গ্যাস লাইনে লিকেজ ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি

Daily Inqilab ড. অজয় কান্তি মন্ডল

১২ মে ২০২৩, ০৮:১২ পিএম | আপডেট: ১৩ মে ২০২৩, ১২:০২ এএম

দেশে যখন পর্যায়ক্রমে একের পর এক বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা-ের মতো ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, তখন তিতাস গ্যাসের সরবরাহ লাইনের লিকেজে জনমনে উদ্বেগের সঞ্চার করে। দেশের জনগণ যখন ঈদ আনন্দ উপভোগে ব্যস্ত তখন রাজধানীবাসী গ্যাসের লিকেজ থেকে সম্ভাব্য বিস্ফোরণ আতঙ্কের প্রহর গুনেছে। ঈদের পরপরই রাজধানীর মগবাজার, ইস্কাটন, দিলু রোড, রামপুরা, বাড্ডা, মহাখালী, পূর্ব রাজাবাজার, ক্রিসেন্ট রোড, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও হাজারীবাগ এলাকায় তিতাস গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় সেখানে জনমনে ভীতির সঞ্চার করে। বিভিন্ন এলাকার মসজিদ থেকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে গ্যাসের চুলা না জ্বালানো এবং দেশলাই বা গ্যাস লাইট না জ্বালানোর অনুরোধ জানানো হয়। অনেকে আতঙ্কিত হয়ে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচরে আনতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কেউ কেউ জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ নম্বরে কল দিয়ে সহায়তা চায়।

পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, ঈদে শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায়, সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনে গ্যাসের চাপ বেড়ে যাওয়ায় ওভার-ফ্লো হয়ে গ্যাসের গন্ধ বাইরে আসছে। তিতাসের জরুরি ও কারিগরি দল বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। এ নিয়ে নগরবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়া এবং যার যার বাসার গ্যাসের চাবি বন্ধ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়। প্রায় একই ধরনের বিবৃতি দেয় জ্বালানি মন্ত্রণালয়। সেখানেও নগরবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ পুনরায় জানায়, সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনে গ্যাসের চাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল সেটার সমাধান হয়েছে।

অন্যদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একসঙ্গে এতগুলো জায়গায় গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার অর্থ হচ্ছে, তিতাসের গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনে অসংখ্য ছিদ্র রয়েছে। এটি অবশ্যই একটি বিপজ্জনক ইঙ্গিত। আমাদের ধারণা, জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের সাথে সকলেই একমত পোষণ করবে। পাইপালাইনের লিকেজ থেকে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার মতো বিপজ্জনক ঘটনাকে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ খাটো করে দেখলেও বিষয়টা মোটেই ফেলনা নয়। গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা মুহূর্তের মধ্যে ভয়াবহ রূপ নিতে পারত। কোন রকমে আগুনের সূত্রপাত হলে সেটা দেশের জন্য বড় বিপর্যয়ের কারণ হতো। ওভার-ফ্লো’র নামে যে ব্যাখ্যা তিতাস কর্তৃপক্ষ দিয়েছে সেটা কতটা যুক্তিসঙ্গত তা তাদের ভেবে দেখা উচিত। এতে প্রমাণিত হয় যে, তিতাসের পাইপলাইনে অসংখ্য লিকেজ আছে যেটা কোনভাবেই থাকার কথা নয়। স্বাভাবিক সময়ে গ্যাস সরবরাহকৃত পাইপলাইনে চাপ কম থাকায় এই লিকেজের উপস্থিতি বোঝা না গেলেও চাপ বেশি হওয়ায় বিষয়টা দৃশ্যমান হয়েছে। পাইপলাইনে ছিদ্র থাকার কারণে অনেক স্থানে গ্যাস জমে থাকার একটা ঝুঁকি তৈরি হয়, যেটা পরবর্তীতে বিস্ফোরণ, অগ্নিকা- বা বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হয়ে উঠতে পারে। সঞ্চালন এবং বিতরণ লাইনে লিকেজের ফলে জমে থাকা গ্যাস শক্তিশালী বোমার মতো। কোন রকমের আগুনের উৎস পেলে যেটা ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দিতে পারে। সেখানে বিপদ আসন্ন অবস্থায় নগরবাসীকে কর্তৃপক্ষের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ খুব বেশি বেমানান। কেননা, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের জনগণকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শের ঠিক পরের সপ্তাহে রাজধানীর গেন্ডারিয়ার ধূপখোলা বাজার এলাকায় গ্যাসলাইনের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় শিশুসহ ৯ জন দগ্ধ হয়েছে, যাদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

যেকোন ছুটি বা জাতীয় উৎসবে কল কারখানা বন্ধ থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। তাই বলে ব্যবহার কম হলে গ্যাসের চাপে পাইপের লিকেজ দিয়ে গ্যাস বাইরে আসবে, জনমনে আতঙ্ক ছড়ানোর পাশাপাশি প্রাকৃতিক এই সম্পদের অপচয় হবে, বিষগুলো কতটা যুক্তিসঙ্গত সেটা ভাববার বিষয়। যেখানে বছরের অধিকাংশ সময়ে নগরবাসী দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে পর্যাপ্ত গ্যাসের যোগান পায় না, সেখানে কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে এধরনের অসঙ্গতি মেনে নেওয়া কষ্টকর। এসব বিষয় দেখার জন্য গ্যাস বিতরণ কোম্পানির সুগঠিত ও অভিজ্ঞ টিম রয়েছে। তাদের সুনিপুণ দক্ষতা ও সুগভীর জ্ঞানের আওতায় উক্ত বিষয়গুলো যেকোন সময় ঘটতে পারে এমন ধারণা পূর্ব থেকেই থাকা উচিত ছিল বলে আমি মনে করি। কিন্তু বরাবরই এধরনের কাজে সংশ্লিষ্ট সংস্থার গাফিলতি প্রকাশ পায়। দুর্ঘটনা ঘটার পরে সামনে আসে এখানে এই ঘাটতি ছিল, ওখানে এটা করার জন্য অমুক বিভাগকে বলা হয়েছিলÑ এসব নানা ধরনের খোড়া অজুহাত। কিছুদিন আগে পরপর রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব ও সিদ্দিকবাজারে দুইটি ভয়াবহ বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। বহু মানুষের প্রাণহানি ও বহু সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে ওই বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা-ের ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে জমে থাকা গ্যাস থেকে। তদন্তকারী টিমের ধারণা, সুয়ারেজ লাইন বা কনসিল গ্যাসের লাইনের লিকেজ থেকে গ্যাস জমায় উক্ত বিস্ফোরণ হয়েছে। এ ধরনের দুর্ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা পাওয়া উচিত ছিল কিন্তু বরাবরই সেগুলো উপেক্ষা করা হচ্ছে।

রাজধানীবাসীর বাসাবাড়িতে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। ঢাকায় এই পাইপলাইনের পরিমাণ প্রায় ৭ হাজার কিলোমিটার। গত অর্থবছরে ঢাকার ১ হাজার ৬৮২ কিলোমিটার পাইপলাইনের মান কোন পর্যায়ে আছে, এর ওপর একটি জরিপ করেছে তিতাস। এতে পাইপলাইনের ওপরে ৯ হাজার ৯২৬টি স্থানে গ্যাসের উৎস হিসেবে মিথেনের উপস্থিতি শনাক্ত হয়। ধরা পড়ে ৪৫৯টি লিকেজ। পরবর্তীতে তা সংস্কার করা হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য, পুরো পাইপলাইন নিয়ে জরিপ করা হলে আরও অনেক লিকেজ পাওয়া যাবে। পাইপলাইন জরিপ করা হলেও গ্রাহকের বাসায় বাসায় গ্যাস সংযোগে লিকেজ আছে কিনা তা কখনো পরীক্ষা করা হয় না। সেটা করলে নিঃসন্দেহে এই লিকেজের সংখ্যা বহুগুণে বাড়বে। তিতাসের আওতাধীন এলাকায় মোট সংযোগ ২৮ লাখ ৭৭ হাজার ৬০৪টি, যার মধ্যে আবাসিক সংযোগ আছে ২৮ লাখ ৫৭ হাজার ৯৩৬টি। এত বেশি সংখ্যক আবাসিক সংযোগে অনেক বেশি লিকেজ মিলবে সেটি সহজেই অনুমেয়। বিগত দিনে বাসাবাড়িতে গ্যাস লিকেজের কারণে অগ্নিদুর্ঘটনার পরিসংখ্যান সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। তাই শুধুমাত্র সঞ্চালন এবং বিতরণ লাইনে লিকেজের অনুসন্ধান না চালিয়ে আবাসিক খাতে সংযোগ লাইনেও লিকেজের অনুসন্ধান করা উচিত।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সও একই কথা জানাচ্ছে। তাদের ভাষ্যমতে, লাইনের পাইপলাইনে সরবরাহকৃত গ্যাসের ক্ষেত্রে ত্রুটিপূর্ণ সংযোগই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। ফায়ার সার্ভিস বলছে, রাজধানীতে অগ্নিদুর্ঘটনার এক-তৃতীয়াংশ গ্যাসের পাইপলাইনের লিকেজ থেকে হয়। প্রতি বছরে হাজার হাজার অগ্নিকা-ের জন্য দায়ী এই ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস সংযোগ ও লাইন। ফায়ার সার্ভিস আরও বলছে, গ্যাসের যে লাইনগুলো আছে এর বেশির ভাগই পুরোনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ। এসব লাইন থেকে গ্যাস বের হয়ে বাতাসে মিশে বিস্ফোরকের মতো কাজ করে। কোনরকমের স্পার্ক (স্ফুলিঙ্গ) পেলেই দুর্ঘটনা ঘটে। গ্যাস যত বেশি জমা হবে এর ভয়াবহতাও তত বাড়বে। দিন যতই যাচ্ছে এই বিপদ ততই প্রবল হচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে এই গ্যাস লাইনের সংযোগের লিকেজের কারণে বহুগুণে বেড়েছে বিস্ফোরণ, অগ্নিকা-, প্রাণহানি ও কোটি কোটি টাকার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি।

পরিসংখ্যান বলছে, যেসব পাইপলাইনের মাধ্যমে রাজধানীবাসীর বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ করা হয় সেই পাইপলাইনের মেয়াদ ৩০ বছর থাকলেও মেয়াদ শেষ হওয়ার ১০ বছর পরও ওই একই পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিক কারণেই গ্যাস সরবরাহের লাইনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বাধ্যবাধকতা থাকলেও পাইপলাইনে ছিদ্র তৈরি হয়েছে কি না, সেটি ঠিকমতো তদারক করা হয় না। আবার কোনো সংযোগ স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন করার সময় গ্যাস সরবরাহ বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও গাফিলতি দেখা যায়। রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশ জেলাগুলোতে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাসলাইনের ছড়াছড়ি। গ্যাস নেটওয়ার্কভুক্ত অন্য জেলাগুলোতেও অবৈধ সংযোগ কম নয়। কিন্তু অজানা কারণে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো এই অবৈধ সংযোগ স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করতে পারে না। অবৈধ সংযোগের বিপরীতে বছরের পর বছর উচ্ছেদ অভিযান চলমান থাকলেও কঠোরভাবে সেগুলো তদারকি করা হয় না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবৈধ সংযোগের সন্ধান পেলে সাময়িকভাবে সংযোগ বিচ্ছিন্নও হয়। কিন্তু পরক্ষণে আবার সে সংযোগ পুনঃস্থাপিত হয়। এ কারণে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ লাইন বেড়েই চলেছে। এছাড়াও তিতাসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও নিবন্ধিত ঠিকাদার মিলে অবৈধ চক্র তৈরি করে। যারা বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ সংযোগ দিচ্ছে। অনেক এলাকায় রাজনৈতিক মদদে অবৈধ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। এ অবৈধ সংযোগকে ঘিরে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল ও তিতাসের অসাধু কর্মকর্তাদের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। তিতাসের কাছে অবৈধ সংযোগ দেওয়ার বহু তথ্য থাকলেও সেগুলো আমলে নেওয়া হয় না। মাঝেমধ্যে কিছু কিছু উচ্ছেদে অভিযান চালায়। যেমন, গেল বছরে তিতাসের পক্ষ থেকে ২৮৮টি অভিযান চালানো হয়েছে। এতে ৩৪০ কিলোমিটার অবৈধ গ্যাসলাইন উচ্ছেদ করা হয়েছে। বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে ২ লাখ ৭৪ হাজার চুলার সংযোগ। কিন্তু এতেও থেমে নেই অবৈধ সংযোগ। এই অবৈধ সংযগে পাইপলাইন বা সংযোগের কোনো মান যাচাই করা হয় না। এজন্য বড় বড় দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।

যে কোন কারণে গ্যাসের লিকেজ হতেই পারে। কিন্তু লিকেজের ফলে নির্গত গ্যাস যদি বদ্ধ জায়গায় আবদ্ধ না থেকে বাতাসে মিশে যায় তাহলে তেমন সমস্যা হয় না। সমস্যা হয় যখন গ্যাস বের হতে না পেরে জমে থাকে। কেননা নির্দিষ্ট স্থানে জমে থাকা গ্যাস ও বাতাসের অক্সিজেনের মধ্যে বিক্রিয়া হয়। এধরনের বিক্রিয়া যদি কোনরকম আগুনের উৎস বা স্ফুলিঙ্গ পায় তাহলে অত্যাধিক তাপ, চাপ ও গতির কারণে বৃহৎ আকারের বিস্ফোরণ হয়। সে বিস্ফোরণ মুহূর্তের মধ্যে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। ঠিক যেমনটি বিগত দিনের বিস্ফোরণগুলোতে হয়েছে। উন্নত বিশ্বে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সাপ্লাইয়ের জন্য আলাদা ইউটিলিটি ডিপার্টমেন্ট থাকে। এসব ডিপার্টমেন্ট সেবা দেয়ার পাশাপাশি ভোক্তাদের এগুলো ব্যবহারের মৌলিক টিপস, প্রশিক্ষণ, আপদকালীন সময়ে কী কী করণীয় এসব নানান বিষয়ে অবগত করার পাশাপাশি সময়ে সময়ে মহড়ার ব্যবস্থা করে থাকে। যেখানে কৃত্রিমভাবে পুরো আপদকালীন বিষয়ের আবহ সূচনা করে কীভাবে দুর্ঘটনা থেকে পরিত্রাণ পেতে হয় সে বিষয়ে জনগণকে হাতে কলমে শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি সচেতন করা হয়। ভূমিকম্পে কীভাবে তাৎক্ষণিকভাবে আত্মরক্ষা করতে হবে, অগ্নিকা-ে কীভাবে ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করতে হবে বা জরুরি নির্গমনের পথ বেছে নিতে হবে, গ্যাস সিলিন্ডার বা বাসা বাড়ির গ্যাস সংযোগ থেকে অগ্নিকা-ের সূত্রপাত হলে সেটাকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, কিংবা বিদ্যুৎ সংযোগের থেকে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে তার থেকে পরিত্রাণের উপায়সহ নানান বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেশে তেমনটি হয় কিনা আমার জানা নেই। অন্ততপক্ষে আমাদের ভাগ্যে কখনো এমন প্রশিক্ষণ জোটেনি। ফলস্বরূপ অগ্নি, গ্যাস, বিদ্যুৎ হতে একের পর এক বিপদে জনগণের আতঙ্ক বেড়ে চলেছে।

ওভার-ফ্লো’র নামে পাইপলাইনে অতিরিক্ত গ্যাসের চাপে চারিদিকে গ্যাসের ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টা মোটেই উপেক্ষা করা উচিত নয়। গ্যাস বিতরণ ও সঞ্চালনের সকল পাইপলাইনের ছিদ্রগুলো শনাক্ত করে যত দ্রুত সম্ভব পাইপলাইনগুলো প্রতিস্থাপন করে সমস্যার সমাধান করার পদক্ষেপ নিতে হবে। আবাসিক খাতের সকল সংযোগে লিকেজ আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে। অবৈধ সকল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। যেসকল অবৈধ চক্রের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অবৈধ সংযোগ প্রদান করা হয় তাদের চিহ্নিত করতে হবে। বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে গ্যাস বিতরণ কর্তৃপক্ষের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব সিন্ডিকেট চক্রকে সনাক্ত করে তাৎক্ষণিক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কীভাবে ধৈর্যের সাথে আপদকালীন মুহূর্ত মোকাবেলা করতে হবে সকল বিভাগের সমন্বয়ে সে বিষয়ে সময়ে সময়ে জনগণকে সচেতনতামূলক মহড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। লিকেজের মাধ্যমে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার এ ঘটনা সবার জন্য সতর্কবার্তা। এখান থেকে শিক্ষা নিতে না পারলে ভয়াবহ যেকোনো পরিণতির জন্যই নগরবাসীকে প্রস্তুত থাকতে হবে। একদিকে একের পর এক দুর্ঘটনায় সম্পদ ও প্রাণহানি হচ্ছে। অন্যদিকে লিকেজ থেকে গ্যাসের অপচয় হচ্ছে। গ্যাস বিতরণ সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ইচ্ছাকৃত দায়িত্বে অবহেলা, প্রকাশ্যে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবৈধ উপায়ে অধিক আর্থিক ফায়দা লোটাসহ নানা ধরনের অসঙ্গতি সাধারণ জনগণকে মৃত্যুঝুঁকির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার দায়িত্বশীল আচরণ, উপযুক্ত জনবল ও প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা গেলে দুর্ঘটনা বহুগুণে হ্রাস করা সম্ভব বলে প্রতীয়মান হয়।

 

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট।
[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বাগেরহা‌টে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

বাগেরহা‌টে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

ইউরোপীয় বর্জ্য যেভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যায়

ইউরোপীয় বর্জ্য যেভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যায়

নোয়াখালীর হাতিয়াতে ট্রাক বোঝাই ২টন কফি পাউডারসহ চালক-হেলপার আটক

নোয়াখালীর হাতিয়াতে ট্রাক বোঝাই ২টন কফি পাউডারসহ চালক-হেলপার আটক

পারমাণবিক স্থাপনাকে টার্গেট করার খবর ভুয়া

পারমাণবিক স্থাপনাকে টার্গেট করার খবর ভুয়া

ডি-ভোটার থেকে সিএএ ইস্যু, কোন অঙ্কে ভোট আসামে? কার পাল্লা ভারী?

ডি-ভোটার থেকে সিএএ ইস্যু, কোন অঙ্কে ভোট আসামে? কার পাল্লা ভারী?

হামলার পর ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনার ভিডিও প্রকাশ ইরানের

হামলার পর ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনার ভিডিও প্রকাশ ইরানের

আকার এবং স্থান বিবেচনায় ইসরাইলের আক্রমণ খুবই নগণ্য

আকার এবং স্থান বিবেচনায় ইসরাইলের আক্রমণ খুবই নগণ্য

যারা নুন-ভাতের কথাও ভাবতে পারত না, এখন তারা মাছ-মাংসের চিন্তা করে : প্রধানমন্ত্রী

যারা নুন-ভাতের কথাও ভাবতে পারত না, এখন তারা মাছ-মাংসের চিন্তা করে : প্রধানমন্ত্রী

ইরানে ইসরায়েলি হামলা, লাফিয়ে বাড়ল তেল ও স্বর্ণের দাম

ইরানে ইসরায়েলি হামলা, লাফিয়ে বাড়ল তেল ও স্বর্ণের দাম

ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর উড়িয়ে দিল ইরান

ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর উড়িয়ে দিল ইরান

তেহরানে বিমান চলাচল স্বাভাবিক

তেহরানে বিমান চলাচল স্বাভাবিক

পোশাক শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ শ্রীপুরে

পোশাক শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ শ্রীপুরে

ইরানে হামলার পর নাগরিকদের ইসরায়েল ছাড়তে বলল অস্ট্রেলিয়া

ইরানে হামলার পর নাগরিকদের ইসরায়েল ছাড়তে বলল অস্ট্রেলিয়া

কলাপাড়ায় এক কিশোরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

কলাপাড়ায় এক কিশোরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

ছাত্রলীগ নেতার পর এবার একই নারীর সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যানের ভিডিও ভাইরাল

ছাত্রলীগ নেতার পর এবার একই নারীর সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যানের ভিডিও ভাইরাল

চুয়াডাঙ্গায় ভ্রাম্যমাণ আদালত দেখে পালাতে গিয়ে পুলিশ সদস্যের সঙ্গে দ্রুতগতির মোটরসাইকেলের ধাক্কা, ৪জন আহত

চুয়াডাঙ্গায় ভ্রাম্যমাণ আদালত দেখে পালাতে গিয়ে পুলিশ সদস্যের সঙ্গে দ্রুতগতির মোটরসাইকেলের ধাক্কা, ৪জন আহত

লাল গালিচা, ডুবুরি আর একলা সন্ন্যাসী - ভারতের নির্বাচনের ব্যতিক্রমী কিছু ঘটনা

লাল গালিচা, ডুবুরি আর একলা সন্ন্যাসী - ভারতের নির্বাচনের ব্যতিক্রমী কিছু ঘটনা

টেকনাফে সীমান্ত দিয়ে ঢুকলো আরও ১৩ বিজিপি'র সদস্য

টেকনাফে সীমান্ত দিয়ে ঢুকলো আরও ১৩ বিজিপি'র সদস্য

ঝটিকা সফরে বুড়িচং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ঝটিকা সফরে বুড়িচং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ব্রিটেন নয়, এখন আমেরিকাই প্রিন্স হ্যারির ‘বাড়ি’! নথি প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল

ব্রিটেন নয়, এখন আমেরিকাই প্রিন্স হ্যারির ‘বাড়ি’! নথি প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল