সরকারকেই অগ্রবর্তী ভূমিকা নিতে হবে
১৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৬ এএম
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করতে পাঁচটি সুপারিশ করেছে ঢাকা সফর করে যাওয়া মার্কিন প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল। ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইন্সটিটিউটের (এনডিআই) প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত এই প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল গত শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে, আপোসহীন রাজনৈতিক মানসিকতা, আক্রমণাত্মক বক্তৃতা, রাজনৈতিক সহিংসতা, অনিশ্চয়তা, ভয়ের একটি বিস্তৃত পরিবেশ, নাগরিক সমাজ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্র সংকুচিত হওয়া, নাগরিক, রাজনৈতিক নেতা ও অন্য অংশীজনদের মধ্যে আস্থার ঘাটতি, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নারী, যুবক ও অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠীও উল্লেখযোগ্য বাধার সম্মুখীন হয়। দলটির মতে, চ্যালেঞ্জগুলো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা টেকসই উন্নয়নের দিকে বাংলাদেশের ইতিবাচক অভিযাত্রাকে বিঘিœত করতে পারে। বর্ণিত চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, তার পথনকশা রচনায় দলটির দেওয়া সুপারিশমালা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। পর্যবেক্ষক দলের সুপারিশগুলো হলো: বক্তব্যের ক্ষেত্রে সহনশীলতা ও নির্বাচনী মুখ্য বিষয়ে খোলোমেলা ও অর্থবহ সংলাপে বসা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা ও নাগরিকদের জন্য খোলামেলা পরিবেশ নিশ্চিত করা, যেখানে ভিন্নমতকে সম্মান করা হয়, সহিংসতার বিরুদ্ধে অঙ্গীকার ও রাজনৈতিক সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা, স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনাকে শক্তিশালী করাসহ সব দলের অর্থবহ রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্র তৈরি করা এবং নাগরিকদের মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সক্রিয় নির্বাচনী অংশগ্রহণের সংস্কৃতি উৎসাহিত করা। দলটির মতে, সুপারিশগুলো নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের পরে বাস্তবায়ন করা হলে তা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে পারে। এমনকি বিশ্বাসযোগ্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচনের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে।
বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য একটি চূড়ান্ত পরীক্ষা বলে মার্কিন প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলটি যে মন্তব্য করেছে, তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণের কোনো অবকাশ নেই। গণতন্ত্রে সরকার পরিবর্তনের একমাত্র উপায় নির্বাচন, যে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হওয়া শর্ত। বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচনসহ এই সময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো ঐসব শর্ত মেনে হয়নি। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন আসলে নির্বাচন পদবাচ্যই হয়নি। দেশে-বিদেশে ওই দুটি নির্বাচন এতটুকু গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। আগামী জাতীয় নির্বাচনও আগের দুটি জাতীয় নির্বাচনের মতো সাজানো, একতরফা, জবরদস্তিমূলক হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। এমতাবস্থায়, দেশে যেমন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নিশ্চয়তায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছে, তেমনি আন্তর্জাতিক মহল বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রভৃতি দেশও একই তাকিদ দিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের তরফে একের পর এক প্রতিনিধি বা প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করছে, সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছে এবং তাদের অভিপ্রায়, অভিমত, বক্তব্য ও বিবৃতি প্রদান করছে। সেটাও এখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশে এসে নির্বাচনের অংশীজনদের অনেকের সঙ্গে বৈঠক করেছে। দলটি নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষক দল পাঠানো হবে না বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ সিদ্ধান্তের পর বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক আসার সম্ভাবনা প্রায় নেই হয়ে গেছে, যা আমাদের দেশের ভাবমর্যাদার পক্ষে যায় না। নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশের অনুপস্থিতির প্রেক্ষিতেই মার্কিন প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের অভিমত ও সুপারিশ এসেছে। পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, এ সুপারিশমালা আন্তরিকতা ও বিশ্বস্থতার সঙ্গে বাস্তবায়িত হলে দেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটতে পারে। এখানে বিশেষভাবে স্মরণ করা দরকার, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ এসেছিল। এবারের মতো সুপারিশ করেছিল। ওই নির্বাচনে একটি মার্কিন পর্যবেক্ষক দল আসবে বলে জানানো হলেও শেষবধি তা বাতিল করা হয়েছিল। এবারে প্রদত্ত সুপারিশের কতদূর কী হবে, এখনই তা বলা যাচ্ছে না। এবারের নির্বাচনে মার্কিন পর্যবেক্ষক দল আসবে কিনা তা-ও বলা যাচ্ছে না।
মার্কিন প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সুপারিশের মধ্যে নির্বাচন প্রশ্নে খোলামেলা আলোচনা ও সংলাপের ওপর যে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে, তার তাৎপর্য বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। এই আলোচনা ও সংলাপের মধ্যে উদ্ভূত ও বিরাজমান সংকটের সুরাহা হতে পারে। লক্ষ করলে স্পষ্ট প্রতিভাত হবে যে, সুপারিশগুলো সরকারকে উদ্দেশ্য করেই করা হয়েছে এবং সরকারের সদিচ্ছার ওপরই এসবের বাস্তবায়ন নির্ভর করে। খোলামেলা আলোচনা ও সংলাপের সম্ভবনা কতটা, সঙ্গতকারণেই এ প্রশ্ন উঠতে পারে। আপাতত তেমন কোনো সম্ভবনা দেখা যাচ্ছে না। আলোচনা ও সংলাপ মূলত হতে হবে আওয়ামী লীগ বা সরকার ও বিএনপি’র মধ্যে। দু’দলই এখন পর্যন্ত তাদের স্ব স্ব অবস্থানে এতটাই অটল যে, আলোচনা-সংলাপের এতটুকু আলোক রশ্মিও দেখা যাচ্ছে না। মার্কিন পর্যবেক্ষকদলের সুপারিশের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চায়। এছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার কথাও বলছে তারা। আমরা সংলাপের চিন্তা করবো তখন যখন তারা এসব শর্ত প্রত্যাহার করে নেবে। শর্তযুুক্ত কোনো সংলাপের ব্যাপারে আমাদের কোনো চিন্তাভাবনা নেই।’ ওদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ঘোষণা না দিলে সংলাপে যাবে না বিএনপি।’ বলা বাহুল্য, দু’দলের অনড় অবস্থানের কারণে আলোচনা-সংলাপের সুপারিশই যদি বাস্তবায়িত না হয়, তাহলে অন্যান্য সুপারিশের ভবিষ্যতে কী হতে পারে, সহজেই অনুমেয়। অভিজ্ঞমহলের মতে, আলোচনা-সংলাপ-সমঝোতা না হলে দেশ অনিবার্য সংঘাতের পথে চলে যাবে, যা কোনো বিচারেই হিত বা কল্যাণকর হবে না। সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন পত্রিকান্তরে বলেছেন, ‘সরকারের দায়িত্ব বেশি হলেও তাদের দিক থেকে একতরফা নির্বাচনের প্রস্তুতি দৃশ্যমান হচ্ছে। একারণে সংঘাতের আশংকা বাড়ছে।’ সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন একই পত্রিকাকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল যেসব সুপারিশ করেছে সে অনুযায়ী পরিস্থিতি উন্নয়নের প্রধান দায়িত্ব সরকারের।’ তিনি আরো জানিয়েছেন, ‘পরিস্থিতিতি দেখে মনে হচ্ছে, আমরা হয়তো একতরফা একটি নির্বাচনের দিকেই এগোচ্ছি।’ রাজনীতিতে ‘পয়েন্ট অব নো রির্টানে’ পৌঁছানো কোনো মতেই শুভ ও মঙ্গলকর হতে পারে না। এই বিবেচনা সামনে রেখে সরকার কাক্সিক্ষত নির্বাচনের যথাযথ পরিবেশ প্রতিষ্ঠা ও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভবপর করে তুলবে, এটাই আমরা প্রত্যাশা করি। আমরা এ ব্যাপারে বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলোর প্রয়োজনীয় সহযোগিতাও কামনা করি।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
তোফাজ্জলকে হত্যার আগে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা চাওয়া হয় পরিবারের কাছে
বিশ্বের কাছে ১২টি পরমাণু গবেষণার ও স্থাপনা উন্মুক্ত করবে চীন
এবার রাবির শেরে-বাংলা হল থেকে লাঠিসোঁটা-হকিস্টিক উদ্ধার
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস
লেবাননে এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলা ইসরায়েলের
সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চাইলেন পঞ্চগড়ের নতুন জেলা প্রশাসক
ইনস্টাগ্রামের মতো ফিচার এবার আসছে হোয়াটসঅ্যাপেও!
যুক্তরাষ্ট্রে কোর্টহাউসে বিচারককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা
তাপপ্রবাহ নিয়ে যা জানা গেল
৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা
‘ভারতীয় খাবার জঘন্য’, অস্ট্রেলিয়ান ইউটিউবারের পোস্ট ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে
ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার
সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু