদ সমাবেশ

রেলপথে দুর্ঘটনা এড়াতে বাড়তি সতর্কতা

রেলপথে দুর্ঘটনা এড়াতে বাড়তি সতর্কতা

ডায়াবেটিস রোগীদের নিরাপদে রোজা রাখার উপায় জানালো এসিইডিবি

ডায়াবেটিস রোগীদের নিরাপদে রোজা রাখার উপায় জানালো এসিইডিবি

রাজনীতিতে অশুভ বিভাজনের পদধ্বনির আভাস পাওয়া যাচ্ছে

রাজনীতিতে অশুভ বিভাজনের পদধ্বনির আভাস পাওয়া যাচ্ছে

২ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের নিলাম মঙ্গলবার

২ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের নিলাম মঙ্গলবার

ঢাবি আইবিএ’র বিবিএ প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

ঢাবি আইবিএ’র বিবিএ প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

দিন-দুপুরে ধানমন্ডির সীমান্ত স্কয়ারে স্বর্ণের দোকানে চুরি

দিন-দুপুরে ধানমন্ডির সীমান্ত স্কয়ারে স্বর্ণের দোকানে চুরি

হাসিনাকে নিয়ে হাটে হাঁড়ি ভাঙলেন সোহেল তাজ

হাসিনাকে নিয়ে হাটে হাঁড়ি ভাঙলেন সোহেল তাজ

সংস্কার এবং নির্বাচন নিয়ে ঝগড়া বন্ধ করুন: মজিবুর রহমান মঞ্জু

সংস্কার এবং নির্বাচন নিয়ে ঝগড়া বন্ধ করুন: মজিবুর রহমান মঞ্জু

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের মেয়াদ ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের মেয়াদ ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে

পাঠ্যবইয়ে হান্নান-সেজানের সাহসিকতার গল্প

পাঠ্যবইয়ে হান্নান-সেজানের সাহসিকতার গল্প