শুল্কের ফয়সালা না করেই আদানির বিদ্যুৎ আমদানি
০৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:৩৮ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৫৬ পিএম
ভারতের আদানি গ্রুপের আদানি পাওয়ার লিমিটেডের গোড্ডা ঝাড়খ- প্ল্যান্ট থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিদ্যুৎ আমদানির যে চুক্তি করেছে, সেই চুক্তি মোতাবেক বিদ্যুৎ আমদানি বাণিজ্যেকভাবে শুরু হয়েছে গত শুক্রবার থেকে। ৯ মার্চ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ আমদানি চলছিল। শুক্রবার বাণিজ্যেকভাবে আমদানি চালু হলেও এখনো শুল্ক সংক্রান্ত সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। এটা ঝুলিয়ে রেখেই আমদানির কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সুপরিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার (এনার্জি অডিট) এর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কারিগরি দলের পরিদর্শনের পর আমদানির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট সূত্রটি বার্তাসংস্থা ইউএনবিকে জানিয়েছে, কারিগরি দলটি মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে ভারতে গিয়েছিল এবং এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ফিরে এসেছে প্রায় ১০ দিন গোড্ডা ঝাড়খ- প্ল্যান্টে অবস্থান করে। সূত্রমতে, তারপরও শুল্কের বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়নি। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানোর পর আদানি পাওয়ার কয়লার দাম কমানোর প্রস্তাব দেয়। তবে সেটা কার্যকর হয়নি। আদানি আইসিআই-৫০০ কয়লার জিএআর ব্যবহার করে, যা নি¤œমানের। অথচ আইসিআই ৬৫০০-এর জিএআর উদ্ধৃত করতে চায়। বলা বাহুল্য, নি¤œমানের কয়লা দিয়ে উচ্চমানের কয়লার জিএআর ব্যবহার করে বেশি দাম আদায় নিঃসন্দেহ অনৈতিক। আদানি কয়লার মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সূত্রে আটকে থাকে না, যা বাংলাদেশের জন্য সমস্যাযুক্ত। কারণ, প্রতি মাসেই শুল্ক ইস্যুতে আদানির সঙ্গে আলোচনা করতে হবে, যা বাংলাদেশের জন্য কাম্য নয়। ইতোপূর্বে আদানির একটি উচ্চ পর্যায়ের দল ঢাকায় এসে তার বাংলাদেশ প্রতিপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শেষে দেশে ফিরে গেছে। দলটি আদানির শীর্ষ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরবে। দলটি পরে ফলোআপ বৈঠকে বসবে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও আদানি পাওয়ার লিমিটেডের মধ্যে স্বাক্ষরিত বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তিটি নিরপেক্ষ পর্যালোচনায় একপাক্ষিক স্বার্থনিশ্চিতকারী, ত্রুটিপূর্ণ, অগ্রহণযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিষয়টি বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় ঝড় তুললে বাংলাদেশ সরকার প্রমাদ গুণতে বাধ্য হয়েছে। এটি আমাদের দেশেই শুধু রাজনৈতিক ও বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে আলোচনায় আসেনি, ভারতেও মিডিয়া, বিরোধী রাজনৈতিক মহল, এমনকি সংসদেও আলোচ্য বিষয় হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের তরফে অবশেষে চুক্তির সংশোধন, কয়লার যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ, শুল্ক নির্দিষ্টকরণ ইত্যাদির দাবি জানানো হয়েছে। এসব নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও কারিগরি পর্যায়ে আলোচনা চালু হলেও কবে নাগাদ উভয় পক্ষের সমস্বার্থ নিশ্চিত করে সিদ্ধান্ত ও কার্যব্যবস্থা সম্পন্ন হবে, কেউ বলতে পারে না। পর্যবেক্ষকদের মতে, বিরোধ ও সমস্যাগুলোর ফয়সালা না করে বিদ্যুতের বাণিজ্যিক আমদানি প্রক্রিয়া শুরু করা ঠিক হয়নি। এতে বিরোধ-সমস্যা প্রলম্বিত হতে পারে, যা কোনোভাবেই সঙ্গত হতে পারে না। ভারতে আদানিকা- শুরু হলে, একের পর এর গোমর ফাঁক হতে থাকলে তখন আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তির ওপর বিশেষভাবে আলোকপাত হয়। জানা যায়, চুক্তির নানা ফাঁক ও প্রতারণার দিক। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিদ্যুৎ কোম্পানির সঙ্গে ক্রয়চুক্তি করার সময় ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়ার বিধান রাখা হয়, যা অযৌক্তিক ও সরকারি অর্থের মারাত্মক অপচয় হিসেবে গণ্য। সরকার বিদ্যুৎ কিনুক বা না কিনুক, উচ্চহারে ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়ে যেতে হবে। এখাতে এখন প্রতি বছর সরকারের প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়। এই ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়ার বিধান আদানি পাওয়ারের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিতেও যুক্ত করা হয়েছে। ২৫ বছরে এবাবদ বাংলাদেশকে দিতে হবে এক লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। আদানি পাওয়ারের গোড্ডা ঝাড়খ- প্ল্যান্টের জন্য যত কয়লা আমদানি করতে হবে তার মূল্য বাংলাদেশকেই দিতে হবে। কয়লা আমদানির মূল্যও ধরা হয়েছে অন্তত ৪৫ শতাংশ বেশি। এই দাম গুণেই অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা কিনতে হবে।
ব্যবসা-বাণিজ্যে, আমদানি-রফতানি ইত্যাদি যা কিছুই হোক, সুনির্দিষ্ট চুক্তি বা নীতিমালার ভিত্তিতেই হয়ে থাকে। আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তিও সে রকমই একটি চুক্তি। কিন্তু এই চুক্তির প্রকৃতি ও ধরন আলাদা। মনে হয়, আদানির লোকেরা চুক্তিটি তৈরি করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টদের হাতে দিয়েছেন আর তারা না দেখে না জেনে, তাতে সই করে দিয়েছেন। তা না হলে এরকম অন্যায্য, একদেশদর্শী ও প্রতারণামূলক চুক্তি হতে পারে কীভাবে? টিআইবি এই চুক্তির ফলে দেশের বিদ্যুৎখাত আদানির হতে জিম্মি হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে। কনজ্যুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)’র জ্বালানি উপদেষ্টা চুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। তিনি দেশে মজুত কয়লা উত্তোলন করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালানোর তাকিদ দিয়েছেন। এ ধরনের প্রশ্নসাপেক্ষ, বিতর্কিত, ত্রুটিপূর্ণ ও পরিত্যাগযোগ্য চুক্তি মাথায় নিয়েই বিদ্যুৎ আমদানির বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালু হয়েছে। আমরা আশা করবো, সরকার চুক্তির সংশোধনসহ যেসব বিষয় দেশের স্বার্থের প্রতিকূলে যায়, তা নিষ্পত্তির জোর চেষ্টা চালাবে। দ্রুতই এটা করতে হবে। অন্যথায় চুক্তি বাতিলের বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় নিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের কাছে ক্ষমা না চাইলে ভিপি নুরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
বগুড়ায় মেয়েকে হত্যা করে মায়ের আত্মহত্যা, চিরকুট উদ্ধার
বিবাহ বিভ্রাটে তৌহিদ আফ্রিদি, স্যোশ্যাল মিডিয়ায় শালিকা নিয়েছে বউয়ের অবস্থান
বিদেশি হস্তক্ষেপে বিগত সরকার ফ্যাসিস্টে পরিণত হয়েছিলো : আসিফ নজরুল
মাদক নির্মূলে কঠোর অবস্থানের ঘোষনা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
নারায়ণ চন্দ্রকে আদালত চত্বরে ডিম নিক্ষেপ
সেই কবি এবার ৬৯ বছর বয়সে এইচএসসি পাস করলেন
ফিলিপাইনে টাইফুন উসাগির আঘাত
যশোরে ছুরিকাঘাত করে নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় মামলা
চুয়াডাঙ্গার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হলেন যশোরের বিচারক শিমুল
জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবে ছাত্র-জনতার অন্যতম লক্ষ্য ছিল একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠন : ভূমি উপদেষ্টা
২০ হাজার ওমরাযাত্রী অনিশ্চয়তায়, ওমরাহ টিকিটে এক লাফেই ১৭ হাজার টাকা বৃদ্ধি
সংষ্কার কাজ দ্রুত শেষ করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন -মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম
কটিয়াদীতে যুবকের লাশ উদ্ধার, স্ত্রী আটক
বেনাপোল বন্দরে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল উদ্বোধন করলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন, কমবে ভোগান্তি, বাড়বে বাণিজ্য
যশোর বোর্ডে এইচএসসিতে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন ৬৬ হাজার, পরিবর্তন ৭১ জনের
আইএইচএফ ট্রফির বাছাইপর্বে অংশ নিবে ইয়ুথ ও জুনিয়র হ্যান্ডবল দল
ফের কমলো সোনার দাম
সাফজয়ী দলকে আর্থিক পুরস্কার দিল সাউথ ইস্ট ব্যাংক
২৪২ সদস্যবিশিষ্ট ঢাবি ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ