ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হোক
০৩ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:০১ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৩৫ পিএম
ঈদযাত্রায় ভোগান্তি প্রতিবছরেরই সাধারণ ঘটনা। সব দেশেই ধর্মীয় উৎসব-অনুষ্ঠান উপলক্ষে জনস্থানান্তর হয়ে থাকে। কিন্তু কোথাও যাতায়াতের কোনো অসুবিধা হয় না। ব্যতিক্রম আমাদের দেশ। আমাদের দেশে ঈদকে কেন্দ্র করে শহর থেকে গ্রামে, এক শহর থেকে আরেক শহরে লোকের-মানুষের যে সাময়িক স্থানান্তর ঘটে, তাতে দুর্ভোগ-বিড়ম্বনার শেষ থাকে না। ঈদে প্রিয়জনদের সঙ্গে মিলিত হওয়া, তাদের নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করা আমাদের একটা ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। অথচ, প্রতি বছর ঈদযাত্রা নিয়ে মানুষের দুশ্চিন্তার অবধি, অনিশ্চয়তার শেষ থাকে না। কী সড়ক, কী রেল, কী নৌÑ কোনো পথেই ঘরে ফেরা সহজ নয়, স্বস্তিদায়ক নয়। সবচেয়ে বেশি সমস্যা ও দুর্ভোগ হয় সড়ক পথে। যানজট সড়কে বড় সমস্যা। কোথাও রয়েছে ফেরি পারাপারে সমস্যা ও সময়ক্ষেপণ। সড়কে অনিরাপত্তা ও দুর্ঘটনার আশংকাও ষোলআনা। এবারের ঈদে এসব সমস্যা-সংকট প্রকট রূপ নিতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। রাজধানী থেকে প্রতি ঈদে অন্তত এক কোটি মানুষ গ্রামে বা অন্যত্র যায়। সারাদেশে জনস্থানান্তর হয় আরো অন্তত চার কোটি। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, এবারও সড়ক-মহাসড়কগুলোতে দীর্ঘ যানজটের আশংকা করছে সংশ্লিষ্টরা। রাজধানী থেকে বের হওয়ার সড়কগুলোতেও ভয়াবহ যানজটের দেখা মিলতে পারে। যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, গাবতলী, বাবুবাজার প্রভৃতি প্রবেশস্থল অতিক্রম করাই কঠিন হয়ে উঠতে পারে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চলছে উন্নয়ন কাজ। এতে সড়কগুলো সংকুচিত, খানাখন্দপূর্ণ ও ভাঙ্গাচোরা হয়ে আছে। ঈদের আগে যখন জনচলাচল বাড়বে, বাড়বে যানবাহনের সংখ্যা, তখন পুরো রাজধানীই প্রায় অচল হয়ে যাবে। তখন রাজধানী থেকে বের হতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হয়ে যাবে। মহাসড়কেও যানজটের বিড়ম্বনা থেকে রেহাই মিলবে না। গত কয়েক দিন ধরে ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার যানজট লেগে থাকতে দেখা যাচ্ছে। এটা ঈদের সময় যে আরো ভয়ংকর রূপ নেবে, তা সহজেই অনুমান করা যায়।
যানজট সৃষ্টির কারণের অভাব নেই। রাজধানীতে সারাবছর ধরে সড়কে কাটাকাটি চলছে। কাটার পর মেরামত না করে ফেলে রাখা হচ্ছে। অন্যদিকে মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে বছরের পর বছর। ফলে প্রসারিত, মসৃণ ও সুশ্রী সড়ক বলতে যা বুঝায়, তার দেখা মেলা প্রায় অসম্ভব। সড়ক যাতায়াতের উপযোগী না হলে, অপ্রশস্ত হলে, হকারসহ দখলদারদের কবলে থাকলে এবং যানবাহনের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি হলে যানজট হবেই। অন্যদিকে সড়ক-মহাসড়কগুলোতে দখল, হাটবাজার, যানবাহনস্ট্যান্ড, ধীরগতির নিষিদ্ধ ঘোষিত যান চলাচল ইত্যাদির কারণে যানজট নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যানজট সহনীয় পর্যায়ে স্থিতিশীল করতে হলে রাজধানীতে খোঁড়াখুড়ি এখনই বন্ধ করতে হবে, চলমান কাজ দ্রত শেষ করতে হবে অথবা বন্ধ রাখতে হবে, ভাঙ্গাচোরা সড়ক মেরামত করতে হবে, ফুটপাত ও রাস্তা দখলমুক্ত রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে সড়ক-মহাসড়কগুলোতে অযান্ত্রিক, ধীরগতির ও নিষিদ্ধঘোষিত যান চলাচল ডেডস্টপ করতে হবে, হাটবাজার ও সব রকম অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে হবে। এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। এয়ারপোর্ট থেকে টঙ্গী ও গাজীপুর সড়ক ভাঙ্গা। এ রকম আরো সড়ক নির্মাণাধীন থাকতে পারে। আরো সড়ক ভাঙ্গাচোরাও থাকতে পারে। বলা বাহুল্য সড়ক নির্মাণের কাজ তো আর এ সময়ে শেষ করা যাবে না। এক্ষেত্রে বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা করা যেতে পারে যদি সেই সড়ক থাকে এবং সম্ভব হয়। ভাঙ্গাচোরা সড়ক দ্রুত যান চলাচলের উপযোগী করার মতো মেরামত যত শিগগির সম্ভব করা যেতে পারে।
ঈদযাত্রায় আরো ভোগান্তি আছে। দূরপাল্লার বা আন্তঃজেলা বাসের টিকিট নিয়ে প্রতি বছর যাত্রী-সাধারণের সমস্যায় পড়তে হয়। টিকিট চাইলেই পাওয়া যায় না। কালোবাজারে চলে যায়। কালোবাজার থেকে টিকিট কিনতে দুই-তিন গুণ বেশি টাকা গুণতে হয়। এর অবসান হওয়া দরকার। ঈদের সময় সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যা এত বেশি থাকে যে, কেউ কোনো নিয়ম মানতে চায় না। কে আগে যাবে, এই প্রতিযোগিতা চলে। আর এই প্রতিযোগিতার অন্যতম দুঃখজনক পরিণতি হলো দুর্ঘটনা। প্রতি বছর ঈদের সময় সড়ক দুর্ঘটনা অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি ঘটে এবং অধিক সংখ্যক হতাহতের ঘটনাও ঘটে। যানজট ও দুর্ঘটনা কমাতে যানবাহনের মালিক ও চালকদের ভূমিকা উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না। তারা সতর্ক ও সাবধান হলে এ দুটোই কমতে পারে। ট্রাফিকবিধি যথাযথভাবে মান্য করলে সড়কের বিপদ-বিড়ম্বনা হ্রাস পেতে পারে স্বাভাবিকভাবেই। নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক যাতায়াত নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে হাইওয়ে পুলিশ, থানাপুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা প্রশ্নাতীত। তারা সক্রিয় ও কর্তব্যপরায়ণ হলে যানজট, দুর্ঘটনা, ডাকাতি, রাহাজানি ইত্যাদি অনেক কমে আসতে পারে। আমরা আশা করবো, সড়ক ও যানবাহন ব্যবস্থাপনা সুচারু করার মাধ্যমে ঈদযাত্রা স্বস্তিকর ও আনন্দদায়ক করতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ একটি সমন্বিত কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের কাছে ক্ষমা না চাইলে ভিপি নুরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
বগুড়ায় মেয়েকে হত্যা করে মায়ের আত্মহত্যা, চিরকুট উদ্ধার
বিবাহ বিভ্রাটে তৌহিদ আফ্রিদি, স্যোশ্যাল মিডিয়ায় শালিকা নিয়েছে বউয়ের অবস্থান
বিদেশি হস্তক্ষেপে বিগত সরকার ফ্যাসিস্টে পরিণত হয়েছিলো : আসিফ নজরুল
মাদক নির্মূলে কঠোর অবস্থানের ঘোষনা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
নারায়ণ চন্দ্রকে আদালত চত্বরে ডিম নিক্ষেপ
সেই কবি এবার ৬৯ বছর বয়সে এইচএসসি পাস করলেন
ফিলিপাইনে টাইফুন উসাগির আঘাত
যশোরে ছুরিকাঘাত করে নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় মামলা
চুয়াডাঙ্গার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হলেন যশোরের বিচারক শিমুল
জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবে ছাত্র-জনতার অন্যতম লক্ষ্য ছিল একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠন : ভূমি উপদেষ্টা
২০ হাজার ওমরাযাত্রী অনিশ্চয়তায়, ওমরাহ টিকিটে এক লাফেই ১৭ হাজার টাকা বৃদ্ধি
সংষ্কার কাজ দ্রুত শেষ করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন -মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম
কটিয়াদীতে যুবকের লাশ উদ্ধার, স্ত্রী আটক
বেনাপোল বন্দরে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল উদ্বোধন করলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন, কমবে ভোগান্তি, বাড়বে বাণিজ্য
যশোর বোর্ডে এইচএসসিতে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন ৬৬ হাজার, পরিবর্তন ৭১ জনের
আইএইচএফ ট্রফির বাছাইপর্বে অংশ নিবে ইয়ুথ ও জুনিয়র হ্যান্ডবল দল
ফের কমলো সোনার দাম
সাফজয়ী দলকে আর্থিক পুরস্কার দিল সাউথ ইস্ট ব্যাংক
২৪২ সদস্যবিশিষ্ট ঢাবি ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ