ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পেঁয়াজের অস্থির বাজার: আমদানিতে ক্ষতি চাষির

Daily Inqilab ইনকিলাব

২২ মে ২০২৩, ০৯:২৪ পিএম | আপডেট: ২৩ মে ২০২৩, ১২:০২ এএম

পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। প্রায় প্রতিদিনই কিছু না কিছু। রোজার সময় প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রী হয়েছে। এখন বিক্রী হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। মাসাধিককালের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণের বেশি হওয়ার কারণ কী, সে প্রশ্ন সঙ্গত। ইনকিলাবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বরাতে জানানো হয়েছে, চলতি বছর দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ৩৬ লাখ টন। উৎপাদন হয়েছে ৩৬ লাখ ৪১ হাজার টন। এর মধ্যে পচে ও ওজন কমে যাওয়ার কারণে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ পেঁয়াজ বিক্রীযোগ্য থাকে। এই হিসাবে এবার অন্তত ৩৪ লাখ টন পেঁয়াজ বিক্রীযোগ্য। তাতে পেঁয়াজের আকাল পড়ার কথা নয় এবং দামও এভাবে বাড়ার কথা নয়। অনেকেরই স্মরণে আছে, ২০১৯ সালে পেঁয়াজের দাম বাড়তে বাড়তে প্রতি কেজি ৩০০ টাকায় উঠেছিল। এর প্রধান কারণ ছিল ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়া। ভারত কোনোরূপ জানান না দিয়েই পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়। এই অনাকাক্সিক্ষত অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়। কৃষকরা বেশি বেশি পেঁয়াজ উৎপাদনে মনোযোগ দেয়। এখন পেঁয়াজ উৎপাদনে দেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। সেকারণে পেঁয়াজের দাম এতটা বাড়া কোনো বিবেচনাতেই যুক্তিযুক্ত নয়। উল্লেখ করা যেতে পারে, এবার পেঁয়াজের বাম্পার উৎপাদন হওয়ায় কৃষকরা ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করার দাবি জানায়। সে মোতাবেক, পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে দেয়া হয়। এখন দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি ফের শুরু হতে যাচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে সীমিত পরিসরে আমদানির অনুমতি দেয়ার বিষয় বিবেচনা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ইনকিলাবের খবরে বিশেষভাবে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে ভোমরা বন্দরের ওপারে ভারতের খোজাডাঙ্গা বন্দরে পেঁয়াজ বোঝাই অর্ধশত ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় আছে। অনুমতি পেলে ট্রাকগুলো বাংলাদেশ ঢুকবে।

দেশে যে পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে বলে বলা হচ্ছে, তাতে ঘাটতি বড়জোর তিন লাখ টন হতে পারে। উৎপাদিত ও মজুদ পেঁয়াজে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত দিব্যি চলতে পারে। তার আগেই কোন কারসাজি, কাদের কারসাজি বা সিন্ডিকেটবাজির জন্য পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হলো, সেটা অবশ্যই খুঁজে বের করা দরকার। শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ক’দিন আগে বাজার পরিস্থিতির উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, বাজারের অস্বাভিবকতা ও অস্থিরতার একমাত্র কারণ সিন্ডিকেট। তিনি আরো বলেন, মন্ত্রীদের মধ্যেও সিন্ডিকেট আছে। পেঁয়াজের বাজারের অস্থিরতার পেছনেও সিন্ডিকেটের হাত রয়েছে বলে পর্যবেক্ষক মহল, এমনকি সাধারণ মানুষও মনে করে। পেঁয়াজ যারা মজুদ করে দাম বাড়িয়েছে, তাদের লাভ ষোলআনা। আবার পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদনেও তাদেরই লাভ। তারা আমদানি করে ফের লাভবান হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী কদিন আগে হুংকার দিয়েছিলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়া অব্যাহত থাকলে আমদানি করা হবে। শেষ পর্যন্ত আমদানিই হচ্ছে। লাভের কড়ি যাদের পকেটে ওঠার, তাদের পকেটেই উঠবে। সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণ বা বশীভূত করতে পারেননি বাণিজ্যমন্ত্রী। বরং তিনি সিন্ডিকেটের কাছেই নতি স্বীকার করেছেন। এরকম নতি স্বীকার করতে আমরা দেখেছি ভোজ্যতেল ও চিনি সিন্ডিকেটের কাছেও। বাজারে সুশাসন ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় তার দক্ষতা, যোগ্যতা ও আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা তাই স্বাভাবিক। পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদনে পেঁয়াজচাষিরা যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তাতে দ্বিমত নেই। তাদের ঘরে যে পেঁয়াজ আছে, তার ন্যায্যমূল্য তারা পাবে কিনা সন্দেহ। পেঁয়াজচাষিদের মতে, প্রতি কেজি পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ পড়েছে ৩০-৩২ টাকা। সংরক্ষণেও কিছু ব্যয় হয়েছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা বেচলে তাদের তেমন লাভ না হলেও লোকসান হবে না। কিন্তু আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারে এলে প্রতি কেজির দাম ২৫-৩৪ টাকায় নেমে আসতে পারে বলে অনেকের ধারণা। সেক্ষেত্রে তাদের বড়রকমে ক্ষতির শিকার হতে হবে।

বড় ব্যবসায়ী ছোট ব্যবসায়ীদের খেয়ে ফেলছে। এই ব্যবসায়ীরাই সিন্ডিকেটবাজি করে উৎপাদকদের বঞ্চিত ও সর্বস্বান্ত করে দিচ্ছে। বড় ও ছোটর অসম প্রতিযোগিতায় ছোট গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, এটা কারো অজানা নেই। একইভাবে বড় পল্ট্রিফার্মের আগ্রাসনে ছোট পল্ট্রিফার্ম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরে মুরগীর বাচ্চা থেকে শুরু করে খাদ্য ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করছে বড় ফার্মগুলো। ছোট ফার্ম বড় ফার্মের দাপটে টিকতে পারছে না। সরকার ‘ব্যবসায়ীবান্ধব’ একথা মন্ত্রীদের কেউ কেউ বলতে দ্বিধা করেন না। ‘মন্ত্রীদের মধ্যেও সিন্ডিকেট আছে’ বলে সাক্ষ্য দেয়া হচ্ছে। ফলে যা বুঝার, তা বুঝতে কারো অসুবিধা হচ্ছে না। তবে মনে রাখতে হবে, দেশটা কেবল পয়সাওয়ালা ও ব্যবসায়ীদের নয়। দেশ সব মানুষের। সরকার ও মন্ত্রীরা সকলের। পক্ষপাত দুষ্ট আচরণ ও ব্যবস্থা তাই তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়। বাজারে কোনো পণ্যের দাম বাড়লেই আমদানি করতে হবে, এটা বাজার ব্যবস্থাপনার কৌশল নয়। কেন দাম বাড়লো, পণ্যের আসলেই ঘাটতি আছে কিনা, সেটা দেখতে হবে। সিন্ডিকেটবাজি হলে তার প্রতিকার করতে হবে। পেঁয়াজের বাজারের অস্বাভাবিকতার কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। এমন পদক্ষেপ নেয়া উচিত হবে না, যাতে পেঁয়াজচাষিরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয় কিংবা ভবিষ্যতে পেঁয়াজ চাষে অনীহা হয়। অন্যদিকে সিন্ডিকেটবাজিও কঠোরভাবে রুখতে হবে, যাতে ভোক্তাদের ওপর অতিরিক্ত মূল্যের চাপ সৃষ্টি না হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ দিশাহারা। তাদের বেঁচে থাকা, টিকে থাকাই এখন মুশকিল। এমতাবস্থায়, সমানে সিন্ডিকেটবাজি চলছে। এই অমার্জনীয় অন্যায় প্রতিহত করতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

উচ্ছ্বাসে ভাসছেন ইনজাগি

উচ্ছ্বাসে ভাসছেন ইনজাগি

ইউক্রেন নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষের হুঁশিয়ারি রাশিয়ার

ইউক্রেন নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষের হুঁশিয়ারি রাশিয়ার

নগর প্রতিদ্বন্দ্বিদের হারিয়েই ইন্টারের শিরোপা উদযাপন

নগর প্রতিদ্বন্দ্বিদের হারিয়েই ইন্টারের শিরোপা উদযাপন

পুলিশ শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা নয়, মানবিক কার্যক্রমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে: ডিএমপি কমিশনার

পুলিশ শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা নয়, মানবিক কার্যক্রমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে: ডিএমপি কমিশনার

রুশ হামলায় ভেঙে পড়েছে খারকিভ টিভি টাওয়ার

রুশ হামলায় ভেঙে পড়েছে খারকিভ টিভি টাওয়ার

ইউক্রেনের জন্য সর্বকালের বৃহত্তম সামরিক সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাজ্যে

ইউক্রেনের জন্য সর্বকালের বৃহত্তম সামরিক সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাজ্যে

খান ইউনিসের এক গণকবরেই মিলল ৩০০ লাশ

খান ইউনিসের এক গণকবরেই মিলল ৩০০ লাশ

দৌলতখানে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস

দৌলতখানে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস

হরিরামপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট যুদ্ধে চেয়ারম্যান পদে ৫ প্রতিদ্বন্দ্বী

হরিরামপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট যুদ্ধে চেয়ারম্যান পদে ৫ প্রতিদ্বন্দ্বী

ধর্ষণের পর ভিডিও ধারণ,জনতার হাতে আটক ২

ধর্ষণের পর ভিডিও ধারণ,জনতার হাতে আটক ২

মুসলিম শ্রমিক হত্যায় হিন্দু নেতারা চুপ কেন —মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী

মুসলিম শ্রমিক হত্যায় হিন্দু নেতারা চুপ কেন —মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী

যত সম্পদের মালিক কাতারের আমির

যত সম্পদের মালিক কাতারের আমির

বাগাতিপাড়ায় গবাদিপশু সহ ঘর পুড়ে ছাই

বাগাতিপাড়ায় গবাদিপশু সহ ঘর পুড়ে ছাই

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কড়া সমালোচনা যুক্তরাষ্ট্রের

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কড়া সমালোচনা যুক্তরাষ্ট্রের

যে তিন উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত

যে তিন উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত

ইসরাইল বিরোধী আন্দোলন করায় গুগলের ২৮ কর্মী বরখাস্ত

ইসরাইল বিরোধী আন্দোলন করায় গুগলের ২৮ কর্মী বরখাস্ত

দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে উপজেলা নির্বাচনের মাঠে বিএনপি নেতারা

দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে উপজেলা নির্বাচনের মাঠে বিএনপি নেতারা

আজ দুপুরে ব্যাংকক নেওয়া হচ্ছে বিএনপি নেতা মিন্টুকে

আজ দুপুরে ব্যাংকক নেওয়া হচ্ছে বিএনপি নেতা মিন্টুকে

ইসলাম গ্রহণ করলেন জনপ্রিয় ডাচ অভিনেতা

ইসলাম গ্রহণ করলেন জনপ্রিয় ডাচ অভিনেতা

সংসদ ভবন থেকে জুতো চুরি! খালি পায়ে ফিরলেন পাকিস্তানের এমপিরা

সংসদ ভবন থেকে জুতো চুরি! খালি পায়ে ফিরলেন পাকিস্তানের এমপিরা