মা-বাবার প্রতি অবহেলা বাড়ছে
১৯ জুন ২০২৩, ০৯:৩০ পিএম | আপডেট: ২০ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম
মা-বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। দুনিয়ার সব মানুষের বিকল্প কল্পনা করা সম্ভব হলেও মা-বাবার বিকল্প নেই। মা-বাবা উভয়ই সন্তানের জন্য শ্রেষ্ঠ সম্পদ। ইসলামে মা-বাবার অধিকার ও মর্যাদা কতটুকু তা বোঝানোর জন্য আল্লাহ বলেন, তোমরা ইবাদাত কর আল্লাহর, তাঁর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক কর না। আর বাবা-মার সঙ্গে উত্তম আচরণ কর। (সূরা নিসা- আয়াত : ৩৬)। আল্লাহ আরও বলেন, আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করবে না এবং বাবা-মার সঙ্গে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার কাছে বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সঙ্গে সম্মানজনক কথা বল। আর তাদের উভয়ের জন্য দয়াপরবশ হয়ে বিনয়ের ডানা নত করে দাও এবং বল, ‘হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন।’ (সূরা বনি ইসরাইল-আয়াত : ২৩,২৪)।
বর্তমানে আমাদের সমাজে নৈতিক অবক্ষয় এমন ধ্বংসাত্মক রূপ নিয়েছে। রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষাসহ এমন কোনো খাত নেই যেখানে নৈতিকতার লেশমাত্র অবশিষ্ট আছে। সাম্প্রতিক সময়ে মা-বাবার প্রতি সন্তানদের নিষ্ঠুর আচরণ বেড়ে গেছে। কী সচ্ছল, কী গরিব- সব ধরনের পরিবারে বেশির ভাগ বয়স্ক বাবা-মা এখন অবহেলার পাত্র, বঞ্চনার শিকার। অথচ তারা তাদের যৌবনে সন্তানকে মানসিক ও বৈষয়িকভাবে সক্ষম করে তুলতে কী না করেন! সেই তারা বার্ধক্যে পরিবারের কাছে হয়ে পড়ছেন মূল্যহীন। সমাজবিজ্ঞানীরা এর তত্ত্বীয় ব্যাখ্যা দিতে পারবেন নিশ্চয়। আমরা যারা সাধারণ মানুষ; যাদের কাঠামোগত জ্ঞান নেই; তাদের কাছে বিষয়টি পীড়াদায়ক। ইদানীং মা-বাবার সাথে ঘটে যাওয়া নিষ্ঠুর আচরণের দৃষ্টান্ত দেয়া যাবে ভূরি ভূরি।
সন্তান মা-বাবার সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করলেও বাবা-মা ছেলেমেয়ের জন্য চূড়ান্ত ত্যাগ স্বীকারে পিছপা হন না। তবু মা-বাবার প্রতি দিন দিন নিষ্ঠুরতা কেন বাড়ছে? এ প্রশ্নের জবাবে বলা যায়, ভোগবাদী জীবন সন্তানদের মা-বাবার প্রতি উদাসীন করে তুলেছে। পশ্চিমা দুনিয়ায় বৃদ্ধ বাবা-মাকে সন্তান কাছে রাখতে চায় না। সেখানে এ সংস্কৃতি পুরনো। কিন্তু আমাদের ঐতিহ্যবাদী সমাজেও বিষবৃক্ষটি এখন শিকড় গেড়েছে। ফলে সন্তানের কাছে বাবা-মার নিগৃহীত হওয়ার ঘটনা গণমাধ্যমে অহরহ প্রকাশ পাচ্ছে। এমন হৃদয়বিদারক একটি খবর কয়েক মাস আগে প্রকাশিত হয়েছে এক জাতীয় পত্রিকায়। ‘নাটোরে শতবর্ষী অন্ধ মাকে রাস্তায় ফেলে দিলো সন্তানরা’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নাটোরের শতবর্ষী পাঁচ সন্তানের জননী ওই মা অন্ধ। সন্তানরা তাকে রাতে রাস্তায় ফেলে দেয়। জেলার ছাতনী ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী তাকে তার বড় ছেলের বাড়িতে রেখে আসে। বৃদ্ধার দুই নাতি ও নাতবৌরা অন্ধ বৃদ্ধাকে রাতে থাকতে দেন গোয়ালঘরে।
প্রতিবেদন মতে, বৃদ্ধার তিন ছেলের আধা পাকা বাড়ি ও প্রয়োজনীয় জমিজমা থাকলেও তারা কেউ মায়ের দায়িত্ব নেননি। বৃদ্ধা পাশের গ্রামে বড় মেয়ের বাড়িতে থাকতেন। এ কারণে বয়স্কভাতার টাকা তিনি মেয়ের পরিবারে ব্যয় করতেন। এতে বাদ সাধেন ছোট দুই ছেলে আর বড় ছেলের ঘরের দুই নাতি। সবাই বয়স্কভাতার সমভাগ চান। টাকার ভাগবাটোয়ারার পর সিদ্ধান্ত হয়, তিন ছেলের পরিবারে এক মাস করে বৃদ্ধাকে রাখা হবে। এক মাস বৃদ্ধা ছিলেন ছোট ছেলের সংসারে। পরের মাসে বড় ছেলের কাছে থাকার কথা থাকলেও বড় ছেলে মাকে নেননি। তাই ছোট ছেলে অন্ধ মাকে ফেলে যান গ্রামের রাস্তায়। তবে বড় ছেলে বলেছেন, সংসারে তার নিজের কোনো দাম নেই। স্ত্রী মারা গেছেন। এখন দুই ছেলের দয়ায় তাকে বেঁচে থাকতে হয়। ইচ্ছে থাকলেও মায়ের জন্য কিছু করতে পারেন না তিনি। অবশেষে নাটোর জেলা প্রশাসন অমানবিক এ ঘটনার আপাতত মীমাংসা করেছে। বৃদ্ধাকে মেয়ের বাড়িতে রেখে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
ধর্ম ও আইন মতে, বাবা-মা দু’জনই সন্তানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি ধর্মগ্রন্থ মা বাবার সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মান নিশ্চিত করেছে। পরিবারেও মা-বাবার মর্যাদা ও সম্মান সবার উপরে। একজন বিশ্বাসীর কাছে নিজের ধর্মগ্রন্থ সত্যের মানদ-। তা সত্ত্বেও বাবা-মায়ের অধিকার বিষয়ে আমাদের দেশে রয়েছে সুনির্দিষ্ট আইন। মা-বাবা যখন বৃদ্ধ হন, কর্মক্ষম সন্তানের কাছে তখন তাদের আইনত কিছু প্রাপ্য রয়েছে। প্রচলিত আইনে বৃদ্ধ মা-বাবা সাবালক ও কর্মক্ষম সন্তানের কাছ থেকে প্রাপ্য সম্মান ও ভরণপোষণে আইনের আশ্রয় চাইতে পারেন। দেশে ‘পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন-২০১৩’ বলবৎ রয়েছে। এ আইনে প্রত্যেক কর্মক্ষম সন্তানকে মা-বাবার ভরণপোষণের নিশ্চয়তা দিতে হবে, এ বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
আইনে আছে, কোনো সন্তান তার মা কিংবা বাবা বা উভয়কে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো বৃদ্ধনিবাস কিংবা অন্য কোথাও একত্রে বা আলাদাভাবে বসবাস করতে বাধ্য করতে পারবে না। মা-বাবার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে হবে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা ও পরিচর্যা করতে হবে। মা-বাবাকে ভরণপোষণ না করলে এবং আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন না করলে অভিযুক্ত সন্তানের জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে। তবে সব থেকে বড় কথা নৈতিকতা। বিবেক বলে, প্রত্যেকের উচিত মা-বাবার যথাযথ অধিকার সংরক্ষণ করা। তাদের প্রতি গভীর মমতায় মনোযোগ দেয়া।
লেখক: শিকক্ষ
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল