পর্যটন শিল্পের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে যেসব কারণে
১৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৬ এএম
বাংলাদেশে উদীয়মান শিল্পের মধ্যে একটি হচ্ছে পর্যটন শিল্প। দেশের মোট জিডিপির শতকরা ৪.৪% আসে এই শিল্প থেকে। পর্যটন শিল্পকে উন্নত করে দেশের বেকারত্ব দূর করার পাশাপাশি প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করা যায়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা, সঠিক পরিকল্পনা ও এর বাস্তবায়নের অভাবসহ নানা কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। সাগরের গর্জন, পাহাড়ের নিরবতা, হাওরের সৌন্দর্য, কোথাও আবার প্রাচীন প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শনের মাঝে হেঁটে চলা সব মিলিয়ে ৭০০ থেকে ৮০০ দর্শনীয় স্থান নিয়ে বৈচিত্র্যময় আমাদের এই দেশ। রয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। তবে এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে সম্মুখীন হতে হচ্ছে নানারকম প্রতিকূলতার। অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, মানসম্মত রাস্তার অভাব, নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা, সমন্বয়হীনতা, দক্ষ জনবলের অভাব, বাজেটের ঘাটতিসহ রয়েছে আরও অনেক সমস্যা। বিদেশি পর্যটকরা আমাদের পর্যটন শিল্পের প্রতি আকর্ষিত তো হচ্ছেই না, উল্টো দেশের পর্যটকররা অবসর সময় কাটাতে চলে যাচ্ছে বিদেশে।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা ১০০ কোটিরও বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫ সাল নাগাদ এই সংখ্যা দাঁড়াবে ১৬০ কোটি। বিশেষজ্ঞদের ধারণা মতে, এই বিপুল সংখ্যার ৭৩ শতাংশই আবার ভ্রমণ করবে এশিয়ার দেশগুলোতে। বাংলাদেশ যদি এই বিশাল বাজার ধরতে পারে তবে পর্যটনের হাত ধরেই বদলে যেতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতি। বাংলাদেশের প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ পর্যটক দেশের অভ্যন্তরে ভ্রমণ করে থাকে। দেশে ২০১৯ সালে পর্যটক সংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল সবচেয়ে বেশি, যার ফলে ১৪০টি দেশের মধ্যে ১২৫তম স্থান থেকে ১২০ এ গিয়ে পৌঁছেছি আমরা। আপাতদৃষ্টিতে পর্যটন শিল্পের উন্নতি মনে হলেও ব্যাপারটা আসলে সেরকম না। এশিয়ার দেশগুলোর মাঝে শুধু পাকিস্তানই বাংলাদেশ থেকে পিছিয়ে আছে। আবার পর্যটন আয়ের বেশির ভাগই আসছে দেশীয় উৎস থেকে। এটি প্রমাণ করে যে, বিদেশি পর্যটকের কাছে আমাদের পর্যটন শিল্পের জনপ্রিয়তা এখনো অনেক কম। পর্যটনকে গুরুত্ব দিয়ে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করছে থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, ভারত ও নেপালের মতো দেশ। পর্যটন আকর্ষণে পিছিয়ে নেই দুবাই, কাতার, সৌদি আরব, মিশরসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও। ২০১৮ সালে দক্ষিণ এশিয়ার পর্যটন আয় ছিল ৩৯.৪ বিলিয়ন ডলার এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আয় ছিল ১৫১.৯ বিলিয়ন ডলার। এই বিশাল আয়ের মধ্যে বাংলাদেশের আয় খুবই নগণ্য। ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনামের বিপুল পরিমাণ আয় এসেছে পর্যটন শিল্প থেকে। বাংলাদেশের এই শিল্পে পিছিয়ে থাকার কারণগুলো হলো:
১. অবকাঠামোগত দুর্বলতা: পর্যটন কাঠামোর দিক থেকে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯তম। এশিয়ার মধ্যে শুধু পাকিস্তান ছাড়া বাকি সব দেশ থেকেই পিছিয়ে আছি আমরা। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সত্ত্বেও এখনো রয়েছে অনেক দুর্বলতা। দীর্ঘ যানযটের পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। নেই পর্যাপ্ত হোটেলের সুব্যবস্থা। পর্যটন কেন্দ্রগুলো অবহেলিত। এগুলোর সুপরিকল্পিত আধুনিকায়ন ও শুল্কমুক্ত বিপণির অভাবও এ ক্ষেত্রে বড় বাধা।
২. দেশীয় বিমান ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা: বিদেশি পর্যটকদের কাছে নিজের দেশকে প্রমোট করতে দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করলেও এশিয়ার বাইরে শুধু লন্ডনেই ফ্লাইট সার্ভিস দিয়ে থাকে। ফলে বাকি দেশের পর্যটকদের জন্য বাংলাদেশের পরিবহন ব্যয় তুলনামূলকভাবে বেশি। বিমান ব্যবস্থার দিক থেকে আমাদের অবস্থান ১১১তম, যা এশিয়ার মাঝে সবচেয়ে পিছনে।
৩. প্রচারের অভাব: বিশ্ব দরবারে আমরা আমাদের পর্যটনকে পরিচিত করোনার কোনো পদক্ষেপ নেই। আমরা বিভিন্ন টিভি চ্যানেল বিবিসি, সিএনএন, ডিসকভারি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফির মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের সমাজ, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যসহ প্রাকৃতিক রূপ অবলোকন করে থাকি। কিন্তু এক্ষেত্রে বাংলাদেশের তেমন কোনো প্রচার নেই বললেই চলে। প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের কথা তুলে ধরার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান কিছুটা হলেও সম্ভব হতে পারে।
৪. নিরাপত্তার অভাব: বিদেশি পর্যটকদের কাছে সুরক্ষা ব্যবস্থা অনেক বড় একটি ইস্যু। অস্থিতিশীলতা, চুরি, ছিনতাই, হত্যা, রাহাজানি, সহিংসতা থেকে পর্যটকদের রক্ষা করতে হবে। পর্যটকদের দিতে হবে নির্বিঘেœ চলাফেরার নিশ্চয়তা। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে তবেই না তারা এ দেশের প্রতি আকৃষ্ট হবে।
৫. উন্নত সেবা ও তথ্যের অভাব: দক্ষ, মার্জিত জনবলের অভাব এ শিল্পের একটা বড় সমস্যা। সেই সঙ্গে রয়েছে উন্নত ও দ্রুত তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে কার্যকর ব্যবস্থার অভাব। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের ওয়েব সাইটে পাওয়া যায় না প্রয়োজনীয় তেমন কোনো তথ্য।
৬. পর্যটকের জন্য বাড়তি খরচ: পর্যটন শিল্পে উন্নত কিছু দেশের তুলনায় বাংলাদেশের পর্যটনের ব্যয় অনেকটাই বেশি। কিন্তু সেই অনুপাতে সুযোগ-সুবিধা খুবই কম। বাড়তি যাতায়াত খরচ থেকে শুরু করে মানের তুলনায় হোটেলগুলোর উচ্চমূল্যের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয় প্রায়শই। এটি অনেক বড় একটি প্রতিবন্ধকতা। কেননা, এর চেয়ে কম ব্যয়ে ভালো সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে অন্য দেশগুলো।
৭. পশ্চিমা দেশের পর্যটকের অভাব: বাংলাদেশে পর্যটকদের বেশিরভাগই আসে ভারত থেকে। মাত্র ৫% পর্যটক ইউএসএ থেকে এলেও বেশির ভাগই রয়েছে প্রবাসী বাঙালি। বিশ্বব্যাপী পর্যটন বাজারের ৫৩% আসে আমেরিকা এবং ইউরোপ থেকে, যা থেকে আমরা অনেকটাই বঞ্চিত। এশিয়ার বাইরে থেকে আসা পর্যটকের হার শতকরা ২০% থেকে ৭১%, যেখানে আমাদের দেশের হার মাত্র ৭%।
বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পে রয়েছে প্রচুর সম্ভাবনা। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং বাংলাদেশ ভ্রমণে এসে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেছিলেন: অ ংষববঢ়রহম নবধঁঃু বসবৎমরহম ভৎড়স সরংঃং ধহফ ধিঃবৎ. এই উচ্ছ্বসিত প্রশংসাকে সর্বদা ধরে রাখার মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের বিকাশের দায়িত্ব আমাদেরই। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগও নিতে হবে। এ বিষয়ে সঠিক পরিকল্পনা অতীব জরুরি।
লেখক: শিক্ষার্থী, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার
সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।