ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১
পূর্বপ্রকাশের পর

পাকিস্তানে জনগণের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী জনগণও রুখে দাঁড়িয়েছে

Daily Inqilab মোবায়েদুর রহমান

০৪ জুলাই ২০২৩, ০৮:২০ পিএম | আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম

এখানে একটি প্রসঙ্গ উল্লেখ করা দরকার। পাকিস্তানে যেসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠী রয়েছে তাদের অন্যতম হলো তেহেরিকে তালেবানে পাকিস্তান পার্টি। অর্থাৎ টিটিপি। এরা প্রধানত বেলুচিস্তান ভিত্তিক। তবে তারা পাকিস্তানের অন্যান্য অংশেও অপারেট করছে। মুসলিম লীগ, পিপিপি এবং ইমরান খান অভিযোগ করেছেন যে টিটিপি একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। তারা বেলুচিস্তানকে পাকিস্তান থেকে আলাদা করতে চায়। বর্তমান মুহূর্তে পাকিস্তানে টিটিপির সন্ত্রাসী তৎপরতা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। আমরা বলছি না যে তারা বেলুচিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করতে সামর্থ্য হবে। কিন্তু তারা দিনের পর দিন যেভাবে অপারেশন চালিয়ে যাচ্ছে সেটি উদ্বেগ সৃষ্টি করার মত। বলা হয় যে টিটিপি পাকিস্তানে কর্মরত চীনা নাগরিককে হত্যা করেছে। কারণ চীন বেলুচিস্তান সংলগ্ন গোয়াদর গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করেছে। এছাড়া চীন পাকিস্তানে একটি মহাসড়ক নির্মাণ প্রায় সম্পন্ন করেছে। এটির নাম চীন পাকিস্তান অর্থনৈতিক সহযোগিতা সড়ক। এটিও পাকিস্তানের এক অঞ্চল থেকে অপর অঞ্চল অর্থাৎ বেলুচিস্তান পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে। পরবর্তীকালে যদি ইরানের সাথে চীনের মতৈক্য হয় তাহলে এই সড়ক ইরানের মধ্য দিয়ে প্রলম্বিত হবে।

যাই হোক, শেখ মুজিবের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা হস্তান্তর করেনি পাকিস্তান। তাকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরবর্তী ঘটনা সকলেই জানেন। ইমরান খানকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল। গ্রেফতারের পর সারা পাকিস্তান জ্বলে উঠেছিল। যে পাকিস্তান তাদের সেনাবাহিনীকে জীবনের থেকেও ভালোবাসতো সেই পাকিস্তানের জনগণ ইমরানকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে যে বিক্ষোভ করেছিল সেই বিক্ষোভে একজন কর্মরত লেফটেন্যান্ট জেনারেলের বাসভবন তছনছ করা হয় এবং সেটিতে অগ্নি সংযোগ করা হয়। এছাড়া অনেক সেনা স্থাপনাতেও অগ্নি সংযোগ করা হয়। নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকরা বলেন যে ইমরান খানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার অজুহাত হিসেবে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এইসব ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হয়েছিল। অতঃপর ইমরানের সপক্ষে সারা দেশব্যাপী যে বিক্ষোভ হয়েছিল ঐ বিক্ষোভকারীদের অপকর্ম বলে এগুলো চালিয়ে দেয়া হয়।

বর্তমানে পাকিস্তানের অবস্থা কি সেটি পরিষ্কার নয়। কারণ সেনাবাহিনী এখন আর পর্দার আড়ালে না থেকে প্রকাশ্যে বাইরে এসেছে। ফরমান জারি করা হয়েছে যে ইমরান খান এবং তার দল পিটিআই অর্থাৎ পাকিস্তান তেহারিকে ইনসাফ পার্টির নাম কোন সংবাদপত্রে ছাপানো যাবেনা এবং রেডিও ও টেলিভিশনে উচ্চারণ করা যাবে না। সোজা কথা গত মাসাধিক কাল ধরে ইমরান খান ইমরান খান এবং টিটিপি সম্পূর্ণরূপে পাকিস্তানের সমস্ত গণমাধ্যমে ব্ল্যাকড আউট। শুধু তাই নয়। ইতোমধ্যেই ইমরান খানের দলের বিশ হাজার কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপর ঘোষণা করা হয়েছে যে যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মধ্যে বেছে বেছে বেশ কয়েকজন নেতা ও কর্মীকে সামরিক আইনের অধীনে বিচার করা হবে। শোনা যায় যে ইতোমধ্যেই তাদের সামরিক আইনের অধীনে বিচার শুরু হয়েছে।

অবশ্য এতোটুকু জানা গেছে যে পাকিস্তানের একাধিক সাবেক প্রধান বিচারপতি, এবং সুশীল সমাজের বৃহৎ অংশ আইনের খুঁটিনাটি পর্যালোচনা করে মন্তব্য করেছেন যে সিভিলিয়ানকে অর্থাৎ বেসামরিক নাগরিককে সামরিক আইনে বিচার করা যায় না। বিষয়টি এখন পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। ৭ সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চে এই বিচার এখন চলছে। বিদেশি গণমাধ্যম থেকে যতটুকু জানা যায় তাতে দেখা যায় যে পাকিস্তানের বর্তমান প্রধান বিচারপতি ওমর আতা বান্দিয়াল এই মতের পক্ষে আছেন যে সামরিক আদালতে বেসামরিক মানুষের বিচার করা যায় না। সেনাবাহিনী যদি সরাসরি হস্তক্ষেপ না করতো তাহলে হয়তো সুপ্রিম কোর্ট রায় দিত যে সেনাবাহিনী বেসামরিক লোকজনদের বিচার করতে পারবে না। কিন্তু এখন অনেকের সন্দিহান যে ওমর আতা বান্দিয়াল যতই দুঃসাহসিক বিচারক হন না কেন ৭ লক্ষ সদস্য বিশিষ্ট সামরিক বাহিনীর এই প্রকাশ্য গণতন্ত্র ও গণবিরোধী ভূমিকার কাছে কতদিন ওমর আতা বান্দিয়াল মাথা উঁচু করে থাকতে পারবেন।

পাকিস্তানে যা ঘটছে এখন সেগুলো ন্যাক্কারজনক পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। সামরিক বাহিনী এবং আমেরিকা এই দুই শক্তি মিলে এখন মার্কিন পদলেহী এবং সামরিক বাহিনীর বশীভূত পাকিস্তান মুসলিম লীগকে ক্ষমতায় আনার চেষ্টা করছে। শুধু তাই নয় তাদের টার্গেট হলো দুর্নীতির অভিযোগে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। তিনি ইতিপূর্বে তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ওমর আতা বান্দিয়ালের সময় নয়, তার বেশ কিছুদিন আগে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট এক সর্বসম্মত রায়ে নওয়াজ শরীফকে দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং রাজনীতিতে তাকে আজীবন অযোগ্য বলে ঘোষণা করেন। এখন কয়েকদিন আগে পাকিস্তানের পার্লামেন্ট এই মর্মে একটি আইন জারি করেছে (সংশোধনী) যে আদালত কর্তৃক দ-িত কোন ব্যক্তি রাজনীতিতে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের বেশি অযোগ্য বলে ঘোষিত হবেন না। অর্থাৎ পাঁচ বছর অযোগ্য থাকলে পাঁচ বছর পর তিনি পুনরায় রাজনীতি করতে পারবেন।

নওয়াজ শরীফ বহুদিন হল লন্ডনে নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন। তার দন্ড পাঁচ বছরের বেশি অতিক্রান্ত হয়েছে। এখন পিপিপি এবং মুসলিম লীগ এই জন্য এই আইন পাস করেছে যে এই সংশোধনী পাস করার ফলে নওয়াজ শরীফ এখন রাজনীতিতে ফিরে আসার যোগ্য হয়েছেন। অর্থাৎ আগামী নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন।

কিন্তু প্রশ্ন হল যে নওয়াজ শরীফের অতীত যাই হোক, তিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী হন না কেন, তিনি মুসলিম লীগের একচ্ছত্র নেতা হোন না কেন, কিন্তু যদি ইমরান খান মুক্ত মানব হিসেবে রাজনীতি করতে পারেন, মুক্ত মানব হিসেবে সারা পাকিস্তানে জনসভা করতে পারেন তাহলে ইমরান খানও অনেকটা ৭০ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিব যে ফলাফল লাভ করেছেন ঠিক ততখানি না হলেও তিনি পাকিস্তানের চারটি প্রদেশেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবেন। নওয়াজ শরীফকে রাজনীতিতে এনেও তাকে ঠেকানো যাবে না। এই বিষয়টি আমেরিকা, সেনাবাহিনী, মুসলিম লীগ এবং পিপিপি ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে। তাই এখন পাকিস্তানের দেশি-বিদেশি শাসকগোষ্ঠীর সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হলো এই যে ইমরান খানকে রাজনীতি থেকে সরে যেতে হবে।

তাহলে ইমরান খান তথা পিটিআইয়ের ভবিষ্যৎ কি? ভবিষ্যৎ যে ভালো নয় সেটা যে কোন সাধারণ মানুষ বলতে পারে। কিন্তু কতখানি ভালো নয় বা কতখানি খারাপ সেটি অনেকে অনেক রকম আন্দাজ করছেন। কেউ কেউ মনে করেন যে তার পরিণতি পাকিস্তানের আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর মত হতে পারে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে ইনিই সেই জুলফিকার আলী ভুট্টো যিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তান দ্বিখ-িত হওয়ার পরেই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে পাকিস্তানকে ভারতের মোকাবেলায় এ্যাটম বোমার অধিকারী হতে হবে। সেই লক্ষ্যে দ্বিখন্ডিত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি বিজ্ঞানী আব্দুল কাদের খানকে পাকিস্তানে ডেকে পাঠান। তিনি আব্দুল কাদির খানকে বলেন যে আমাকে অর্থাৎ পাকিস্তানকে অবশ্যই এ্যাটম বোমা দিতে হবে। এর জন্য আব্দুল কাদির খান যতরকম রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা চান সেটি দেওয়া হবে। জুলফিকার আলী ভুট্টোর এই প্রতিজ্ঞা দেখে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার পাকিস্তান আসেন। সময় সম্ভবত ১৯৭৬ সাল। হেনরি কিসিঞ্জার পাকিস্তানের মাটিতে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট ভাষায় বলেন যে যদি জুলফিকার আলী ভুট্টো এ্যাটম বোমার নির্মাণ থেকে নিবৃত না হন তাহলে তাকে গুরুতর পরিনতি ভোগ করতে হবে।

জুলফিকার আলী ভুট্টো হেনরি কিসিঞ্জারের হুমকিতে মাথা নত করেননি। তিনি ডক্টর আব্দুল কাদির খানকে নিয়ে এটম বোমা নির্মাণে এগিয়ে যান। তখন এই মুসলিম লীগ এবং অন্যরা মার্কিন মদদে এবং সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সমগ্র পাকিস্তানে আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলাকে অজুহাত হিসেবে নিয়ে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধান সেনাপতি জেনারেল মোঃ জিয়াউল হক পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করেন। এর কিছুদিন পর জুলফিকার আলী ভুট্টোকে গ্রেফতার করা হয়।

জুলফিকার আলী ভুট্টো আর ছাড়া পাননি। এখানে একটি কথা বলতে ভুলে গেছি। জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের পর ভুট্টোও সারা পাকিস্তান চষে বেড়ান এবং মার্কিন বিরোধী এবং সেনা বিরোধী বক্তব্য দিতে থাকেন। তারও জনপ্রিয়তা প্রতিদিন বাড়তে থাকে। জুলফিকার আলী ভুট্টোর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তাকে আমেরিকা এবং সেনাবাহিনী ভয় পেয়ে যায় এবং সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করে। ক্ষমতা গ্রহণ করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। তারা জুলফিকার আলী ভুট্টোকে গ্রেফতার করে। এরপর একটি সাজানো মামলায় তাকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়। পিপলস পার্টির অপর এক নেতা চলন্ত গাড়িতে গুলিবর্ষণে নিহত হন। জিয়াউল হক এখানে মামলাটি এভাবে সাজান যে ঐ গুলিবর্ষণের বা ঐ ব্যক্তিকে হত্যা করার জন্য জুলফিকার আলী ভুট্টোর নির্দেশ ছিল। অর্থাৎ জুলফিকার আলী ভুট্টোকে এই মামলায় হুকুমের আসামি করা হয়। অতঃপর তড়িঘড়ি করে বিচার করে ভুট্টোকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয় এবং যথাসময়ে সেই মৃত্যুদ- কার্যকর হয়। ফাঁসির একদিন আগেও ভুট্টো ভাবতে পারেননি যে তিনি যে পাকিস্তানকে পারমাণবিক বোমা উপহার দিয়েছেন, তাকে এর পুরস্কার হিসেবে ফাঁসির রজ্জুতে জীবন দিতে হবে? কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই করুন পরিনতিই জুটলো জুলফিকার আলী ভুট্টোর ভাগ্যে।

ফিরে আসছি ইমরান খানের কথায়। ইমরান খানের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত প্রাপ্ত সংবাদ অনুযায়ী এর মধ্যেই ১২১টি মামলা দেওয়া হয়েছে। এই মামলাগুলোর মধ্যে একটি হল হত্যা মামলা।

১৯৭৪ সালে লাহোরে আহমেদ রাজা কাসুরি নামের একজন রাজনীতিবিদকে হত্যার জন্য কাসুরির গাড়িতে হামলা করা হয়। হামলায় রাজা কাসুরি বেঁচে গেলেও তার পিতা আহমেদ কাসুরি নিহত হন। কাসুরি নিহত হওয়ায় হুকুমের আসামি হিসেবে ভুট্টোর ফাঁসি হয়।

ইমরান খানের বিরুদ্ধে একই রকম একটি মামলা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আব্দুর রাজ্জাক নামে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী খুন হয়েছেন। সেই হত্যা মামলাতেও ইমরান খানকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। মামলাটি দায়ের করেছেন আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে সিরাজ আহমেদ। সিরাজ আহমেদ অভিযোগ করেছেন যে তার পিতার হত্যার পেছনে ইমরান খানের হাত রয়েছে। লক্ষ্য করার বিষয় হলো এই যে আব্দুর রাজ্জাক খুন হয়েছেন বেলুচিস্তানের কোয়েটায়। তাও আবার চলন্ত গাড়িতে গুলি নিক্ষিপ্ত হওয়ার ফলে। তার শরীরে ষোলটি গুলি লেগেছিল। হত্যাকারীরা কিন্তু কেউ ধরা পড়েনি। তদন্ত শুরুর আগেই সরকারের তরফ থেকে বিশেষ করে নওয়াজ শরীফের কন্যা বর্তমান তথ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ বলতে থাকেন যে এই হত্যার পেছনে ইমরানের হাত রয়েছে এবং তার যথাযোগ্য বিচার হবে।

এই হলো পাকিস্তানের সর্বশেষ পরিস্থিতি। এখন যেহেতু পাকিস্তান থেকে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে না, যেহেতু গণমাধ্যম গুলিতে সঠিক খবর পাওয়া যাচ্ছে না, যেহেতু গণমাধ্যম গুলির উপর ইমরান খান এবং পিটিআই সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, সেজন্য পাকিস্তানের সঠিক পরিস্থিতি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পাকিস্তানের বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং জিও নিউজের শীর্ষ কর্মকর্তা হামিদ মীর মনে করেন যে শাহবাজ শরীফের প্রশাসন তথা ইমরান খান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানে নির্বাচন ঠিকই দেবে। তবে ইমরান খানের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে নয়। অর্থাৎ তার মতে প্রথমে ইমরান খানকে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করা হবে।

তবে ইতিমধ্যেই সামরিক বাহিনীর চাপে ইমরান খানের দলের তৃতীয় শীর্ষ ব্যক্তি আসাদ ওমর সহ অনেকেই তার দল ত্যাগ করেছেন। এটি এখন ওপেন সিক্রেট যে এই যে গণহারে ইমরান খানের দলত্যাগের পেছনে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ হাত রয়েছে। এখনো একজন শীর্ষ নেতা যে ইমরান খানের পাশে আছেন তিনি হলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশী। তবে এমন জল্পনা রয়েছে যে মাহমুদ কোরেশীর ওপরেও সামরিক বাহিনীর চাপ রয়েছে। সামরিক বাহিনী তার মাধ্যমে ইমরান খানকে বলছে যে ইমরান খান রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান। তাহলে হয়তো তিনি প্রাণে বেঁচে যাবেন।

এই পরিস্থিতিতে পিটিআইয়ের ভবিষ্যৎ কি সেটি সকলের অজানা। এই পরিস্থিতিতে ইমরান খানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কি সেটিও সকলের অজানা। এমনকি এই পরিস্থিতিতে ইমরান খানের ব্যক্তি জীবনের ভবিষ্যৎ কি সেটিও অনিশ্চিত। একটি মহল মনে করেন যে ইমরান খানকে হয়তো জুলফিকার আলী ভুট্টোর পরিণতি বরণ করতে হবে। অর্থাৎ জুলফিকার আলী ভুট্টোর মত হয়তো তাকেও ফাঁসি দেওয়া হবে। ইমরান খানের ভাগ্যে কি হবে সেটি একমাত্র সৃষ্টিকর্তা আল্লাহই জানেন।

তবে পর্যবেক্ষক মহলের আশঙ্কা, যেভাবে এখন পাকিস্তান চলছে, যেভাবে পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ এবং পাকিস্তানের চারটি প্রদেশেই অভূতপূর্ব জনপ্রিয় দল পিটিআই এবং একই সমান জনপ্রিয় নেতা ইমরান খান, তেমন লক্ষ কোটি জনগণের সমর্থিত নেতার বিরুদ্ধে যদি কোন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় এবং তার দলকেও যদি নির্বাচন থেকে দূরে সরে রাখতে হয় তাহলে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তাদের ক্ষমতা এবং প্রভাবের লোভে এত অন্ধ হয়েছেন যে তারা এ কথা চিন্তা করছেন না যে তাদের সীমান্তের এক বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে বৈরি ভারত। পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে রয়েছে তালেবান শাসিত আফগানিস্তান। এ কথা ঠিক যে বর্তমান তালেবান শাসকদের ক্ষমতায় আনার পেছনে ইমরান খানের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। তারপরেও এখন পাকিস্তানের বর্তমান শাসকদের সাথে তালেবানদের বড় মনোমালিন্য চলছে। এমনকি দুই এক জায়গায় সীমান্ত সংঘর্ষও হয়েছে। তার ওপরে রয়েছে টিটিপি অর্থাৎ তেহেরিকে তালেবানে পাকিস্তান। যে জনগণ হলো একটি দেশের সর্বশেষ ভরসা সেই জনগণ অর্থাৎ বর্তমান পাকিস্তানের জনসংখ্যা হল ১৮ কোটি। ১৮ কোটি মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মুসলিম লীগ, পাকিস্তান পিপলস পার্টি, সেনাবাহিনী এবং নেপথ্যে আমেরিকা পাকিস্তান রাষ্ট্রটির ভবিষ্যৎকেই অন্ধকারাচ্ছন্ন করে ফেলবে বলে শুধুমাত্র পাকিস্তানের সুধীসমাজ নন, আন্তর্জাতিক মহলও এই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

ইতোমধ্যেই ইংল্যান্ডে নওয়াজ শরিফের গাড়ির ওপর হামলা হয়েছিল। হামলা করেছিল বিক্ষুব্ধ পাকিস্তানি প্রবাসীরা। কানাডা এবং আমেরিকার নিউইয়র্কের কোন কোন স্থানে ইমরান খানের সপক্ষে বিক্ষোভ হয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ইমরানের বিরুদ্ধে বানোয়াট অভিযোগ, মামলা ইত্যাদি বাতিল করার আবেদন জানিয়েছেন। আমেরিকা যেখানে সরাসরি ইমরান বিরোধী ভূমিকায় রয়েছে সেখানে অন্যেরা বিশেষ করে পশ্চিমা দুনিয়া কতদূর এসব মানবাধিকার সংগঠন সমূহের কথা শুনবেন সে ব্যাপারে অনেকেই সংশয়বাদী।

মোটকথা গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খানকে যখন রাওয়ালপিন্ডির জনসভায় পয়েন্ট ব্লাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করা হয়, গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যাওয়ার পর লিয়াকত আলী খানের শেষ কথা ছিল, “খোদা পাকিস্তানকে হেফাজত কারে”। আজকে বিশ্ব বিবেক মরহুম লিয়াকত আলী খানের কথার প্রতিধ্বনি করে বলছে, “খোদা পাকিস্তানকে হেফাজত কারে”।

Email: [email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার

ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার

সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার

সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার

ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার

ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার

আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়

আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়

হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড  ইংল্যান্ড

হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড  ইংল্যান্ড

পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের

পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে

বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত

বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে

বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা

বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী  প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন

উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন

সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।

পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।