বাঁধ রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে
০২ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:২৭ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৪০ এএম
পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা প্রভৃতি নদীর ভাঙন থেকে গ্রাম, জনপদ, স্থাপনা ও ফসলাদি রক্ষার জন্য যেসব বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে, তাতে ভাঙনের আশংকা দেখা দিয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক ইনকিলাবে। খবরটি যে অত্যন্ত উদ্বেগজনক, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নদী ভাঙন আমাদের দেশে কোনো নতুন ঘটনা নয়। প্রতি বছরই নদী ভাঙনে বাড়িঘর, স্কুল-মাদরাসা-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, সহায়-সম্পদ, খেত-খামার, বৃক্ষ-বন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। অসংখ্য মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে পথের ফকিরে পরিণত হয়। নদী ভাঙন প্রাকৃতিক কারণজাত। তবে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হলে ক্ষয়ক্ষতি প্রতিহত করা বা কমানো অসম্ভব নয়। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের ৪০টি জেলার অন্তত ৩৫০টি উপজেলায় বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়ার আশংকা করা হচ্ছে। ভাঙন রুখতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া না হলে বাঁধ তো যাবেই, অসংখ্য গ্রাম-জনপদ নদীগর্ভে হারিয়ে যেতে পারে। ইতোমধ্যে কোনো কোনো বাঁধে ভাঙন শুরু হয়েছে। বাঁধগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের ব্যবস্থা করা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ। বোর্ড এ কাজটি যে ঠিকমত করেনি বা করতে পারেনি, বাঁধে ভাঙনের আশংকা বা ভাঙন তারই সাক্ষ্য বহন করে। বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ সংস্কারে প্রকল্প নেওয়া হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড কোথাও কাজ শুরু করতে পারেনি, কোথাও শুরু করলেও শেষ করতে পারেনি। নদী ভাঙনরোধ ও বেড়িবাঁধ সংস্কার নিয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে সচিবের নেতৃত্বে গত বৃহস্পতিবার স্ট্যান্ডিং কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক ওই সভা সম্পর্কে বলেছেন, তারা নদী ভাঙন রোধ ও বেড়িবাঁধ সংস্কার নিয়ে আলোচনা করেছেন। সভা ও আলোচনার মধ্যে দায়িত্ব সীমায়িত হবে না, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ভাঙনরোধক প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করতে হবে। সামনের দিনগুলোতে প্রবল কালবৈশাখী, বজ্রবৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টির আশংকা ব্যক্ত করেছেন আবহাওয়াবিদরা। ফলে আগামীতে পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গত ৩০ বছরে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা অববাহিকার নদীগুলোতে ১৫ শতাংশ হারে পানিপ্রবাহ বাড়ছে। নদী ভাঙন বেড়ে যাওয়ার এটা একটা কারণ হতে পারে। পানি বৃদ্ধির এই ব্যাপারটি বর্ষা মওসুমেই লক্ষ করা যায়। বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিই এই পানিপ্রবাহ বৃদ্ধির মূল কারণ। গত ৩০ বছরে নদীর পানি ধারণ ক্ষমতাও ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এ অবস্থায় বর্ষায় যখন পানির পরিমাণ ও চাপ বাড়ে এবং নদী তার বক্ষে তা ধারণ করতে পারে না। তখন বন্যা ও ভাঙন একসঙ্গে আঘাত হানে। বিপরীত চিত্র দেখা যায় শুকনো মওসুমে। শুকনো মওসুমে এমনিতেই নদীতে পানি কমে যায়। তার ওপর উজান থেকে ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারেরর কারণে নদী প্রায় পানিশূন্য হয়ে পড়ে। এ সময়ও নদী আরেক দফা ভাঙনের তা-ব চালায়। সুতরাং বান-বন্যা ও নদী ভাঙন থেকে রেহাই পেতে হলে আমাদের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, উপকূল রক্ষা বাঁধ, হাওর রক্ষা বাঁধ, ফসল রক্ষা বাঁধ ইত্যাদি অত্যন্ত টেকসইভাবে বানানোর বিকল্প নেই। শুধু বানালেই হবে না, সব ধরনের বাঁধের নজরদারি-তদারকি নিয়মিত ও চলমান রাখতে হবে। সময় মতো সংস্কার মেরামত করতে হবে। পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে, খুলনার উপকূলীয় এলাকায় বেড়িবাঁধগুলো এখনো সংস্কার করা হয়নি। বাঁধের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। ঝড়বৃষ্টি-জলোচ্ছ্বাস হলে বাঁধগুলো হুড়মুড়িয়ে ভেঙ্গে পড়বে। সেখান দিয়ে পানি ঢুকবে গ্রাম-জনপদে এবং আবাদ-উৎপাদনের খেতে। সব কিছু বিনাশ ও তছনছ হয়ে যাবে। আরেক খবরে বলা হয়েছে, সুনামগঞ্জ জেলার ৫৪টি হাওরের ১ হাজার ৭৮টি ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে ২০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও বাঁধের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি। আগাম বৃষ্টি ও উজান থেকে ঢল নামলে হাওরের একমাত্র ফসল বোরো রক্ষা করা যাবে না। ২০১৭ সালে এ জেলার হাওরে আগাম বন্যায় বোরো প্রায় সর্বাংশে ধ্বংস হয়ে যায়। হাওর এলাকার অধিবাসীরা সম্পূর্ণ অসহায় ও নিরালম্ব হয়ে পড়ে।
আমাদের দেশে এটা রীতিমত ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে, যে কোনো বাঁধ নির্মাণ বা সংস্কারের কাজ যথাসময়ে শুরু হবে না, শেষও হবে না। অর্থছাড়ে গড়িমসি বা বিলম্ব হবে অবধারিত। টাকা না পেলে প্রকল্পের কাজ ঠিক সময়ে শুরু হবে কীভাবে? যথসময়ে শুরু না হলে শেষই বা হবে কীভাবে? এখানে সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারের একটা ঘোঁট আছে। কাজে ধীরগতি ও বিলম্ব করাই তাদের উদ্দেশ্য। কাজ সাধারণত শুকনো মওসুমে শুরু ও শেষ করার কথা। সরকারিভাবেও সেটাই বলা হয়। কিন্তু সরকারের নির্দেশ-নির্দেশনা যে কোনো অজুহাতে উপেক্ষা করা হয়। প্রকল্পের কাজ টেনে নেয়া হয় বর্ষকাল পর্যন্ত। বর্ষায় মাটির কাজ মাটি হয়ে যায়। তাতে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারদের কোনো ক্ষতি হয় না। লাভই হয়। কাজ না করেও বিল তুলে ভাগ-বণ্টন করা যায়। এই ভাগ-বণ্টন যতদিন বন্ধ না হবে ততদিন বাঁধের কাজ ভালোভাবে বা মানসম্পন্নভাবে নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে, এমনটা আশা করা কঠিন। সরকার কঠোর না হলে, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে এ অবস্থার পরিবর্তন হবে না। আমরা আশা করবো, সব ধরনের বাঁধের কাজ যত দ্রুত সম্ভব শেষ করার বিষয়ে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। মনে রাখতে হবে, ভাঙনের আশংকা থেকে বাঁধগুলো যতটা মুক্ত করা যাবে, গ্রাম-জনপদ, শস্যক্ষেত্র, সম্পদ-স্থাপনা ততটাই নিরাপদ হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের কাছে ক্ষমা না চাইলে ভিপি নুরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
বগুড়ায় মেয়েকে হত্যা করে মায়ের আত্মহত্যা, চিরকুট উদ্ধার
বিবাহ বিভ্রাটে তৌহিদ আফ্রিদি, স্যোশ্যাল মিডিয়ায় শালিকা নিয়েছে বউয়ের অবস্থান
বিদেশি হস্তক্ষেপে বিগত সরকার ফ্যাসিস্টে পরিণত হয়েছিলো : আসিফ নজরুল
মাদক নির্মূলে কঠোর অবস্থানের ঘোষনা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
নারায়ণ চন্দ্রকে আদালত চত্বরে ডিম নিক্ষেপ
সেই কবি এবার ৬৯ বছর বয়সে এইচএসসি পাস করলেন
ফিলিপাইনে টাইফুন উসাগির আঘাত
যশোরে ছুরিকাঘাত করে নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় মামলা
চুয়াডাঙ্গার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হলেন যশোরের বিচারক শিমুল
জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবে ছাত্র-জনতার অন্যতম লক্ষ্য ছিল একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠন : ভূমি উপদেষ্টা
২০ হাজার ওমরাযাত্রী অনিশ্চয়তায়, ওমরাহ টিকিটে এক লাফেই ১৭ হাজার টাকা বৃদ্ধি
সংষ্কার কাজ দ্রুত শেষ করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন -মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম
কটিয়াদীতে যুবকের লাশ উদ্ধার, স্ত্রী আটক
বেনাপোল বন্দরে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল উদ্বোধন করলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন, কমবে ভোগান্তি, বাড়বে বাণিজ্য
যশোর বোর্ডে এইচএসসিতে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন ৬৬ হাজার, পরিবর্তন ৭১ জনের
আইএইচএফ ট্রফির বাছাইপর্বে অংশ নিবে ইয়ুথ ও জুনিয়র হ্যান্ডবল দল
ফের কমলো সোনার দাম
সাফজয়ী দলকে আর্থিক পুরস্কার দিল সাউথ ইস্ট ব্যাংক
২৪২ সদস্যবিশিষ্ট ঢাবি ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ