ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়াতে হবে
১০ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:২৪ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:০০ পিএম
গত ৪ এপ্রিল ঢাকার বঙ্গবাজার মার্কেটটির সমস্ত দোকান আগুনে পুড়ে মাটির সাথে মিশে গেছে। দোকানের যাবতীয় আসবাবপত্র এবং মালামাল পুড়ে গেছে। অনেকের নগদ টাকাও আগুনে পুড়ে গেছে। প্রায় পাঁচ হাজার ব্যবসায়ী সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। তিলে তিলে গড়ে তোলা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মুহূর্তেই শেষ হয়ে গেছে। সারা জীবনের অর্জিত স¤পদ এবং ব্যবসার পুঁজি আগুনে পুড়ে গেছে। ঋণ করে কেনা ব্যবসার মালামালও আগুনে পুড়ে গেছে। চোখের সামনে সব শেষ হয়ে গেছে। চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না। ফায়ার সার্ভিসের আপ্রাণ প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও, ততক্ষণে সবই শেষ। সব হারিয়ে নিঃস্ব এসব ব্যক্তি শোকে পাথর হয়ে গেছে। তাদের জীবন এবং পরিবারে এক ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে। তাদের জীবনে এখন দুঃখের শেষ নেই, কষ্টেরও সীমা নেই। এ অবস্থায় সব ভেদাভেদ ভুলে আজ আমাদের এসব সর্বহারা মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের প্রতি সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে। এখানে কোনো ধরনের রাজনীতি নয়, সংকীর্ণতা এবং বিভেদ নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সর্বাত্মক সহযোগিতার কথা ঘোষণা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগের পাশাপাশি আমাদের সবাইকেই আজ এসব নিঃস্ব মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।
আগুনের কারণে যা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা বর্ণনাতীত। এসব ক্ষতি সহজে পূরণ হবার নয়। কিন্তু এখন প্রয়োজন আগুনে পুড়ে সর্বহারা এসব মানুষকে সর্বাত্মকভাবে সাহায্য করা। তারা যেন আবার সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে, সে জন্য তাদের সহযোগিতা করতে হবে। এ অবস্থায় এসব মানুষের সাহায্য করাটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আসুন, আমরা বঙ্গবাজারের সর্বহারা এসব মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই। সারা দেশের সামর্থ্যবান মানুষেরা যদি আজ এগিয়ে আসে তাহলে এই দুর্যোগকে মোকাবেলা করা অসম্ভব নয়। আমাদের সম্মিলিত প্রয়াসে এসব মানুষ অচিরেই তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে, একথা আমরা দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস করি। দেশের এক কোটি মানুষ যদি আজ প্রত্যেকেই মাত্র একশত টাকা করে দান করে তাহলে নিমিষেই জোগাড় হবে শত কোটি টাকা। আর যদি দান করে প্রত্যেকেই এক হাজার টাকা, তাহলে নিমিষেই জোগাড় হবে হাজার কোটি টাকা। সুতরাং এই উদ্যোগ আজ আমাদের গ্রহণ করতে হবে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, শিল্পপতিসহ ধনী মানুষদের আজ এদের জন্য অনেক কিছু করার আছে। যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব তা যদি আমরা করি, তাহলে খুব সহজেই বিশাল একটি ত্রাণ তহবিল গড়ে উঠবে। আর এই তহবিলকে যথাযথ ব্যবহার করে এইসব দুর্গত মানুষকে আবারো সুন্দর জীবনে ফিরিয়ে আনা যাবে। তাই এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য আজ সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি সেক্টরকেও এগিয়ে আসতে হবে। দেশের মানুষের উপকার করার এখনই সময়। দেশের কর্পোরেট গ্রুপসমূহকে কর্পোরেট স্যোশাল রেসপনসিভিলিটির অংশ হিসেবে আজ এগিয়ে আসতে হবে। বিভিন্ন শিল্পগ্রুপ বেসরকারি ব্যাংক, দৈনিক পত্রিকাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্দ্যোগে তহবিল গঠন করতে হবে। তারা উদ্যোগ নিলেই তাদের সেই উদ্যোগে এদেশের মানুষেরা স্বতস্ফুর্তভাবে সহযোগিতা করবে এবং সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। আজ শুধু প্রয়োজন উদ্যোগের এবং প্রয়োজন উদ্যোক্তার। মনে রাখতে হবে, এটা জাতীয় সমস্যা। আগুনে যারা আজ সহায়-সম্পদ হারিয়ে বেঁচে আছে তারা সবাই আমার আপনার মতই মানুষ। তারা প্রত্যেকেই আমাদের কারো না কারো পিতা-মাতা, কারো না কারো ভাইবোন অথবা কারো না কারো আত্মীয়। সর্বোপরি তারা মানুষ এবং আমাদের সমাজেরই অংশ। আজ তারা বিপদগ্রস্ত। আগামীতে তাদের মতো আমরাও হতে পারি বিপদগ্রস্ত। আজকে তাদের যেমন প্রয়োজন আমাদের সাহায্য, তেমনি আগামীতে আমাদের প্রয়োজন হতে পারে তাদের সাহায্য। সুতরাং মানবতার স্বার্থেই তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
সামনেই পবিত্র ঈদুল ফিতর। অনেকেই ঈদুল ফিতর উপলক্ষে একাধিক কাপড় এবং জুতা কেনে। কিন্তু আমরা যদি জন প্রতি একটি করে কাপড় এবং এক জোড়া জুতা কিনে বাকি টাকা এসব মানুষের পুনর্বাসনে দান করি তাহলে কিন্তু ঈদুল ফিতরও আদায় হবে এবং এসব নিঃস্ব মানুষকে সাহায্যও করা হবে। বিষয়টি নিয়ে আজ আমাদের ভাবতে হবে।
বাংলাদেশ একটি গরিব দেশ এবং সতের কোটি মানুষের দেশ। এদেশের অনেক মানুষ দরিদ্রতার মধ্যেই বেঁচে আছে। বন্যা, খড়া, ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাস আমাদের নিত্যসঙ্গী। এর বাইরে এ ধরনের অগ্নিকা- অনেক মানুষের জীবনকে সর্বস্বান্ত করে দেয়। এসব মোকাবেলা করে আমাদের আবারো সোজা হয়ে দাঁড়াতেই হবে। সুতরাং আমাদের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে একতা, বন্ধুত্ব এবং সম্প্রীতি। আসুন, আমরা পরস্পরকে ভালবাসি, সম্মান করি এবং বিপদগ্রস্ত মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিই। হিংসা, বিদ্বেষ ও হানাহানি থেকে নিজেদের রক্ষা করি। এমন একটি সমাজ গড়ে তুলি যে সমাজে থাকবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভালবাসা এবং সহমর্মিতা। আর একটি কথা, সেটা হচ্ছে, আমরা প্রায় প্রত্যেকেই কোনো না কোনো ধর্মে বিশ^াসী। আর প্রত্যেক ধর্মই মানব কল্যাণকে ধর্মীয় কাজের অংশ করেছে। সুতরাং, বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের আর্থিকভাবে সাহায্য করাটা ধর্মীয় কাজেরই অংশ।
লেখক: প্রকৌশলী ও উন্নয়ন গবেষক।
[email protected]
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিসিসিএমইএ আগাম নির্বাচনের সিদ্ধান্ত
‘ফিন্যান্স ডিরেক্টর অফ দ্য ইয়ার ২০২৪' হিসেবে স্বীকৃত পেলেন ব্র্যাকের সিএফও তুষার ভৌমিক
টেকনোলজি লিডারশিপে উৎকর্ষের জন্য সি-সুইট অ্যাওয়ার্ড পেলেন বিএটি বাংলাদেশের সারজিল সারওয়ার
আন্তর্জাতিক শিক্ষাক্রমের প্রতি বাংলাদেশি অভিভাবকদের আগ্রহ বাড়ছে
ইবি শিক্ষার্থীকে হেনস্তার অভিযোগে গোল্ডেন লাইনের আটক
গণঅভ্যুত্থানের বিশ্বাসের সঙ্গে বেঈমানি করলে প্রধান উপদেষ্টাকেও ছাড় নয়
সচেতনতা হাজার হাজার শিশুকে বাঁচাতে পারে অন্ধত্ব থেকে: কর্মশালায় বক্তারা
হত্যা মামলার আসামি হয়েও ধরাছোয়ার বাইরে পুলিশ কর্মকর্তারা
৫ আগস্টের পর থেকে আমরা কথা বলার অধিকার ফিরে পেয়েছি -আবুল হোসেন আজাদ
গণ-অভ্যুত্থানের বিশ্বাসের সাথে বেঈমানি করলে কাউকেই ছাড়া দেয়া হবে না - রাজশাহীতে সারজিস আলম
বুদ্ধিজীবী হত্যার রহস্য আজও উন্মোচিত হয়নি- এড. মুয়াযযম হোসাইন হেলাল
মানিকগঞ্জে ডিএফএ'র নতুন কমিটির সভাপতি ইলিয়াস, সম্পাদক আলাউদ্দিন
পশ্চিমবঙ্গের একই জেলায় ‘বাবরি মসজিদ’ ও রাম মন্দির গড়তে চায় তৃণমূল-বিজেপি
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য কামনা চেয়ে মৌলভীবাজারে শেষ হলো তাবলীগের তিন দিনের জেলা ইজতেমা
ফুটবলার থেকে জর্জিয়ার প্রেসিডেন্ট, কে এই মিখাইল কাভেলাশভিলি?
তিন খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ১৮ বছর বাদে মিথ্যা স্বীকার
রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষের ঢল
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যেভাবে বিশ্বকাপ জিতেছে সউদী
বেনাপোল বন্দর দিয়ে ২৫ দিনে ৩৩২০ টন চাল আমদানি
বুদ্ধিজীবী দিবসের শহীদ পরিবারের তালিকা করে স্বীকৃতির দাবি'