ভারত মহাসগরীয় অঞ্চলে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে
১৩ মে ২০২৩, ০৮:১৭ পিএম | আপডেট: ১৪ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম

ঢাকায় দুই দিনব্যাপী ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স (আইওসি) অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ভারতের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন এবং সিঙ্গাপুরের এস রাজারতœম স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সহযোগিতায় এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মরিশাসের প্রেসিডেন্ট এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ২৫টি দেশের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী সম্মেলনে যোগ দেন। এছাড়া ডি-৮, সার্ক ও বিমসটেকের প্রতিনিধিসহ প্রায় ১৫০ জন বিদেশি অতিথি সম্মেলনে অংশ নেন। সম্মেলনে উদ্বোধনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারত মহাসগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধা জোরদার করা ও অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার পাশাপাশি এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ভবিষ্যতের জন্য সামুদ্রিক কূটনীতি জোরদার করার আহ্বান জানান। ভারত মহাসগরীয় অঞ্চলের উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা, টেকসই ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা এবং সামুদ্রিক নিরাপত্তা জোরদারসহ মোট ছয়টি প্রস্তাব পেশ করেন তিনি। কূটনীতিকরা বলেছেন, ঢাকার এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে বড় ধরনের রাজনৈতিক বার্তা দিচ্ছে বাংলাদেশ। কারণ, ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের পরাশক্তি ও প্রভাবশালী দেশগুলোর দৃষ্টি এখন ভারত মহাসাগর ও এতদঞ্চলের দেশগুলোর দিকে। তাদের আধিপত্য বিস্তার করা নিয়ে নতুন করে একধরনের ¯œায়ুযুদ্ধ শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র এবং চীনের মধ্যে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলকে ঘিরে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি ঘোষণা করেছে, যা চীন ভালভাবে নেয়নি। পরাশক্তি ও প্রভাবশালী দেশগুলো এ অঞ্চলের দেশগুলোকে নিজেদের পক্ষে নেয়ার প্রচ্ছন্ন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স অনুষ্ঠান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
সভ্যতার উন্নয়ন ও বিকাশে নৌপথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শহর-বন্দর, বসতি নদী কিংবা সমুদ্র তীরবর্তী এলাকাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যেসব দেশ নৌশক্তিতে শক্তিমত্তা অর্জন করেছে, সবচেয়ে বেশি এগিয়ে তারাই বেশি উন্নতি ও অগ্রগতি সাধন করতে পেরেছে। আকাশ ও স্থল পথে যোগাযোগের অভূতপূর্ব উন্নয়নের পরও নৌপথ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে রয়েছে। বিশ্বের পরাশক্তিগুলো এখন স্থলভাগের চেয়ে সমুদ্র অর্থনীতির দিকে বেশি মনোযোগী হয়ে উঠেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, সমুদ্রসম্পদ আহরণ, প্রভাব বিস্তার থেকে শুরু করে নিজেদের আধিপত্য শক্তিশালী করার জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। এ প্রতিযোগিতা এখন ভারত ও চীন মহাসগরকে কেন্দ্র করে ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরাশক্তিগুলোর পুরো মনোযোগ এখন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দিকে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে যখন এ নিয়ে জোর টানাপড়েন চলছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ অনেকটা নিরপেক্ষ অবস্থানে রয়েছে। বলা যায়, একটি ভারসাম্যমূলক অবস্থান রক্ষা করে চলেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে, কারো সাথে বৈরিতা নয়, সকলের সাথে বন্ধুত্ব। বাংলাদেশ এ অঞ্চলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। ফলে পরাশক্তিগুলো বাংলাদেশকে তাদের পাশে পাওয়ার জন্য অতি আগ্রহ প্রকাশ করছে। বাংলাদেশকে পাশে পাওয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। আর ভারত তো সব সময়ই বাংলাদেশকে তার পক্ষপুটে রাখতে চায়। ভারত মহাসগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর কোনো কোনোটির মধ্যে দ্বিধা কিংবা জড়তা রয়েছে। কেউ কেউ নিজের মতো করে বিভিন্ন জোটে যোগ দিয়েছে। এ প্রেক্ষিতে, বাংলাদেশের অবস্থান বিশেষ লক্ষ্যযোগ্য। ভারত তার স্বার্থে ট্রানজিটের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভূভাগ ব্যবহার করা শুরু করেছে। তার উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে মালামাল সরবরাহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সড়ক ও বন্দর ব্যবহার করছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ শুল্ক কিংবা ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বলার মতো কোনো সুবিধা পাচ্ছে না। অনেকটা একতরফাভাবেই ভারত বাংলাদেশের ভূখ- ব্যবহার করছে। এমতাবস্থায় ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশের অবস্থান ও অংশীদারিত্ব কেমন হবে, সেটাই প্রশ্ন। ভারতীয় কর্তৃত্বের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অবশ্যই কাম্য নয়।
ভারত মহাসাগরে আধিপত্য বিস্তার এবং এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়নে সমান সুযোগ থাকা অপরিহার্য। বিশেষ করে সামুদ্রিক অর্থনীতি, পারস্পরিক কূটনীতি, শান্তি ও সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে সমান অংশীদারিত্বমূলক অবস্থান নিশ্চিত করার ওপর জোর দিতে হবে। সব দেশের অংশীদারিত্ব, সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি ও সমতা সমান থাকতে হবে। বাংলাদেশকে কোনো একক শক্তির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা ঠিক হবে না। সবক্ষেত্রে সমতাভিত্তিক অংশীদারিত্বে থাকতে হবে। ভারত মহাসগরকে কেন্দ্র করে এতদঞ্চলে সামুদ্রিক অর্থনীতির বিকাশের যে বিশাল সুযোগ রয়েছে, তাতে সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত করা বাঞ্চনীয়। দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। এতে সবারই উন্নতি ও কল্যাণ হবে। সবার জন্য সমান সুযোগ ও অংশীদারিত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে এ অঞ্চলে শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

প্রশাসনের ঢিলেঢালা আচরণে দুষ্কৃতিকারীরা সমাজে আশকারা পাচ্ছে: রিজভী

মঁদিকে হারাল রিয়াল

৬ জেলায় মৃদু তাপপ্রবাহ, সিলেট বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে

নোয়াখালীতে বিধবার ঘরে ঢুকে ধর্ষণের হুমকি দিয়ে ডাকাতি

আড়াইহাজারে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে টহল পুলিশের গাড়ির ধাক্কা, পুলিশ সদস্যসহ ৭ জন আহত

ইউক্রেনে শান্তি চায় না ইউরোপীয় দেশগুলো, রাশিয়ার অভিযোগ

তালতলীতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণ বন্ধ করে পায়রা নদী রক্ষার দাবি

কক্সবাজার পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের জন্য আইনি-লিগ্যাল নোটিশ

কিম জং উনের সঙ্গে এখনো ভালো সম্পর্ক: ট্রাম্প

গুয়ানতানামো বে খালি, অভিবাসীদের ফিরিয়ে আনলো যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশের সংস্কারে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি জাতিসংঘের

গ্রিনল্যান্ড নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা, ন্যাটোকে যুক্ত করতে চান

ভারতের কেন এত ভয় বাংলাদেশ নিয়ে? বারবার কেন হাসিনাকেই চায় ওরা?

মহেশপুর সীমান্তে ভারতীয় নাগরিক আটক

নোয়াখালীতে বিআরডিবির অর্থ কেলেঙ্কারি: আওয়ামীলীগ নেতার ১১ বছর জেল, ৩১ লাখ টাকা জরিমানা

ন্যাটোর অস্ত্র উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান রুটের

৯ মিনিটেই শেষ ট্রেনের আগাম টিকিট, আধাঘণ্টায় ২০ লাখ হিট

যুক্তরাষ্ট্রে বিমানবন্দরে ১৭৮ আরোহীবাহী বিমানে ভয়াবহ আগুন

প্রিন্সিপাল মুফতি আব্দুল মতিনের প্রথম জানাজায় মুসল্লিদের ঢল