ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

ঈদযাত্রায় ভোগান্তির আশঙ্কা দূর করতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

১২ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:১৯ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৩৮ পিএম

পবিত্র রমজান মাসের সিয়াম সাধনার শেষ দশক শুরু হয়েছে। একদিকে চৈত্র শেষের তীব্র দাবদাহ, অসহ্য গরম অন্যদিকে ঈদুল ফিতরের কেনাকাটা ও শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে ঈদযাত্রার কর্মব্যস্ততায় হিমসিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন মূল্যস্ফীতিতে মানুষের জীবনযাত্রা এমনিতেই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় নগরীগুলোতে অস্বাভাবিক যানজটের যে চিত্র দেখা যাচ্ছে, তাতে ঈদযাত্রায় সড়ক-মহাসড়কগুলোতে পরিস্থিতি কেমন দাঁড়াবে তার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল ইনকিলাবসহ বেশকিছু সহযোগী দৈনিকে ঈদযাত্রায় দেশের বেশকিছু আঞ্চলিক ও প্রধান মহাসড়কে যানজট-ভোগান্তির আশঙ্কার কথা তুলে ধরা হয়েছে। দেশের উত্তর-পশ্চিমের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক ঢাকা-টাঙ্গাইল- বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড়ে দীর্ঘ যানজটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট পরিবহন চালক ও ব্যবসায়ীরা। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত রিপোর্টে ঈদযাত্রায় অন্তত ৪৬টি স্পটে যানজটের আশঙ্কা করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রবেশমুখ ও বর্হিগমণ পথসহ ঢাকার অভ্যন্তরে ২০টি স্থানকে যানজট প্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই সাথে বঙ্গবন্ধু সেতু, পদ্মাসেতু, মেঘনা-গোমতি সেতুর টোলপ্লাজার দুইপাশসহ ঢাকার আশপাশে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নরসিংদী ও কুমিল্লার আঞ্চলিক সড়কগুলোর চিহ্নিত স্পটগুলোতে যানজট তীব্রতর আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রমজানের শুরু থেকেই ঢাকার রাজপথের চিরচেনা যানজটে অসহনীয় অবস্থা লেগেই আছে। কর্মস্থলে পৌঁছা এবং ইফতারির আগে বাসায় ফিরতে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে অসহ্য গরমে রাস্তায় বসে থাকতে হচ্ছে। ঈদের সময় যত ঘনিয়ে আসছে যানজটের মাত্রা যেন ততই বেড়ে চলেছে। আন্তজেলা বহির্মুখী যাত্রীদের ঢাকা থেকে মহাসড়কে বের হতেই দুইতিন ঘন্টা লেগে যাচ্ছে। ট্রাফিক শৃঙ্খলা ও সমন্বিত ব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ফ্লাইওভারগুলো ঢাকার যানজট নিরসনে তেমন কোনো ভূমিকাই পালন করতে পারছেনা। আর ঢাকার বাইরের আঞ্চলিক সড়ক-মহাসড়কগুলোতে যানজটের বহুবিধ কারণ রয়েছে। বিশেষত সংস্কার ও উন্নয়নের নামে যে সব রাস্তার অংশ কেটে এবং নির্মাণ সামগ্রীর স্তুপ দিয়ে যান চলাচলের সংকীর্ণ করে রাখা রাস্তায় যানজটের তীব্রতা অনিবার্য হয়ে পড়েছে। বিআরটি প্রকল্পসহ বছরের পর বছর ধরে চলা উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে ঢাকার সবচেয়ে ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বিমানবন্দর ও ঢাকা-ময়মনসিংহ, গাজীপুর ও টাঙ্গাইল সড়কে লাখ লাখ কর্মজীবী মানুষকে প্রতিদিন অশেষ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই রাস্তার অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে ইতিমধ্যে মর্মান্তিক ট্রাজিক দুর্ঘটনায় বেশকিছু মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ও চুক্তি অনুসারে কাজ শেষ করতে না পারায় গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সড়কে যানজট, জনদুর্ভোগ, দুর্ঘটনা ও পরিবেশগত দূষণের শিকার হচ্ছে নগরবাসী।

অনুকুল আবহাওয়ার কথা বিবেচনায় রেখে আমাদের দেশে রাস্তা, বেড়িবাঁধ ও পরিষেবামূলক অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য সাধারণত শীতকাল ও শুকনো মওসুমকেই বেছে নেয়া হয়। এবার শীতকাল পেরিয়ে বৈশাখ সমাগত হলেও বৃষ্টি-বর্ষার দেখা নেই। অনাবৃষ্টির কারণে শুস্ক মওসুম দীর্ঘায়িত হওয়ায় নির্বিঘেœ রাস্তা উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো যথেষ্ট সময় পেয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বর্ষার আগেই রাস্তা উন্নয়নের কাজ শেষ করার কার্যকর তাগিদ ও নজরদারি থাকলে হয়তো সুফল পাওয়া যেত। প্রতিবছর রমজানের শুরুতেই ঢাকার যানজট, ঈদের বাজার এবং কোটি মানুষের ঈদযাত্রা একটি আলোচ্য বিষয়ে পরিনত হতে দেখা যায়। এবারো তার ব্যতিক্রম নয়। ইতিমধ্যে এসব উপসর্গ ও নাগরিক দুর্ভোগের মাত্রাও বেড়ে চলেছে। এহেন বাস্তবতায় সড়ক উন্নয়নে ও চলমান প্রকল্পগুলো বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে গতি বাড়িয়ে বর্ষা ও ঈদের আগে শেষ করার পদক্ষেপ নিশ্চিত করা বাঞ্ছনীয়। বাস্তবায়নের মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পর বার বার সময় বাড়ানোর কারণে প্রাক্কলিত বাজেট বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি জনদুর্ভোগ ও পরিবেশগত দূষণের মাত্রা বেড়ে যায়। শুধুমাত্র ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করার স্বার্থেই নয়। প্রকল্পে অপচয়, দুর্নীতি ও বাতাসে ধূলোবালির পরিবেশগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতেও রাস্তা ও অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ যতটা সম্ভব দ্রুত গতিতে শেষ করার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। ঈদের আগে আরো এক সপ্তাহ সময় হাতে রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ঢাকার বিআরটি প্রকল্পসহ দেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক ও মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ ও ভাঙ্গা অংশ মেরামতের ত্বরিৎ পদক্ষেপ নিতে হবে। ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘœ ও নিরাপদ করতে রাস্তাকে দখলমুক্ত, পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ রাখার পাশাপাশি সমন্বিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান