ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

নদী দখলদারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

২২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৬ এএম

দেশের এমন কোন নদ বা নদী নেই যা অবৈধ দখলের কবলে পড়েনি। ফলে নদীগুলো স্বাভাবিক গতি হারিয়ে মৃত অবস্থায় উপনীত হয়েছে। নদ-নদীর অবৈধ দখল নিয়ে পত্র-পত্রিকায় কম লেখালেখি হয়নি। তাতে কোন কাজ হচ্ছে না। নদী রক্ষা কমিশন থাকলেও তা নখদন্তহীন। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না। কমিশন দেশব্যাপী অবৈধ নদীদখলকারীদের একটি তালিকা তৈরি করেছে। গত ২১ জুন নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সংসদে জানিয়েছেন, সরকার ৫০ হাজারের বেশি অবৈধ দখলকারীর তালিকা তৈরি করেছে। ২০১৯ সালে নদী রক্ষা কমিশন ৬৪ জেলার ডেপুটি কমিশনারদের মাধ্যমে এ তালিকা তৈরি করে। নামের তালিকা কমিশনের ওয়েব সাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকা তৈরি করা হয়েছে ঠিকই, তবে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা জানা যায় না। শুধু নদ-নদী অবৈধ দখলই নয়, দূষণ এবং অবৈধভাবে বালু উত্তোলনও বন্ধ করা যায়নি। বলার অপেক্ষা রাখে না, অবৈধ দখল ও বালু উত্তোলনের সাথে যারা জড়িত, তারা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাসীনদলের প্রশ্রয় পেয়ে থাকে।

যুগের পর যুগ ধরে নদ-নদীর অবৈধ দখল, দূষণ ও বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকায় দেশের কি ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে, তা এখন দৃশ্যমান। দেহের রক্তনালীর মতো প্রবাহমান নদীমাতৃক বাংলাদেশের সজিবতা বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। একদিকে ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার, অন্যদিকে অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়ে দেশের পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে। দেশের উত্তরে ও পশ্চিমে লবণাক্ততার বিস্তার ঘটছে। পানির অভাবে কৃষিকাজ ব্যহত হচ্ছে। খাদ্য উৎপাদনে তার বিরূপ প্রভাব পড়ছে। সরকার ভারতের সাথে ন্যায্য পানিচুক্তি যেমন আদায় করতে পারছে না, তেমনি নদীর অবৈধ দখল, দূষণ ও বালু উত্তোলনও ঠেকাতে পারছে না। রাজধানীর চারপাশের বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষা, বালু ও ধলেশ্বরী নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও ঠিকমতো প্রতিপালিত হতে দেখা যায় না। চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ কর্ণফুলী নদী ও অবৈধ দখল ও দূষণে দিন দিন মৃতুর দিকে ধাবিত। যদিও বুড়িগঙ্গা ও বালু নদীর অবৈধ দখলে থাকা কিছু অংশ উদ্ধার করা হয়েছে, তবে অধিকাংশই এখনো অবৈধ দখলে রয়ে গেছে। শীতলক্ষা ও মেঘনা নদীর অবৈধ দখল ও দূষণ এখনও চলছে। তা প্রতিরোধে কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। দেশের ৬৪ জেলায় যেসব নদ-নদী অবৈধ দখলে রয়েছে, সেগুলো দখলমুক্ত করতে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, এমন সংবাদও পাওয়া যায় না। সরকার অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি করেই যেন দায়িত্ব শেষ করেছে। যারা নদী দখল করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে উচ্ছেদ করার কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। পর্যবেক্ষকদের মতে, অবৈধ দখলের সাথে ক্ষমতাসীনদলের লোকজন ও প্রভাবশালীরা জড়িত থাকায়, সরকার সেখানে নীরব হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ক্ষেত্রে এক মন্ত্রীর আসকারা থাকা নিয়ে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মন্তব্য করায় তাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, অবৈধ বালু উত্তোলনকারী ও তাদের মদদদাতাদের নামও উচ্চারণ করা যাবে না। এ ঘটনা থেকে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, নদী রক্ষা কমিশন কেন গঠন করা হয়েছে? যদি নদ-নদী রক্ষাই করতে না পারে, তাহলে তাকে কেন ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে থাকতে হবে? অন্যদিকে, অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে সরকার নীরব থেকে কিংবা ব্যবস্থা নিচ্ছি-নেব বলে এক অর্থে তাদের সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছে। দায় মুক্তি দিয়ে যাচ্ছে।

খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, নৌ পরিবহন সহজ করা, পরিবেশ সুরক্ষা ও লবণাক্ততার ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে নদ-নদীর সচলতা ও নাব্যর বিকল্প নেই। সরকার এ বিষয়গুলো কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে, তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। তা নাহলে, বছরের পর বছর ধরে নদ-নদীর অবৈধ দখল, বালু উত্তোলনের মাধ্যমে কাটাছেঁড়া করে মেরে ফেলার বিরুদ্ধে কেন কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না? সরকার যে শতবর্ষী ডেল্টা প্ল্যান করেছে, নদ-নদী যদি না-ই থাকে, তাহলে তা কিভাবে বাস্তবায়ন করবে? নদ-নদী রক্ষায় সরকারের প্রতিশ্রুতি এখন যেন অনেকটা কথার কথায় পরিণত হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৭১ সালে দেশে ১২৭৪টি নদ-নদী ছিল। বিগত ৫০ বছরে ৫০৭টি নদী হারিয়ে গেছে। নদীগুলো গেল কোথায়? বলা বাহুল্য, এসব নদ-নদী অবৈধ দখলে হারিয়ে গেছে। বর্তমানে যে ১৭২টি নদ-নদী সচল রয়েছে, এখন সেগুলোর ওপর চলছে অবৈধ দখল ও দূষণ। এতে এসব নদ-নদী অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। এগুলো রক্ষা করতে না পারলে দেশে যে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দেবে, তাতে সন্দেহ নেই। আমরা আশা করি, সরকার অবিলম্বে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নদ-নদী রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার

ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার

আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়

আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়

হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড  ইংল্যান্ড

হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড  ইংল্যান্ড

পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের

পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে

বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত

বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে

বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা

বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী  প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন

উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন

সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।

পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।

ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল

রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল