ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

ফিলিস্তিনিদের কান্না শুনতে কি পাও?

Daily Inqilab খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী

২২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৬ এএম

(পূর্বপ্রকাশিতের পর)
বাইবেল ও কোরআনে বর্তমান ফিলিস্তিনকে ‘কেনান’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। পরবর্তীকালে ক্রিট ও এপি সাগরের দ্বীপপুঞ্জ থেকে আগত ফিলিস্তিনিদের নামানুসারে এই অঞ্চল ফিলিস্তিন নামে পরিচিত হয়। খ্রিষ্টানদের আগমনের আগেই এরা এই এলাকায় বসতি স্থাপন করে। ফিলিস্তিনিরা মূলত আগমনকারী সম্প্রদায়ের লোক, তবে অধিকাংশই আরব বংশোদ্ভূত। অতঃপর খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে ইসলামের অভ্যুদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই এরা মুসলমান হয়ে যায়। সেই সময়ই এই অঞ্চল মুসলিম খেলাফতভুক্ত হয়। মাঝখানে ক্রুসেড যুদ্ধের আমলে ১০৯৬ সাল থেকে ১১৮৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ৯১ বছর ফিলিস্তিন খ্রিষ্টানদের দখলে ছিল। পরে ১১৮৭ খ্রিষ্টাব্দে ক্রুসেড বিজয়ী বীর গাজী সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর নেতৃত্বে অন্যান্য মুসলিম এলাকার সাথে ফিলিস্তিনও খ্রিষ্টানদের কবলমুক্ত হয়। সেই থেকেই ফিলিস্তিন একটি স্বতন্ত্র মুসলিম রাজ্য হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। এই রাজ্যের আয়তন ছিল ১০ হাজার ১৬২ বর্গমাইল ।

অতঃপর ১৮৮১ সালে যখন পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ থেকে ইহুদি এদেশে আসতে শুরু করে তখন ফিলিস্তিনের জনসংখ্যা ছিল মোট ৫ লক্ষ। কিছু খ্রিষ্টান ও ২০ হাজারের মতো আরবীয় ইহুদি ছাড়া বাদ বাকী সবাই ছিল মুসলমান। এরপর ১৮৮২ থেকে ১৯১৭ পর্যন্ত ৩৫ বছরে আন্তর্জাতিক ইহুদিচক্র বিভিন্ন পশ্চিমা দেশ থেকে ৫০ হাজার ইহুদিকে এনে এখানে বসিয়ে দেয়। ওরা বহুদিন যাবৎ উদ্বাস্তু হিসেবেই ছিল। কিন্তু ইহুদিদের মুরব্বী বৃটেন ১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর কুখ্যাত ব্যালফোর ঘোষণার মাধ্যমে সমস্ত ন্যায়-নীতিকে উপেক্ষা করে আরবদের সম্মতি ছাড়াই ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জন্য একটি স্থায়ী জাতীয় আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার অনুমতি দিয়ে তার পূর্বচুক্তি লংঘন করে। ইতোপূর্বে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় (১৯১৫ সালে) স্বাক্ষরিত ‘শরীফ হুসেন-ম্যাক মোহন করেসপন্ডেস’ নামীয় আন্তর্জাতিক চুক্তিনামায় হোমসের পশ্চিমে অবস্থিত কোনো কোনো জায়গা ছাড়া (যার অর্থ বর্তমান লেবানন) বাকী সমস্ত আরবভূমিতে আরবদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। অথচ, মাত্র দুই বছর পরেই বৃটেন এই চুক্তি লংঘন করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ইহুদিদের ফিলিস্তিনে আইনগত নাগরিক হিসাবে বসবাসের অনুমতি দেয়। শুধু তাই নয় ১৯২০ সালে বৃটেন জাতিসংঘের তরফ থেকে ফিলিস্তিনের ‘অছি’ নিযুক্ত হয়ে এসে নিজেই পরিকল্পিত ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের ও তার প্রাথমিক প্রশাসনিক প্রশিক্ষণের ভার নেয়। কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তির এত বড় অবমাননা ইতোপূর্বে আর কেউ করেনি।

অতঃপর বৃটেন বহিরাগত ইহুদিদের জন্য ফিলিস্তিনের দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়। অপমানিত ও বিক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনি মুসলমানেরা লীগ অব নেশনসের কাছে এর প্রতিকার প্রার্থনা করলে সবকিছু অরণ্যে রোদনে পর্যবসিত হয়। ফলে তারা বিক্ষোভ ও ধর্মঘটের আশ্রয় নেয়। কিন্তু বৃটিশ বাহিনীর রক্ত পিপাসু সৈন্যরা তাদের নিষ্ঠুরভাবে দমন করে। তবু তাদের কণ্ঠ একেবারে স্তব্ধ করা যায় না। তারা বিদ্রোহ করে একে একে ১৯২০, ১৯২৯ ও ১৯৩৬ সালে। দেখা যায়, আবাল বৃদ্ধ-যুবা মিলে প্রায় ৮ লক্ষ মুসলমানকে দমন করতে বৃটেন দেশীয় ও বহিরাগতসহ প্রায় ৩ লক্ষ ইহুদিকে অস্ত্র যোগানো ছাড়াও নিজের সেনাবাহিনীর ১ লক্ষ শিক্ষিত সৈন্যকে ফিলিস্তিনে মোতায়েন করে। এইভাবে গড়ে প্রতি ২ জন নিরস্ত্র মুসলমানের জন্য একজন করে সশস্ত্র সৈনিক নিয়োগ করে এবং সাথে সাথে জরুরি আইনের খড়গ চালিয়ে সারা ফিলিস্তিনকে কার্যত একটা বন্দি শিবিরে পরিণত করে।

কিন্তু স্বাধীনতাপ্রিয় ফিলিস্তিনি জাতিকে কোনক্রমেই দমিয়ে রাখা সম্ভব নয় মনে করেই অবশেষে বৃটেন ব্যাপারটি জাতিসংঘে পেশ করে। ফলে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক, বৃহৎ শক্তির ক্রীড়নক তথাকথিত জাতিসংঘ প্রধানত পশ্চিমা শক্তির চাপ ও প্ররোচনায় ১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনের বিভক্তির সুপারিশ সম্বলিত প্রস্তাব পাস করে। উক্ত প্রস্তাবে ফিলিস্তিনকে দ্বিখ-িত করে এর এক অংশে একটি স্বাধীন ইহুদি রাষ্ট্র, অন্য অংশে একটি আরব রাষ্ট্র এবং পবিত্র নগরী জেরুজালেমকে একটি আন্তর্জাতিক অঞ্চল গঠনের কথা বলা হয়। ১০,১৬২ বর্গমাইল এলাকার এই ভূখ-ের শতকরা ৫৪% দেওয়া হয় সংখ্যালঘু ইহুদিদের ও জেরুজালেম বাদে বাকী অংশটুকু দেওয়া হয় সংখ্যাগুরু মুসলমানদের। এই সময় ফিলিস্তিনে মুসলমানদের সংখ্যা ছিল ১০ লক্ষ ও ইহুদিদের সংখ্যা ছিল দেশীয় আরব ২ লক্ষ ও বিদেশি অনারব ৪ লক্ষ। কিন্তু বৃটিশ সাহায্যপুষ্ট ইহুদিরা ১০ লক্ষ আরব ফিলিস্তিনিকে তাদের পৈত্রিক ভিটেমাটি থেকে উৎখাত করে তাদের যথাসর্বস্ব লুণ্ঠন করে। মোট ৫২৪টি জনপদ দখল করে তন্মধ্যে ৩৮৫টি গ্রাম ও শহর সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বৃটিশ বাহিনী সুপরিকল্পিতভাবে এইসব ধ্বংসযজ্ঞে সহায়তা করে, ভীতসন্ত্রস্ত নিরস্ত্র আরবদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়। এমনকি পার্শ্ববর্তী আরব রাষ্ট্রসমূহে আশ্রয় নেওয়ার জন্য তাদেরকে ট্রাকে বোঝাই করে সীমান্তে পৌঁছে দিয়ে আসা হয়। ১৯৪৮ সালের মার্চ থেকে ১৪ মে পর্যন্ত আড়াই মাস যাবৎ এই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ইহুদিদের জন্য ময়দান খালি করে ব্রিটেন এবার নিজে থেকেই ফিলিস্তিনের অছিগিরি প্রত্যাহার করে নেয়। অবশ্য ইতোমধ্যে ইহুদিরা সমস্ত ফিলিস্তিনের ৮১ শতাংশ ভূমি দখল সম্পন্ন করে নেয়। অতঃপর আন্তর্জাতিক ইহুদিচক্র ফিলিস্তিনকে স্বাধীন ইসরাইল রাষ্ট্ররূপে ঘোষণা করে এবং পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক এই ঘোষণা প্রকাশের মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমেরিকা একে স্বীকৃতি দেয়। অতঃপর সোভিয়েত ইউনিয়ন ও বৃটেনসহ সকল বৃহৎ শক্তিই ইসরাইলকে বৈধ রাষ্ট্ররূপে স্বীকার করে নেয় এবং ১৯৪৯ সালে তাদের প্রভাব খাটিয়ে এই তথাকথিত ইসরাইল রাষ্ট্রকে জাতিসংঘের সদস্য করে নেয়। ফিলিস্তিনি আরবদের ভাগ্যবিড়ম্বনার করুণ পরিণতির সূত্রপাত এখান থেকেই।

১৫ মে, ১৯৪৮ সাল, ৭৫ বছর পূর্বে এই দিনে মধ্যপ্রাচ্যের বুকে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে এইদিন কালো দিবস হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘ প্রায় ছয় যুগেরও বেশি ধরে ইসরাইল সরকার তার আগ্রাসন ও সম্প্রসারণবাদী নীতির মাধ্যমে তার প্রভু বৃহৎ শক্তিবর্গের সাহায্য-সহযোগিতায় মধ্যপ্রাচ্যে অব্যাহতভাবে আগ্রাসন ও উৎপীড়ন চালিয়ে আসছে। মুসলমানদের প্রথম কেবলা বাইতুল মোকাদ্দাসকে ইসরাইল কুক্ষিগত করে এই পবিত্র স্থানের অবমাননা ও তার মর্যাদা ক্ষুণœ করে চলেছে অহরহ। মুসলিম নিদর্শনাবলীর প্রতি অবিচার ও সেগুলো ধ্বংস করে চলেছে। ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে সেখানে নতুন নতুন ইহুদি বসতি স্থাপন করা হচ্ছে। ১৯৪৮ সালের পর থেকে ফিলিস্তিনকে কেন্দ্র করে আরবদের সাথে ইসরাইলের ছোট-বড় বেশ কয়েকটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধও হয়ে গেছে। কেবল ১৯৬৭ সালের জুন মাসের যুদ্ধেই ইসরাইল কয়েকটি আরবদেশের ২৬ হাজার বর্গমাইল এলাকা দখল করে নেয়। আরবদের পক্ষে এগুলির খুব নগণ্য পরিমাণ অংশই পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য যে, মরক্কোর ঐতিহাসিক ফেজ নগরীতে অনুষ্ঠিত মুসলিম জাহানের পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের দশম ইসলামী সম্মেলনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা প্রকাশ করা হয়। এই ঘোষণায় জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এখনো লাখ লাখ ফিলিস্তিনি বিভিন্ন স্থানে উদ্বাস্তু হিসাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের মাতৃভূমিতে তারা কবে ফিরে যেতে পারবে এবং স্বাধীন ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেম কবে ফিরে পাবে তা ভবিষ্যৎই নির্ণয় করিবে।

মুসলমানদের অদূরদর্শিতার খেসারত: বাইতুল মোকাদ্দাস বা জেরুজালেমের পতনের মর্মান্তিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র দেখতে পাওয়া যায়, অপরদিকে মুসলমানদের অসাবধানতা ও অদূরদর্শিতার দৃষ্টান্তও পরিলক্ষিত হয়, যা তাদের পারস্পরিক বিবাদ-বিসম্বাদ ও অনৈক্যের ফসল। মুসলমানদের অসতর্কতা এবং তাদের গাফিলতির দরুণ আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ পাওয়া মাত্রই তার সদ্ব্যবহার করতে ত্রুটি করেনি। অতীতের ইতিহাস হতে জানা যায়, ক্রুসেড যুদ্ধগুলির পর মুসলমান শাসকগণ যখন মসজিদে আকসা ও ফিলিস্তিনের নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন, তখন তারা মসজিদে আকসার প্রাচীরবহির্ভূত চতুর্দিকের জমি ধর্মীয় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়াকফ করে দেন, যেন পবিত্র হেরেমের এই পবিত্র অংশ বেচা-কেনা ও অপরের হস্তক্ষেপ হতে রক্ষা পায়। অনুরূপভাবে মুসলিম শাসকবৃন্দ ফিলিস্তিনের অধিকাংশ বসতি এলাকাও ইসলামী কার্যে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ওয়াকফ করে দেন। এমনকি ফিলিস্তিনের এক-তৃতীয়াংশই মসজিদ-মাদ্রাসার জন্য ওয়াকফ হয়ে যায়। কিন্তু পরবর্তীকালে মুসলমানদের দুর্বলতা ও অদূরদর্শিতার ফলে ওয়াকফকৃত সম্পত্তির মর্যাদা ও পবিত্রতা অক্ষুণœ থাকতে পারেনি এবং ওয়াকফকৃত সমুদয় সম্পত্তির ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করে দেওয়া হয় এবং তার ওশর ওয়াকফ তহবিলে জমা হতে থাকে। পরিণামে এ সকল সম্পত্তি বেচা-কেনার মাধ্যমে ইহুদিদের নিকট হস্তান্তরিত হয়ে যায়। মুসলমানদের দুর্বলতা, ধর্মীয় ব্যাপারে তাদের গাফিলতি এবং অদূরদর্শিতার ফলে মুসলমানদের একটি পবিত্র এলাকা শত্রুদের হাতে চলে যায়। অথচ, তাদের পূর্ব পুরুষগণ উক্ত সম্পত্তির নিছক নিরাপত্তার জন্য ওয়াকফ করেছিলেন। ধর্মীয় একটি বিষয়ের প্রতি অবহেলা ও তাকে বিকৃত করার এই শোচনীয় পরিণতি।

ইসলামের প্রাথমিক যুগে মহান নবী (সা.)-এর ইন্তেকালের প্রায় চার বছর পর ৬৩৬ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর (রা.) এর খেলাফত আমলে মুসলমানগণ সর্বপ্রথম ফিলিস্তিন দখল করে। এই বিজয় সূচিত হয় জেরুজালেম কিছুদিন অবরোধ রাখার পর। হযরত উমর (রা.) খ্রিষ্টানদিগের গির্জায় এবাদত করার পূর্ণ স্বাধীনতাদান করেন। তবে মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী স্থির হয় যে, ভবিষ্যতে বাইতুল মোকাদ্দাসে কোনো গির্জা নির্মাণ করা যাবে না। বিজয়ের পর হজরত উমর (রা.) বাইতুল মোকাদ্দাসে দশ দিন অবস্থান করেন এবং এই সময়ের মধ্যে ‘মসজিদে উমরের’ ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। বর্তমানে এটি মসজিদে আকসা নামে অভিহিত। এই মসজিদের নির্মাণকার্য ৬৪০ খ্রিষ্টাব্দে সম্পূর্ণ হয় এবং এতে মিসরের সাত বছরের রাজস্ব আয় ব্যয় হয়ে যায়। পরবর্তী চার শতাব্দীকাল যাবৎ বাইতুল মোকাদ্দাস বহু গোলযোগ-হাঙ্গামা প্রত্যক্ষ করে। তবে ১০৯৫ খ্রিষ্টাব্দের পর বাইতুল মোকাদ্দাস বা জেরুজালেম নগরী রক্তাক্ত যুদ্ধের একটি কেন্দ্রে পরিণত হয়। খ্রিষ্টানরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যে সব ক্রুসেড যুদ্ধের সূচনা করে, সেগুলি দুই শতাব্দীকাল যাবৎ অব্যাহত থাকে। ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত তুর্কীরা এসব যুদ্ধকে আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধে পরিবর্তন করে দেয়। এসব যুদ্ধের সময় ১০৭০ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান সালাহউদ্দীন আইউবী দামেস্ক জয় করেন, তখন তিনি ছিলেন মিসরের সুলতান। ১০৮৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি হলব অধিকার করেন। এর পর আরও কিছু স্থান অধিকারে আনার পর ১১৮৭ খ্রিষ্টাব্দে জেরুজালেম নগরী সুলতানের অধিকারে আসে। অতঃপর সুদীর্ঘকাল ফিলিস্তিন একটি মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে বিদ্যমান থাকে।

পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, মুসলমানদের অসতর্কতার ফলে ফিলিস্তিনের কিছু কিছু জমি ইহুদিরা খরিদ করে নিয়েছিল। এর পর মুসলিম শাসন আমলে ফিলিস্তিন থেকে ইহুদি বসতি বিতাড়িত হয়ে যাওয়ার পর সেখানে ইহুদিদের সংখ্যা না থাকার মতই ছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে বিদেশি ইহুদিরা ফিলিস্তিনের প্রতি মনোযোগী হয়ে উঠে। সুতরাং কিছু কিছু ইহুদি তাদের ক্রয় করা ভূমিতে ফিরে আসে এবং এইভাবে নতুন বসতি স্থাপন করতে শুরু করে। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ইহুদিদের সংখ্যা ছিল ফিলিস্তিনে বড় জোর শতকরা পাঁচজন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত এই সংখ্যা শতকরা সাতজনের বেশি হতে পারেনি। (চলবে)


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার

ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার

আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়

আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়

হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড  ইংল্যান্ড

হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড  ইংল্যান্ড

পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের

পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে

বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত

বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে

বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা

বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী  প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন

উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন

সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।

পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।

ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল

রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল