চিংড়ি চাষে গতি ফেরাতে হবে
২৭ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:০১ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:২৭ পিএম
সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট উপকূলীয় এই তিন জেলায় বসবাসকারী মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস লোনা পানিতে মৎস্য চাষ। বঙ্গোপসাগরের খুবই কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায় উক্ত এলাকায় বছরের অধিকাংশ সময়ে লোনা পানির আধিক্য দেখা যায়। বর্ষা মৌসুমে মাটির লবনাক্ততার তীব্রতা একটু কমলেও লোনার যে প্রকোপ থাকে তাতে মিঠা পানির মাছ বা ফসল ফলানো খুবই দুরূহ। সেকারণে এই এলাকার মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস হরেক প্রজাতির লোনা পানির চিংড়ি চাষ। বাগদা ও হরিনা চিংড়ি, যার মধ্যে অন্যতম। দ্রুত বর্ধনশীল ও অধিক লাভজনক এই চিংড়ি চাষের ফলে একদিকে যেমন দক্ষিণবঙ্গের মানুষের জীবিকা নির্বাহ হয় অন্যদিকে সরকারের কোষাগারে জমা পড়ে বিপুল পরিমানে বৈদেশিক মুদ্রা। সুস্বাদু এই চিংড়ির বাইরের দেশগুলোতে যথেষ্ট কদর রয়েছে। সেকারণে চিংড়ি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিযোগ্য পণ্য হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
পরিসংখ্যান বলছে, চিংড়ি থেকে মোট আয়ের শতকরা ৫০ ভাগ আসে সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট অঞ্চলে চাষকৃত চিংড়ি থেকে। ঐ অঞ্চলের লোনা পানিতে চাষকৃত বাগদা ও হরিণা চিংড়ি স্বাদে খুবই সুস্বাদু এবং প্রোটিন ও আয়োডিন সমৃদ্ধ হওয়ায় আন্তর্জাতিক পরিসরে দক্ষিণবঙ্গের চিংড়ির বেশ সুনাম আছে। সেজন্য দেশের পরিমন্ডলে প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলের চিংড়ি আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি হচ্ছে। এর ফলে দেশীয় অর্থনীতি যেমন চাঙ্গা হচ্ছে পাশাপাশি সরকারের কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রা যোগানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অবদান রাখছে চিংড়ি। তাই সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম অর্থকারী সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে দক্ষিণাঞ্চলের চিংড়ি চাষ প্রকল্প। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য কিছু অনাকাঙ্খিত কারণে চিংড়ি রপ্তানিতে কিছুটা বিরূপ প্রভাব পড়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে চিংড়ি রপ্তানি ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে তা অনেক কমে গেছে। যেখানে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে চিংড়ি রপ্তানি থেকে দেশের কোষাগারে জমা পড়েছে ৪০ কোটি ৭৩ লাখ মার্কিন ডলার, দেশীয় টাকার অংকে যেটা ৪ হাজার ১৫৪ কোটি টাকার সমতুল, সেখানে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই খাতে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ৫০ কোটি ডলার ধরা হলেও অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বরে চিংড়ি রপ্তানি খাতে আয় ৩১.৪৭ শতাংশ কমেছে। রপ্তানিকারকদের তথ্যমতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশি চিংড়ির দুই বড় বাজার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রে চিংড়ির চাহিদা কমে গেছে। ফলে চিংড়ি রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যে কারণে মানভেদে প্রতি কেজি চিংড়ির দাম ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। পক্ষান্তরে চিংড়ি বা খাদ্যের দাম বেড়েছে। একদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে চিংড়ির চাহিদা কমে যাওয়া অন্যদিকে চিংড়ির খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রান্তিক পর্যায়ের চাষিরা চিংড়ির নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
প্রান্তিক পর্যায়ের চিংড়ি চাষিদের দাবি ‘পূর্বের তুলনায় চিংড়ির উৎপাদন খরচ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে’, আবার চিংড়ির বাজারদর কমে প্রায় অর্ধেক হয়েছে। এতে করে সবদিক থেকে তারা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। মধ্যস্বত্বভোগীরা সিন্ডিকেট করে চিংড়ির পোনা ও চিংড়ি খাদ্যের দাম বাড়িয়েছে বলেও চিংড়ি চাষিরা দাবি করেছে। যেমন, এক বছর আগেও প্রতি বস্তা (৩৪ কেজি) গমের ভুসি ৮০০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে ১ হাজার ৯০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এক বছরের ব্যবধানে ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা পালিশ কুঁড়ার দাম ৬০০ টাকা বেড়ে বর্তমানে ১ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ২৫ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা ফিশ ফিড ৮০০ টাকা থেকে বেড়ে ১ হাজার ৬০০ টাকা এবং ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা সয়াবিন খইল ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৭১০ টাকায় উন্নীত হয়েছে। চিংড়ি চাষি তথা ঘেরমালিকদের দাবি, একদিকে তাদের বেশি দামে চিংড়ির খাদ্য কিনতে হচ্ছে, অন্যদিকে চিংড়ি বিক্রির সময় মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। তার ওপর বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভাইরাসসহ চিংড়ির নানা ধরণের রোগব্যাধির কারণে মাত্রারিক্ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বারবার ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার কারণে চিংড়ি চাষিরা চিংড়ি চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে দেশীয় চিংড়ির কদর কমে যাওয়ার নানাবিধ কারণ থাকলেও চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করে ওজন বাড়ানোর বিষয়টিকে অনেকে দায়ী করছে। এই অপদ্রব্য পুশের ব্যাপারে একটু বিস্তারিত বলতে চাই। দক্ষিণবঙ্গে বাড়ি হওয়ায় ছোট থাকতে দেখে এসেছি চিংড়ি চাষের সফলতায় বরাবরই চাষিদের মুখে প্রাণবন্ত হাসি। চিংড়িঘেরে যখন চিংড়ি বাজারজাতকরণের উপযোগী হয় তখন ঘেরমালিক চিংড়ি ধরার ব্যবস্থা করে। চিংড়ি ধরার খুব সহজ পদ্ধতি হচ্ছে অমাবস্যা এবং পূর্ণিমা তিথিতে চিংড়ি ঘেরে লম্বা নেট টাঙিয়ে তার মাথায় একধরণের ফাঁদ বসানো হয়। দেশীয় ভাষায় যাকে আমরা ‘আটন’ বলি। সন্ধ্যায় আটন বসিয়ে রেখে দিলে ভোরে সেগুলো চিংড়িতে ভরে যায়। ঘেরমালিক তথা চিংড়ি চাষিরা আটন থেকে চিংড়ি নিয়ে বিক্রির উদ্দেশে বাজারে নিয়ে যায়। চিংড়ি ক্রয়ের জন্য এসব এলাকায় অল্প দূরত্ব পরপর মাছের আড়ৎ আছে। যেখানে চিংড়ি থেকে শুরু করে যাবতীয় মাছ কেনাবেচা করা হয়। অন্যান্য সময়ে আটনে অল্পস্বল্প চিংড়ি ধরা পড়লেও স্বভাবতই অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে চিংড়ি বেশি ধরা পড়ে। এসময়ে খুব ভোরে চিংড়ি চাষিরা চিংড়ি ধরে আড়তে নিয়ে আসে। সকাল ৯ টার ভিতরেই এসব মাছের আড়ৎগুলোতে বেচাবিক্রি শেষ হয়ে যায়। আড়তে চাষিদের চিংড়ি বিক্রির পরে কয়েক জনের হাত বদলে সেগুলো প্যাকেটজাত করা হয় বাইরে রপ্তানির জন্য। এসময় মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীদের একটা মহল ওৎপেতে থাকে অসাধু উপায়ে তাদের ব্যবসায়িক মুনাফা বাড়ানোর জন্য।
এসব অসাধু ব্যবসায়ী চিংড়িকে ওজনে বেশি করার জন্য নানা ধরণের অপদ্রব্য পুশ করে। ডাক্তারি সিরিঞ্জের মাধ্যমে দূষিত পানি, ফিটকিরি, জেলি, ভাতের মাড়, সাগু বা ময়দা জ্বালিয়ে ঘন করা দ্রবনসহ নানা ধরণের অপদ্রব্য চিংড়ির মধ্যে প্রবেশ করায়। এসব অপদ্রব্যের ঘন দ্রবন চিংড়ির ভিতরে প্রবেশের পরে আর বাইরে বের হতে পারেনা। ফলে চিংড়ির সামান্য ওজন বাড়ে। এই বাড়তি ওজনের ফায়দা নেওয়ার জন্য অর্থকারি ও লাভজনক সম্পদকে পুরোপুরি বিনষ্ট করার জন্য একটা মহল হরহামেশাই এই অকাজ করে যাচ্ছে। তবে একটা সময়ে এভাবে চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করে ওজন বাড়ানোর রীতি ব্যাপকহারে প্রচলিত থাকলেও প্রশাসনের কড়া নজরদারির তাগিদে বর্তমানে এর প্রকোপ কমেছে। কিন্তু চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। বর্তমানেও প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ রোধ করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায়ই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, মোটা অংকের অর্থদ-, পুশকৃত চিংড়ি জব্দ করে ধ্বংস ও বায়েজাপ্ত ঘোষণা ছাড়াও নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। কিন্তু চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ কোনভাবেই বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছেনা। চিংড়ি চাষিরা এই অপদ্রব্য পুশ করার সাথে কোনরকম যোগসূত্র না থাকলেও ক্ষতির পাল্লা তাদের উপর গিয়ে পড়ছে। তাছাড়া চিংড়িতে বিভিন্ন অপদ্রব্য পুশ করা অব্যাহত থাকায় দেশে ও বিদেশে চিংড়ির মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিদেশের বাজারে দেশের ব্যবসায়িক সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। চিংড়িতে যদি অপদ্রব্যের উপস্থিতি মেলে তাহলে বিদেশীরা কখনো আমাদের থেকে চিংড়ি নেবে না। হচ্ছেও তাই। চিংড়ি রপ্তানির পরিসংখ্যানে গেল বছরেরে চেয়ে এবছরের বেহাল দশা তার সুস্পষ্ট প্রমাণ। আবার বিদেশে চিংড়ির চাহিদা কমে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারে দাম পড়তে শুরু করেছে। তাই চিংড়ি চাষিসহ এলাকাবাসীর দাবি অচিরেই চিংড়িতে এই অপদ্রব্য পুশ করা বন্ধ হোক।
অসাধু ব্যবসায়ীদের অপদ্রপব্য পুশ করে কেজি প্রতি চিংড়ির সর্বোচ্চ ওজন ১০০ গ্রাম মত বাড়াতে পারে। যার ফলে তাদের হাত বদলে চিংড়ি যখন পরবর্তী ক্রেতার হাতে যায় সেখানে চিংড়ির মান ভেদে হয়ত কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৮০ টাকা বেশি লাভ করতে পারে। প্রতিকেজি চিংড়ির মূল্য যদি ৮০০ টাকা হয় তাহলে অপদ্রব্য পুশ করে ১০০ গ্রামের বাড়তি মূল্য ৮০ টাকা লাভ হবে। কিন্তু চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করার ফলে চিংড়ির পুষ্টি গুনাগুন পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। চিংড়ির পচনকে তরান্বিত করে। তাই বলা যায়, স্বাদ ও পুষ্টিতে ভরপুর চিংড়িকে অপদ্রব্য পুশ করে যারা খাওয়ার অনুপযোগী করে বিষক্রিয়া ছড়াচ্ছে তারা কেবলমাত্র চিংড়ি চাষিদের বিপদে ফেলছে না, গোটা দেশের অর্থনীতিকে ও পিছিয়ে দিচ্ছে। সামান্য কিছু মুনাফার জন্য মানুষ নামের কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে সম্পূর্ণ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে চিংড়ি চাষি, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান, সর্বোপরি দেশের অর্থনীতি। এতে হুমকির মুখে পড়েছে হোয়াইট গোল্ড নামে খ্যাত দেশের দ্বিতীয় রপ্তানি পণ্যটি।
চিংড়ি চাষ তুলনামূলক লাভজনক ব্যবসা হলেও এখানে নানা ধরণের প্রতিবন্ধক্তা আছে। কেননা বর্তমানে নানা ধরণের রোগ বালাই আক্রমণের ফলে চিংড়ি ধরার উপযোগী হওয়ার আগেই মারা যায়। যেখানে চিংড়ি চাষিদের অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বাগদা বা হরিনা চিংড়ি চাষে সর্বপ্রথম প্রয়োজন হয় সার্বক্ষণিক লোনা পানি এবং পর্যাপ্ত জোয়ার ভাঁটা। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে তুলনামূলক বৃষ্টি বেশি হওয়ায় পানির লবনাক্ততা কমে যায়। এজন্য বর্ষা মৌসুমে বাগদা বা হরিনা চিংড়ির উৎপাদন তুলনামূলক কমে যায়। জানুয়ারি থেকে জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত বাগদা বা হরিনা চিংড়ি চাষের সর্বোত্তম সময়। কিন্তু জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত চিংড়ি ঘেরে পানি থাকেনা। যেসব নদ-নদী থেকে চিংড়ি ঘেরে পানি সরবরাহ করা হয় সেগুলো অধিক পলি জমা হয়ে ভরাট হয়ে গেছে। সেইসাথে দখলদারদের দৌরাত্মে বছরের অধিকাংশ সময় এসকল নদ-নদীতে পর্যাপ্ত পানি পৌঁছায় না। ফলে চাষিরা তাদের ঘের বা জলাশয়ে চিংড়ি চাষের উপযোগী পানি পায়না এবং সময়মত চিংড়ির পোনা ছাড়তে পারছেনা, যেটা চিংড়ি চাষের প্রতি চাষিদের অনীহা বাড়িয়ে দিচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে এসব নদ-নদী খননের মত কিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও সেখানে কাজে অনেক ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়। এর ফলে চিংড়ি চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে চিংড়ির চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের চিংড়ি খামারের উত্তম চাষ ব্যবস্থাপনা প্রবর্তনের উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। তারপরেও চিংড়ি চাষের পূর্বাবস্থা ফিরিয়ে আনতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে জনপ্রিয় এই অর্থকারি সম্পদের কদর বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিক্রিয়যোগ্য চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ বন্ধ করতে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন, মাঠ পর্যায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও খাদ্যে ভেজাল বিরোধী অভিযান অব্যহত রেখে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহের উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশকারি অসাধু ব্যবসায়ীদের শুধুমাত্র অর্থ দন্ডে দন্ডিত না করে দৃশ্যমান সাজার (যেমন নির্দিষ্ট সময়ের জেল) আওতায় আনতে হবে। চিংড়ির খাদ্য বিক্রয়কারি ব্যবসায়ীরা যাতে সিন্ডিকেট করে খাদ্যের দাম বাড়াতে না পারে সেজন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। চাষিপর্যায়ে রোগমুক্ত ও গুণগত মানসম্পন্ন চিংড়ি পোনার সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জীবাণু ও ভাইরাস শনাক্তকরণের জন্য মৎস্য অধিদপ্তর ও ওয়ার্ল্ড ফিশের যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। সরকারি উদ্যোগে চিংড়ি ঘেরে পর্যাপ্ত লোনাপানির সুষ্ঠু সরবরাহ ও জোয়ার ভাঁটা নিশ্চিত করতে হবে। এ উদ্দেশে উক্ত এলাকার নদ-নদীসমূহ খনন করে চিংড়ি ঘেরে যাতে নিয়মিত জোয়ার ভাঁটা নিশ্চিত করা যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়াও চিংড়ি চাষকে আরো লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব করার নিমিত্ত জলাশয় বা ঘেরের গভীরতা বৃদ্ধির প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে। সঠিক প্রশিক্ষণের অভাবে প্রান্তিক পর্যায়ের অধিকাংশ চিংড়ি চাষিই জানেনা কিভাবে বৈজ্ঞানিক ও পরিবেশবান্ধব উপায়ে চিংড়ি চাষ করে স্বল্প ব্যয়ে অধিক লাভবান হওয়া যায়। এজন্য সময়ে সময়ে চিংড়ি চাষিদের সরকারি উদ্দোগে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। উপজেলা পর্যায়ের মৎস্য কর্মকর্তাগণ এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারেন। যে প্রশিক্ষণে চিংড়ি চাষের জন্য মাটি ও পানির গুণগত মান সম্পর্কে চিংড়ি চাষিদের অবহিত করবেন এবং চিংড়ি চাষের জন্য অত্যাবশ্যকীয় কিছু প্যারামিটার, যেমন মাটি ও পানির পিপিটি পরীক্ষা, পিএইচ ও লবণাক্ততা পরীক্ষার বিষয়ে অবহিত করবেন। চিংড়ি চাষিরা যাতে করে সময়মত চিংড়ি ঘের সংস্কার করে সেখানে চিংড়ির পোনা ছাড়তে পারে সে উদ্দেশ্যে ঘের মালিকদের স্বল্প সুদে বা সুদমুক্ত করে চাহিদা মোতাবেক সরকারি ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের অপরাধের ধরণ অনুযায়ী কঠোর আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে তৎক্ষণাৎ সেগুলো কার্যকর করতে হবে। চিংড়ি চাষ থেকে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় হয়ে থাকে। চিংড়ি চাষ ব্যবস্থাপনায় আরো উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে, চিংড়ি চাষিদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত করে, আইন প্রণয়নের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীদের শাস্তির আওতায় এনে হোয়াইট গোল্ড নামে খ্যাত এই সম্পদকে রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট।
[email protected]
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
জানা গেল ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ব্রাজিলের একাদশ
বাংলাদেশে ন্যায্য রুপান্তরে অর্থায়নের জন্য ধনী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান
গোপালগঞ্জে কারাগারে থাকা বাবার অবশেষে জামিন মঞ্জর
ওসমানী বিমান বন্দরে বিদেশী বিমান উঠা-নামার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী- প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে সিলেটে স্মারকলিপি
ময়মনসিংহে ফিলিং স্টেশনে আগুনের ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে ৬
জানুয়ারি পর্যন্ত ছিটকে গেলেন এনগিডি
দুবাইয়ে নবনিযুক্ত কনসাল জেনারেলের সাথে বাংলাদেশ রেডিমেড গার্মেন্টস ট্রেডার্স আজমানের নেতৃবৃন্দের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সুবিধা নিশ্চিতে দেওয়া হবে ইউনিক আইডি কার্ড
যে কারণে হারপিকে মেতেছে নেটিজেনরা
আ.লীগের মতো পরিবারতন্ত্র করবে না বিএনপি: তারেক রহমান
প্যারাগুয়ে ম্যাচে কেমন হবে আর্জেন্টিনার একাদশ
অর্থাভাবে ব্যক্তিগত বিমান ভাড়া দিয়েছেন শন ডিডি, বিক্রি করবেন বাড়ি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শ্রেনী কক্ষে অসুস্থ ১০ শিক্ষার্থী
ভারতীয় গণমাধ্যম আমাদের সম্পর্কে অপপ্রচার চালাচ্ছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
নরসিংদীতে ট্রেনের নীচে ঝাঁপ দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা
পুলিশ সংস্কার ও একটি কৌশলপত্র
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে কেন উপদেষ্টা করতে হবে?
শ্যামনগরে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক নিহত
অভ্যুত্থানে আহতদের প্রতি এই অবহেলা অমার্জনীয়
নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদ