শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিন উদ্বেগজনক
১৫ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
সম্প্রতি কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছে তিন শীর্ষ সন্ত্রাসী। তারা হচ্ছে, নাঈম আহমেদ টিটন, খোরশেদ আলম রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসু এবং তারিক সাঈদ মামুন। এই তিন শীর্ষ সন্ত্রাসীর মুক্তি পাওয়া নিয়ে ইতোমধ্যে আন্ডারওর্য়াল্ড অশান্ত হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন এলাকায় ভীতি সঞ্চারিত হয়েছে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, ২০০১ সালে তৎকালীণ চারদলীয় জোট সরকার দেশের ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করে। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ৫টি থেকে ৩০টি মামলা রয়েছে। এদের মধ্যে বর্তমানে ৬ জন কারাগারে বাকিরা বিদেশে পলাতক। কারাগার ও বিদেশে থাকলেও এসব সন্ত্রাসী তাদের অনুগতদের দিয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। জামিনে কারাগার থেকে বের হয়ে পরদিন টিটন আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাঈদকে হত্যার উদ্দেশ্যে গত ১৮ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে বিজি প্রেসের সামনে হামলা চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক আইনজীবী নিহত হয়। এ ঘটনার মাধ্যমে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা তাদের সন্ত্রাসী কর্মকা- যেমন জানান দিচ্ছে, তেমনি আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার ঘটনা প্রকাশিত হচ্ছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, এমন এক সময় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিন দেয়া হয়েছে বা হচ্ছে, যখন জাতীয় নির্বাচন সন্নিকটে। নির্বাচনকে উপলক্ষ করেই মূলত সরকার সন্ত্রাসীদের জামিন দিচ্ছে ও মাঠে নামাচ্ছে। এক ধরনের ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করতে এদের ব্যবহার করার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে তার আলামত দেখা যাচ্ছে। সন্ত্রাসীরা তাদের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মাধ্যমে সেটা জানান দিচ্ছে। অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকারের প্রতি পশ্চিমা প্রভাবশালী দেশ থেকে শুরু করে দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজ বারবার তাকিদ দিয়ে আসছে। সরকারও আশ্বাস দিচ্ছে। তবে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিনে মুক্তি দিয়ে কারাগার থেকে বের করে আনার বিষয়টি উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন সামনে রেখে সন্ত্রাসী কর্মকা- বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র তার নাগরিকদের বাংলাদেশে চলাফেরার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এক্ষেত্রে জামিন পাওয়া সন্ত্রাসী ও আন্ডারওয়ার্ল্ড জড়িয়ে পড়তে পারে। অপরাধ বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, নির্বাচনে সরকার এদের ব্যবহার করে একটি ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়, যাতে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে না পারে। ইতোমধ্যে পুলিশও রীতিমতো আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। বিরোধীদল বিশেষ করে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন করে একের পর এক মামলা দিচ্ছে এবং গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠাচ্ছে। দলটির শীর্ষ নেতা থেকে অসংখ্য নেতাকর্মীর সাজা হয়েছে। দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, দলের শক্তিশালী প্রার্থীরা যাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে এবং সরকারের প্রতিদ্বন্দ্বী যাতে না থাকে, এজন্য দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলা, গ্রেফতার ও সাজা দেয়া হচ্ছে। গত সপ্তাহে বিএনপি’র অন্যতম নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিকে গভীর রাতে পুলিশ দরজা ভেঙে তার বাসা থেকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে নির্যাতন করেছে বলে তিনি আদালতকে জানিয়েছেন। পুলিশের এ চ- আচরণ দেশব্যাপী বেশ তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আগ্রাসী বক্তব্যও আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, একদিকে পুলিশের অসহিষ্ণু আচরণ, অন্যদিকে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিনে মুক্ত হওয়া নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার এখন যেকোনো উপায়ে নির্বাচন করতে মরিয়া। এজন্য ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছে, যাতে কেউ প্রতিবাদ করতে না পারে।
সন্ত্রাসীদের কোনো দল থাকে না। সন্ত্রাসী সন্ত্রাসীই। তারা একধরনের মরণঘাতি ইন্সট্রুমেন্ট। সাময়িকভাবে তাদের ব্যবহার করে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে ফায়দা পাওয়া যায়। তবে তা স্থায়ী হয় না। কারণ তারা কখনোই কোনো রাজনৈতিক দলের মিত্র হয় না। যখন যে যেভাবে পারে, ব্যবহার করে। অতীতেও দেখা গেছে, নির্বাচনের আগে সন্ত্রাসীদের মাঠে নামাতে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে এটা একটা ভয়াবহ অপসংস্কৃতি। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র এই অপসংস্কৃতিরই যেন পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, সরকার তাদের নির্বাচনের মাঠে নামাতে চাচ্ছে। তা নাহলে, তারা জামিন পেত না। অথচ সামান্য অজুহাতে কিংবা গায়েবি মামলায় বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও সাজা দেয়া হচ্ছে। জামিন চাইতে গিয়ে জেলে যেতে হচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদেরকে এ ধরনের দমন-পীড়নের শিকার হতে হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিরোধী রাজনীতি দমন ও বলপ্রয়োগ করে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। যেখানে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারের ওপর দেশি-বিদেশি প্রবল চাপ রয়েছে, সেখানে জোর করে বা জবরদস্তিমূলক নির্বাচন করা কোনোভাবেই দেশের জন্য মঙ্গলকর হবে না। এতে দেশ আরও গভীর সংকটে পড়বে। দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বলতে কিছু থাকবে না। সরকারের উচিৎ হবে দেশের রাজনৈতিক সংঘাত ও সংঘর্ষ এড়াতে এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করা।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার
সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।