ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাবিশ্ব দায় এড়াতে পারে না

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৬ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম

গাজায় ইসরাইলি বর্বরতা ও নৃশংসতা অব্যাহত আছে। ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের ইসরাইলের অভ্যন্তরে ক্ষেপণাস্ত্র ও স্থল হামলার পরপরই গাজায় ইসরাইল পাল্টা বিমান শুরু করে, যা এখনো বন্ধ হয়নি। ইতোমধ্যে গাজা ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয়েছে। এই নির্বিচার হামলা ও হত্যার অসহায় শিকারে পরিণত হয়েছে নিরীহ-নিরপরাধ ফিলিস্তিনি নারী-পুরুষ-শিশু। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এ পর্যন্ত আড়াই হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিক ইসরাইলি বর্বরতার শিকার হয়েছে। লাগাতার ইসরাইলি হামলায় গাজা মৃত্যুপুরিতে পরিণত হয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে উল্লেখিত হয়েছে। গাজায় বড় রকমে স্থল হামলাও শুরু করেছে ইসরাইল। তার আগে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের দ্রুত সরে যাওয়ার হুকুম জারি করেছিল ইসরাইলি বাহিনী। নিরূপায়, অসহায়, বিপন্ন ফিলিস্তিনিরা যখন উত্তর থেকে দক্ষিণে পালাচ্ছিল তখন ইসরাইলি বাহিনী পলায়নপর তাদের ওপর হামলা করতেও দ্বিধা করেনি। বোমা হামলার মধ্যে পলায়নরত ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলায় ২৪ ঘণ্টায় নারী-পুরুষ-শিশুসহ ৩২৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। স্থল হামলা শুরুর পর গাজায় ফিলিস্তিনিদের আর এতটুকু নিরাপত্তা নেই। এই ক’দিনে সেখানে খাদ্যাভাব, পানির ঘাটতি, বিদ্যুতের অভাব, চিকিৎসা ও ওষুধপত্রের সংকট চরমে উঠেছে। এর আগেই এ বিষয়ে জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা এক বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এ হেন অমানবিক পরিস্থিতিতেও ত্রাণসামগ্রী প্রেরণের যে কোনো চেষ্টা রোধ করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে ইসরাইল। গাজা ধ্বংস ও তার অধিবাসীদের সম্পূর্ণ হত্যা বা নির্মূল করাই ইসরাইলের প্রকৃত লক্ষ্য, বাস্তবতাদৃষ্টে এমনটাই মনে হতে পারে। এখানে বলে রাখা দরকার, গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী একটি নতুন মাত্রচিত্র প্রদর্শন করেন। সেখানে গাজা ও পশ্চিমতীরের কোনো অস্তিত্ব নেই। ইসরাইল ফিলিস্তিনের অস্তিত্বই মানতে রাজি নয়, এতে এটাই স্পষ্ট হয়। এমতাবস্থায়, সে কী করতে পারে, সহজেই অনুমেয়। বস্তুত সেটাই ইসরাইল এখন করছে।

ইসরাইল ও তার পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদী, বর্ণবাদী মোড়লরা যা চাইবে, তাই যে হবে, সেটা নিশ্চয় করে বলা যায় না। হামাস একটি সংগঠনমাত্র, কোনো রাষ্ট্র নয়। তার লোকবল, অস্ত্রবল, পৃষ্ঠপোষক, সহায়তাকারী খুবই কম। সেই সংগঠনের আকস্মিক হামলায় যেখানে ইসরাইল বিস্মিত ও আতংকিত হয়েছে, তার মেন্টর যুক্তরাষ্ট্র বিচলিত হয়ে সঙ্গে সঙ্গে রণতরী পাঠিয়েছে, সেখানে বুঝতে হবে এখন আর সবকিছু একতরফা হবে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসরাইলি আগ্রাসন, হামলা ও হত্যাকা-ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ঝড় উঠেছে। তাতেই বুঝা যায়, ফিলিস্তিনিরা একা নয়, নির্বান্ধব নয়। ইতোমধ্যে হামাসের সঙ্গে ইসলামিক জিহাদ ও হিজবুল্লাহ সংযুক্ত হয়েছে। ইরানের নৈতিক সমর্থন আছে এদের প্রতি। চীন-রাশিয়ার মতো দুই পরাশক্তি ফিলিস্তিনিদের ন্যায়সঙ্গত অধিকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সউদী আরবসহ আরব দেশগুলো আগের চেয়ে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। তুরস্কসহ অন্যান্য মুসলিম দেশও নিশ্চুপ নেই। অনেকেই আশংকা করছেন, ইসরাইল যদি খামোশ না হয়। গাজায় অভিযান ও গণহত্যা বন্ধ না করে তবে এই হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ প্রলম্বিত হবে এবং বিশ্বের আর্থরাজনৈতিক ক্ষেত্রে তার বিরূপ প্রভাব প্রচ- রূপে আপতিত হবে। একথা অজানা নেই, এই উগ্রবাদী ইহুদি রাষ্ট্রটি মুসলিমবিদ্বেষী, শ্বেতাঙ্গবাদী ও সা¤্রাজ্যবাদীদের দ্বারা সৃষ্ট। ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র এর মূলে। একে টিকিয়েও রেখেছে সা¤্রাজ্যবাদী পশ্চিমা রাষ্ট্রম-লি। ৭৫ বছরের বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনে যে হত্যা জুলম, বিতাড়ন, অনাচার সংঘঠিত হয়েছে তার দায় যুক্তরাষ্ট্র, তার ইউরোপীয় ও অন্যান্য মিত্র এড়িয়ে যেতে পারবে না।

ফিলিস্তিনে ইসরাইলের হামলা ও হত্যাকা-ের প্রতিবাদ আজ মুসলিম দেশগুলিতেই নয়, অমুসলিম অন্যান্য এমনকি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নেও হচ্ছে। জনগণ পর্যায়ে সংঘটিত এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দিন দিন বাড়ছে। মানবিক বিবেচনা ও বিবেকবোধ যে বেশিদিন বিভ্রান্তির বেড়াজালে আটকে থাকে না, এ থেকে সেটাই প্রমাণিত হয়। প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ভাষা পড়তে হবে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বকে এবং সে অনুয়াযী অভিপ্রায় ও অবস্থান নির্ণয় করতে হবে। ইহুদিবাদের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থনই যে যুক্তরাষ্ট্র ও এইসব দেশকে বর্তমান অবস্থানে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, সে ব্যাপারে অভিজ্ঞমহলের মধ্যে দ্বিমত নেই। ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারের নাম করে যুক্তরাষ্ট্রের রণতরী পাঠানো ও অন্যান্য সহযোগিতাদান তার অতিরেক আগ্রহেরই সাক্ষ্য দেয়। এত ইহুদিপ্রীতি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ, সুনাম ও নেতৃত্বের গ্রহণযোগ্যতার পক্ষে যায় না। যথাযথ দায়িত্বশীলতারও প্রমাণ বহন করে না। যুক্তরাষ্ট্রকে এই সত্য বুঝতে হবে। তার মিত্রদেরও তা উপলব্ধি করতে হবে। আমরা আশা করবো, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের দায়িত্ব হবে ফিলিস্তিন সমস্যার ন্যায়সঙ্গত সমাধানের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। কোনো সাম্প্রদায়িক, উগ্রবর্ণবাদী, আগ্রাসী রাষ্ট্রকে সমর্থন ও সহযোগিতা না করা। এটা মানতে হবে, ইসরাইলের প্রতি অন্ধ সমর্থন মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে অনেক দুর্বল করে দিয়েছে। তাদের ন্যাক্কারজনক নীতি যদি অপরিবর্তিত থাকে, তবে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বে তাদের প্রাধান্য ও প্রভাব আরো সংকুচিত হয়ে পড়বে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার

ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার

সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার

সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার

ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার

ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার

আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়

আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়

হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড  ইংল্যান্ড

হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড  ইংল্যান্ড

পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের

পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে

বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত

বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে

বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা

বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী  প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন

উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন

সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।

পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।