ঈদযাত্রায় ভোগান্তির আশঙ্কা দূর করতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

১২ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:১৯ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৩৮ পিএম

পবিত্র রমজান মাসের সিয়াম সাধনার শেষ দশক শুরু হয়েছে। একদিকে চৈত্র শেষের তীব্র দাবদাহ, অসহ্য গরম অন্যদিকে ঈদুল ফিতরের কেনাকাটা ও শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে ঈদযাত্রার কর্মব্যস্ততায় হিমসিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন মূল্যস্ফীতিতে মানুষের জীবনযাত্রা এমনিতেই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় নগরীগুলোতে অস্বাভাবিক যানজটের যে চিত্র দেখা যাচ্ছে, তাতে ঈদযাত্রায় সড়ক-মহাসড়কগুলোতে পরিস্থিতি কেমন দাঁড়াবে তার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল ইনকিলাবসহ বেশকিছু সহযোগী দৈনিকে ঈদযাত্রায় দেশের বেশকিছু আঞ্চলিক ও প্রধান মহাসড়কে যানজট-ভোগান্তির আশঙ্কার কথা তুলে ধরা হয়েছে। দেশের উত্তর-পশ্চিমের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক ঢাকা-টাঙ্গাইল- বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড়ে দীর্ঘ যানজটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট পরিবহন চালক ও ব্যবসায়ীরা। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত রিপোর্টে ঈদযাত্রায় অন্তত ৪৬টি স্পটে যানজটের আশঙ্কা করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রবেশমুখ ও বর্হিগমণ পথসহ ঢাকার অভ্যন্তরে ২০টি স্থানকে যানজট প্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই সাথে বঙ্গবন্ধু সেতু, পদ্মাসেতু, মেঘনা-গোমতি সেতুর টোলপ্লাজার দুইপাশসহ ঢাকার আশপাশে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নরসিংদী ও কুমিল্লার আঞ্চলিক সড়কগুলোর চিহ্নিত স্পটগুলোতে যানজট তীব্রতর আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রমজানের শুরু থেকেই ঢাকার রাজপথের চিরচেনা যানজটে অসহনীয় অবস্থা লেগেই আছে। কর্মস্থলে পৌঁছা এবং ইফতারির আগে বাসায় ফিরতে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে অসহ্য গরমে রাস্তায় বসে থাকতে হচ্ছে। ঈদের সময় যত ঘনিয়ে আসছে যানজটের মাত্রা যেন ততই বেড়ে চলেছে। আন্তজেলা বহির্মুখী যাত্রীদের ঢাকা থেকে মহাসড়কে বের হতেই দুইতিন ঘন্টা লেগে যাচ্ছে। ট্রাফিক শৃঙ্খলা ও সমন্বিত ব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ফ্লাইওভারগুলো ঢাকার যানজট নিরসনে তেমন কোনো ভূমিকাই পালন করতে পারছেনা। আর ঢাকার বাইরের আঞ্চলিক সড়ক-মহাসড়কগুলোতে যানজটের বহুবিধ কারণ রয়েছে। বিশেষত সংস্কার ও উন্নয়নের নামে যে সব রাস্তার অংশ কেটে এবং নির্মাণ সামগ্রীর স্তুপ দিয়ে যান চলাচলের সংকীর্ণ করে রাখা রাস্তায় যানজটের তীব্রতা অনিবার্য হয়ে পড়েছে। বিআরটি প্রকল্পসহ বছরের পর বছর ধরে চলা উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে ঢাকার সবচেয়ে ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বিমানবন্দর ও ঢাকা-ময়মনসিংহ, গাজীপুর ও টাঙ্গাইল সড়কে লাখ লাখ কর্মজীবী মানুষকে প্রতিদিন অশেষ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই রাস্তার অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে ইতিমধ্যে মর্মান্তিক ট্রাজিক দুর্ঘটনায় বেশকিছু মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ও চুক্তি অনুসারে কাজ শেষ করতে না পারায় গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সড়কে যানজট, জনদুর্ভোগ, দুর্ঘটনা ও পরিবেশগত দূষণের শিকার হচ্ছে নগরবাসী।

অনুকুল আবহাওয়ার কথা বিবেচনায় রেখে আমাদের দেশে রাস্তা, বেড়িবাঁধ ও পরিষেবামূলক অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য সাধারণত শীতকাল ও শুকনো মওসুমকেই বেছে নেয়া হয়। এবার শীতকাল পেরিয়ে বৈশাখ সমাগত হলেও বৃষ্টি-বর্ষার দেখা নেই। অনাবৃষ্টির কারণে শুস্ক মওসুম দীর্ঘায়িত হওয়ায় নির্বিঘেœ রাস্তা উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো যথেষ্ট সময় পেয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বর্ষার আগেই রাস্তা উন্নয়নের কাজ শেষ করার কার্যকর তাগিদ ও নজরদারি থাকলে হয়তো সুফল পাওয়া যেত। প্রতিবছর রমজানের শুরুতেই ঢাকার যানজট, ঈদের বাজার এবং কোটি মানুষের ঈদযাত্রা একটি আলোচ্য বিষয়ে পরিনত হতে দেখা যায়। এবারো তার ব্যতিক্রম নয়। ইতিমধ্যে এসব উপসর্গ ও নাগরিক দুর্ভোগের মাত্রাও বেড়ে চলেছে। এহেন বাস্তবতায় সড়ক উন্নয়নে ও চলমান প্রকল্পগুলো বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে গতি বাড়িয়ে বর্ষা ও ঈদের আগে শেষ করার পদক্ষেপ নিশ্চিত করা বাঞ্ছনীয়। বাস্তবায়নের মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পর বার বার সময় বাড়ানোর কারণে প্রাক্কলিত বাজেট বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি জনদুর্ভোগ ও পরিবেশগত দূষণের মাত্রা বেড়ে যায়। শুধুমাত্র ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করার স্বার্থেই নয়। প্রকল্পে অপচয়, দুর্নীতি ও বাতাসে ধূলোবালির পরিবেশগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতেও রাস্তা ও অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ যতটা সম্ভব দ্রুত গতিতে শেষ করার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। ঈদের আগে আরো এক সপ্তাহ সময় হাতে রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ঢাকার বিআরটি প্রকল্পসহ দেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক ও মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ ও ভাঙ্গা অংশ মেরামতের ত্বরিৎ পদক্ষেপ নিতে হবে। ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘœ ও নিরাপদ করতে রাস্তাকে দখলমুক্ত, পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ রাখার পাশাপাশি সমন্বিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

অবৈধ পার্কিং নগরের ক্যান্সার
শক্তিশালী প্রতিরক্ষা শক্তিশালী পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি
ভারত নিয়ে বিএনপির অবস্থান যা হওয়া উচিত
জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেসকে স্বাগত
হামাস আরো শক্তিশালী হবে
আরও
X

আরও পড়ুন

প্রশাসনের ঢিলেঢালা আচরণে দুষ্কৃতিকারীরা সমাজে আশকারা পাচ্ছে: রিজভী

প্রশাসনের ঢিলেঢালা আচরণে দুষ্কৃতিকারীরা সমাজে আশকারা পাচ্ছে: রিজভী

মঁদিকে হারাল রিয়াল

মঁদিকে হারাল রিয়াল

৬ জেলায় মৃদু তাপপ্রবাহ, সিলেট বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে

৬ জেলায় মৃদু তাপপ্রবাহ, সিলেট বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে

নোয়াখালীতে বিধবার ঘরে ঢুকে ধর্ষণের হুমকি দিয়ে ডাকাতি

নোয়াখালীতে বিধবার ঘরে ঢুকে ধর্ষণের হুমকি দিয়ে ডাকাতি

আড়াইহাজারে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে টহল পুলিশের গাড়ির ধাক্কা, পুলিশ সদস্যসহ ৭ জন আহত

আড়াইহাজারে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে টহল পুলিশের গাড়ির ধাক্কা, পুলিশ সদস্যসহ ৭ জন আহত

ইউক্রেনে শান্তি চায় না ইউরোপীয় দেশগুলো, রাশিয়ার অভিযোগ

ইউক্রেনে শান্তি চায় না ইউরোপীয় দেশগুলো, রাশিয়ার অভিযোগ

তালতলীতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণ বন্ধ করে পায়রা নদী রক্ষার দাবি

তালতলীতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণ বন্ধ করে পায়রা নদী রক্ষার দাবি

কক্সবাজার পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব

কক্সবাজার পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের জন্য আইনি-লিগ্যাল নোটিশ

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের জন্য আইনি-লিগ্যাল নোটিশ

কিম জং উনের সঙ্গে এখনো ভালো সম্পর্ক: ট্রাম্প

কিম জং উনের সঙ্গে এখনো ভালো সম্পর্ক: ট্রাম্প

গুয়ানতানামো বে খালি, অভিবাসীদের ফিরিয়ে আনলো যুক্তরাষ্ট্র

গুয়ানতানামো বে খালি, অভিবাসীদের ফিরিয়ে আনলো যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশের সংস্কারে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি জাতিসংঘের

বাংলাদেশের সংস্কারে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি জাতিসংঘের

গ্রিনল্যান্ড নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা, ন্যাটোকে যুক্ত করতে চান

গ্রিনল্যান্ড নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা, ন্যাটোকে যুক্ত করতে চান

ভারতের কেন এত ভয় বাংলাদেশ নিয়ে? বারবার কেন হাসিনাকেই চায় ওরা?

ভারতের কেন এত ভয় বাংলাদেশ নিয়ে? বারবার কেন হাসিনাকেই চায় ওরা?

মহেশপুর সীমান্তে ভারতীয় নাগরিক আটক

মহেশপুর সীমান্তে ভারতীয় নাগরিক আটক

নোয়াখালীতে বিআরডিবির অর্থ কেলেঙ্কারি: আওয়ামীলীগ নেতার ১১ বছর জেল, ৩১ লাখ টাকা জরিমানা

নোয়াখালীতে বিআরডিবির অর্থ কেলেঙ্কারি: আওয়ামীলীগ নেতার ১১ বছর জেল, ৩১ লাখ টাকা জরিমানা

ন্যাটোর অস্ত্র উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান রুটের

ন্যাটোর অস্ত্র উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান রুটের

৯ মিনিটেই শেষ ট্রেনের আগাম টিকিট, আধাঘণ্টায় ২০ লাখ হিট

৯ মিনিটেই শেষ ট্রেনের আগাম টিকিট, আধাঘণ্টায় ২০ লাখ হিট

যুক্তরাষ্ট্রে বিমানবন্দরে ১৭৮ আরোহীবাহী বিমানে ভয়াবহ আগুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিমানবন্দরে ১৭৮ আরোহীবাহী বিমানে ভয়াবহ আগুন

প্রিন্সিপাল মুফতি আব্দুল মতিনের প্রথম জানাজায় মুসল্লিদের ঢল

প্রিন্সিপাল মুফতি আব্দুল মতিনের প্রথম জানাজায় মুসল্লিদের ঢল