ঢাকা   বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩ | ২০ আশ্বিন ১৪৩০

তরুণদের কাজে লাগাতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:২৩ পিএম | আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম

সরকারের দাবি, দেশ দ্রুত উন্নত হচ্ছে, এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের দৃশ্যমান নজির হাজির করে বলছে, রাজধানীর ফ্লাইওভার, উড়াল সড়ক, মেট্রোরেল, পদ্মাসেতু কর্ণফুলি টানেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ইত্যাদি উন্নয়নের একেকটি মাইলফলক। বলছে, জিডিপির আকার, মাথাপিছু আয় ক্রমবর্ধমান। জীবনযাত্রার মান বাড়ছে। বাস্তবতাও সাক্ষ্য দিচ্ছে, একদা বাসাবাড়িতে এসি-ফ্রিজ এবং প্রাইভেট কার থাকাকে বিলাসিতা মনে করা হতো। এখন এসব অতি প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও স্বাভাবিক ব্যাপার। সরকারের মতে, বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে চলে গেছে দেশ। উন্নত দেশে পরিণত হতেও খুব একটা বাকী নেই। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, এহেন সুখ-স্বাচ্ছন্দ ও সম্পদপূর্ণ দেশ থেকে মানুষ বিশেষত, তরুণরা বিদেশে চলে যাচ্ছে কেন? তাদের মধ্যে বিদেশে পাড়ি দেয়ার প্রবণতা বাড়ছে কেন? ইনকিলাবের এক খবরে বলা হয়েছে, প্রতি বছরই বিদেশগামীদের সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে গ্রামের মধ্যবিত্ত, উচ্চ শিক্ষিত তরুণ যেমন আছে, তেমনি মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্ত তরুণও আছে। প্রধানত তরুণদের একাংশ উচ্চশিক্ষার জন্য, আর একাংশ চাকরির জন্য বিদেশে যাচ্ছে। শেষোক্তদের মধ্যে শিক্ষিত, অর্ধ-শিক্ষিত ও অশিক্ষিত তরুণরা রয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বিদেশে যাচ্ছে উচ্চশিক্ষা লাভের আশায়। শিক্ষা শেষে এদের কম সংখ্যকই দেশে ফিরে আসছে। এতে মেধা পাচার হচ্ছে, বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রাও চলে যাচ্ছে। চাকরির জন্য যারা বিদেশে যাচ্ছে, তারা মূলত জীবনযাত্রায় স্বাচ্ছন্দ আনার জন্যই যাচ্ছে। বেকার জীবনের ইতি এবং পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা প্রতিষ্ঠাই তাদের লক্ষ্য। এজন্য তারা যে কোনো রকম ঝুঁকি নিতে পিছপা হচ্ছে না। বৈধ পথে যারা যাচ্ছে, তাদেরও নানা রকম বিড়ম্বনা ও প্রতারণার শিকার হওয়ার আশংকা থাকছে। আর অবৈধ পথে যারা যাচ্ছে, তারা সম্পূর্ণ অনিশ্চয়তার মধ্যেই যাচ্ছে। তারা জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছে। মরুভ‚মি, পাহাড়-জঙ্গল, সাগর অতিক্রম করে ইউরোপ-আমেরিকা যাওয়ার চেষ্টা করছে এবং এই চেষ্টায় তাদের অনেককে বিপদে-বেঘোরে কিংবা সাগরে ডুবে প্রাণ হারাতে হচ্ছে। ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির তথ্য মতে, অবৈধভাবে ভ‚মধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের স্থান তৃতীয়। প্রতিবছর এই সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে প্রায় ৫০০ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়। অপরিসীম দুঃখ-কষ্ট ও জীবনের ঝুঁকি অতিক্রম করে কাক্সিক্ষত দেশে যারা পৌঁছাচ্ছে, তারাও সেখানে নানা দুর্ভোগ-অনিশ্চয়তার শিকার হচ্ছে।

দেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ ও মান যদি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের হয়, শিক্ষা লাভের পর উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ যদি থাকে, তবে কেউ উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে চাইবে না, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবতা হলো, উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়লেও শিক্ষার পরিবেশ ও মান নেই বললেই চলে। এতে বরং শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সরকারের অনুকম্প ছাড়া কাদাচিৎ হয়। এ অবস্থায় শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে হতাশা, মানসিক বৈকল্য ও অপরাধ প্রবণতা ইত্যাদি বাড়ছে। তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা মারাত্মক উদ্বেগের কারণে পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীও আত্মহত্যা করছে। পর্যক্ষেকদের মতে, দারিদ্র্য, বৈষম্য, অপ্রাপ্তি, বঞ্চনা, ব্যর্থতা ইত্যাদি তাদের আত্মহত্যার উল্লেখযোগ্য কারণ। শিক্ষিত-অশিক্ষিত তরুণ মাত্রই একটি কমন সমস্যার সম্মুখীন। সেটা হলো, কর্মসংস্থানের অভাব বা বেকারত্ব। যে শিক্ষিত তরুণরা উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাচ্ছে, তাদের লক্ষ্য উচ্চশিক্ষা হলেও প্রকৃত লক্ষ্য উপযুক্ত কর্মসংস্থান এবং অপেক্ষাকৃত উন্নত জীবনযাপন। অন্যদিকে শুধুমাত্র কর্মসংস্থান বা উন্নত দেশে অভিবাসনের জন্য শিক্ষিত-অশিক্ষিত তরুণরা দলে দলে বিদেশমুখী হচ্ছে। এখানে স্মরণ করা দরকার, প্রতিবছর অন্তত ২০ লাখের বেশি তরুণ কর্মসংস্থানের জন্য শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। তাদের কিছু সংখ্যকের দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থান হলেও অধিকাংশই বেকার থেকে যাচ্ছে। এভাবে বেকারের সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়ছে। আমাদের দেশের জনসংখ্যার মধ্যে তরুণদের অংশই বেশি। এটা আমাদের জন্য বোনাস। অনেক দেশেই বয়স্ক নাগরিকের সংখ্যা বেশি, তরুণ কম। ফলে কাজের লোকের অভাব। কাজের জন্য জনশক্তি আমদানি করেও অনেক দেশ পার পাচ্ছে না। অথচ, আমাদের তরুণদের কাজ দিতে পারছি না, কাজে লাগাতে পারছি না। ২০৪০ সালের পরে এ অবস্থা আমাদেরও থাকবে না। জন্মহার-মৃত্যুহার আরো কমবে। অতএব, এই সময়ের মধ্যে আমাদের তরুণদের উত্তমরূপে কাজে লাগাতে হবে। উন্নয়নে তাদের অংশিদারিত্ব বাড়ানোর বিকল্প নেই।

উন্নয়নের নামে আমাদের দেশে যা কিছু হচ্ছে, তা আসলে অবকাঠামো উন্নয়ন ছাড়া কিছু নয়। উন্নয়নের জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন আবশ্যক বটে, তবে সবার আগে প্রয়োজন উৎপাদনের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের উন্নয়ন। অবকাঠামোখাতে ব্যয় অনুৎপাদনশীল ব্যয় হিসেবে গণ্য। বিনিয়োগে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দাবি করে উৎপাদনশীলখাত। আর উৎপাদনশীলখাতে বিনিয়োগ হলে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। বেকারত্ব লাঘব হয়। মানুষের আয় বাড়ে। রফতানি ও ব্যবসা-বাণিজ্যর প্রসার ঘটে। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, দেশে উৎপাদনশীলখাতে বিনিয়োগ তেমন একটা হচ্ছেই না। বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে না। তেমনি বিদেশি বিনিয়োগও। অর্থনৈতিক জোন ও শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য সরকার চেষ্টা করেও সফল হচ্ছে না। অকাঠামো ও বিদ্যুৎ খাতের বিনিয়োগে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের যত লাভ, দেশের ও দেশের মানুষের তত লাভ নয়। কাজেই, সরকারের উচিত উৎপাদনশীলখাতে বিনিয়োগ আনা বা বাড়ানো, যা কর্মসংস্থান বাড়াবে, উৎপাদন, রফতানি বাড়াবে। এই সঙ্গে মানবসম্পদ উন্নয়নে সরকারকে যথোচিত গুরুত্ব দিতে হবে। দক্ষ জনশক্তি দেশের কর্মক্ষেত্রসমূহে যেমন প্রয়োজন, তেমনি বিদেশেও দক্ষ জনশক্তির চাহিদা বাড়ছে। এই উভয় শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা হলে বেকারত্বের অভিশাপ দূর করা ও তরুণদেরও ভালোভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হবে।

 

 

 

 

 

 

 


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণ নয়
প্রাথমিক শিক্ষায় শিশুদের মধ্যে প্রতিযোগিতা কাম্য নয়
রাজনৈতিক একাধিপত্য ও বিচারহীনতা থেকে চরম সামাজিক অবক্ষয়-অপরাধ প্রবণতা
ভূমিকম্পের ক্ষতি মোকাবেলায় জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে
সড়কটি সংস্কার করা জরুরি
আরও

আরও পড়ুন

ইসলাম ধর্মে মনোযোগী হওয়ায় পাক ক্রিকেটাররা খুবই শৃঙ্খলাপরায়ন: হেইডেন

ইসলাম ধর্মে মনোযোগী হওয়ায় পাক ক্রিকেটাররা খুবই শৃঙ্খলাপরায়ন: হেইডেন

মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকাকালীনই চাকরি গেল গুগল কর্মীর! ভাইরাল পোস্ট

মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকাকালীনই চাকরি গেল গুগল কর্মীর! ভাইরাল পোস্ট

প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরেছেন

প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরেছেন

গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে আঘাত, নিউজক্লিকের ঘটনায় প্রতিবাদ ভারতের সাংবাদিকদের

গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে আঘাত, নিউজক্লিকের ঘটনায় প্রতিবাদ ভারতের সাংবাদিকদের

প্রেসিডেন্ট হয়েই মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনা সরানোর ঘোষণা চীনপন্থী মুইজ্জুর

প্রেসিডেন্ট হয়েই মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনা সরানোর ঘোষণা চীনপন্থী মুইজ্জুর

তৃণমূলের এমপিদের উপরে দিল্লি পুলিশের বর্বরোচিত হামলা, রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ

তৃণমূলের এমপিদের উপরে দিল্লি পুলিশের বর্বরোচিত হামলা, রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ

দিল্লিতে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার নিয়ে যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

দিল্লিতে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার নিয়ে যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী গ্রুপ 'আরসা' ও 'আরএসও' এর সংঘর্ষে নিহত ২

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী গ্রুপ 'আরসা' ও 'আরএসও' এর সংঘর্ষে নিহত ২

রাজধানীতে মিশরীয় খাদ্য উৎসব, ৬ দিন চলবে

রাজধানীতে মিশরীয় খাদ্য উৎসব, ৬ দিন চলবে

জার্মানির একত্রীকরণ ‘নিখুঁত’ হয়নি ৩৩ বছরেও

জার্মানির একত্রীকরণ ‘নিখুঁত’ হয়নি ৩৩ বছরেও

ফের শুরু হচ্ছে সেলিব্রেটি ক্রিকেট লিগ

ফের শুরু হচ্ছে সেলিব্রেটি ক্রিকেট লিগ

পুলিশ হেফাজতে দুদক কর্মকর্তার মৃত্যু

পুলিশ হেফাজতে দুদক কর্মকর্তার মৃত্যু

রাজধানীতে থানায় থানায় জামায়াতের বিক্ষোভ

রাজধানীতে থানায় থানায় জামায়াতের বিক্ষোভ

রাস্তায় যানজট সৃষ্টির প্রতিবাদ করায় নোয়াখালীতে সিএনজি চালককে পিটিয়ে হত্যা

রাস্তায় যানজট সৃষ্টির প্রতিবাদ করায় নোয়াখালীতে সিএনজি চালককে পিটিয়ে হত্যা

বিরামপুরে বরযাত্রীর বাসের সঙ্গে বাইকের সংঘর্ষে এসআইসহ নিহত ২

বিরামপুরে বরযাত্রীর বাসের সঙ্গে বাইকের সংঘর্ষে এসআইসহ নিহত ২

কেয়ারটেকার সরকার ছাড়া এদেশের জনগণ আর কোনো নির্বাচন মেনে নিবে না : ড. হেলাল উদ্দিন

কেয়ারটেকার সরকার ছাড়া এদেশের জনগণ আর কোনো নির্বাচন মেনে নিবে না : ড. হেলাল উদ্দিন

ফেনীতে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে পুড়ে দুই শিশুর মৃত্যু

ফেনীতে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে পুড়ে দুই শিশুর মৃত্যু

বিএনপির পেশাজীবী কনভেনশনে ভিড়

বিএনপির পেশাজীবী কনভেনশনে ভিড়

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টার বৈঠকে অবাধ–সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরুত্বারোপ

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টার বৈঠকে অবাধ–সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরুত্বারোপ

বগুড়ায় ডিবি হেফাজতে আইনজীবী সহকারীর মৃত্যুতে তোলপাড়

বগুড়ায় ডিবি হেফাজতে আইনজীবী সহকারীর মৃত্যুতে তোলপাড়