ভূমিকম্পের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
১১ মে ২০২৩, ০৮:১৪ পিএম | আপডেট: ১২ মে ২০২৩, ১২:০২ এএম

২০১৫ সালের ২৫ এপ্রিল আনুমানিক দুপুর সোয়া বারটায় ভূমিকম্পে পুরো রাজধানী কেঁপে ওঠে। রিকটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪.৫। পরের দিন ২৬ এপ্রিল দুপুর সোয়া একটার দিকেও আবার রাজধানী কেঁপে ওঠে। পরপর দুদিন ভূকম্পন হওয়া নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিলেন। কারণ, ঘন ঘন ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের আভাস দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার পর দুই-তিন দিনের মধ্যে আরও বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই আবার ভূমিকম্প হয়। এটিকে বলা হয়, আফটার শক। গত ৫ মে শুক্রবার ভোর ৫টা ৫৭ মিনিটে ৪.৩ মাত্রার ভূমিকম্পে পুরো ঢাকা শহর কেঁপে ওঠে। অনেকে ঘুমে থাকায় তা টের পায়নি। যারা টের পেয়েছে তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। দেখা যাচ্ছে, বিগত কয়েক বছর ধরে ঘন ঘন ভূমিকম্প দেখা দিচ্ছে। এসব ভূমিকম্প কোনোটা মৃদু, কোনোটা মৃদুর চেয়ে বেশি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিগত বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হয় ২০১৬ সালের ৪ জানুয়ারি। রিকটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬.৭। এ ভূমিকম্পে পুরো দেশ কেঁপে ওঠে। আতঙ্কে মারা যান ৬ জন। গত ১৫ বছরে দেশ ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে ১৪১ বার। এসব ভূমিকম্পের মাত্রা মৃদু বা ছোট হলেও এগুলো বড় ধরনের ভূমিকম্পের শক্তি সঞ্চয় করে। তারা বলছেন, ভারত ও মায়ানমারে ভূগর্ভে যে টেকটোনিক প্লেট রয়েছে, তার ৬০ থেকে ৮০ ভাগ নড়ে গেলে ভয়াবহ ভূমিকম্পে এই অঞ্চল ধ্বংস স্তুপে পরিণত হবে। ভারত এবং মায়ানমারের টেকটোনিক প্লেট এবং ভূতাত্ত্বিক অবস্থান বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘত হানতে পারে। এ ধরনের আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ঢাকা।
দুই.
ভূমিকম্প এমন এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়, যা কখন হবে কেউ জানে না। ভূমিকম্প হবে, এমন পূর্বাভাস দেয়ার মতো কোন যন্ত্র আজ পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। কেবল ভূমিকম্প হওয়ার পর কত মাত্রায় হয়েছে, তা মাপার যন্ত্র রিখটার স্কেল আবিষ্কৃত হয়েছে। ফলে কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়। তবে ভূমিকম্প হওয়ার আগমুহুর্তে প্রাকৃতিক কিছু লক্ষণ দেখে আঁচ করা যায়। যেমন, কুকুরের অস্বাভাবিক ডাক, পাখির অস্থির উড়াউড়ি দেখে অনুমান করা যায় ভূমিকম্প হতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্কে যে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে, তার আগে পশু-পাখির এমন আচরণ দেখা গেছে। আসলে আমাদের দেশে ভূমিকম্প হতে পারে, এমন ভাবনা খুব কম লোকই ভাবে। কুকুর অস্বাভাবিকভাবে ডাকছে কিনা বা পাখি বেশি উড়ল কিনা, তা সবার খেয়ালে থাকে না। বুয়েটের এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, ঢাকায় ১৩ লাখ, চট্টগ্রামে ৩ লাখ ও সিলেটে এক লাখ বহুতল ভবন রয়েছে। এসব ভবনের ৭৫ শতাংশ ৬ তলা বা তার চেয়ে উঁচু। ৭ মাত্রার ভূমিক¤প হলে এই ভবনগুলো ও এর বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীতে প্রায় ১৩ লাখ ভবন রয়েছে। নতুন ভবন ছাড়া আছে বহু পুরানো ভবন, যাদের অধিকাংশই ভূমিক¤পসহনীয় নয়। বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানলে প্রায় ৭৩ হাজার ভবন ধুলোয় মিশে যাবে। ১৫ থেকে ২০ লাখ মানুষের মৃত্যু হবে। ভূতত্ত্ববিদরা বহুদিন ধরেই বলছেন, ঢাকায় একটি বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার মতো শক্তি ইতোমধ্যে সঞ্চিত হয়েছে। শেষবার এ অঞ্চলে ভূমিকম্প হয়েছিল ১৮৮৫ সালে। এরপর ১৩৭ বছর পার হয়ে গেছে। এই দীর্ঘ সময়ে ভূ-অভ্যন্তরভাগে বিপুল শক্তি সঞ্চিত হয়েছে। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে যে ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়েছে, তা বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার পূর্বাভাস। যেকোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। ভূতত্ত্ববিদরা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নীরিক্ষা চালিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ ভূমিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে রয়েছে। বাংলাদেশ অবস্থান করছে ভারতীয়, ইউরেশীয় এবং মায়ানমারের টেকটোনিক প্লেটের মধ্যে। ভারতীয় ও ইউরেশীয় প্লেট দুটি ১৯৩৪ সালের পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে হিমালয়ের পাদদেশে আটকা পড়ে আছে। অপেক্ষা করছে বড় ধরনের নড়াচড়া বা ভূমিকম্পের জন্য। এছাড়া বাংলাদেশ ৮টি ভূতাত্ত্বিক চ্যুতি এলাকা বা ফল্ট জোনে রয়েছে। এগুলো হলো বগুড়া, রাজশাহীর তানোর, সীতাকু--টেকনাফ, হালুয়াঘাট ডাওকী, চট্টগ্রাম, সিলেটের শাহজীবাজার, রাঙামাটির বরকল এবং ভারতের ত্রিপুরা। ১৯১৮ সালে বাংলাদেশের শ্রীমঙ্গলে ৭.৬ মাত্রার এবং ২০০৭ সালের নভেম্বরে ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। বুয়েটের মানমন্দিরের হিসাব অনুযায়ী, ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ৪ বছরে ৪ মাত্রার ৮৬টি ভূমিকম্প হয়। এ সময়ের মধ্যে ৫ মাত্রার চারটি ভূমিকম্প ধরা পড়ে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০০৭-এর জুলাই থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ৯০টি ভূ-কম্পন হয়। এর মধ্যে ৯টিরই মাত্রা ছিল ৫-এর উপরে। এগুলোর ৯৫ ভাগের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা শহরের ৬০০ কিলোমিটারের মধ্যে। এসব রেকর্ড থেকে দেখা যায়, মাত্রা না বাড়লেও ১৯৬০ সালের পর থেকে ভূমিকম্পের হার বাড়ছে। অর্থাৎ ঘন ঘন স্বল্পমাত্রার ভূমিকম্প হচ্ছে। ভূতাত্ত্ববিদরা বলছেন, এসব স্বল্প মাত্রার ভূমিকম্প বড় ধরনের ভূমিকম্পের শক্তি সঞ্চয় করছে। যেকোনো সময় ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদি এই মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে, তবে বাংলাদেশ বিশেষ করে ঢাকা শহরের অবস্থা কি হবে, তা কল্পনাও করা যায় না। ২০০৩ সালে ইরানে ৬.৬ মাত্রার ভূমিকম্পে ২৬ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। ২০০৫ সালে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের মুজাফফারবাদের কাছের উৎপত্তিস্থলে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় এক লাখ লোক মারা যায়। ২০১০ সালে হাইতিতে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে তুরস্কে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ৫৯ হাজারের বেশি মারা যায়। ভূমিকম্পের এসব মহাদুর্যোগের ঘটনা থেকে বোঝা যায়, এই মাত্রায় বাংলাদেশে ভূমিকম্প হলে কী ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি অনুযায়ী, যদি রাত ২টায় ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে, তবে ঢাকা শহরে ৮৮ হাজার মানুষ মুহুর্তেই মৃত্যুবরণ করবে। ঢাকা মুহুর্তে ধ্বংসস্তুপ ও মৃত্যুপুরীতে পরিণত হবে।
তিন.
ঢাকা শহর যে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে এবং এর ব্যাপ্তি বাড়ছে, তা বোঝার জন্য কোন বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন নেই। একজন অতিসাধারণ মানুষও স্বচক্ষে দেখছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ার ভূতাত্ত্বিক অবস্থানের কারণে ইরানের তেহরানের পর সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিবেচিত। বলা যায়, এক ভয়ংকর ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকা। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পেই ঢাকা শহর পুরোপুরি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হতে পারে। এর অন্যতম কারণ, ঢাকা শহরে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নিয়ম-কানুন মানার প্রবণতা কম। সরকারের সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে ৭৮ হাজার। এর মধ্যে সরকারি ভবন ৫ হাজার। খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের হিসেবে প্রায় ৭০ হাজার। এর মধ্যে ২ হাজার ৯৯৪টি ভবন জরুরি ভিত্তিতে ভেঙ্গে ফেলার ঘোষণা দেয়া হলেও তা কার্যকর হয়েছে এমন খবর পাওয়া যায়নি। চিিহ্নত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দূরে থাক, যেভাবে বিল্ডিং কোড না মেনে অনেক ভবন গড়ে উঠছে, তার বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এই যে অপরিকল্পিত ও নিয়মবর্হিভূতভাবে ভবন গড়ে উঠছে, এগুলো মানুষের সাক্ষাৎ মৃত্যুফাঁদ ছাড়া কিছুই নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব বহুতল ভবন একটু বড় ধরনের ভূমিকম্পের ধাক্কা সহ্য করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাদের এ সংশয় যে ভিত্তিহীন নয়, তা ভূমিকম্পে অতীতে অনেক ভবন হেলে পড়া ও ফাটল ধরা থেকেই বোঝা যায়। যেসব ভবনে ফাটল ধরেছে বা হেলে পড়েছে, সেগুলোতে কোনো সচেতন মানুষ বসবাস করতে পারে না। এসব ভবন ভেঙ্গে ফেলা ছাড়া আর কি উপায় আছে? তাহলে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে এসব চকচকে-ঝকঝকে বহুতল ভবন নির্মাণ করে কি লাভ? অথচ নির্মাণের সময় যদি ৭-৮ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় করে গড়ে তোলা হতো, তাহলে এই ক্ষতি হতো না। এসব ভবন গড়ে তোলার সময় খরচ বেড়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট মালিকরা ভূমিকম্প সহনীয় প্রক্রিয়া অবলম্বন করেন না। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা ভবনে ফাটল ধরলে ও হেলে পড়লে, পুরো অর্থই বিফলে যায়। অথচ প্রতি বর্গফুটে মাত্র ১০ টাকা বেশি ব্যয় করলেই ভূমিকম্প প্রতিরোধক ভবন গড়ে তোলা যায়। এমনিতেই রাজধানীর ভূগর্ভস্থ মাটির মান খারাপ ও নরম হওয়ায় ভূমিকম্প ছাড়াও ভবন দেবে যাওয়ার অনেক নজির রয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ছোট মাত্রার ভূমিকম্পে যেভাবে রাজধানীর ভবন দুলে উঠে, সেগুলোতে বসবাসকারী মানুষের মধ্যেও এক ধরনের আতঙ্ক সবসময় বিরাজ করা স্বাভাবিক। এমনিতে রাজধানী বসবাসের অনুপযোগী হয়ে আছে। পরিবেশ দূষণে দূষিত নগরীতে পরিণত হয়েছে। খোলা জায়গা খুবই অপ্রতুল। ভূমিকম্প হলে মানুষ যে বের হয়ে খোলা জায়গায় আশ্রয় নেবে, সে জায়গা নেই বললেই চলে। এমনকি, ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এলাকায় ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য উদ্ধারকারী প্রতিষ্ঠানের যাওয়ার মতো পর্যাপ্ত সড়ক নেই। আমরা দেখেছি, পুরনো ঢাকায় আগুন লাগলে ঘটনাস্থলে যেতে ফায়ার সার্ভিসকে কি কষ্টই না করতে হয়। সহজে সেখানে পৌঁছা তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। দ্রুত গিয়ে যে আগুন নিভাবে তার আগেই সব জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে যায়।
চার.
যখন কোন বড় ধরনের দুর্যোগের ঘটনা ঘটে, তখনই কেবল আমরা এ নিয়ে ঘন্টার পর ঘণ্টা কথা বলি। টেলিভিশন ও পত্র-পত্রিকায় এর প্রতিকার ও কি করণীয় নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বিস্তর আলাপ-আলোচনা করেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলও নড়েচড়ে বসে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ঘটা করে বলতে শুরু করে, আমরা এই করছি, সেই করছি। তারপর কিছুদিন যেতে না যেতেই সব উপদেশ ও পরামর্শ ধীরে ধীরে থেমে যায়। আর কোন খবর থাকে না। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, আরেকটি দুর্যোগের মুখোমুখি না হওয়া পর্যন্ত যেন টনক নড়বে না। অনেকটা এ মানসিকতা গড়ে উঠেছে, এ যাত্রা তো বেঁচে গেলাম, পরেরটা পরে দেখা যাবে। অথচ এখনই যে সচেতনতা ও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন, এ বিষয়টি আমলে নেয়া হচ্ছে না। ঢাকা শহর যে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হবে, তা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে ভূমিকম্প মোকাবেলার পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই। এর জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত রানা প্লাজা। এক রানা প্লাজার ভেতরে আটকে পড়া মানুষ উদ্ধার ও সবকাজ শেষ করতেই সময় লেগেছে ২৩ দিন। আর একসঙ্গে কয়েক হাজার ভবন ধ্বসে পড়লে কী অবস্থা হবে, তা কল্পনা করা যায় না। তাই জরুরী ভিত্তিতে রাজধানীতে যেসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে, সেগুলো ভেঙ্গে ফেলা অপরিহার্য। পাশাপাশি নতুন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে যাতে বিল্ডিং কোড মেনে ভূমিকম্প প্রতিরোধক ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয়, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। যেসব ভবনে ভূমিকম্প প্রতিরোধক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়নি, সেগুলোতে রেট্রোফিটিং-এর মাধ্যমে ভূমিকম্প সহনীয় করে তোলা বাধ্যতামূলক করা উচিত। এ ব্যাপারে বাড়িওয়ালা ও ভবন মালিকদের নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিতে হবে এবং তা কার্যকর হয়েছে কিনা সরেজমিনে তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে। ফায়ার সার্ভিসকে এখন থেকেই দুর্যোগ পরবর্তী উদ্ধার কাজ পরিচালনার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি দিয়ে সমৃদ্ধ করতে হবে। নগরবাসীকেও সচেতন হতে হবে। ভূমিকম্প শুরু হলে আতঙ্কিত না হয়ে আগে থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ভূমিকম্প শুরু হলে ঘরের দুই দেয়ালের সংযোগ স্থলে কিংবা যেখানে পিলার আছে সেখানে অবস্থান নিতে হবে। এছাড়া শক্ত খাটের নিচে যা ছাদ ধসে পড়লে ঠেকাতে পারে তার নিচে আশ্রয় নিতে হবে। আগে থেকে শুকনো খাবার, পানি ও টর্চ লাইট রেখে দিতে হবে। ভূমিকম্প দীর্ঘ হলে বৈদ্যুতিক লাইন ও গ্যাসের লাইন বন্ধ করে দিতে হবে। ভূমিকম্প শুরু হলে ভবনের বাইরে খোলা জায়গায় আশ্রয় নিতে হবে। বর্তমানে ফায়ার সার্ভিস যথেষ্ট সক্ষমতা অর্জন করলেও ভূমিকম্প মোকাবেলা করার মতো সক্ষমতা অর্জন করেনি। ফলে সরকারকে ভূমিকম্পের পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করতে হবে। যেসব ভবন বিল্ডিং কোড মেনে নির্মিত হয়নি কিংবা ভূমিকম্প সহনীয় করে গড়ে তোলা হয়নি, সেগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা ও ভূমিকম্প সহনীয় করে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানার আগেই সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সচেতন হতে হবে।
darpan.journalist@gmail.com
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

প্রশাসনের ঢিলেঢালা আচরণে দুষ্কৃতিকারীরা সমাজে আশকারা পাচ্ছে: রিজভী

মঁদিকে হারাল রিয়াল

৬ জেলায় মৃদু তাপপ্রবাহ, সিলেট বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে

নোয়াখালীতে বিধবার ঘরে ঢুকে ধর্ষণের হুমকি দিয়ে ডাকাতি

আড়াইহাজারে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে টহল পুলিশের গাড়ির ধাক্কা, পুলিশ সদস্যসহ ৭ জন আহত

ইউক্রেনে শান্তি চায় না ইউরোপীয় দেশগুলো, রাশিয়ার অভিযোগ

তালতলীতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণ বন্ধ করে পায়রা নদী রক্ষার দাবি

কক্সবাজার পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের জন্য আইনি-লিগ্যাল নোটিশ

কিম জং উনের সঙ্গে এখনো ভালো সম্পর্ক: ট্রাম্প

গুয়ানতানামো বে খালি, অভিবাসীদের ফিরিয়ে আনলো যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশের সংস্কারে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি জাতিসংঘের

গ্রিনল্যান্ড নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা, ন্যাটোকে যুক্ত করতে চান

ভারতের কেন এত ভয় বাংলাদেশ নিয়ে? বারবার কেন হাসিনাকেই চায় ওরা?

মহেশপুর সীমান্তে ভারতীয় নাগরিক আটক

নোয়াখালীতে বিআরডিবির অর্থ কেলেঙ্কারি: আওয়ামীলীগ নেতার ১১ বছর জেল, ৩১ লাখ টাকা জরিমানা

ন্যাটোর অস্ত্র উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান রুটের

৯ মিনিটেই শেষ ট্রেনের আগাম টিকিট, আধাঘণ্টায় ২০ লাখ হিট

যুক্তরাষ্ট্রে বিমানবন্দরে ১৭৮ আরোহীবাহী বিমানে ভয়াবহ আগুন

প্রিন্সিপাল মুফতি আব্দুল মতিনের প্রথম জানাজায় মুসল্লিদের ঢল